‘ভাই সম্পত্তি বেশি পেলে বোন, বাবা-মায়ের সব দায়িত্ব তাকে নিতে হবে’
Published: 12th, February 2025 GMT
পৈতৃক সম্পত্তি ভাইয়ের সমান পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী রুনা খান। গতকাল এ খবর নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান তিনি। এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে জোর চর্চা চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এরই মধ্যে চিত্রনায়িকা দিতি-সোহেল চৌধুরীর কন্যা লামিয়া চৌধুরী জানালেন, তারা দুই ভাই-বোনও পৈতৃক সম্পত্তি সমানভাবে পেয়েছেন।
লামিয়া চৌধুরী বিষয়টি নিয়ে নিজের ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সঙ্গে পোস্ট করেছেন রুনা খানকে নিয়ে প্রকাশিত খবরের স্ক্রিনশট। এ পোস্টে লামিয়া চৌধুরী বলেন, “এটাই তো স্বাভাবিক হওয়া উচিত। আমার আর আমার ভাইয়ের মধ্যে সব সমান সমান। আমাদের বাবা-মা এটাই চেয়েছেন আর আমাদের এভাবেই বড় করেছেন।”
প্রচলিত আইনের সমালোচনা করে লামিয়া চৌধুরী বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক, আইন আমাদেরকে অনুভব করায় আমরা সমান না। আর শুধু শুধু সবকিছু জটিল করে আমাদের সময় নষ্ট করে, দ্বি-গুণ সময় ব্যয় হয়। যেখানে মা স্পষ্ট বলে গিয়েছিলেন যে, আমরা সমান। আর এগুলো আমি দেশে থেকে সবকিছু করি। অথচ আমার এখানে শুনতে হয় যে, আমার ভ্যালু অর্ধেক। এসব ঠিক না।”
আরো পড়ুন:
আপনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে হত্যা করার চেষ্টা করছেন: জয়া
প্রশংসা কুড়াচ্ছে সাব্বির-কোনালের গান
সমানভাবে পৈতৃক সম্পত্তি বণ্টন করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গিয়ে নানাভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন লামিয়া ও তার ভাই। এ তথ্য স্মরণ করে লামিয়া চৌধুরী বলেন, “এসব কারণে যেরকম হেনস্তার শিকার হই, আমার ভাইয়ের আরো বেশি হেনস্তা হতে হয়েছে। কারণ ও দেশে থাকে না। কাজ থেকে ছুটি নিয়ে বারে বারে সময়, শক্তি, টাকা খরচ করে দেশে আসা লাগে আমার হেবার কাজ করার জন্য। মাঝখান দিয়ে লাভ নিচ্ছেন আপনারা।”
সম্পত্তি বণ্টনের আইন সংশোধন করা উচিত বলে মনে করেন লামিয়া। তার ভাষায়, “ইসলাম পক্ষপাতশূন্য। এই আইনের পেছনে যৌক্তিক কারণ আছে। কিন্তু আগের সমাজ এখনকার সমাজ এক না। আগেকার দিনে মেয়েদের কম দেওয়া হতো কারণ বিবাহিত মেয়েদের খরচ তার স্বামী বহন করতেন। আর অবিবাহিত মেয়েদের খরচ তার ভাই বহন করতেন। আর বয়স্ক, অসুস্থ বাবা-মায়ের দায়িত্বও ছিল ছেলেদের। এখন এরকম হয় না। মেয়েরা এখন ভাইয়ের উপরে নির্ভরশীল না। আমি বিবাহিত না বলে আমার অর্থনৈতিক দায়িত্ব আমার ভাইয়ের নয়। বরং এখন স্ত্রী কিংবা বোনেরা সংসারে খরচ শেয়ার করে। সুতরাং এখনো কেন এ ধরনের বৈষম্য থাকবে? এই ধরনের আইন সংস্কার করা উচিত, অন্তত যেসব পরিবার এই বৈষম্যের সঙ্গে একমত নয়, তাদের ক্ষেত্রে তা বাধ্যতামূলক করা উচিত নয়।”
ভাই যদি বোনের চেয়ে সম্পত্তি বেশি নেন, তবে বাবা-মায়ের দায়িত্বও তারই নেওয়া উচিত। লামিয়া চৌধুরী বলেন, “বাবা-মা অনেক কষ্ট করে আমাদেরকে সমানভাবে বড় করেছে। ভাই ও আমাকে সমান চোখে দেখেছে। শুধু আপনারাই আমাকে ছোট করছেন। এসব বন্ধ করুন। আর যদি বাধ্যতামূলক করেন, তাহলে ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী, এটাও বাধ্যতামূলক করেন যে, ভাই বেশি পাওয়ার পর বোন এবং বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সব দায়িত্ব তাকে নিতে হবে। নাকি শুধু নেওয়ার বেলায় আছেন, দেওয়ার বেলায় নাই? ইসলামের নিয়ম ন্যায্য। আপনাদের নিয়ম সঠিক নয়। লোভ সামলান, নিজেদের শোধরান।”
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র আম দ র আম র ভ
এছাড়াও পড়ুন:
সব গরু বিক্রি করে দিলেন সেই ডিআইজি প্রিজন
