সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মৃত্যুর তথ্যে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু। এসময় আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। আহতদের বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনীসমূহের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে- তাদের ৪৪ জন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের সাবেক সরকার এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সহিংস উপাদানগুলোর পাশাপাশি, গত বছরের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের সময় পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাসমূহের সাথে জড়িত ছিল।

এম জি

.

উৎস: SunBD 24

এছাড়াও পড়ুন:

বিশেষ অভিযানে কারা ‘ ডেভিল’ বিবেচিত হচ্ছে?

রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই অন্যান্য ঘটনার মধ্যে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িও আক্রান্ত হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের আগে তা এড়ানো হয়তো সম্ভবপর ছিল না। কিন্তু এর ছয় মাস পর পুনরায় ওই বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে তা প্রায় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে স্বাভাবিক বলা যাবে না। ঘোষণা দিয়ে, দীর্ঘ সময় ধরে ঘটানো হয়েছে এটি। দেশের অন্যান্য স্থানেও ক্ষমতাচ্যুত নেতৃস্থানীয়দের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় অনুরূপ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এক পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকে এসেছে এসব থেকে বিরত থাকার ‘আহ্বান’-সংবলিত বিবৃতি। কিন্তু সরকারের কাজ তো যে কোনো বেআইনি কার্যক্রম ঠেকানো। 

এ পরিস্থিতির মধ্যেই গাজীপুরে ঘটে রক্তক্ষয়ী ঘটনা। ঘটনাটি অস্পষ্ট হলেও এতে সাবেক এক মন্ত্রীর বাড়িতে উপস্থিত তরুণরা প্রতিপক্ষের হাতে আক্রান্ত হয়েছে। হামলাকারীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে ‘ডাকাতির খবর’ পেয়ে কোনো পক্ষ ওখানে গিয়ে হাজির হলে সেটাও আইনের বরখেলাপ। এ জন্য তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। গাজীপুরের ওই ঘটনার পর শুরু হয়েছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস পেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে এমন পদক্ষেপই বলে দেয়– আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এতে ‘মব ভায়োলেন্স’ রাখছে বড় ভূমিকা। শুরু থেকে সরকার এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে চাঁদাবাজি, ডাকাতির মতো অপরাধও কমিয়ে আনা যেত। এ পরিস্থিতিতে ৩২ নম্বরের বাড়িসহ যেসব স্থাপনা ভাঙচুর হয়েছে, তাতে আইনের শাসন বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা আরও জোরদার হবে। বহির্বিশ্বেও নেতিবাচক বার্তা যাবে নতুন করে। বিশেষত ভারতের কিছু মিডিয়া এসব ঘিরে ইউনূস সরকারবিরোধী প্রচারণা আরও জোরদার করবে। 

একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ভারতে আশ্রিত শেখ হাসিনার বক্তব্য রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতাদের স্থাপনাগুলো আক্রান্ত। কিন্তু সেটা অজুহাত বলেই প্রতিভাত। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী তো মাঝেমধ্যেই এভাবে বক্তব্য প্রদানে উদ্যোগী হন। তাঁর কিছু ফোনালাপও প্রকাশ পায়। এতে নতুনত্ব কিছু নেই। এর প্রভাবও অনুল্লেখযোগ্য। তাঁর আহ্বানে দেশে বড় কিছু ঘটে যাবে, এমনটিও মনে হয় না। এ অবস্থায় শেখ হাসিনার মধ্যে কোনো ‘অনুশোচনা’ নেই বলে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর পিতার রেখে যাওয়া বাসভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়া কোনোমতেই যুক্তিযুক্ত নয়। ছাত্র আন্দোলন থেকে অন্তর্বর্তী সরকারে যোগদানকারী মাহফুজ আলমও এটাকে ‘হঠকারিতা’ বলে বর্ণনা করেছেন তাঁর ফেসবুক পোস্টে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক ধ্বংসযজ্ঞ সম্পন্ন। গণঅভ্যুত্থান ও এর মধ্য দিয়ে আসা সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী এমন কর্মকাণ্ড রোধে তারা সময়মতো উদ্যোগী হননি বলেই বরং এখন অভিযুক্ত হচ্ছেন। 

বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ধ্বংসযজ্ঞে অংশ নেয়নি, এটা লক্ষণীয়। তাদের একাংশ বরং এতে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আছে বলে সন্দেহ করছে। নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনের তরফ থেকেও এর নিন্দা করা হয়েছে। ‘কার কাছে দাবি জানাব’ বলে ২৬ বিশিষ্ট নাগরিকের বক্তব্য সবার নজর কাড়বে। তাদের বড় অংশই কিন্তু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ওই আন্দোলনে অসাধারণ ভূমিকা রাখা একাংশের ভেতর থেকে আসা হঠকারী কর্মসূচির বিরোধিতা তাদের করতে হচ্ছে এখন। তারা এও দেখতে পাচ্ছেন, সরকার এসব ক্ষেত্রে আইনানুগ ভূমিকা না রেখে দিয়ে যাচ্ছে বিবৃতি। প্রধান উপদেষ্টার বিবৃতির পরও কিন্তু একাধিক স্থানে অনুরূপ হামলা হয়েছে। 

এ অবস্থায় পরিচালিত বিশেষ অভিযানে কারা ‘ডেভিল’ বলে বিবেচিত হচ্ছে? ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর অনুসারীদের ভূমিকায় তাদের প্রতি ক্ষোভ স্বাভাবিক। এদের অপপ্রয়াস অবশ্যই রুখতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যারা চাঁদাবাজিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, তাদের দমন করাটাও কর্তব্য। স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর যারা ‘মব ভায়োলেন্স’ করে চলেছে, তারাও কোনো ইতিবাচক ভূমিকায় অবতীর্ণ নয়। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে, এমনকি অন্যায্য দাবি আদায়ের প্রবণতাও কমছে না। মাত্র কিছুদিন আগে প্রায় ৬ ঘণ্টা সারাদেশের সঙ্গে রাজধানীর রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখার মতো ঘটনাও ঘটে। এর পরপরই ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসকের কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশের নামে পালিত হলো ‘বুলডোজার কর্মসূচি’! 

