শিমুল-পলাশের রং ছড়িয়ে প্রকৃতিতে উঁকি দিচ্ছে বসন্ত। সকালে রোদের তেজ ছড়িয়ে শীতের বিদায়লগ্নের জানান দিচ্ছে মাঘ। হালকা কুয়াশার সঙ্গে কমলা রঙের রোদের মনোমুগ্ধকর মিতালিতে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের ইছামতী নদীর অদূরে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ সন্ন্যাসী মেলা বসেছে। ৪০০ বছরের পুরোনো এই মেলা স্থানীয়ভাবে জামাই মেলা নামে পরিচিত। মেলা উপলক্ষে ইছামতীর অদূরে বিস্তীর্ণ মাঠে বসেছে সারি সারি দোকান।

মেলার প্রধান আকর্ষণ নদী আর বিলের বিশাল আকৃতির হরেক রকমের মাছ। দোকানিরা বড় বড় মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই দোকানে দোকানে মানুষের ঢল। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম এলাকা। মেলায় অন্যতম আকর্ষণ ছিল যমুনা নদীতে ধরা পড়া ২৭ কেজি ওজনের একটি বাগাড় ও ২৫ কেজি ওজনের কাতলা মাছ। মাছ দুটি যথাক্রমে ৩৫ হাজার ও ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

মাছ ছাড়াও হরেক পদের বাহারি মিষ্টান্ন, খেলনা, কাঠের আসবাব, প্রসাধনীর দোকানসহ বিনোদনের জন্য বসেছে চরকি, নাগরদোলা, মৃত্যুকূপে মোটরসাইকেল খেলা, সার্কাস, ম্যাজিক শোসহ নানা আনন্দ আয়োজন। মেলা ঘিরে শতাধিক গ্রামে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। মেলা উপলক্ষে জামাতাসহ আত্মীয়স্বজনকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়। মেলা থেকে শৌখিন মাছ কিনে শ্বশুরবাড়িতে নিমন্ত্রণ খেতে যাওয়ার চল আছে গাবতলী, সারিয়াকান্দি, ধুনটসহ এ অঞ্চলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মেলা শুরুর সঠিক দিনক্ষণ কেউ জানেন না। তবে এলাকায় প্রচলিত আছে, ৪০০ বছরের বেশি সময় আগে পোড়াদহ-সংলগ্ন ইছামতী নদীতে প্রতিবছরের মাঘ মাসের শেষ বুধবার অলৌকিকভাবে বড় একটি কাতলা মাছ সোনার চালুনি পিঠে নিয়ে ভেসে উঠত। অলৌকিক এ ঘটনা দেখতে অনেকে জড়ো হতেন। পরে স্থানীয় এক সন্ন্যাসী স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে অলৌকিক মাছের উদ্দেশ্যে অর্ঘ্য নিবেদনের জন্য সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেন। সন্ন্যাসীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পোড়াদহ বটতলায় মাঘের শেষ বুধবার স্থানীয় লোকজন অর্ঘ্য নিবেদন শুরু করেন। নাম দেন সন্ন্যাসী পূজা। পূজা ঘিরে লোকসমাগম বাড়তে থাকে ও বড় বড় মাছ বেচাকেনার জন্য মেলাটি প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে। কালক্রমে মেলাটি পোড়াদহের মেলা হিসেবে পরিচিতি পায়। ইছামতী, করতোয়া, যমুনা ও বাঙ্গালী নদীতে ধরা বাহারি মাছ বিক্রির জন্য মেলায় নেন জেলেরা। মেলায় মাছ কিনতে দূরদূরান্ত থেকে ভিড় করেন ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে, প্রতিবছরের মাঘ মাসের শেষ বুধবার ইছামতী নদীর তীরে পোড়াদহ মেলা বসে। মেলা এক দিনের হলেও আবহ থাকে কয়েক দিন।

মেলার অন্যতম আকর্ষণ যমুনায় ধরা পড়া ২৭ কেজি ওজনের বাগাড়। সকাল ১০টার আগেই মাছটি ৩৫ হাজার টাকায় ভাগাভাগি করে কিনে নিয়েছেন মহিষাবান গ্রামের কয়েকজন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

পহেলা বৈশাখে গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া লাঠি খেলা

ঢোলের তালে মুহুর্মুহু আঘাত, প্রতিরোধের খটাখট শব্দে মুখরিত হয়ে জমে উঠেছে গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা। চারদিকে উৎসুক জনতা ভিড় করে উপভোগ করে খেলাটি। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য নতুন উদ্যমে ফিরিয়ে আনতে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা প্রশাসন এ লাঠি খেলার আয়োজন করে। 

সোমবার উপজেলা পরিষদ চত্বরে বেলা ১১টা থেকে শুরু হয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী চলে এ লাঠি খেলা। খেলায় লাঠি খেলার পাশাপাশি বুকের উপর ইট রেখে মাটি কাটার কোদাল দিয়ে আঘাত করে পরপর তিনটি ইট ভাঙা হয়। যা ছিল খেলার অন্যতম আকর্ষণ। উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের আবাদপুর এবং পার্শ্ববর্তী ক্ষেতলাল উপজেলার দেওগ্রাম থেকে দক্ষ লাঠিয়ালরা খেলা প্রদর্শন করেন।

খেলা দেখতে আসা রুপক হোসেন নামের এক দর্শনার্থী বলেন, আধুনিক যুগে এধরনের গ্রামীণ খেলাধুলা হারিয়ে যেতে বসেছে। এখনকার প্রজন্ম ডিজিটাল মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এধরনের আয়োজন প্রতিনিয়ত হওয়া প্রয়োজন। খেলা দেখে খুব আনন্দ পেয়েছি। 

মনির হোসেন নামের এক লাঠিয়াল বলেন, আমাদের এ দেশীয় খেলাগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আগে প্রতিনিয়ত গ্রামগঞ্জে এধরনের লাঠি খেলা হতো। আমরা টাকার বিনিময়ে চুক্তিতে খেলতাম। এখন আর আগের মতো খেলা হয় না। এতে আয় রোজগার কমে গেছে। এ খেলাগুলোকে রক্ষা করা দরকার।

আয়োজক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলম বলেন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলা ফিরিয়ে আনতে আমাদের এ আয়োজন। খেলাটি উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও এধরনের গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন অব্যাহত থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নববর্ষেও বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ: দুলু
  • আনন্দ শোভাযাত্রায় রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-মীর মশাররফ-লালন
  • আনন্দ শোভাযাত্রায় রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-মীর মশাররফ-লালন, মুগ্ধ দর্শনার্থীরা
  • পহেলা বৈশাখে গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া লাঠি খেলা
  • হালখাতা আছে, নেই নিমন্ত্রণ
  • মারমাদের মাহা সাংগ্রাই উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা
  • ‌‘তৌহিদী জনতার’ চিঠিতে বাতিল হলো শেষের কবিতা নাটকের প্রদর্শনী
  • রাষ্ট্র ও সমাজকে পথশিশুদের প্রতি মানবিক হতে হবে
  • চন্দনাইশের ‘হাতপাখা’ গ্রামে ১০ কোটি টাকার ব্যবসা
  • শহুরে পরিবারের দ্বন্দ্ব নিয়ে ‘ননসেন্স’