দেশে অনলাইনে ব্যবসা করে এক লাখের বেশি প্রতিষ্ঠান
Published: 12th, February 2025 GMT
দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার বাড়ছে। ফলে ঘরে বসেই এখন অনলাইনে কেনা যায় পছন্দের পণ্য। চাল, ডাল থেকে শুরু করে পোশাক-আশাক, দামি ফোন, ফ্রিজ, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি সবই এখন কমবেশি অনলাইনে কেনা যায়। এমনকি দেশে বসে অনলাইনে বিদেশ থেকেও পণ্য কেনার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের মধ্যে অনলাইনে পণ্য কিনলে এক-দুই দিনের মধ্যে তা হাতে পৌঁছে যায়। আবার দৈনন্দিন জীবনে মানুষের যাতায়াতকে সহজ করে দিয়েছে পাঠাও-উবারের মতো অনলাইননির্ভর সেবা। সব মিলিয়ে অনলাইননির্ভর ব্যবসা দিন দিন বাড়ছে। আর ব্যবসার বিস্তার বাড়তে থাকায় আর্থিক লেনদেন সহজ করতে অনলাইন ব্যাংকিংয়েরও বিস্তার ঘটছে। অনলাইননির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য ই-কর্মাস ও এফ কমার্স হিসেবে এরই মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে।
দেশে অনলাইননির্ভর প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ও এফ-কমার্স কী পরিমাণ প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে, প্রথমবারের মতো তার একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪ অনুসারে, দেশের ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৭৮টি প্রতিষ্ঠান নিজেদের সেবা ও পণ্য বেচাকেনা, লেনদেনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অনলাইন প্ল্যাটফর্মে করে থাকে।
এ বিষয়ে অর্থনৈতিক শুমারির উপপ্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। পণ্য কেনাবেচা থেকে শুরু করে রাইড শেয়ারিং, পার্সেল সেবা পেতেও এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন গ্রাহকেরা। এবারই প্রথমবারের মতো অর্থনৈতিক শুমারিতে এ ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যান তুলে আনা হয়েছে।
গ্রাহকসেবা সবচেয়ে এগিয়েবিবিএস বলছে, বর্তমানে দেশের ৫৭ হাজার ১৭৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে সেবা দেয়, যা মোট প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪৯ শতাংশ। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে রাইড শেয়ারিং, পার্সেল, কেনাকাটা সেবা ইত্যাদি। এ ধরনের একটি সেবা পাঠাও। দেশের অন্যতম সফল ও বড় সেবাভিত্তিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এটি। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১০ বছরেই এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পাঠাওয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, পাঠাও অ্যাপসের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় সাত কোটি রাইড বা পরিবহনসেবা দেওয়া হয়েছে। এ সেবা চালু হওয়ায় লাখ লাখ মানুষের বিকল্প আয়ের পথ তৈরি হয়েছে। দেশের বেকার যুবকদের অনেকের কাছে এখন রাইডিং শেয়ারিং সেবা আয়ের বিকল্প উৎস হয়ে উঠেছে।
পণ্য বিক্রিতে ৩৮% প্রতিষ্ঠানশাড়ি-জামা, প্যান্ট-শার্ট, গয়নাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যও এখন অনলাইনে বিক্রি করেন অনেক উদ্যোক্তা। বিবিএসের অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য অনুযায়ী অনলাইনে পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪৫ হাজার ৬১। এ সংখ্যা অনলাইনভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৮ শতাংশ।
আবার অনলাইনে গাড়ি-জমি, ফ্ল্যাট বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কম নয়। বিবিএস বলছে, দেশে এ ধরনের সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আছে ৬ হাজার ৬৭৫টি। এ ছাড়া ১৯ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পণ্য-সেবা বেচাকেনায় অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা দিয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, কোনো উদ্যোক্তা তাঁর শোরুমের পোশাক অনলাইনে ক্রেতার কাছে বিক্রি করলেন। ক্রেতা ওই পণ্যের মূল্য পরিশোধ করলেন অনলাইন ব্যাংক বা মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। কিংবা পণ্যের মূল্য সরাসরি পরিশোধে বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক কার্ডও ব্যবহার করেন ক্রেতারা। এ ধরনের সেবাকে অনলাইন ব্যাংকিং হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে বিবিএসের পরিসংখ্যানে।
অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান ঢাকায়বিবিএসের অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য অনুযায়ী, ব্যবসায়িক কার্যক্রমে অনলাইন সেবা দেয়, এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকায়। ঢাকায় এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৫ হাজার ৪৭৪টি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। সেখানে অনলাইনে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২২ হাজারের বেশি। আর খুলনায় এই ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স খ য ন এ ধরন র ব যবহ র র ব যবস ব ব এস
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথমবার যাত্রী নিয়ে যমুনা রেল সেতু পাড়ি দিলো ট্রেন
বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী নিয়ে যমুনা রেল সেতু প্রথমবারের মতো পাড়ি দিলো ট্রেন। এর মধ্য দিয়ে ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের নতুন রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলো।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা ১২ মিনিটে যমুনা রেল সেতু দিয়ে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে পাড়ি দেয়।
এই তথ্য নিশ্চিত করেন, যমুনা রেল সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান । তিনি জানান, সেতুর দুটি লাইনের মধ্যে একটি লাইনে আজ বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চালু হলো। পর্যায়ক্রমে শিডিউল অনুযায়ী বাকি ট্রেনগুলো চলবে। ফলে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে আর ট্রেন চলবে না।
তিনি আরও জানান, রেলসেতুতে দুটি লাইন থাকলেও আজ একটি লাইন দিয়েই উভয়দিকে ট্রেন চলাচল করবে। কাল ঢাকা থেকে যেতে ডান পাশের লাইন, অর্থাৎ সেতুর উত্তর পাশের লাইনটি দিয়ে ট্রেন চলবে।
১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়।
বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা নদীর ওপর উজানে আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকের ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতু নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন করে সরকার। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর রেল সেতুরটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০২১ সালের মার্চে রেল সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়।
প্রথমে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা নির্ধারিত হলেও পরে তা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থায়ন এসেছে দেশীয় উৎস থেকে এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি-জাইকা। দেশের বৃহত্তর এ রেল সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি ও আইএইচআই।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকের এ রেলসেতু ব্যবহারের জন্য ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পের শুরুতে এই সেতুর নাম ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছরের ডিসেম্বরে সেতুর নাম পাল্টে যমুনা রেল সেতু রাখা হয়।
এনজে