‘ইউরোপ আমাদের’—রিয়াল মাদ্রিদ বলতেই পারে। ইউরোপে স্প্যানিশ ক্লাবটির অর্ধেক অর্জনও তো নেই অন্য কোনো ক্লাবের। রেকর্ড ১৫ বারের চ্যাম্পিয়নরা ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতায় অনেক ‘প্রথম’ই যোগ করেছে যুগে যুগে।

এই টুর্নামেন্টে প্রথম চ্যাম্পিয়ন তারাই। শুধু প্রথম চ্যাম্পিয়ন বললে অবশ্য একটু ভুল হবে। প্রথম পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নও তারা। সেই ক্লাবটিই কাল রাতে ইতিহাদের ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে আরেকটি ‘প্রথম’ উপহার দিয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগ বা ইউরোপিয়ান কাপকে।

সিটিকে হারিয়ে ইউরোপের শীর্ষ মহাদেশীয় প্রতিযোগিতায় ৩০০তম জয় পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। আপাতত এই মাইলফলক ছোঁয়ার দৌড়ে কাছাকাছিও নেই অন্য কোনো ক্লাব। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বায়ার্ন মিউনিখ এখনো ২৫০-ই ছুঁতে পারেনি। জার্মান ক্লাবটি এখন পর্যন্ত জিতেছে ২৪১ ম্যাচ। রিয়াল ও বায়ার্ন ছাড়া ২০০ ম্যাচ জিতেছে শুধু বার্সেলোনা (২০৯)।

সবচেয়ে বেশি জয়ের মতো সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডটাও স্বাভাবিকভাবেই রিয়ালের। গতকাল পর্যন্ত ৪৯৮ ম্যাচ খেলা রিয়াল শেষ ষোলোতে উঠলে প্রথম দল হিসেবে ৫০০ ম্যাচের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলবে।

আরও পড়ুনভিনিসিয়ুসকে খুঁচিয়ে সিটিরই ‘রক্ত’ ঝরল৬ ঘণ্টা আগে

ম্যাচ খেলার রেকর্ডেও রিয়ালের পরেই অবস্থান বায়ার্নের। এ পর্যন্ত ৪০২ ম্যাচ খেলেছে জার্মান ক্লাবটি। ৩৫৭ ম্যাচ নিয়ে তিনে বার্সেলোনা।

রিয়াল সবার ওপরে মোট ড্র ও হারেও। এ পর্যন্ত ৮৫ ম্যাচ ড্র করেছে রিয়াল, হেরেছে ১১৩ ম্যাচে। হারে দুইয়ে পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকা (৯৮)। ড্রতে দুইয়ে বায়ার্ন (৭৯)।

আরও পড়ুনত্রিফলায় ম্লান হলান্ড, রিয়ালের প্রত্যাবর্তনের গল্পে এবার স্তব্ধ সিটি১২ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

'গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, মনটা ভরি গেইল'

‘বাহে, শনিবার রাইত ১০টার সময় ছাওয়াটার ব্যথা ওঠে। সে কি ব্যথা, আতালি পাতালি। গ্রামের দাই আসি অনেক চেষ্টা করিল। কই, কিছুই তো হইল না। এলা কি করং, অতো রাইতত হাসপাতাল যাইম কেমন করি! গাড়ি, ঘোড়া, রিকশা-কিছুই নাই। তারপর একখান অটোরিকশা জোগাড় করি ভোর ৫টার সময় ফুলবাড়ি থাকি লালমনিরহাট রওনা হইনো। শহরের সাপটানা বাজারের ক্লিনিকে হাজির হই হামরাগুলা। ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন করি মোর ছোট নাতনিক দুনিয়ার মুখ দেখায়ছে।'

নববর্ষের প্রথম প্রহরে জন্ম নেওয়া নাতনির সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জমিলা বেগম। বলতে থাকেন, ''বাহে, হামরা গরিব মানুষ, অতো কিছু বুঝি না, তোমরাগুলা এই গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, তাতে মনটা ভরি গেইল। হাউস করি নাতনির নাম রাখমো ‘বৈশাখি’।’’

লালমনিরহাট শহরের খোদেজা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সোমবার সকাল ৬টায় শাহ আলম ও হামিদা দম্পতির কোলজুড়ে আসে কন্যাশিশু। বাংলা বছরের প্রথম দিনে সন্তান উপহার পেয়ে তাদের পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। এটি তাদের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে শিমু নার্সারি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা কুমারপাড়া গ্রামের শাহ আলম মিয়া বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুরোনো খাতাপত্র, পত্রিকা, ভাঙ্গা টিন কিনে শহরে তা বিক্রি করেন। দিনে তিন থেকে চারশ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলে সংসার। পাঁচ শতকের বসতভিটায় তিন ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তিনি বসবাস করেন। বসতভিটার ওইটুকু জায়গা ছাড়া আর কিছুই নেই তার। তাই সন্তানকে ক্লিনিকে রেখে টাকার সন্ধানে ছুটছেন। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করতে হবে। শাহ আলম বলেন, ‘মুই বাহে হকার, দিন আনি দিন খাই। হামার নববর্ষ বলি কিছু নাই। দোয়া কইরবেন ছাওয়াক মুই নেখাপড়া শিখাইম। দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই। আল্লাহ সুস্থ রাখছে, তাতে হামরা খুশি।'

শাহ আলমের এসব কথা শুনে ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে থাকা নবজাতকের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করেছি। বাবা অটোরিকশা চালান। অভাবের সংসারে ইচ্ছা থাকার পরও লেখাপড়া করতে পারিনি। ২০১৪ বিয়ে হয়। পরের বছর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।' দুই মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি। 

ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ জানান, বাড়িতে অনেক চেষ্টা করেও হামিদার নরমাল ডেলিভারি করাতে পারেনি পরিবার। সময় ক্ষেপণ করায় বেশ সমস্যা হয়েছিল। পরে অস্ত্রোপচার করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য। তাকে সহায়তা করেন ডা. হাবিব। ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য জানান, মা ও শিশু এখন সুস্থ রয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