বরিশালে খেয়াঘাটের দ্বন্দ্বের জেরে চাচাকে খুন, ১০ দিন পর নদী থেকে লাশ উদ্ধার
Published: 12th, February 2025 GMT
বরিশালের উজিরপুরে সন্ধ্যা নদীতে ট্রলারসহ নিখোঁজ হওয়ার ১০ দিন পর চালক মাহবুব হাওলাদারের (৫২) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাবুগঞ্জের সন্ধ্যা নদীর মোল্লারহাট–সংলগ্ন থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। মাহবুব উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের মুণ্ডপাশা গ্রামের সেকান্দার আলী হাওলাদারের ছেলে।
পুলিশ জানায়, উজিরপুরের শিকারপুর খেয়াঘাট নিয়ে পারিবারিক বিরোধের জের ধরে মাহবুবকে খুন করে পাথর বেঁধে লাশ সন্ধ্যা নদীতে ফেলে দিয়েছিলেন তাঁর ভাতিজা সুজন হাওলাদার। এ ঘটনায় নিহত মাহবুবের আপন ছোট ভাই শহিদুল ইসলামের ছেলে সুজন হাওলাদার, তাঁর মামাতো ভাই রিয়াদ হোসেন, বন্ধু নাঈম (১) ও নাঈম (২), তাসিন এবং অপর একজনসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের আটজন আসামির মধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। গ্রেপ্তার আসামিরা আজ বুধবার দুপুরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। চাচাকে হত্যার পর তাঁর ট্রলারটি বিক্রি করে দিয়েছেন ভাতিজা সুজন।
মাহবুব নিখোঁজ হওয়ার পর স্বজনেরা অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাঁর সন্ধান পাননি। পরে একটি সূত্রে পরিবার জানতে পারে, ৩১ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে বাবুগঞ্জের রাহুতকাঠি খেয়াঘাট থেকে উজিরপুরের শিকারপুর বন্দরে আসার জন্য ৭/৮ জন যুবক মাহবুবের ট্রলারে ওঠেন। এর পর থেকে ট্রলারসহ নিখোঁজ হন মাহবুব। পরে পরিবার সন্দেহ করে মাহবুবকে অপহরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় গত ১ ফেব্রুয়ারি মাহবুবের বড় ভাই জামাল হোসেন হাওলাদার বাদী হয়ে বাবুগঞ্জ থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাতনামা সাত–আটজনকে আসামি করা হয়।
পুলিশ জানায়, মাহবুব অপহরণ হওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের হওয়ার পর বাবুগঞ্জ থানার পুলিশ এই ঘটনায় নিবিড় তদন্ত শুরু করে। এ সময় বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে কয়েকজনকে সন্দেহ করে তাদের নজরদারিতে রাখে তদন্তকারীরা। তদন্তের সূত্র ধরে সন্দেহভাজনদের ব্যাপারে অধিকতর নিশ্চিত হয়ে গত সোমবার রাতে অপহৃত মাহবুবের ছোট ভাই শহিদুল ইসলাম হাওলাদার, তাঁর ছেলে সুজন হাওলাদারকে আটক করা হয়। পরে সুজনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে একপর্যায়ে চাচাকে হত্যা করে পাথর বেঁধে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় তাঁর সঙ্গে যারা ছিল তাদের নামও জানায়। এরপর একে একে বাকি পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাহবুবের ছোট ভাই শহিদুল ইসলামকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল ইসল ম ঘটন য় হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
মডেল মেঘনা আলম কেন নিরাপত্তা হেফাজতে, জানাল পুলিশ
মডেল মেঘনা আলমকে অপহরণের যে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি)। তাঁকে গ্রেপ্তার ও নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়ার কারণ জানিয়ে শুক্রবার গণমাধ্যমে একটি বার্তা পাঠিয়েছে ডিএমপি।
এতে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্ক মিথ্যাচার ছড়ানোর মাধ্যমে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক অবনতির অপচেষ্টা এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে মেঘনা আলমকে সকল আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাঁকে অপহরণ করার অভিযোগ সঠিক নয়। আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার তাঁর রয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে মেঘনা আলমের লাইভ চলার মধ্যেই তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী বাসার ‘দরজা ভেঙে’ পুলিশ পরিচয়ধারীরা ভেতরে প্রবেশের পরপরই লাইভটি বন্ধ হয়ে যায়। ১২ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলা লাইভটি এরপর ডিলিটও হয়ে যায়। ওই দিন রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বাসা থেকে তাঁকে আটকের পর কারাগারে পাঠানো হয়। মিস আর্থ বাংলাদেশ-২০২০ বিজয়ী এ মডেলকে ডিটেনশন আইনে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার রাতে শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ এ আদেশ দেন। শুক্রবার আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ডিটেনশন আইনে সরকার কোনো ব্যক্তিকে আদালতের আনুষ্ঠানিক বিচার ছাড়াই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আটক বা বন্দি করতে পারে। এ ধরনের আইন সাধারণত জননিরাপত্তা, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে প্রয়োগ করা হয়। আদালত সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে ১০টায় মেঘনা আলমকে আদালতে হাজির করে ডিবি পুলিশ। পরে ডিবি পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আদালতের আদেশের বরাতে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২ (এফ) ধারায় জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি ক্ষতিকর কাজ থেকে বিরত করার জন্য এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(১) ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে মেঘনা আলমকে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এ আটকাদেশ স্বাক্ষরের দিন থেকে ৩০ দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রাখার আদেশ দেওয়া হয়। পরে তাঁকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।
তাকে আটকের বিষয়ে ভাটারা থানার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বুধবার মেঘনা আলমকে আটকের জন্য বসুন্ধরা এলাকায় এসেছিলেন। সঙ্গে ভাটারা থানার পুলিশ সদস্যরাও ছিলেন। প্রথমে তিনি দরজা খুলতে চাননি। পরে তাকে আটক করে মিন্টো রোডে নিয়ে যাওয়া হয়।
মডেল ও মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেঘনা আলম ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর মিস আর্থ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন।