গণরুমের প্রেমবিলাস: রক্তাক্ত ক্যাম্পাসের জীবন্ত আখ্যান
Published: 12th, February 2025 GMT
তরুণ কথাসাহিত্যিক রেজাউল ইসলামের ‘গণরুমের প্রেমবিলাস’ উপন্যাসটি হাতে নিয়ে পড়তে পড়তে বহুদিন পর আবার যেন আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম আমার প্রাণের ক্যাম্পাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে। উপন্যাসটির শুরুতেই তুহিন-মাহিরার নাটকীয় ভঙ্গির রোমান্টিক কথোপকথন আমাকে ক্রমেই টেনে নিয়ে যাচ্ছিল গল্পের গভীরে। তাদের দু’জনের মধ্যকার জীবনঘনিষ্ঠ আলাপে কোনো রকম কৃত্রিমতার ছাপ না থাকায় সবকিছুই মনে হচ্ছিল বাস্তবে ঘটছে। এখানেই লুকিয়ে আছে তরুণ এই লেখকের মুনশিয়ানা। একজন সার্থক লেখকই কেবল পারেন তার লেখনী দিয়ে কল্পনাকে বাস্তবের মতো করে ফুটিয়ে তুলতে। তাঁর সৃষ্ট তুহিন-মাহিরা জুটির অনবদ্য ও অকৃত্রিম কথোপকথন পড়তে পড়তে আমার কল্পনায় আসে ক্যাম্পাসের উন্মুক্ত সবুজ চত্বর, শাহবাগ থেকে কলাভবন, আর কলাভবন থেকে নীলক্ষেতের ব্যস্ততম সেই সড়কপথ।
উপন্যাসটির শুরুতে তুহিন-মাহিরার প্রাণবন্ত রোমান্টিক আলাপ আমাকে রোমান্টিসিজমের নৈসর্গিক ভেলায় ভাসিয়ে নিয়ে গেলেও আস্তে আস্তে সেই আনন্দযাত্রা বিষাদে রূপান্তরিত হতে থাকে, যখন তুহিন ও তার সহপাঠী হাসানের বিশ্ববিদ্যালয়ের হল জীবনের করুণ কাহিনি চলে আসে। আসলে শুরুতে নির্ভেজাল প্রেমের উপন্যাস মনে হলেও বাস্তবে এটি বিষাদে ভরপুর একটি রাজনৈতিক আলেখ্য। বস্তুত এই উপন্যাসের প্রধান বিষয়বস্তু হচ্ছে বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে যুগ যুগ ধরে চলে আসা লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির অশুভ চরিত্র। লেখক এখানে ক্যাম্পাসের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনের নেতাদের দ্বারা তুহিন ও হাসানের ওপর চালানো নির্যাতন ও নিপীড়নের চিত্র দিয়ে মূলত ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতন-নিপীড়নের একটি সামগ্রিক অবস্থা আঁকার চেষ্টা করেছেন।
ক্ষমতাসীন ফ্যাসিবাদী শক্তির ছাত্র সংগঠনের নেতাদের তৈরি ‘গণরুম’, ‘গেস্টরুম’ ও টর্চার সেলের অব্যক্ত ও নিষিদ্ধ গল্পগুলোকে জনসমক্ষে আনতেই তিনি মূলত এই উপন্যাসের পটভূমি নির্মাণ করেছেন। ‘নিষিদ্ধ’ গল্প এ জন্য বলছি, কারণ এ দেশের সাহিত্যাঙ্গনে এ ধরনের অতি স্পর্শকাতর রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে সেভাবে সাহিত্য রচনা হয় না। কিন্তু লেখক এখানে কোনোরূপ রাখঢাক ছাড়াই সেসব নির্যাতনের চিত্র স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। নির্যাতনের হুবহু বর্ণনা তুলে ধরতে তিনি এই বইয়ে ছাত্রনেতাদের কিছু অশ্লীল ও অশালীন শব্দ চয়ন করেছেন, যা হয়তো ক্ল্যাসিক সাহিত্যের মানদণ্ডে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয় না, তবে একটি ঘটনার অবিকৃত ও অবিকল চিত্র অঙ্কন করতে এ ধরনের শব্দ চয়ন যথার্থ বলেই আমি মনে করি।
‘গণরুমের প্রেমবিলাস’ উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে অধ্যাপক ড.
