বছরে কোটি টাকা আয় করেন, এমন ৬৭ শতাংশ মানুষ করজালের বাইরে
Published: 12th, February 2025 GMT
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, বছরে কোটি টাকা আয় করেন, এমন ৬৭ শতাংশ মানুষ করজালের বাইরে। দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের আয় কোটি টাকার বেশি হলেও তাঁরা করজালে নেই। এমন ফাঁপা করজাল বা ক্ষুদ্র করজাল দিয়ে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানো যাবে না।
আজ বুধবার প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এক অনুষ্ঠানে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ কথাগুলো বলেন। ২০১৮ সালের সিপিডির একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে কোটি টাকা আয় করা মানুষের করজালের বাইরে থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪ ডটকম ‘ভোক্তার কাঁধে বাড়তি করের বোঝা: উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে। গুলশানের এমসিসিআই সম্মেলনকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সম্প্রতি শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর বাড়িয়ে সরকার দুর্নাম নিল বলে মন্তব্য করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য থেকে গত ছয় মাসে ৮৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি আছে। আইএমএফ চাপ দিচ্ছে রাজস্ব বাড়াতে। তাই করজাল না বাড়িয়ে সরকার পরোক্ষ কর বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক বলেন, রাজস্ব বৃদ্ধি করার জন্য সরকারের অন্য কোনো বিকল্প ছিল কি না, তা দেখতে হবে। কারণ, শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর বাড়ানোয় ১১ হাজার বা সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব পাওয়া যাবে বলা হয়েছে। এতে রাজস্বের ঘাটতি তেমন একটা পূরণ হবে না।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, ২০ থেকে ২৫ ধরে কর প্রশাসন অটোমেশন করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। সংস্কারে যেন কর প্রশাসনের কোনো আগ্রহ নেই। এখানে ব্যক্তিস্বার্থ জড়িত থাকতে পারে। নিজেদের এমন অসংগতি দূর করতে না পারলে কিংবা নিয়মের প্রতিপালন করতে না পারলে কর আদায় বাড়বে না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বা রাজস্ব খাতে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের প্রত্যাশা করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের উদ্যোগ নিলে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার এসে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে পারবে। তিনি সম্পদ কর আরোপের পক্ষেও মত দেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা অংশ নেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরাই যেন ভাতা পান
ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরাই যেন ভাতা-সুবিধা পান, তা বিবেচনায় রেখে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো সাজানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সফররত মিশন। এ ব্যাপারে কোনো কারিগরি সুবিধা লাগবে কি না, তা–ও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।
চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড়ের আগে আলোচনা করতে আইএমএফের এই মিশন ৬ এপ্রিল ঢাকায় এসেছে। ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে গত শনিবার তারা সচিবালয়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে। এতে আইএমএফ মিশনের তিনজন সদস্য অংশ নেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারণের কোনো উদ্যোগ আছে কি না সরকারের। এ বিষয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী এবং ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের নতুন কোনো সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল আছে কি না, তা–ও জানতে চেয়েছেন তাঁরা।
অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রকৃত উপকারভোগীরাই যেন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকেন, সে ব্যাপারে কাজ চলছে। এ নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কারিগরি সহায়তা আছে। আপাতত কোনো কারিগরি সহায়তা লাগবে না।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সরকার ৯২ পৃষ্ঠার একটি সামাজিক নিরাপত্তা বাজেট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল গত বছর। সেই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ১৪০টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি রয়েছে। এসব কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা।
তবে সরকারের দিক থেকে এমন কর্মসূচিকেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হিসেবে দেখানো হয়, যা আসলে এ ধরনের কর্মসূচি নয়। কোন কর্মসূচিগুলো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, কোনগুলো তা নয়—এ নিয়ে অর্থনীতিবিদদেরও ভিন্নমত রয়েছে। প্রকৃত কর্মসূচি হচ্ছে বয়স্ক ভাতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, কর্মজীবী মায়ের জন্য ভাতার মতো ১৪টি, যেগুলোর আওতায় নগদ সহায়তা দেওয়া হয়।
অথচ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের যে বৃত্তি দেওয়া হয়, সেটাকেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বলে দাবি করে সরকার। আবার অবসরভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন ও সঞ্চয়পত্রের সুদের একাংশ ইত্যাদিকেও দেখানো হয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হিসেবে। এসব খাতে ব্যয় হয় প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।
সরকার ২০১৫ সালে জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশলপত্র প্রণয়ন করলেও অনেক ক্ষেত্রে এর সঙ্গে চলমান সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী সংগতিপূর্ণ নয়। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ ২০১৬ সালেই তথ্য-উপাত্ত দিয়ে জানিয়েছিল যে দেশের ৬৪ শতাংশ দরিদ্র মানুষ সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচিগুলোর একটির সুবিধাও পায় না।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্পর্কিত উপদেষ্টা কমিটি সম্প্রতি একটি বৈঠক করেছে। এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী অর্থবছরে নগদ সহায়তা দেওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত কর্মসূচিগুলোতে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হবে। আইএমএফকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আসন্ন বাজেট বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করবেন বলে জানা গেছে।
সূত্রগুলো জানায়, এ দফার বৈঠকে আইএমএফ মিশনের সদস্যরা নোট নিয়েছেন। কাল মঙ্গলবার অর্থ বিভাগের সঙ্গে একই বিষয়ে আরেকটি বৈঠক রয়েছে। এ বৈঠক থেকে উঠে আসা তথ্যই আইএমএফের পর্যালোচনা প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকবে।