ব্যাংকমালিকদের সমিতি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সাবেক সভাপতি ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার আদালতের কাছে অনুরোধ করেছেন, তিনি অসুস্থ। তাঁকে যেন রিমান্ডে দেওয়া না হয়। তিনি গণভবনে বাধ্য হয়ে গিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন।

অবশ্য ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ অন্যরা জুলাই গণহত্যার ষড়যন্ত্রকারী।

জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় নজরুল ইসলাম মজুমদারকে আজ বুধবার সকালে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে নেওয়া হয়। সকাল পৌনে ১০টার দিকে আদালতে গিয়ে দেখা যায়, নজরুল ইসলাম মজুমদারের মুখে মাস্ক, মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, পরনে পাঞ্জাবি। পায়ে কেডস (জুতা)।

হাজতখানা থেকে যখন নজরুল ইসলাম মজুমদারকে নিয়ে পুলিশ আদালতের সামনে আসে, তখন তাঁর ডান হাতে একটি ফাইল। ফাইলের ভেতর কিছু কাগজ।

নজরুল ইসলাম মজুমদারের পেছনে ছিলেন সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।

সময় তখন ১০টা। কাঠগড়ার এক পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। বিচারক এজলাসে আসেননি। এ পর্যায়ে নজরুল ইসলাম তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। বিচারক এজলাসে প্রবেশ করেন ১০টা ৫ মিনিটে। তখন বিচারকের পাশে দাঁড়ানো একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলতে থাকেন, ‘আসামি নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা রয়েছে।’

পুলিশের মুখ থেকে নিজের নাম শোনার পর নজরুল ইসলাম মজুমদার কাঠগড়ার উত্তর পাশে এগিয়ে যান। এ সময় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতে নজরুল ইসলাম মজুমদারকে রিমান্ডে নেওয়ার সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে শুরু করেন। তিনি আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আপনার সামনে যে আসামি দাঁড়িয়ে, তিনি একজন ব্যবসায়ী। এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা যখন আন্দোলন করছিলেন, তখন নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ব্যবসায়ীরা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। এই আসামি শেখ হাসিনাকে অভয় দিয়েছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার এই আন্দোলনকে দমাতে হবে। ব্যবসায়ীরা এ সরকারের সঙ্গে আছে।’

পিপি যখন কথা বলছিলেন, তখন নজরুল ইসলাম মজুমদার বারবার বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন। তিনি বেশ কয়েকবার ডান হাত উঁচু করে বিচারকের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘মাই লর্ড, আমি কি কিছু বলতে পারি?’

তখন বিচারক নজরুল ইসলাম মজুমদারকে বলেন, ‘আপনার আইনজীবী রয়েছে, যা বলার, তিনি আপনার পক্ষে বলবেন।’ বিচারকের এ কথা শোনার পর নজরুল ইসলাম মজুমদার চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন।

পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, ‘যখন কোনো আসামিকে আদালতে আনা হয়, তখন ওনারা বড় বড় বক্তৃতা করেন। বলতে শুরু করেন, তাঁরা কেউই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিলেন না। বাস্তবতা হচ্ছে, নজরুল ইসলাম মজুমদার শেখ হাসিনার অন্যতম একজন সহযোগী। তিনি ১৫ বছরে শেখ হাসিনার সহযোগী হয়ে অনেক অবৈধ প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। অনেক অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিদেশেও সম্পদ পাচার করেছেন তিনি।’

ওমর ফারুক ফারুকী আরও বলেন, ‘মাননীয় আদালত, জুলাই-আগস্টে নির্বিচার ছাত্র–জনতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ অন্য যাঁরা শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যাঁরা শেখ হাসিনা সরকারকে টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন, তাঁরা জুলাই–আগস্ট গণহত্যার অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী। এ কথা বলে ছাড় পাওয়ার উপায় নেই যে আমরা তো হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলাম না। আমাদের আইনে সরাসরি যে ব্যক্তি গুলি করে হত্যা করেন, তাঁর যে শাস্তি, একই শাস্তি যে বা যাঁরা এ হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকেন।’

পিপি ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের সপক্ষে একের পর এক যুক্তি তুলে ধরার সময় নজরুল ইসলাম মজুমদার আবার হাত উঁচু করেন। বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘মাননীয় আদালত আমার কিছু কথা আছে।’

নজরুল ইসলাম মজুমদার আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমার একটা অপারেশন হয়েছে। আমি এক মাস যাবৎ হাসপাতালে ছিলাম। আমাকে রিমান্ডে দিয়েন না। দয়া করে আমাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেবেন।’

নজরুল ইসলাম মজুমদার চিকিৎসা–সংক্রান্ত তাঁর কাগজপত্র আদালতকে দেখান। তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে নিয়ে পিপি সাহেব যেসব কথা বলেছেন, তার সব কটি সঠিক নয়। মাননীয় আদালত, আমার ভাই হীরু (সাইফুল ইসলাম হীরু) লাকসামের এমপি ছিলেন। তাঁকেও শেখ হাসিনার আমলে গুম করে হত্যা করা হয়েছে। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গণভবনে বাধ্য হয়ে ওই বক্তব্য দিয়েছিলাম।’

