অন্তর্বর্তী সরকার ভুল সময়ে ভুল নীতি নিচ্ছে: মুস্তফা কে মুজেরি
Published: 12th, February 2025 GMT
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ভুল সময়ে ভুল নীতি নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার মনে হয়, এ সময়ে অর্থনীতিতে সফলতা নেই বললেই চলে। আমাদের মৌলিক সমস্যা যেমন উচ্চ মূল্যস্ফীতি অথবা প্রবৃদ্ধির ধীরগতির কারণে অর্থনীতি অনেকটাই স্থবির হয়ে গেছে। অন্যান্য যেসব সমস্যা আছে সেখানেও খুব একটা সফলতা নেই। ফলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।’
মুস্তফা কে মুজেরি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকারের নেওয়া অর্থনৈতিক নীতিগুলোর একটা সাধারণ ধরন রয়েছে। সেটা হচ্ছে, ভুল সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া। জানি না, সেটি কেন হচ্ছে। তার একটা বড় উদাহরণ, অর্থবছরের মাঝপথে ভ্যাটের হার বাড়ানো। এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত, ভুল সময়ে নেওয়া হয়েছে। তার পরিণতি আগামী দিনগুলোতে ভালো হবে তা কিন্তু নয়।’
‘ভোক্তার কাঁধে বাড়তি করের বোঝা: উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এ কথাগুলো বলেন অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি। নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ ২৪ ডটকমের আয়োজনে এই গোলটেবিল বৈঠক আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানের এমসিসিআই সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে মুদ্রানীতি এককভাবে কোনো ফলাফল আনতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার ১০ শতাংশে উঠিয়ে রেখেছে। এটি মূল্যস্ফীতিতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না। মূল্যস্ফীতি তার নিজের গতিতে চলছে। এতে বরং দেশের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। ব্যাংকঋণের সুদের হার বেড়ে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। এটি ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।’
বিআইডিএসের সাবেক এই মহাপরিচালক বলেন, অর্থনীতিতে যেসব নীতি নেওয়া হচ্ছে সেগুলো একটির সঙ্গে আরেকটির সম্পৃক্ততা নেই। খুব চিন্তাভাবনা করে নেওয়া হচ্ছে না। হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। যেমন ভ্যাটের হার বৃদ্ধি। এটা একটা হঠাৎ সিদ্ধান্ত। এটা করার পেছনে আইএমএফের রাজস্ব বাড়ানোর ঋণের শর্ত ছিল। রাজস্ব বাড়ানোর সহজ উপায় কী? আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের যাঁরা আছেন, তাঁরা মনে করেছেন, সবচেয়ে সহজ উপায় ভ্যাট বাড়িয়ে দিই। তাহলেই ১২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব বাড়বে। তিনি আরও বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে, সেই আশির দশক থেকে আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংক যেসব প্রেসক্রিপশন দিয়েছে সেগুলো কোনো কাজ করেনি। সবগুলো ব্যর্থ হয়েছে। এবারও ব্যর্থ হতে যাচ্ছে।
গোলটেবিল আলোচনায় কথা বলছেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী।.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সম্মেলনে ৩১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে: বিডা চেয়ারম্যান
ঢাকায় চার দিনের সম্মেলনে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
তিনি বলেন, খরচের হিসাব দিয়ে সামিটকে মূল্যায়ন করা যাবে না। বিনিয়োগের সব ক্রেডিট এই সামিটের নয়, এটা আগে থেকে চলতে থাকা আলোচনার ভিত্তিতে হয়েছে। সামিটে এসেই বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়ে দেবেন, বিষয়টি এমন নয়। তাই এটাকে সামিটের সফলতা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ৪ দিনের ওই সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনের বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, বিডার বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ এসেছে। সরকারি খরচ হয়েছে দেড় কোটি টাকা। তবে খরচের হিসাব দিয়ে সামিটকে মূল্যায়ন করা যাবে না। বিনিয়োগের সব ক্রেডিট এই সামিটের নয়, এটা আগে থেকে চলতে থাকা আলোচনার ভিত্তিতে হয়েছে। চারদিনের সামিটে এসে কেউ ১০০ কোটি টাকার চেক লিখে ফেলবে, বিষয়টি এমন নয়। তাই এটাকে সামিটের সফলতা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। সামিটের খরচ দিয়ে বিনিয়োগের পরিমাণ বিচার করলে হবে না।
তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ফ্যাক্টরি ভিজিট করিয়েছি। ফ্যাক্টরি করতে হলে কোথায় যেতে হবে, তাদের দেখানো হয়েছে। সম্মেলনে এসে বিনিয়োগকারীরা খুব খুশি হয়েছেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য খাবারের ম্যানু থেকে আমরা যেন আগেই বাদ না পড়ে যাই। আমরা একইসাথে সংস্কারের কাজ করব, আর বিনিয়োগের পাইপলাইন বিল্ডিং-এর কাজ করে রাখব।
বিডার চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ১০-এ ১০ পাওয়ার মতো সামিট হয়নি। যত সফলতা আছে তা সবার। ব্যর্থতা বিডা ও বেজার। প্রতিবছর এ ধরনের সামিট হতে পারে। এ ধরনের সিমিলার ইভেন্ট পরবর্তীতে বা পরবর্তী সরকার করবে বলে প্রত্যাশা করি।
তিনি আরো জানান, বিনিয়োগের পাইপলাইন ঠিক রাখতে বিনিয়োগ সম্মেলনে আসা সবাইকে থ্যাংক ইউ মেইল পাঠানো হবে। তাদের সাথে যোগাযোগ রাখা হবে।
বিডার বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি বলেন, উদ্বোধনী সামিটে ৭৫০ জন অংশ নেয়। এর মধ্যে ৪১৫ জন বিদেশি ছিল। পুরো সম্মেলনে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেয়। স্পিকার ও প্যানেলিস্ট ছিল ১৩০ জন।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