ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল এনজিও কর্মকর্তার, আহত ৪
Published: 12th, February 2025 GMT
ঢাকার ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আলী আজগর (৪৭) নামে এক এনজিও কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। একই দুর্ঘটনায় প্রাইভেটকারে থাকা সাভার ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষিকাসহ ৩ শিক্ষার্থী ও প্রাইভেটকার চালক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বুধবার সকালে, ধামরাই-কালিয়াকৈর সড়কের বাঙ্গালপাড়া এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, কালিয়াকৈর থেকে সাভার ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ যাওয়ার পথে, প্রাইভেটকার মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে পতিত হয়। সংঘর্ষের পর, প্রাইভেটকারে উল্টে খাদে পড়ে যায় এবং মোটরসাইকেল আরোহী এনজিও কর্মকর্তা আলী আজগর গাড়ির নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
নিহত আলী আজগর ধামরাইয়ের সুতিপাড়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার নুরুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে। তিনি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসডিআই এর শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন, সাভার ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষিকা স্বরনিকা আলম (৩০), তার দুই মেয়ে জিম (৮) ও জাহিন (৬), ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী জুম (১৪) এবং প্রাইভেটকার চালক আলমগীর হোসেন। এদের মধ্যে শিক্ষিকা স্মরণিকা আলমের অবস্থা গুরুতর এবং অন্যদের চিকিৎসা চলছে। আহতরা সকলেই টাঙ্গাইল জেলার কালিয়াকৈর থানার হিজলহাটি গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয়দের মতে, সকাল ৭টার দিকে কালিয়াকৈর থেকে আসা প্রাইভেটকারটি ধামরাইয়ের বাঙ্গালপাড়া এলাকায় পৌঁছালে অপরদিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় প্রাইভেটকারটি খাদে পড়ে যায় এবং মোটরসাইকেল আরোহী আলী আজগর ঘটনাস্থলেই মারা যান।
ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাকবলিত যান দুটি জব্দ করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ২১টি শহীদ পরিবার ও আহত ৭ ব্যক্তির মধ্যে আর্থিক সহায়তার চেক হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. সায়েদুর রহমান।
অনুষ্ঠানে তিনটি শহীদ পরিবার ও তিনজন জুলাই যোদ্ধা বক্তব্য রাখেন। তাঁরা হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন। রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্তি, আর্থিক সহযোগিতা ও পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। জুলাইয়ের গণ-আন্দোলনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সব সময় ভাবি, যাঁদের কারণে, যাঁদের ত্যাগের বিনিময়ে দেশটাকে আমরা নতুন বাংলাদেশ বলার সাহস করছি, তাঁদের এই ত্যাগ কোনো নিক্তি দিয়ে মাপা যায় না।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের ইতিহাসের স্রষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আপনারা জীবন্ত ইতিহাস। মনের গভীর থেকে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যে জাতি ইতিহাসকে স্মরণ করতে পারে না, সে জাতি জাতি হিসেবে গড়ে ওঠে না।’
শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই স্বীকৃতিটা তিনি জাতির পক্ষ থেকে দিচ্ছেন। তাঁদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। আজকে থেকে তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের অংশ হলেন। এটা হলো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এর বাইরে তাঁদের দায়িত্ব সমাজের সবাইকে নিতে হবে।
সব হত্যাকাণ্ড ও গুম-খুনের বিচার হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বিচার তাৎক্ষণিকভাবে করতে গেলে অবিচার হয়ে যায়। বিচারের মূল জিনিসটা হলো, এটা সুবিচার হতে হবে...অবিচার যেন না হয়। আমরা অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই এই সংগ্রাম হয়েছে, এই আত্মত্যাগ হয়েছে। আমরা যদি অবিচারে নামি, তাহলে তাদের আর আমাদের মধ্যে তফাৎটা থাকল কোথায়? আমরা অবিচারে নামব না।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘যাঁরা অপরাধী, তাঁদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। যাঁরা অপরাধী নয়, তাঁদের সৎ পথে নিয়ে আসতে হবে।’
দেশে কোনো সহিংসতা ও হানাহানি যেন না হয়, সেদিকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানি, আপনাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল আরও আগেই আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কাজগুলো করতে পারব। আমাদের আন্তরিকতার কম ছিল না। আমাদের প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের প্রত্যেকে আপনাদের ন্যায্য সম্মাননা দেওয়ার জন্য কাজ করেছেন। সংকটকালীন সময়ে আমাদের দায়িত্ব নিতে হয়েছে, সে কারণে আপনাদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আমরা করতে পারিনি। এ কারণে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের জন্য সরকার গৃহীত কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদেরা ‘জুলাই শহীদ’ নামে অভিহিত হবেন। আহত ব্যক্তিরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে অভিহিত হবেন। পরিচয়পত্র পাবেন।
প্রতিটি শহীদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পাবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। আর ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাইয়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি প্রতিটি শহীদ পরিবারকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। শহীদ পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধা সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন।
জুলাই যোদ্ধারা দুটি মেডিকেল ক্যাটাগরি অনুযায়ী সুবিধা পাবেন। গুরুতর আহত ব্যক্তিদের ‘ক্যাটাগরি এ’ অনুযায়ী এককালীন ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-১৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। পাশাপাশি গুরুতর আহত প্রত্যেক জুলাই যোদ্ধা মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসাসুবিধা পাবেন। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাবেন। তাঁরা কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন–সুবিধা পাবেন।
‘ক্যাটাগরি বি’ অনুযায়ী, জুলাই যোদ্ধাদের এককালীন ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-১৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ১ লাখ টাকা দেওয়া হবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে। পাশাপাশি মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে। কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকারভিত্তিতে সরকারি-আধা সরকারি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
জুলাই যোদ্ধাদের পরিচয়পত্র প্রদান করা হবে। তাঁরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সুবিধাদি পাবেন।
এখন পর্যন্ত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ৮৩৪ জন শহীদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। এ ছাড়া আহত ব্যক্তিদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। খুব শিগগির তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।