ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নৃশংস পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল: ফলকার টুর্ক
Published: 12th, February 2025 GMT
বাংলাদেশের জনগণের বিরোধিতার মুখেও ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে সাবেক সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নৃশংসতা চালিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক।
বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে টুর্কের এমন বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের সময় আওয়ামী লীগের সহিংস কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশের সাবেক সরকার এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত ছিল। ক্ষমতায় থাকার জন্য সাবেক সরকার ক্রমাগত সহিংস পথ ব্যবহার করে পদ্ধতিগতভাবে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেছিল।
ফলকার টুর্ক বলেন, ‘বিক্ষোভ দমন করার কৌশলের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, তাদের সমন্বয় ও নির্দেশনায় শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক এবং নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যে সাক্ষ্য এবং প্রমাণ সংগ্রহ করেছি, তা ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং নিশানা করে হত্যার এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে। যা সবচেয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার মধ্যে পড়ে এবং যা আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল বলেও বিবেচিত হতে পারে।’
প্রাণহানির ঘটনাগুলো নিয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধিদল পাঠায়। ওই প্রতিনিধিদলে ছিলেন মানবাধিকারবিষয়ক তদন্তকারী, একজন ফরেনসিক চিকিৎসক এবং একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার তদন্তকাজে ব্যাপক সহযোগিতা করেছে। যেখানে যেখানে প্রবেশাধিকার চাওয়া হয়েছে, সেখানে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে এবং যথেষ্ট নথিপত্র সরবরাহ করেছে।
বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত মৃত্যুর তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হয়েছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু। বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, তাদের ৪৪ জন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
টিসিবির ট্রাকে পণ্যের চেয়ে গ্রাহক বেশি
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ৭৬ বছর বয়সী আবদুল করিম। বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। এই শরীরেও আজ সোমবার দুপুরে বেগুনবাড়ি দীপিকার মোড় এলাকায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকের পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। উদ্দেশ্য—ট্রাক থেকে কম দামে সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুর কেনা।
টিসিবির ওই ট্রাকের পেছনে তখন অন্তত আড়াই শ মানুষের ভিড় ছিল। ভিড়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিতে একাধিকবার পড়েও যান তিনি। প্রায় তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে পণ্য কেনার সুযোগ পান আবদুল করিম। পণ্য নিয়ে ফেরার পথে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ঘরে বাজার করার টাকা নেই। টিসিবির ট্রাকে বিক্রি এক মাস বন্ধ ছিল। আজ (সোমবার) থেকে তারা কম দামে ডাল–তেল দেবে শুনে কিছু টাকা ধার করে এখানে এসেছি।’
টানা ১ মাস ৯ দিন বন্ধ থাকার পর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আজ থেকে আবারও ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। আজ ঢাকা শহরের ৫০টি ও চট্টগ্রামের ২০টি স্থানে ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করেছে সংস্থাটি।
আজ সকাল থেকে রাজধানীর কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখেন এই প্রতিবেদক। চারটি স্থানেই ট্রাকের পেছনে মানুষের লম্বা সারি ছিল। বিশেষ করে লম্বা বিরতি দিয়ে পণ্য বিক্রি শুরু করায় নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষেরা বেশি ভিড় করেছেন।
যেমন আজ কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে বেলা সাড়ে ১১টায় টিসিবির ট্রাক আসে। মাত্র দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে ট্রাকটির পেছনে তিন শতাধিক মানুষের সারি তৈরি হয়। টিসিবির একটি ট্রাকে ২৫০ মানুষের জন্য পণ্য থাকে, অর্থাৎ সেখানে উপস্থিত অনেকে শেষ পর্যন্ত পণ্য কেনার সুযোগ পাবেন না। একই চিত্র দেখা গেছে অন্যান্য স্থানেও।
উল্লেখ্য, নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি শুরু করেছিল টিসিবি। তবে ৩১ ডিসেম্বরের পর এ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আজ থেকে আবার এ কার্যক্রম শুরু করেছে টিসিবি।
অবশ্য টিসিবির ট্রাকে পণ্য বিক্রি নিয়ে মানুষের কিছু অভিযোগ রয়েছে। উপস্থিত মানুষেরা জানান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা জানতে পারেন না যে কোথায় ও কবে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। আবার দেখা যায়, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য নিচ্ছেন। এ ছাড়া লাইনে বিশৃঙ্খলা ও ধাক্কাধাক্কি যেন নিয়মিত ঘটনা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে টানা ১০ মাস ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর রয়েছে। সর্বশেষ গত জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ। বাজারে সবজি ছাড়া অন্য পণ্যের দাম সেভাবে কমেনি; বরং গত দেড় মাসের মধ্যে চালের দাম কেজিতে ৮–১০ টাকা করে বেড়েছে। খুচরা দোকানে সহজে পাওয়া যায় না বোতলজাত সয়াবিন তেল। এমন পরিস্থিতিতে ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া টিসিবির পণ্যের চাহিদা বেড়েছে।
টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল (সয়াবিন বা কুঁড়ার তেল), দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারবেন। এর মধ্যে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম ১০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা, চিনি ৭০ টাকা, ছোলা ৬০ টাকা ও এক কেজি খেজুর ১৫৫ টাকায় বিক্রি করছে সংস্থাটি। মূলত আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে ছোলা ও খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে।
তাতে সব মিলিয়ে একজন ক্রেতার ব্যয় হবে ৫৮৮ টাকা। বাজার থেকে একই পরিমাণ পণ্য কিনতে প্রায় এক হাজার টাকা লাগে, অর্থাৎ টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনলে ৪০০ টাকার মতো বাঁচবে। কাজীপাড়ার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী শফিকুল ইসলাম দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এ মাসে টিসিবির ট্রাকে যে পাঁচ পণ্য বিক্রি হচ্ছে, তার সবগুলোই জরুরি। বাইরে থেকে কিনতে গেলে অন্তত ৪০০ টাকা বেশি লাগবে। তাই অফিস থেকে কিছু সময় ছুটি নিয়ে টিসিবির ট্রাকের পেছনে দাঁড়িয়েছি।’