ভারত চেষ্টার কমতি রাখেনি। তবে সব চেষ্টাকে বৃথা করে শেষ পর্যন্ত আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে ছিটকে গেলেন জাসপ্রীত বুমরাহ। এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা পেসার জাসপ্রীত বুমরাহর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা হচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়ার পেসার প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজেলউডের পর মিচেল স্টার্কও ছিটকে গিয়েছেন এই টুর্নামেন্ট থেকে। বুমরাহও সেই তালিকায় যুক্ত হওয়ায় আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পেস বোলিংয়ের সৌন্দর্য সত্যিকার অর্থেই খর্ব হলো।

গত ১৮ জুন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য ভারত তাদের ১৫ জনের তালিকা ঘোষণা করেছিল। সেখানে ছিল বুমরাহর নাম। একইসঙ্গে তাকে রাখা হয়েছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান ওয়ানডে সিরিজের দলেও। ভারতের আশা ছিল শেষ ম্যাচটি খেলেই নিজেকে আবার মাঠে ফিরিয়ে আনবেন বুমরাহ। তবে এই ৩১ বছর বয়সী পেসার  এখনও মাঠে নামার ফিটনেস ফিরে পাননি। তাই তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

জানুয়ারিতে বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের শেষ (সিডনি) টেস্টে পিঠের নিচে চোট পান এই ডানহাতি পেসার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজটা অনেকটা একাই ভারতের হয়ে লড়েছিলেন। সিরিজের শেষ ইনিংসে চোটের কারণে বল করতে পারেননি। তবুও সিরিজজুড়ে দারুণ ফর্মে ৩২ উইকেট তুলে নিয়ে হন সেরা খেলোয়াড়। পিঠের চোটের কারণে তাকে পাঁচ সপ্তাহের বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে বিশ্রাম শেষ হওয়ার কথা ছিল।

আরো পড়ুন:

‘আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যে যাচ্ছি’

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফটোসেশনে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল

বুমরাহর পরিবর্তে তরুণ পেসার হার্ষিত রানা সুযোগ পেয়েছেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে। এদিকে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিসিসিআই) স্কোয়াডে আরও চমক এনেছে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির চূড়ান্ত স্কোয়াডে যশস্বী জয়সোয়াল জায়গায় যুক্ত করা হয়েছে স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীকে। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করায় এই ডানহাতি রহস্যময় স্পিনারকে দলে নেওয়া হয়। ইংলিশদের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে ১৪ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হন বরুণ।

ভারতের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির একাদশ: 

রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুভমান গিল (সহ-অধিনায়ক), বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল, ঋষভ পান্ত (উইকেটরক্ষক), হার্দিক পান্ডিয়া, অক্ষর প্যাটেল, ওয়াশিংটন সুন্দর, কুলদীপ যাদব, হার্ষিত রানা, মোহাম্মদ শামি, অর্শদ্বীপ সিং, রবীন্দ্র জাদেজা, বরুণ চক্রবর্তী।

ঢাকা/নাভিদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গের সহিংসতার বিষয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য নাকচ ভারতের

পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। 

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

মুর্শিদাবাদে সহিংসতায় বাংলাদেশকে জড়ানোর চেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ

ওয়াকফ নিয়ে সহিংসতা
বিজেপিকে ধুয়ে দিলেন মমতা, তুললেন ইউনূস-মোদি বৈঠকের কথাও

বিবৃতিতে বলা হয়েছে,মুর্শিদাবাদের সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের মন্তব্য বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।

রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের দিক থেকে আসা মন্তব্য আমরা প্রত্যাখ্যান করি।এটি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নিপীড়নের বিষয়ে ভারতের উদ্বেগের সঙ্গে সমান্তরাল করে দেখাতে একটি ছদ্মবেশী ও কপট প্রয়াস, যেখানে এই ধরনের অপরাধীরা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”

“তাই অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য না করে বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে নিজেদের দেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় মনোযোগ দেওয়া।”

এর আগে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে জড়ানোর চেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ সরকার।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। একই সঙ্গে ভারতে মুসলমানদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করার আহ্বান রাখেন তিনি। 

ফেসবুক পোস্টে শফিকুল আলম লেখেন, “মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় বাংলাদেশকে জড়ানোর যেকোনো চেষ্টাকে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।”

“আমরা মুসলমানদের ওপর হামলার নিন্দা জানাই এবং তাদের প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির তীব্র নিন্দা জানাই।”

প্রেস সচিব লেখেন, “আমরা ভারত ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সংখ্যালঘু মুসলমান জনসংখ্যার পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সব পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

