ঢাকা বিভাগের সংগ্রামী পাঁচজন নারী পেয়েছেন ‘অদম্য নারী পুরস্কার- ২০২৪’। বুধবার রাজধানীর দোয়েল চত্বরে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়নে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই পাঁচ নারীকে পুরস্কার তুলে দেন সমাজকল্যাণ এবং নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশীদ। 

পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী ক্যাটাগরিতে রাজবাড়ির স্বপ্না রানী ঘোষ, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জের মাসুদা আক্তার, সফল জননী ক্যাটাগরিতে কিশোরগঞ্জের সেলিনা মজিদ, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করা ফরিদপুরের লিপি বেগম এবং সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখায় ফরিদপুরের সামর্তবান। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে অনুষ্ঠান মঞ্চে সম্মাননা ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট এবং ২৫ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, মেয়েদের কথা বলতে গেলে আমরা নারীর অসহায়ত্বের কথা বেশি বলি। কিন্তু যদি এই দেশের ইতিহাসের দিকে তাকাই, তাহলে আমি নারীর বীরত্বকে দেখি। একাত্তরের দিকে তাকালেই আমি বীর নারীদের দেখতে পাই। আমাদের দেশের প্রবর্তনের পেছনে, দুর্যোগে, সংকটে সবসময় আমাদের নারীরা পুরুষের পাশে উজ্জ্বল হয়ে থেকেছেন।  

অর্থনীতি, কৃষি, পরিবার সর্বক্ষেত্রে নারীরা মেরদণ্ড হয়ে আছেন বলে নিজের অভিমত প্রকাশ করেন উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ। তিনি জানান, নারীরা অবদান রাখার পরেও তারা স্বীকৃতি পান না। গৃহস্থালি কাজে নারীরা দিনে গড়ে ১৮ ঘণ্টা সময় দেন। কিন্তু অর্থনীতিতে এর কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। 

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলার ৫৮ জন অদম্য নারী পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পান। সেখান থেকে ৫ জনকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ, মহিলা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান প্রমুখ। তারা বলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় অদম্য নারী সম্মাননার মাধ্যমে নারীদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করে। পরিবারে নারী যেমন থাকেন পুরুষও থাকেন। নারী পুরুষ সবাইকেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। বক্তারা নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভাই সম্পত্তি বেশি পেলে বোন, বাবা-মায়ের সব দায়িত্ব তাকে নিতে হবে’

পৈতৃক সম্পত্তি ভাইয়ের সমান পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী রুনা খান। গতকাল এ খবর নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান তিনি। এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে জোর চর্চা চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এরই মধ্যে চিত্রনায়িকা দিতি-সোহেল চৌধুরীর কন্যা লামিয়া চৌধুরী জানালেন, তারা দুই ভাই-বোনও পৈতৃক সম্পত্তি সমানভাবে পেয়েছেন।

লামিয়া চৌধুরী বিষয়টি নিয়ে নিজের ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সঙ্গে পোস্ট করেছেন রুনা খানকে নিয়ে প্রকাশিত খবরের স্ক্রিনশট। এ পোস্টে লামিয়া চৌধুরী বলেন, “এটাই তো স্বাভাবিক হওয়া উচিত। আমার আর আমার ভাইয়ের মধ্যে সব সমান সমান। আমাদের বাবা-মা এটাই চেয়েছেন আর আমাদের এভাবেই বড় করেছেন।”

প্রচলিত আইনের সমালোচনা করে লামিয়া চৌধুরী বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক, আইন আমাদেরকে অনুভব করায় আমরা সমান না। আর শুধু শুধু সবকিছু জটিল করে আমাদের সময় নষ্ট করে, দ্বি-গুণ সময় ব্যয় হয়। যেখানে মা স্পষ্ট বলে গিয়েছিলেন যে, আমরা সমান। আর এগুলো আমি দেশে থেকে সবকিছু করি। অথচ আমার এখানে শুনতে হয় যে, আমার ভ্যালু অর্ধেক। এসব ঠিক না।”

আরো পড়ুন:

আপনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে হত্যা করার চেষ্টা করছেন: জয়া

প্রশংসা কুড়াচ্ছে সাব্বির-কোনালের গান

সমানভাবে পৈতৃক সম্পত্তি বণ্টন করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গিয়ে নানাভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন লামিয়া ও তার ভাই। এ তথ্য স্মরণ করে লামিয়া চৌধুরী বলেন, “এসব কারণে যেরকম হেনস্তার শিকার হই, আমার ভাইয়ের আরো বেশি হেনস্তা হতে হয়েছে। কারণ ও দেশে থাকে না। কাজ থেকে ছুটি নিয়ে বারে বারে সময়, শক্তি, টাকা খরচ করে দেশে আসা লাগে আমার হেবার কাজ করার জন্য। মাঝখান দিয়ে লাভ নিচ্ছেন আপনারা।”

সম্পত্তি বণ্টনের আইন সংশোধন করা উচিত বলে মনে করেন লামিয়া। তার ভাষায়, “ইসলাম পক্ষপাতশূন্য। এই আইনের পেছনে যৌক্তিক কারণ আছে। কিন্তু আগের সমাজ এখনকার সমাজ এক না। আগেকার দিনে মেয়েদের কম দেওয়া হতো কারণ বিবাহিত মেয়েদের খরচ তার স্বামী বহন করতেন। আর অবিবাহিত মেয়েদের খরচ তার ভাই বহন করতেন। আর বয়স্ক, অসুস্থ বাবা-মায়ের দায়িত্বও ছিল ছেলেদের। এখন এরকম হয় না। মেয়েরা এখন ভাইয়ের উপরে নির্ভরশীল না। আমি বিবাহিত না বলে আমার অর্থনৈতিক দায়িত্ব আমার ভাইয়ের নয়। বরং এখন স্ত্রী কিংবা বোনেরা সংসারে খরচ শেয়ার করে। সুতরাং এখনো কেন এ ধরনের বৈষম্য থাকবে? এই ধরনের আইন সংস্কার করা উচিত, অন্তত যেসব পরিবার এই বৈষম্যের সঙ্গে একমত নয়, তাদের ক্ষেত্রে তা বাধ্যতামূলক করা উচিত নয়।”

ভাই যদি বোনের চেয়ে সম্পত্তি বেশি নেন, তবে বাবা-মায়ের দায়িত্বও তারই নেওয়া উচিত। লামিয়া চৌধুরী বলেন, “বাবা-মা অনেক কষ্ট করে আমাদেরকে সমানভাবে বড় করেছে। ভাই ও আমাকে সমান চোখে দেখেছে। শুধু আপনারাই আমাকে ছোট করছেন। এসব বন্ধ করুন। আর যদি বাধ্যতামূলক করেন, তাহলে ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী, এটাও বাধ্যতামূলক করেন যে, ভাই বেশি পাওয়ার পর বোন এবং বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সব দায়িত্ব তাকে নিতে হবে। নাকি শুধু নেওয়ার বেলায় আছেন, দেওয়ার বেলায় নাই? ইসলামের নিয়ম ন্যায্য। আপনাদের নিয়ম সঠিক নয়। লোভ সামলান, নিজেদের শোধরান।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