এসিল্যান্ডের ওপর হামলার চেষ্টা, সমন্বয়ক দাবি করা যুবক গ্রেপ্তার
Published: 12th, February 2025 GMT
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে এসিল্যান্ডের ওপর হামলার চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বুধবার ভোরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি করা সমন্বয়ক ফরহাদ ইবনে রুমিকে উপজেলার উবাহাটা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ফরহাদ উপজেলার উবাহাটা এলাকার দিদার হোসেনের ছেলে।
জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার নতুন ব্রিজ এলাকায় আদালতের আদেশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন চুনারুঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুব আলম মাহবুব। এ সময় ফরহাদ সহকারী কমিশনারের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। এক পর্যায়ে লাঠি দিয়ে সহকারী কমিশনারের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এ ঘটনায় বুধবার ভোরে শাহজিবাজার সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন আরাফি তাজোয়ার আমিনের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর একটি দল ফরহাদকে নিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁকে চুনারুঘাট থানায় হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন ফরহাদ ও তাঁর লোকজন উবাহাটা মৌজার খাস খতিয়ানে রাস্তা ও এক ব্যক্তির প্রায় ২০ ফুট জমি দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করেন। এ ঘটনায় ফরহাদের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলায় দায়ের করেন বাবুল মিয়া নামে এক ব্যক্তি। ওই মামলায় সম্প্রতি অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বাবুল মিয়ার পক্ষে আদেশ প্রদান করেন। ওই আদেশের পর সহকারী কমিশনার ফরহাদের ভূমি উচ্ছেদ করতে গেলে তিনি বাধা দেন।
মামলার বাদী বাবুল মিয়া জানান, ফরহাদসহ তাঁর লোকজন এলাকার প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায় না। তারা দীর্ঘদিন ধরে তাঁর জায়গাসহ রাস্তার জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিল। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেখানে উচ্ছেদ অভিযানে গেলে ফরহাদ তাদের ওপরও চড়াও হন।
এলাকাবাসীর ভাষ্য, ফরহাদ এতদিন যুবলীগের পরিচয় দিলেও গত ৫ আগস্টের পর থেকে নিজেকে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বলে দাবি করছেন। গত কয়েক মাসে তিনি এলাকায় নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুব আলম মাহবুব জানান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশে তিনি উক্ত স্থাপনায় উচ্ছেদ অভিযানে গেলে ফরহাদ সরকারি কাজে বাধা দিয়ে হামলার চেষ্টা করেন। তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চুনারুঘাট থানার (ওসি) নুর আলম জানান, সেনাবাহিনী ফরহাদকে আটকের পর থানায় হস্তান্তর করলে বাবুল মিয়ার দায়েরকৃত মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সমন বয়ক উপজ ল র ফরহ দ সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
রাজস্ব আদায়ে পদক্ষেপ নিন
স্টেশন বন্ধ। কিন্তু ট্রেন আসে, ট্রেন যায়। যাত্রীরাও ওঠানামা করেন। তবে টিকিট ছাড়া। কারণ, স্টেশন বন্ধ থাকায় কোনো টিকিট বিক্রি হয় না। কুমিল্লার লাকসাম থেকে রেলপথে নোয়াখালী পর্যন্ত প্রায় ৫২ কিলোমিটারের দূরত্বে এ রকম ছয়টি স্টেশন আছে। প্রায় দুই দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে স্টেশনগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এতগুলো স্টেশন থেকে বিনা টিকিটে যাত্রী ওঠানামা করেন। ফলে প্রতিনিয়ত রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দীর্ঘ রেলপথটিতে মোট ১২টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে লাকসামের দৌলতগঞ্জ, মনোহরগঞ্জের খিলা ও বিপুলাসার, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর বজরা, নোয়াখালী সদরের মাইজদী ও হরিনারায়ণপুর স্টেশনের কার্যক্রম ২০০৩ সালের পর থেকে পর্যায়ক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ ২০১৭ সালে লাকসাম পৌর শহরের দৌলতগঞ্জ স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আগে এই রেলপথে প্রতিদিন আন্তনগর, এক্সপ্রেস, লোকাল, ডেমুসহ অন্তত ১২টি ট্রেন চলাচল করত। এ রেলপথে এখন আন্তনগর উপকূল এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেন চলাচল করে। আর তিনটি ভিন্ন নামে আরেকটি এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে, যেটি স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে লোকাল ট্রেন হিসেবে পরিচিত।
পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের কর্মকর্তাদের বক্তব্য, জনবলসংকটসহ নানা কারণে বিভিন্ন সময়ে এসব স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। তবে মানুষের কথা চিন্তা করে এখনো ট্রেনসেবা চালু রাখা হয়েছে। এসব স্টেশনে বিনা টিকিটে যাত্রী ওঠার পাশাপাশি বুকিং ছাড়াই মালামালও পারাপার হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও প্রতিনিয়ত রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হয় যে মানুষের কথা চিন্তা করে ট্রেনসেবাটি তারা বন্ধ করেনি। তবে স্টেশনগুলো আবার চালু করাও সময়ের দাবি। কারণ, স্থানীয় লোকজনই বলছেন স্টেশনগুলো দিয়ে বিপুল মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। এক ব্যক্তি বলছেন, ‘খিলা ও বিপুলসার স্টেশন আমাদের গ্রামের দুই দিকে কাছাকাছি। একসময় এই স্টেশনগুলো জমজমাট ছিল। দিনরাত ট্রেনের হুইসেল বাজত। কিন্তু এখন জৌলুশ নেই। স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় রাতে সেখানে মাদকসেবীদের আড্ডাসহ অসামাজিক কার্যক্রমও চলে। আমরা চাই, রেলের সোনালি দিনগুলো ফিরে আসুক।’
দৌলতগঞ্জ স্টেশনটি দেড় দশক আগেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্টেশনটি ডাকাতিয়া নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় নদীপথে আসা মালামাল ট্রেনে আনা-নেওয়ার জন্য এটিকে ব্যবহার করা হতো। এখন টিকিট বেচা ও মালামাল পরিবহনে বুকিং কার্যক্রম বন্ধ। কিছু জায়গা এখন দখল হয়ে কয়েক শ অস্থায়ী দোকান বসে গেছে, যার মধ্যে গড়ে উঠেছে লাকসামের বৃহৎ কাঁচাবাজার।
আমরা আশা করব, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করে স্টেশনগুলো আবারও চালু করা হবে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে আমরা জানতে পারছি। এখন কবে নাগাদ পরিবর্তন দেখতে পাব আমরা, সেটিরই অপেক্ষা।