আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি নতুন ধারা দেখা যাচ্ছে। সেই ধারায় কয়েকটি বড় শক্তির বদলে আরও বেশ কিছু দেশ বিশ্বরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে শুরু করেছে। একে বলা হচ্ছে ‘বহু মেরুকরণ’। এর অর্থ হচ্ছে, বিশ্ব এখন একক বা গুটিকয় পরাশক্তির নিয়ন্ত্রণে নেই; বরং অনেক দেশ মিলে বৈশ্বিক বিষয়ে প্রভাব ফেলছে। এই পরিবর্তনের উদ্বেগজনক দিক হলো বিভিন্ন দেশের মধ্যে এবং দেশগুলোর ভেতরেও বিভাজন বা মতপার্থক্য বাড়ছে। প্রতিটি দেশ ভবিষ্যতের বিশ্বব্যবস্থা কেমন হবে, সে বিষয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছে। এটি পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর সমাধান কঠিন করে তুলছে।

আসলে বিশ্বরাজনীতিতে এখন দুটি শিবির স্পষ্টভাবে গড়ে উঠছে। একদিকে রয়েছে গণতান্ত্রিক দেশগুলো, অন্যদিকে স্বৈরশাসিত দেশগুলো। বিশেষ করে, মানবাধিকার, বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এই বিভাজন আরও গভীর হচ্ছে।

বিশ্ব এখন বহু মেরুকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। আর এর সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভাজনও গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। বিভিন্ন শক্তির মধ্যে বিভাজন কমিয়ে কীভাবে স্থিতিশীলতা আনা যায়—এই প্রশ্নের জবাবের ওপর ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা নির্ভর করছে

এ ছাড়া কিছু নতুন শক্তিশালী দেশও নিজেদের মতো করে অঞ্চলভিত্তিক প্রভাব বিস্তার করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাশিয়া ইউরেশিয়ায় (ইউরোপ ও এশিয়ার সংযোগ অঞ্চল) নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। চীন তার ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর মাধ্যমে পূর্ব এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। ফলে বিশ্বব্যবস্থার একক নিয়মকানুন ও সহযোগিতার কাঠামো ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে। তার পরিবর্তে একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হচ্ছে।

শুধু আন্তর্জাতিক রাজনীতি নয়, বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরেও বিভাজন বা বিভক্তি বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবার ক্ষমতায় আসা বিভাজনমূলক রাজনীতির নতুন শক্তিকে প্রকাশ করছে। এটি ইউরোপসহ অন্য সেসব দেশে অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে আরও উজ্জীবিত করবে, যেখানে ‘আমরা বনাম ওরা’ মানসিকতা গভীরভাবে শিকড় গেড়েছে। অনেকের ধারণা, উদারনৈতিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা শুধু নিজ দেশের অভিজাত শ্রেণিকেই নয়, বরং বিদেশের নতুন শক্তিগুলোকেও (বিশেষ করে চীনকে) অন্যায্য সুবিধা দিয়েছে। এতে পশ্চিমা দেশগুলোর দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা আরও বাড়ছে।

একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বিভাজন সরকারগুলোর কার্যক্ষমতা ব্যাহত করছে এবং তাদের নীতি গ্রহণের সুযোগ সীমিত করে ফেলছে। ফলে গণতান্ত্রিক নেতারা বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদার করতে পারছেন না। অন্যদিকে কর্তৃত্ববাদী জনতুষ্টিবাদী নেতাদের জন্য বিভক্ত আন্তর্জাতিক পরিবেশ তাঁদের ‘সবার বিরুদ্ধে সবাই’ ভাষ্যকে আরও জোরদার করছে। এটি তঁাদের পক্ষে যাচ্ছে। তাই তাঁরা দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য গঠনে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাড়তে থাকা রাজনৈতিক বিভাজনের এই প্রেক্ষাপটে অনেক দেশের (বিশেষ করে বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলোর) বহু মেরুর বিশ্বের প্রতি যে আশা ও প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ না–ও হতে পারে। যে বহু মেরুর বিশ্ব গড়ে উঠছে, তা যদি অভিন্ন নিয়ম ও প্রতিষ্ঠান ছাড়া পরিচালিত হয়, তাহলে এটি দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জর্জরিত হয়ে উঠতে পারে।

শক্তিশালী দেশগুলোর পরস্পরকে নিয়ন্ত্রণে রাখার এবং তুলনামূলক শান্তি ও স্থিতিশীলতার নতুন যুগ শুরু করার কথা ছিল। তার বদলে তারা বহু মেরুত্ব (মাল্টিপোলারিটি) বরং অস্থিতিশীলতা বাড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করছে। এটি নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও বাণিজ্যযুদ্ধ উসকে দিতে পারে, চলমান গৃহযুদ্ধগুলো দীর্ঘায়িত করতে পারে, এমনকি এটি বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে যুদ্ধের বীজও বপন করতে পারে।

