দশম গ্রেডের আন্দোলনের অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু কথা
Published: 12th, February 2025 GMT
কষ্ট আর হাহাকার হৃদয়ে ধারণ করে দশম গ্রেড নিয়ে আন্দোলনের অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু কথা বলা প্রয়োজন বলে মনে করছি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড প্রাণের দাবি; অত্যন্ত নূন্যতম একটি চাওয়া। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে মাস্টার্স কমপ্লিট করে এসে ১৩ গ্রেডের বেতন স্কেলে যেখানে সর্বসাকুল্যে ১৭,৫০০ টাকা দিয়ে চাকরি জীবন শুরু হয়, কীভাবে মেধাবীরা এই ডিপার্টমেন্টে আকৃষ্ট হবে? এটি একটি ব্লক পোস্ট, সারাজীবন চাকরি করে একজন শিক্ষক সহকারী হিসেবেই চাকরি জীবনের ইতি টানেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক, অবমাননাকর। যেখানে এতো বঞ্চনা, শোষণ, সেখানে প্রহসনমূলক সহপ্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টি ঠিক কতটা বাঞ্ছনীয়, সুশীল সমাজের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম। এই ডিপার্টমেন্ট যুগ যুগ ধরে শোষিত, বঞ্চিত। শিক্ষকতা এখন নামেই শুধু একটি মহান পেশা; অথচ এই সেক্টরের শিক্ষকেরা যুগ যুগ ধরে যাতাকলে নিষ্পেষিত।
This Primary department have been being deprived decades after decades, This is the proper time to bring down all the shackles, all the disparity of this department.
আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। মর্যাদা আদায়ের লড়াইয়ে আমরা আজ বদ্ধপরিকর। আমি এই পেশায় আসার আগে কলেজে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ইংরেজি বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি প্রায় ১০ বছরেরও বেশি। শতভাগ মেধার ভিত্তিতে ২০২০-এর নিয়োগে ২০২৩ সালে এখানে যোগদান করি। এখানে আসার আগে প্রাথমিকের, চিত্রটা আমার কাছে সুস্পষ্ট ছিলো না। এখানকার শিক্ষকরা ঠিক কতটা শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত আমার জানা ছিলো না। সরকারি চাকরি, চাকরির নিশ্চয়তার কথা চিন্তা করে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র লেকচারার পদ ছেড়ে এখানে আসা। জরিপ করলে এমন হাজারো প্রভাষক পাওয়া যাবে এই ডিপার্টমেন্টে।
এখানে ৯০ শতাংশ শিক্ষকই যোগ্য ও দক্ষ। বিগত কয়েক বছর ধরেই এখানে নিয়োগ হয় স্নাতক পাশ (২য় বিভাগ) এর ভিত্তিতে, অথচ বেতন কাঠামো মোটেও আকর্ষণীয় নয়, যার জন্য মেধাবীরা এখানে আসছে, কিন্তু থাকছে না। আমার সাথে নিয়োগকৃত অনেকেই ব্যাংক, বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চলে গেছে; অনেকেই চলে যাবে। এই বিষয়গুলো সর্বজনবিদিত। বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে কর্মকর্তারাও বলেন, বেটার অপশন পেলে চলে যেতে। তাহলে আমার প্রশ্ন- এই ডিপার্টমেন্টে থাকবে কারা? প্রাথমিক শিক্ষা হলো সকল শিক্ষার মূল ভিত্তি। অতএব এখানে অনেক বেশি ইনভেস্ট করা উচিত, ঠিক যেভাবে ১৫-২০ তলা বিল্ডিংয়ের বেজমেন্টে বিনিয়োগ করা হয়। যেখানে কোমলমতি শিশুর ভিত্তি গড়ে ওঠে, সেই খাতে বরাদ্দ এতো কম কেনো? সেই খাতের শিক্ষকরা মানসম্মত জীবন যাপন করতে পারছেন না কেনো? শিক্ষক কেন ৩য় শ্রেণির? থার্ড ক্লাস কাতারের শিক্ষকদের দিয়ে ১ম শ্রেণির নাগরিক তৈরি করার আশা করা কি ঠিক?