নিজের বাংলোতে গড়ে তোলা খামারের সব গরু বিক্রি করে দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) টিপু সুলতান। গতকাল মঙ্গলবার ১২ লাখ টাকায় তিনি খামারে থাকা গরু–বাছুর বিক্রি করে দেন। ফলে সরকারি বেতনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আর ডিআইজি প্রিজনের গরুর খামারে কাজ করতে হচ্ছে না।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী আবদুর রশিদ আজ বুধবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্যারের খামারে থাকা সব গরু বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের গরুর খামারে আর কোনো কাজ নেই।’
গত ৩০ জানুয়ারি প্রথম আলোয় ‘চট্টগ্রাম কারাগারে দুধ বিক্রি করছেন ডিআইজি প্রিজন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারাবিধি অনুযায়ী, কোনো কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী বন্দীদের কাছে কোনো সামগ্রী বিক্রি কিংবা ভাড়া দিতে পারেন না। তা ছাড়া এভাবে তরল দুধ সরবরাহ করা বন্দীদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সাবেক কারা কর্মকর্তারা। অভিযুক্ত চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) টিপু সুলতান চট্টগ্রামে যোগ দেন গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি। ময়মনসিংহ থেকে বদলি হয়ে আসার সময় গরুগুলো সঙ্গে নিয়ে আসেন তিনি। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের পূর্ব সীমানাদেয়াল–সংলগ্ন এলাকায় নিজের কার্যালয় ও বাংলোর পাশে খামার গড়ে তোলেন তিনি। খামারে উৎপাদিত দুধ তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে বিক্রি করে আসছিলেন।
কারাগারে বাইরে থেকে দুধসহ রান্না করা কোনো খাবার কারাবন্দীদের দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু গোপালগঞ্জের বাসিন্দা ডিআইজি প্রিজন টিপু সুলতান সে নিয়ম মানেননি। ১০ মাস ধরে নিয়মিত তাঁর খামার থেকে গড়ে ২০ লিটার করে দুধ কারা ক্যানটিনে সরবরাহ করা হতো। বাইরে খুচরা মূল্য ৮০ টাকা লিটার, পাইকারি দর ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। ডিআইজি প্রিজন কারাগারে বিক্রি করেছেন ১০০ টাকা দরে। সেই হিসাবে দৈনিক ২ হাজার টাকা এবং প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকার দুধ বিক্রি করতেন তিনি।
প্রথম আলোয় এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরপর কারাগারে দুধ বিক্রি বন্ধ করে দেন ডিআইজি প্রিজন টিপু সুলতান। এরপর ৪ ফেব্রুয়ারি দেশের ৬৮ কারাগারে গরু পালনে সরকারি কর্মচারী ও অর্থ ব্যবহার না করতে নির্দেশনা জারি করেছে কারা অধিদপ্তর। কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেনের পক্ষে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের সই করা এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, কারা কর্মকর্তারা গরু পালনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিধিবিধান অনুসরণ করছেন না। এখন থেকে গরু পালনের ক্ষেত্রে কারা অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তাকে কারা মহাপরিদর্শকের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। পাশাপাশি মানতে হবে কিছু শর্ত। এগুলো হলো কারাগারে দুটির বেশি গরু পালন করা যাবে না, কারা এলাকায় গরু পালনের ক্ষেত্রে কারাগারের পরিবেশ কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না, গরু পালনের ক্ষেত্রে কোনো সরকারি কর্মচারী নিযুক্ত করা যাবে না, ব্যয় করা যাবে না সরকারি কোনো অর্থ, ব্যক্তিগত গরু পালনের কাজে বন্দীদের ব্যবহার করা যাবে না, সরকারি কোনো স্থানে ঘাস চাষ করা যাবে না, গরু পালন কাজে ব্যবহৃত পানি ও বিদ্যুৎ বিল ব্যক্তিগতভাবে পরিশোধ করতে হবে, গরুর সংখ্যা দুইয়ের অধিক নেই এবং নির্দেশনা অনুসরণ করা হচ্ছে—প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ বিষয়ে লিখিত প্রত্যয়ন দিতে হবে।