নজিরবিহীন গণঅভ্যুত্থানের পর যখন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে সর্বক্ষেত্রে গতি আনার কথা, তখন এসব নৈরাজ্য যত কম হয় ততই মঙ্গল। এ অবস্থায় মাঠে থাকা সেনা সদস্যদের নিতে হবে বাড়তি ভূমিকা। নৈরাজ্য চলতে থাকলে আইনের শাসনে বিশ্বাসী জনসাধারণও গণঅভ্যুত্থানকারী শক্তির ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে। তারা বরং দেখতে চায়, নতুন পরিস্থিতিতে বাড়ছে জননিরাপত্তা এবং সবার সম্পদ আছে সুরক্ষিত। প্রধান উপদেষ্টার বিবৃতিতে এটাই গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে। উপর্যুপরি ভুয়া নির্বাচন করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ক্ষমতাচ্যুতদের বিচারের ধারাটি বরং এখন জোরদার হওয়ার কথা। গণঅভ্যুত্থানের ছয় মাস পর তাদের স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় কি সেটি ত্বরান্বিত হবে? তারা আর ন্যায়বিচার পাবেন না– উল্টো এ প্রচারণাই কি এতে জোরদার হবে না? এ অবস্থায় শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্রে উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বদানের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে দেশ-বিদেশে। নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের কারণে এ সরকারের প্রতি কিন্তু বিশেষ আগ্রহ রয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। সে কারণেও কারও মুখের দিকে না তাকিয়ে যে কোনো বেআইনি কার্যক্রম বন্ধে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। সেটা হতে হবে দৃশ্যমান। 

চলমান নৈরাজ্যের প্রভাব অর্থনীতির ওপরেও পড়ছে অবধারিতভাবে। স্বল্পকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণ যখন অনুপস্থিত, তখন এমন নৈরাজ্য চলতে থাকলে অর্থনীতি আরও স্থবির হয়ে পড়বে বৈ কি। স্থবির অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি কমে না এলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, সেটিই এখন মোকাবিলা করতে হচ্ছে জনগণকে। এ অবস্থায় কোনো পক্ষ নতুন করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে সেটা পরিস্থিতিকে জটিলতর করে তুলবে। আর তা হতে দিলে অন্তর্বর্তী সরকার বর্ণিত হবে ‘অস্তিত্বহীন’ বলে। সরকার পরিবর্তনের পর একাধিক শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা চলেছে দীর্ঘদিন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগে সেটা কমানো হলেও সরকার কিন্তু এর বাইরে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সেভাবে উদ্যোগী হয়নি। ছয় মাস পরও এ জন্য কেবল ক্ষমতাচ্যুতদের দায়ী করলে কি সেটা গ্রহণযোগ্য হবে? 

এ অবস্থায় ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ দল-মত নির্বিশেষে সব ডেভিলের বিরুদ্ধে পরিচালিত হলেই কেবল জনমনে স্বস্তি আসবে। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তীকালে যারা দায়িত্ব নিয়েছেন, ছয় মাস পর তাদের জন্য এটা বিশেষ পরীক্ষাও বটে। তাদের তো অচিরেই মানসম্মত নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। তার পরিবেশ সৃষ্টিতেও সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দমন করা জরুরি। তবে মানবাধিকার ও আইনি প্রক্রিয়া সমুন্নত রেখেই পরিচালনা করতে হবে অভিযান। এ সরকারের আমলেও নিরাপত্তা হেফাজতে সন্দেহজনক মৃত্যুর ঘটনায় সমালোচনা কিন্তু থেমে নেই। বিশেষ অভিযানে বিশেষ কোনো পক্ষের লোকজন বেশি আক্রান্ত হলে সেটা নিয়েও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এসব ঘিরে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের দিকে যাত্রাটি বিঘ্নিত কিংবা বিলম্বিত যেন না হয়, সেদিকেও রাখতে হবে দৃষ্টি। 

হাসান মামুন: সাংবাদিক, কলামিস্ট

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই-আগস্টে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষ হত্যা করা হয়েছে: জাতিসংঘ
  • ক্ষমতা ধরে রাখতেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নৃশংস হত্যাকাণ্ড: জাতিসংঘ
  • জুলাই-আগস্টে মানবাধিকার লঙ্ঘন: জাতিসংঘ মিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ আজ
  • ফরিদপুরে মঞ্চস্থ গণঅভ্যুত্থানের নাটক দ্য ডার্ক ক্রিস্টাল
  • বুলডোজার শোভাযাত্রা, আইনের শাসন ও নির্বিকার সরকার
  • অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের ডাক প্রধান উপদেষ্টার
  • খেলাধুলার মাধ্যমে উরুগুয়েকে সেতুবন্ধ গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
  • বিশেষ অভিযানে কারা ‘ ডেভিল’ বিবেচিত হচ্ছে?