নজরুল ইসলাম মজুমদারের রিমান্ডের বিরোধিতা করে এরপর আদালতে বক্তব্য দেন তাঁর আইনজীবীরা। আইনজীবী মাহবুব ইসলাম মজুমদার আদালতকে বলেন, নজরুল ইসলাম মজুমদারের মক্কেলের হার্টে রিং (স্টেন্ট) পরানো। কারাগারে থাকা অবস্থায় রিং পরানো হয়েছে। এর আগেও তাঁকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তিনি কোনো ধরনের হত্যাকাণ্ড কিংবা কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন।

নজরুল ইসলাম মজুমদারের আইনজীবী মাহবুব ইসলাম মজুমদার আদালতকে আরও বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমার মক্কেল একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তাঁর গড়ে তোলা শিল্পপ্রতিষ্ঠান নাসা গ্রুপে ৫০ হাজারের অধিক লোক চাকরি করেন। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাঁচ লাখ লোক নাসা গ্রুপের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক মাসের ৭ তারিখে বেতন দিতে হয়। ওনার শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে কোনোভাবে তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ নেই।’

উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত নজরুল ইসলাম মজুমদারকে পৃথক দুটি হত্যা মামলায় ৫ দিন করে মোট ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। এ সময় নজরুল ইসলাম মজুমদারকে বিমর্ষ দেখা যায়।

চুপচাপ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান জ্যোতি আজ চুপচাপ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। এদিন ধানমন্ডি থানার একটি চাঁদাবাজির মামলায় তাঁকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ।

মোদাচ্ছের খানের রিমান্ডের সপক্ষে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি আদালতকে বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ছিলেন শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী। তিনি যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তাঁর ছেলে চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড জড়িত ছিলেন।

অবশ্য মোদাচ্ছের খানের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত নন।

উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মোদাচ্ছের খানকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।

আদালতের আদেশের পর বেলা ১১টার দিকে নজরুল ইসলাম মজুমদার, কামাল আহমেদ মজুমদার, শাফি মোদাচ্ছের খানদের আবার মাথায় হেলমেট পরিয়ে কাঠগড়া থেকে বের করে আদালতের বারান্দায় আনা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ জ ঞ স ব দ কর র ওমর ফ র ক ফ র ক ছ ত র জনত ষড়যন ত র র আইনজ ব ব যবস য় ক ঠগড়

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিনা ভোটে জয়ী হচ্ছেন সবাই

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকসহ ২১টি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। আগামী ১৬ এপ্রিল সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। 

আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীদের অভিযোগ, নির্বাচনে অংশ নিতে তারা ফরম নিতে পারেননি। ফরম নিতে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলেও জানান তারা।

গতকাল শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ছিল চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এই দিন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সবগুলো পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাওয়া যায়নি।

আরো পড়ুন:

নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার না রাখার কথা ভাবছে ইসি

বাপ ডাইক্কা নির্বাচন দেওন লাগব, বললেন বিএনপির ফজলুর রহমান

মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট তারিক আহমদ জানান, ২১টি পদের জন্য ২১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাইয়ে সবগুলোই উৎরে গেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সবাইকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।

মনোননয়ন জমা দেওয়া ২১টি পদের মধ্যে ১৪টি পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি কাজী মো. সিরু, অর্থ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, পাঠাগার সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফী বিনতে মোতালেব, ক্রীড়া সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন এবং সদস্য আহসান উল্লাহ, আসমা খানম, বিবি ফাতেমা, মেজবাহ উল আলম, রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, রাহিলা গুলশান ও সাজ্জাদ কামরুল হোসেন।

সাতটি পদে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সহ-সভাপতি আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুস, সহ-সম্পাদক ফজলুল বারী, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুল জব্বার এবং সদস্য শাহেদ হোসেন, হেলাল উদ্দিন, রোবায়তুল করিম ও মোহাম্মদ মোরশেদ।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী আইনজীবী মো. আবদুর রশীদ লোকমান বলেন, “নির্বাচনে অংশ নিতে আমরা ফরম নিতে পারিনি। দুপুর ও বিকেলে আমরা দুই দফায় সমিতির লাইব্রেরি থেকে মনোনয়ন ফরম কিনতে গিয়ে বাধার শিকার হয়েছি।” 

বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার বলেন, “আমরা ২১ জন ফরম নিয়েছি। অন্যরা ফরম না নিলে আমাদের তো কিছু করার নেই। তাদের সৎ সাহস নেই। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যারা ছাত্র-জনতার ওপর লাঠি নিয়ে হামলা করেছিল, তারা নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটে ভর্তিতে নতুন করে এমসিকিউ পরীক্ষা হবে
  • আদালতপাড়ায় এক হয়ে যুবককে পেটালেন সাবেক দুই স্ত্রী
  • ঢাবির ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আবার হবে
  • মডেল মেঘনা আলমের আটকাদেশ কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট
  • প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, সব পদে জয়ী বিএনপি-জামায়াতপন্থিরা
  • মেঘনা আলমকে আটকের ঘটনায় ৩৮ নাগরিকের নিন্দা
  • পয়লা বৈশাখের আয়োজন বাধাগ্রস্ত করার কোনো অধিকার নেই
  • চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিনা ভোটে জয়ী হচ্ছেন সবাই
  • ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ: যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের মুখে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
  • ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভের কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের মুখে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী