কোলন ও পাকস্থলীর ক্যানসার ঠেকাতে যেসব অভ্যাস করতে হবে
Published: 12th, February 2025 GMT
প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ২ কোটি মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়, মারা যায় ৯৭ লাখ। মারা যাওয়া রোগীদের ৭০ শতাংশই উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশের বাসিন্দা। বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয় আর মারা যায় ১ লাখ ১৬ হাজারের বেশি।
কোলন ক্যানসারে বিশ্বে প্রতিবছর ১৯ লাখ ২৬ হাজার (৯ দশমিক ৬ শতাংশ) মানুষ আক্রান্ত হয় এবং ৯ লাখ ৪ হাজার মানুষ মারা যায়। প্রতিবছর বিশ্বে ৯ লাখ ৬৯ হাজার মানুষ পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হয় আর মারা যায় ৬ লাখ ৬০ হাজার।
বাংলাদেশে কোলন ও পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার ক্রমেই বাড়ছে। এর কারণ আমাদের জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস। গ্লোবোকান ২০২২ অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতিবছর পাকস্থলী ও কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৮ হাজার ৩৬৫ ও ৫ হাজার ৭২৩ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৭ হাজার ৩৫৯ ও ৩ হাজার ৪৫৭। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস যেমন উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং আঁশযুক্ত খাবারের অভাব কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপানও এই ঝুঁকি বাড়ায়।
পাকস্থলীর ক্যানসারের জন্যও এসব কারণ দায়ী। হেলিকোব্যাকটর পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, ধূমপান, উচ্চ লবণযুক্ত এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার পাকস্থলী ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। প্রাথমিক অবস্থায় এই ক্যানসার শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব।
জীবনধারার পরিবর্তন ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এসব ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রচুর ফলমূল ও সবজি রাখা, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা কোলন ও পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক।
সর্বোপরি, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্তকরণ ক্যানসার প্রতিরোধ ও নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সচেতনতা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারার মাধ্যমে আমরা কোলন ও পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারি।
কলোরেক্টাল ও পাকস্থলী ক্যানসারের সব রকম চিকিৎসা ও ওষুধ দেশেই বিদ্যমান। সুতরাং, অহেতুক আতঙ্কিত হয়ে বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। নিজে সচেতন হতে হবে, অন্যকেও সচেতন করতে হবে, যাতে প্রাথমিক পর্যায়ে কোলন ও পাকস্থলী ক্যানসার ধরা পড়ে এবং দেশেই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা যায়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নওগাঁ মেডিকেল কলেজ বন্ধ হলে চাল-আম সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি
নওগাঁ মেডিকেল কলেজ বন্ধ করা হলে চাল ও আম সরবরাহ বন্ধসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নওগাঁ মেডিকেল কলেজ রক্ষা আন্দোলন কমিটি। আজ শনিবার দুপুরে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ বন্ধের অপচেষ্টার প্রতিবাদে ডাকা প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
নওগাঁ জেলার সর্বস্তরের জনগণ ও নওগাঁ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, বিএনপি, জামায়াত, বাসদ, একুশে পরিষদ নওগাঁসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার বিকেলে নওগাঁ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের আহ্বানে নওগাঁ মেডিকেল কলেজের চলমান ইস্যু নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নওগাঁ মেডিকেল বন্ধের অপচেষ্টা রুখতে বিএমএ নওগাঁর সভাপতি ইস্কেন্দার হোসেনকে আহ্বায়ক করে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ রক্ষা আন্দোলন কমিটি গঠিত হয়।
নওগাঁ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মুক্তার হোসেন বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে তাঁরা জেনেছেন নতুন যে ছয়টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে, সেগুলোর মান যে পর্যায়ে উন্নত হওয়ার কথা ছিল সেই পর্যায়ে নাকি আসেনি। যার কারণে সরকার এসব কলেজের শিক্ষার্থীদের অন্য মেডিকেল কলেজে নিয়ে নেবে। এরপর এই ছয়টি মেডিকেল কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে এখনো বন্ধের চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
নওগাঁ মেডিকেল কলেজ রক্ষা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক ইস্কেন্দার হোসেনের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসমবায়বিষয়ক সম্পাদক, নওগাঁ পৌরসভার সাবেক মেয়র নজমুল হক প্রমুখ।
সমাবেশে ইস্কেন্দার হোসেন বলেন, ‘নওগাঁ মেডিকেল কলেজ কখনোই মানহীন হতে পারে না। আমাদের এখানে শিক্ষার্থী অনুপাতে প্রতি চারজন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক আছে। আমার মনে হয় না এটি বাংলাদেশের আর কোনো মেডিকেল কলেজে আছে। এখানে যাঁরা শিক্ষক আছেন তাঁরা সবাই উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন। রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যে ২৬টি মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা হয় সেই পরীক্ষায় বরাবরই নওগাঁ মেডিকেল কলেজ প্রথম স্থান কিংবা দ্বিতীয় স্থানে থাকে। ভালো ফলাফল সত্ত্বেও এই মেডিকেল কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত সরকারের হঠকারিতা। এই কলেজ বন্ধ করা হলে নওগাঁ থেকে চাল, আম সরবরাহ বন্ধ, অনশনসহ কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
সমাবেশে বক্তারা বলেন, শুধু ভবন না থাকা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান যাচাইয়ের মাপকাঠি হতে পারে না। সরকারি প্রতিষ্ঠান মানহীন হলে এর দায়ভার সরকারের। মান উন্নয়ন না করে উল্টো সরকার যে মানহীন আখ্যা দিয়ে মেডিকেল কলেজ বন্ধ করতে যাচ্ছে, এটি হঠকারী সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছুই না। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে মেডিকেল শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতের বিশাল ঘাটতি তৈরি হবে। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা সংকুচিত হয়ে পড়বে।