গণরুমের প্রেমবিলাস– এ ঘটনার নিখুঁত বর্ণনা, সঠিক শব্দ চয়ন, প্রাণবন্ত ও বুদ্ধিদীপ্ত কথোপকথন তৈরিতে ক্ল্যাসিক সাহিত্যের ব্যবহার, গল্পের প্রবহমানতা, নাটকীয় ভঙ্গিতে গল্পের শুরু ও সমাপ্তি– এ সবকিছুই আমাকে চমৎকৃত করেছে। তবে উপন্যাসের প্রধান প্রধান চরিত্র যেমন– তুহিন, মাহিরা ও হাসানের চরিত্র চিত্রণ আমার কাছে অপূর্ণাঙ্গ মনে হয়েছে। এই চরিত্রগুলোকে আরও নিখুঁতভাবে ও বৃহৎ পরিসরে ফুটিয়ে তোলার অবকাশ ছিল। এ ছাড়াও এই উপন্যাসের প্রধান নারী চরিত্র মাহিরার নামের প্রতি সেভাবে সুবিচার করা হয়নি, যেভাবে আসলে করার কথা ছিল। উপন্যাসটির হাসান-নবনীতা জুটির অপূর্ণাঙ্গ চরিত্র চিত্রায়ণও চোখে পড়ার মতো। তবে সার্বিক বিচারে আমার কাছে মনে হয়েছে বইটি পাঠকদের হৃদয়ে তার মুখ্য বার্তাটি ভালোভাবে পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে।
বই: গণরুমের প্রেমবিলাস
লেখক: রেজাউল ইসলাম
প্রকাশনী: রূপসী বাংলা
বিষয় শ্রেণি: সমকালীন উপন্যাস
পৃষ্ঠা: ১২০
মূল্য: ২৮০ টাকা
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
জামির হোসেন: সাংবাদিক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল উপন য স র প র র জন ত কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদা দাবির অডিও ফাঁসের পর জামায়াত নেতা বহিষ্কার
ফেনীতে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের কাছ থেকে চাঁদা দাবির অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় এক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁর নাম জাকির হোসেন মিয়া। তিনি জামায়াতের রুকন এবং দলের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ফেনী পৌরসভা শাখার সাবেক সহকারী সেক্রেটারি। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ফেনী জেলা শাখার প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক আ ন ম আবদুর রহিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাকির হোসেনকে বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনের শৃঙ্খলা ও নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় দলীয় গঠনতন্ত্রের ৬২ নম্বর ধারার ২ উপধারা অনুসারে জাকির হোসেন মিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এর আগে রোববার রাতে জামায়াত নেতা জাকির হোসেন মিয়ার সঙ্গে ফেনী আলিয়া কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসানের কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মাহমুদুল হাসান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। গত বছরের ৫ আগস্টের পর অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে অধ্যক্ষের পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। কয়েকটি মামলায়ও আসামি হন মাহমুদুল। জামায়াত নেতার সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওটি ২ মিনিট ৭ সেকেন্ডের। সেখানে মাদ্রাসায় স্বপদে ফিরে যাওয়া ও মামলা থেকে অব্যাহতির বিষয়ে জাকির হোসেনকে আগে একজনের মাধ্যমে টাকা দেওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন মাহমুদুল। এ ছাড়া জাকির হোসেন নতুন করে চাঁদা দাবি করেন।
জানতে চাইলে জেলা জামায়াতের আমির মুফতি আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে জাকির হোসেন মিয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জামায়াত ইসলামী কোনো ধরনের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। কোনো অনৈতিক কাজে জামায়াতের কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অডিওর সত্যতার বিষয়ে জানতে মাহমুদুল হাসানকে কল করা হলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। জাকির হাসান কল কল রিসিভ করেননি।