দশম গ্রেড দিয়ে মেধাবীদের যে এখানে ধরে রাখছেন না, এই ডিপার্টমেন্টটা যাদের জন্য, যাদের জন্য আপনি, আমি, TEO, ATEO, সচিব, আমলারা, শিক্ষা উপদেষ্টা পর্যন্ত তাদের নিয়ে কতটুকু ভাবছেন? প্রাথমিকের শিক্ষকদের, হাতে থেকে অক্ষরজ্ঞান নিয়ে; আজ সেই কলম তাদের বিরুদ্ধেই ধরেছেন? আমি বলব, যে প্রাইমারির জীর্ণশীর্ণ মাষ্টাররা কলম ধরতে শিখিয়েছে, সময় এসেছে কলমের খোঁচায় দশম গ্রেড দিয়ে ঋণ শোধ করার।-এটা আপনারা আমাদের ভিক্ষা দেবেন না। এটা আপনাদের গুরুদক্ষিণা। দৈনিক ৬.৬৬ টাকা টিফিন ভাতা কি করে দিতে পারেন আপনারা?
আমরা প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হবার যোগ্য। দশম গ্রেডের আন্দোলন বিগত কয়েক বছর ধরেই চলে আসছে। আমরা জেলা পর্যায়ে মানববন্ধন থেকে শুরু করে স্মারকলিপি প্রদান করার সমস্ত ধাপ অতিক্রম করেছি। দেশের ৬৪টি জেলা থেকেই স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। তারপরও প্রশাসনের এই যে নির্লিপ্ত আচরণ আজ আমাদের সত্যিই ভাবিয়ে তুলেছে, আমাদের রাজপথে নামতে বাধ্য করেছে এটা আমাদের জন্য সত্যিই হতাশাব্যঞ্জক। সম্মান, মর্যাদা, অধিকার যাদের প্রাপ্য, তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আজ চিৎকার করে কাঁদে কেনো? এ লজ্জা কার? এ দায় কার?
কয়েকটি তুলনামূলক প্রশ্ন উত্থাপন কররি। ডিপ্লোমা পাশ করে দশম গ্রেড পায় কি করে? ১৭ গ্রেড থেকে অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক দশম গ্রেডের মর্যাদা পায় কি করে? সচিবের ড্রাইভার শিক্ষকদের উপর ১২তম গ্রেড পায় কি করে? জাতির কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে বলতে চাই, আপনি বলেছেন রাষ্ট্রের সংস্কার করবেন। একটি রাষ্ট্রের সংস্কার করতে চাইলে সেই রাষ্ট্রের শিক্ষা খাতে সংস্কার সবচাইতে বেশি প্রয়োজন। অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রে একটি জরিপ উঠে এসেছে, ইউএস ডলারে হিসাব করলে মালদ্বীপের শিক্ষকরা পাচ্ছেন ৯৬৩ ইউএস ডলার, যেখানে বাঙালিরা পাচ্ছে মাত্র ১৭০ ইউএস ডলার; যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
শিক্ষাবিদদের এখানে প্রধান্য দিতে হবে। আমরা তাকেই চাই যে সাধারণ শিক্ষকদের নিয়ে ভাববে। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, প্রমোশনের পথ এতোটাই সুগম করা উচিত যাতে TEO, ATEO, DPEO থেকে শুরু করে শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষকদের মধ্য থেকেই যোগ্যতার ভিত্তিতে হবে, শিক্ষকরাই শিক্ষা অধিদপ্তর চালাবে; শিক্ষা সেক্টরে আমলা নির্ভরতা কমাতে হবে। তাহলেই এই দেশের শিক্ষাখাতে আমূল পরিবর্তন আসবে।
যারা প্রাইমারির শিশুদের সঙ্গে কিন্ডারগার্টেন ও ইংলিশ মিডিয়ামের শিশুদের তুলনা করেন, তাদের বলতে চাই, প্রাথমিকের অভিভাবকদের সাথে অন্যান্য অভিকাবকদের তুলনা করেছেন কি? প্রাথমিকের অভিভাবকরা কঠিন জীবনযুদ্ধে রত। তাদের অনেকে শিশুদের পড়াশোনার বিষয়ে উদাসীন। অতএব, কতটা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে প্রাথমিকের শিক্ষকরা শিশুদের জীবন মান উন্নয়নে সচেষ্ট থাকেন দয়া করে ভেবে দেখবেন। তাদের প্রাপ্য মর্যাদা, প্রাপ্য সম্মান বুঝিয়ে দিন। আমরা ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক’ পদ বাদ দিয়ে শতভাগ পদোন্নতিসহ দশম গ্রেড চাই । চাই-ই-চাই
লেখক: সহকারী শিক্ষক, ৭৭নং বাচামারা পূর্ব পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দৌলতপুর, মানিকগঞ্জ
তারা//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শ ক ষকর শ ক ষকদ র দশম গ র ড আম দ র র জন য সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টে ৮৭ লাখ টাকা প্রতারণা