ভারতে ওয়াক্ফ (সংশোধিত) আইন নিয়ে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দেয়; যা বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রূপ নেয়। কারণ, এর পক্ষে-বিপক্ষে শক্তিশালী রাজনৈতিক সমর্থন রয়েছে; সেই সঙ্গে রয়েছে ভারতে মুসলমানদের অধিকার নিয়ে উদ্বেগের বিষয়। 

ওয়াকফ নিয়ে ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘাত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে; যেখানে কয়েকজন হতাহত হয়েছেন; গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১৮ জন। 

কয়েকদিন ধরে মুর্শিদাবাদে ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে বুধবার (১৭ এপ্রিল) এই বিষয়ে কথা বলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সহিংসতাকে ‘পরিকল্পিত’ বর্ণনা করে এর পুরো দায় বিজেপির কাঁধে দেন তিনি। 

মমতা তার বক্তব্যে হঠাৎ বাংলাদেশ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গ টেনে আনেন।

নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে শীতল সম্পর্কের বরফ না গলতেই অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে মোদির থাইল্যান্ডের বৈঠককে ‘গোপনীয় বৈঠক’ আখ্যা দেন মমতা।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে ইমাম-মুয়াজ্জিন-বুদ্ধিজীবীদের সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, “প্ল্যান করে এই অশান্তি পাকানো হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে লোক ঢুকতে দিয়েছে বিএসএফ। বাইরে থেকে লোক এনেছে বিজেপি। তারাই অশান্তির আগুন জ্বেলেছে।”

তিনি বলেন, “প্লেন চলছে, প্লেনে কারা আসছে, কীভাবে আসছে... আগে এয়ারপোর্টে আমাদের পুলিশ থাকত, আমরা রিপোর্ট পেতাম। এখন সেটা উঠিয়ে দিয়েছে। তাই কোনো রিপোর্ট পাই না।”

‘পর্দার আড়ালে খেলা চলছে’ বলে অভিযোগ করে মমতা বলেন, “আপনারা কি মনে করেন যে, লুকিয়ে লুকিয়ে খেলা খেলবেন? পর্দার পিছনে কী আছে, আমরা সব বুঝতে পারি।”

এরপরেই বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গে টেনে আনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

মমতা বলেন, “বাংলাদেশের ইউনূসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী গোপন বৈঠক করতেই পারেন। দেশের ভালো হলে ভালো। কিন্তু আপনাদের উদ্দেশ্যটা কী? অন্য দেশ থেকে লোক নিয়ে এসে দাঙ্গা করা? আপনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি জানেন না?”

তিনি বলেন, “বাংলার প্রতিবেশী দেশ হলো বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং শ্রীলঙ্কা। গতকাল (১৫ এপ্রিল) আমি এএনআই-এর একটি টুইট দেখেছি, যেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে যে, দাঙ্গার ঘটনা বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িত। যদি এটি সত্যি হয়, তাহলে এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার দায়ী। সীমান্তের দেখাশোনা করে বিএসএফ, রাজ্য সরকার নয়।” 

“কেন বিজেপির লোকদের বাইরে থেকে এসে গোলমাল করতে দেওয়া হলো, তাদের পালিয়ে যেতে দেওয়া হলো?,” প্রশ্ন রাখেন মমতা। 

এমনকি সহিংসতার মধ্যে বিএসএফ বাচ্চাদের দিয়ে পাথর ছুড়িয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। 

তিনি বলেন, “আমি খুঁজে বের করব, সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ কাকে কাকে হাত করেছে। কিছু বাচ্চা ছেলেকে ৫-৬ হাজার রুপির বিনিময়ে পাথর ছুড়িয়েছে। এটা ভালো করে তদন্ত করব, আমাদের তদন্ত চলছে।”

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর নাম উচ্চারণ না করে তার উদ্দেশে মমতা বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কালীদাসের মতো হয়ে গেছে। যে ডালে বসে আছে, সেই ডাল কাটছে। আপনার এত তাড়া কীসের? আপনি তো প্রাইম মিনিস্টার কখনো হবেন না। মোদি চলে গেলে কী হবে? আপনাকে তো হামাগুঁড়ি দিতে হবে। মোদিজিকে বলব, ওনাকে একটু কন্ট্রোল করতে। সমস্ত এজেন্সিকে দিয়ে দিয়েছেন ওনার হাতে। মুর্শিদাবাদে যা ঘটেছে, তা পুরোটাই পরিকল্পিত।”

ক্ষোভ উগরে বক্তব্য দেওয়ার সময় মমতা বলেন, বাংলার প্রতিবেশী দেশ হলো বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা। 

এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন মমতা। মূলত শুধু বাংলাদেশ ছাড়া বাকি দেশগুলো ভারতের প্রতিবেশী; পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সঙ্গে ওই দেশগুলোর কোনো সীমান্ত নেই।

ঢাকা/হাসান/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