সচিবালয়ে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের প্রতিনিধিদল
Published: 12th, February 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকারের নেতৃত্বে চাকরিচ্যুত তৎকালীন বিডিআর সদস্যদের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে গেছেন।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে প্রতিনিধিদলটি সচিবালয়ে প্রবেশ করেন। সেখানে তারা স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে স্মারকলিপি জমা দেবেন ও আলোচনা করবেন। তারপর পরবর্তী কর্মসূচি গণমাধ্যমকে জানাবেন।
বিডিআর সদস্যদের মামলা প্রত্যাহার, বন্দীদের মুক্তি, গঠিত কমিশনের সংস্কার ও চাকরিতে পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন তারা।
প্রতিনিধিদলে বিডিআর সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- ফখরুদ্দিন আহমেদ, দেলোয়ার হোসেন, মাহাবুব আলাম, মনিরুজ্জামান, রোকসাদ আল প্রধান রিয়াল। বাকিরা খাদ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান করছেন।
সচিবালয় ঘিরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে রেখেছে। সেখানে ১০ প্লাটুন সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
কাফনের কাপড় পরে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান
পুলিশের বাধায় সচিবালয়ের সামনে রাস্তায় কাফনের কাপড় পরে শুয়ে পড়েন আন্দোলনরত বিডিআর সদস্যরা। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষা ভবনের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন তারা।
দুপুর একটার কিছু আগে তারা সচিবালয়ের দিকে এগোলে শিক্ষা ভবনের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। বাধা অতিক্রম করে সামনের দিকে এগোতে থাকলে পুলিশ জলকামান দিয়ে তাদের আটকানোর চেষ্টা করে। তবে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে সচিবালয়ের সামনের এলাকায় ঢুকে পড়ে আন্দোলনরতরা।
শাহবাগ থানার ওসি মো.
এর আগে, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সচিবালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার।
সচিবালয় এলাকায় ঢুকে পড়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় চাকরিচ্যুত সদস্যদের ফের আব্দুল গণি রোডের খাদ্য অধিদপ্তর ও বিদ্যুৎ ভবনের সামনে আবারো আটকে দেয় পুলিশ।
আন্দোলনরত বিডিআর সদস্যদের শপথ পাঠ করান এই সমন্বয়ক।
হাসনাতের আশ্বাসে সড়ক ছাড়বেন না চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা
চাকরিচ্যুত বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্যদের পুনর্বহালসহ ছয় দফা দাবিতে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাস দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তবে তার আশ্বাসের পরও চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা সড়কে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য না পাওয়া পর্যন্ত তারা সড়ক ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন।
বুধবার দুপুর ২টার পর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে ঘটনাস্থলে যান হাসনাত আব্দুল্লাহ। এ সময় তিনি চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘এই আন্দোলনের শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমর্থন দিয়ে আসছে। আমরা চাই বিডিআর সদস্যরা যেন ন্যায্য বিচার পায়। আমরা আপনাদের দাবি নিয়ে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক করব।’’
তার আশ্বাসে আন্দোলনকারীরা সড়ক ছাড়তে রাজি না হওয়ায় তিনি বলেন, ‘‘রাস্তায় অবস্থান করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে আন্দোলনটি বেহাত হতে পারে। তাই তারা আশ্বাস মানবেন কি মানবেন তা আন্দোলনরত বিডিআর সদস্যদের নিজের বিষয়।’’
গেল ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে আছে।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন।
হাইকোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ক্ষমতার পালাবদলের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি ওঠে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
পনের বছর আগে এই হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য গেল বছরের ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেয় সরকার।
গত ২১ জানুয়ারি বিস্ফোরক আইনের মামলায় সাড়ে ১৫ বছর ধরে কারাগারে আটক ১৭৮ জন বিডিআর জওয়ানের জামিন মঞ্জুর করে আদালত। এর দুইদিন পর জামিনে মুক্ত হন তারা।
ঢাকা/সুকান্ত/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবস থ ন স মন র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দরে ছিনতাইকারী সন্দেহে আজমীর আটক
বন্দরে ছিনতাইকারী সন্দেহে আজমীর (১৮) নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করেছে স্থানীয় জনতা।
আটককৃত ছিনতাইকারী আজমীর বন্দর উপজেলার কাজীবাড়ী এলাকার আসলাম মিয়ার ছেলে। আটককৃতকে আজমীরকে বুধবার দুপুরে ৫৪ ধারায় আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
এর আগে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ভোর সাড়ে ৪টায় বন্দর থানার নবীগঞ্জ বাগবাড়ি এলাকা থেকে তাকে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করে জনতা।
এলাকাবাসী তথ্য সূত্রে জানা গেছে, বন্দরে বিভিন্ন স্থানে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা আশংকা জনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বুধবার ভোরে নবীগঞ্জ বাগবাড়ি এলাকা থেকে ছিনতাইকারী সন্দেহে আজমীর নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করা হয়।