এ অবস্থায় বিশ্বের জন্য সবচেয়ে দরকার হলো রাজনীতিকে ‘পোলারাইজ’ (বিভক্ত) না করা। তবে এটি কীভাবে অর্জিত হবে বা কে এ প্রচেষ্টার জন্য প্রস্তুত হবে, তা স্পষ্ট নয়। কিছু লোক বিশ্বাস করেন, যদি বৈশ্বিক শাসনকাঠামো নতুন শক্তির কেন্দ্রগুলোকে গ্রহণ করে, তাহলেই বহু মেরুত্বজনিত বিভক্তিগুলো দূর করা সম্ভব হবে। বিশ্বের কিছু শক্তিশালী দেশ এমন একটি বড় ধরনের চুক্তি করতে আগ্রহী হয়নি, যা সবার জন্য উপকারী হবে। বরং তারা বিশ্বরাজনীতির বিভক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছে।

বিশ্ব এখন বহু মেরুকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। আর এর সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভাজনও গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। বিভিন্ন শক্তির মধ্যে বিভাজন কমিয়ে কীভাবে স্থিতিশীলতা আনা যায়—এই প্রশ্নের জবাবের ওপর ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা নির্ভর করছে। এই পরিবর্তন অবশ্যই নিজ নিজ দেশের ভেতর থেকেই শুরু করতে হবে।

টোবিয়াস বুন্ডে বার্লিনের হার্টি স্কুলে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার অধ্যাপক এবং

সোফি আইজেনট্রাউট মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের গবেষণা ও প্রকাশনার প্রধান

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য ব ভ জন র জন ত র করছ

এছাড়াও পড়ুন:

 সোনারগাঁয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, ৫ নারী আহত

সোনারগাঁয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ৫ জন নারী আহত হয়েছেন। বুধবার সকালে বারদী ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দি গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধে এ ঘটনা ঘটে।

আহতদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এসময় বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনা উভয় পক্ষ সোনারগাঁ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

জানা যায়, উপজেলার বারদী ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দি গ্রামের আব্দুল বারেকের সাথে পার্শ্ববর্তী ইয়ানুছ মিয়ার দীর্ঘদিন ধরে ৮ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এ বিরোধের জের ধরে তাদের মধ্যে আদালতে মামলা মোকদ্দমা চলছে। 

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে আব্দুল বারেকের লোকজন ওই জমিতে টিনের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে যায়। এক পর্যায়ে ইয়ানুছের নেতৃত্বে আব্দুল হালিম, আলী আজগর, রাসেল, আসিফসহ ২০-২৫জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র দা, টেঁটা, বল্লম, লোহার রড, চাইনিজ কুড়াল নিয়ে হামলা করে। 

এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আব্দুল বারেকের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে ইয়ানুছের লোকজন। সংঘর্ষে বারেক পক্ষের হোসনে আরা, রুনা আক্তার ও হাবিজা বেগম ও ইয়ানুছ পক্ষের সূর্য্যবান বিবি, পারভীন বেগম আহত হয়। আহতদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 

এ ঘটনায় আব্দুল বারেক পক্ষের তার ছেলে আমির হোসেন ও ইয়ানুছ পক্ষের ইয়ানুছ মিয়া বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

সোনারগাঁ থানায় দায়ের করা অভিযোগের বাদি মো. আমির হোসেন বলেন, ক্রয়সূত্রে মালিক হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ৮ শতাংশ জমি ভোগ দখল করে আসছি। হঠাৎ ইয়ানুছ ও তার লোকজন ওই জমি দাবি করে। ওই জমি নিয়ে একাধিকবার শালিস বৈঠকের আয়োজন করা হলেও তারা উপস্থিত হন না। গতকাল বুধবার সকালে টিনের সীমানা প্রাচীর দিতে গেলে অতর্কিত হামলা করে ভাংচুর ও লুটপাট করে। এসময় তাদের তিনজন নারী আহত হন। 

ইয়ানুছ মিয়ার দাবি, আমাদের জমি তারা দীর্ঘদিন ধরে দখলে রেখেছেন। আমাদের এ জমির পক্ষে দলিল পত্র রয়েছে। তারা জোরপূর্বক দখলে রাখতে চাইছে। জমিতে টিনের বেড়া দিতে আসলে আমরা বাধা দিয়েছি। এ ঘটনায় তাদের দুই নারী আহত হয়েছে। 

সোনারগাঁ থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল বারী বলেন, হামলা ভাংচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষ অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