প্রতারকচক্রের তৈরি করা ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট নামক মোবাইল অ্যাপে বিনিয়োগের কথা বলে ৮৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে রাজশাহীতে মামলা হয়েছে। সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বুধবার (১২ মার্চ) রাজশাহীর চন্দ্রিমা থানার আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) আদালতের বিচারক মামলাটি চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদী সাইফুল ইসলামের বাড়ি রাজশাহীর উপরভদ্রা এলাকায়। তার আইনজীবী শামীম আখতার হৃদয় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বুধবার মামলার আবেদন করার পর বৃহস্পতিবার আদালত মামলাটি চন্দ্রিমা থানার ওসিকে তদন্তের জন্য দিয়েছেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের বাংলাদেশ প্রধান সজীব কুমার ভৌমিক ওরফে মাহাদী হাসান (৩৩), কান্ট্রি লিডার মোতালেব হোসেন ভুঁইয়া (৩৫), রাজশাহী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ওয়াহেদুজ্জামান সোহাগ (৩৮), সোহাগের স্ত্রী ও রাজশাহী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ফাতেমাতুজ জহুরা মিলি (৩২), রাজশাহীর এজেন্ট মিঠুন মণ্ডল (৩৬), ওয়াজেদ আলী খেবির (৬০), মোজাহার আলী (৫৫) ও মো. ওবাইদুল্লাহ (৪৩)।
আরো পড়ুন:
সংঘর্ষে বিএনপিকর্মী নিহত
হত্যা মামলায় হুকুমের আসামি সাবেক মেয়র মিজান
‘ওসিকে বলেন আসতে, আমি ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রেসিডেন্ট’
তাদের মধ্যে সজীব কুমার ভৌমিকের বাড়ি নোয়াখালী। মোতালেবের বাড়ি লক্ষ্মীপুর, ওবাইদুল্লাহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা। বাকি আসামিদের বাড়ি রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায়।
মামলার বাদী সাইফুল ইসলাম বিনিয়োগ করেছিলেন ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া মামলার সাক্ষী জাকির হোসেন ১২ লাখ, শারমীন সুলতানা ২০ লাখ, তাহেরুল ইসলাম ৬ লাখ, রাজীব সাহা ১৭ লাখ, আনোয়ার হোসেন ৮ লাখ ও আশরাফুল রহমান ৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন বলে মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে। হাতিয়ে নেওয়া মোট টাকার পরিমাণ ৮৭ লাখ।
মামলার আরজিতে বলা হয়, আসামিরা প্রতারক। তারা ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট নামের একটি মোবাইল অ্যাপে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এই অ্যাপে বিনিয়োগ করলে প্রতি এক লাখ টাকার জন্য মাসে মাসে ১১ হাজার ২০০ টাকা মুনাফা আসতে থাকবে।
প্রতারকচক্র তাদের একটি সেমিনারে ডাকেন। মামলার বাদী ও সাক্ষীরা ওই সেমিনারে গেলে তাদের বিনিয়োগ করতে প্রলুব্ধ করা হয়। এরপর ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর তারা আসামিদের হাতে বিনিয়োগের টাকা তুলে দেন। তখন তারা মোবাইলে ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট অ্যাপ চালু করে দেন, কিন্তু এতে কখনো কোনো মুনাফা আসেনি। কথা ছিল, যে কোনো সময় বিনিয়োগকারীরা মূল টাকা তুলে নিতে পারবেন কিন্তু তারা সেই টাকাও তুলতে পারেননি।
এভাবে তারা প্রতারণার শিকার হন। হঠাৎ গত ২১ ফেব্রুয়ারি আসামি ওয়াহেদুজ্জামান সোহাগ, ফাতেমাতুজ জহুরা মিলি, ওয়াজেদ আলী খেবির ও মিঠুন মণ্ডলের সঙ্গে বাদী সাইফুল ইসলামের দেখা হয়। এ সময় তিনি টাকা ফেরত চাইলে তারা তা দেবেন না জানিয়ে দেন। ভবিষ্যতে টাকা চাইলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলেও তারা হুমকি দেন। ফলে তিনি এ মামলা করেন।
আইনজীবী শামীম আখতার হৃদয় জানান, ২০২৪ সালের শুরুতে রাজশাহীর আদালতে এ সংক্রান্ত কয়েকটি মামলা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছিল। এরমধ্যে নতুন একটি মামলা হলো। আগামী ২৯ এপ্রিল এ মামলার পরবর্তী ধার্য্য তারিখ রয়েছে।
ঢাকা/কেয়া/বকুল