রিকশার পাদানিতে গুলিবিদ্ধ নাফিসের সেই ছবির স্কেচ স্থান পেল জাতিসংঘের প্রতিবেদনের প্রচ্ছদে
Published: 12th, February 2025 GMT
গুলিবিদ্ধ গোলাম নাফিজ রিকশার পাদানিতে পড়ে আছে। রিকশাচালক নূর মোহাম্মদ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন।
গত ৪ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ এমন একটি ছবি তোলেন। ৪ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টার পর পত্রিকাটির প্রথম পাতায় ছাপা ১৭ বছর বয়সী নাফিজের এই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
সেই ছবি দেখেই নাফিজের মা-বাবা সন্তানের খোঁজ পান। যদিও মা–বাবা নাফিজের খোঁজ যখন পান, তখন সে আর বেঁচে ছিল না।
রিকশার পাদানিতে নাফিজের নিথর দেহ পড়ে থাকার সেই ছবির স্কেচ (আঁকা ছবি) এবার স্থান পেল জাতিসংঘের মানবাধিকার–বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে ১২৭ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ওই সময়ের নৃশংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিগত সরকার ও শাসক দল আওয়ামী লীগকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে।
গত ১২ আগস্ট প্রথম আলোয় ‘পাদানিতে ঝুলতে থাকা গুলিবিদ্ধ নাফিজ তখনো রিকশার রড ধরে ছিল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গুলিবিদ্ধ গোলাম নাফিজকে পুলিশ যখন রিকশার পাদানিতে তুলে দেয়, তখনো সে রিকশার রডটি হাত দিয়ে ধরে রেখেছিল। রিকশাচালক নূর মোহাম্মদ তাকে নিয়ে রাজধানীর ফার্মগেটের একটি হাসপাতালে ঢুকতে গেলে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বাধা দেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক। পরে ১৭ বছরের গোলাম নাফিজকে নিয়ে রিকশাচালক খামারবাড়ির দিকে চলে যান।
দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বাধার পরও রিকশার পাদানিতে ঝুলতে থাকা নাফিজের কয়েকটি ছবি তুলতে পেরেছিলেন। ৪ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টার পর পত্রিকাটির প্রথম পাতায় ছাপা নাফিজের একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ছবি দেখেই নাফিজের মা-বাবা সন্তানের খোঁজ পান।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘এখন মা-বাবা আর ওই ফটোসাংবাদিকের আক্ষেপ, যদি দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া যেত আর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যেত, তাহলে হয়তো ছেলেটিকে বাঁচানো সম্ভব হতো। গোলাম নাফিজ সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষে গুলিতে মারা যায়। সে রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। পরিবারসহ থাকত মহাখালীতে। দুই ভাই তারা। নাফিজ ছোট।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পাবনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদসহ ১৬৪ জনের নামে মামলা
সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে পাবনার বেড়া মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। সাঁথিয়া উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের সেলিম হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, গত শনিবার মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। তবে গতকাল রোববার রাতে মামলাটির কথা জানাজানি হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১ এপ্রিল বিকেল পাঁচটার দিকে বেড়া পৌর এলাকার কাগমাইরপাড়ায় আবু সাইয়িদের নিজ বাড়িতে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আবু সাইয়িদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ আসামি উপস্থিত ছিলেন। ওই সমাবেশে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন এলাকার সদস্য ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা–কমীরা রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র করেন। সেখানে প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র, পিস্তল, বন্দুকসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের জন্য দেশবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। মামলার সাক্ষী ও এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে আসামিদের নাম–ঠিকানা জোগাড় করতে সময় লাগায় এজাহার দায়ের করতে দেরি হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৬৪ জন আসামির মধ্যে আবু সাইয়িদকে এক নম্বর ও সাঁথিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মিরাজুল ইসলামকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের পাবনা-১ (সাঁথিয়া ও বেড়ার একাংশ) আসনের আওতাধীন বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদেরও আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অলিউর রহমান বলেন, ‘এটি মামলা হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আবু সাইয়িদ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাবনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য থাকার পাশাপাশি তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। একপর্যায়ে আবু সাইয়িদ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ২০১৮ সালে তিনি গণফোরামে যোগ দেন এবং ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পাবনা-১ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। সেই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হকের কাছে পরাজিত হন।আবু সাইয়িদ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাবনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য থাকার পাশাপাশি তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০০৮ সালে তাঁকে বাদ দিয়ে শামসুল হক টুকুকে (সাবেক ডেপুটি স্পিকার) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়। একপর্যায়ে আবু সাইয়িদ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ২০১৮ সালে তিনি গণফোরামে যোগ দেন এবং ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পাবনা-১ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। সেই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হকের কাছে পরাজিত হন। এরপর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গণফোরামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। সেই নির্বাচনেও তিনি শামসুল হকের কাছে পরাজিত হন।
গত বছর ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি ঢাকা থেকে তাঁর নির্বাচনী এলাকা বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় মাঝেমধ্যে আসতেন। এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে তিনি বেড়ায় এসে কাগমাইরপাড়ায় অবস্থিত তাঁর নিজ বাড়িতে ঈদের পরদিন (১ এপ্রিল) শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় সভার আয়াজন করেন। সেই সভায় তাঁর অনুসারীসহ আওয়ামী লীগের একাংশের অনেক নেতা–কর্মী যোগ দেন। এতে জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতা–কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। আবু সাইয়িদের নেতৃত্বে তাঁর বাড়িতে সমাবেশের প্রতিবাদে বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় একাধিক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন জামায়াতের নেতা–কর্মীরা। তাঁরা আবু সাইয়িদকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।