গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ মাথায় নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের কর্তৃত্ববাদী শাসনের যবনিকা টানতে হয়। এর মধ্য দিয়ে সবাই আশা করেছিল, মানবাধিকার লঙ্ঘনের আগের অভ্যাসের বদল হবে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও একই চর্চা জারি রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলের খসড়া প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নির্যাতনের জবাবদিহি নিশ্চিত করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) পাশাপাশি নিয়মিত আদালতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগের বিদ্যমান কাঠামোগত ত্রুটির কারণে সরকারের এসব প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হতে থাকে। পুলিশ এখনও আগের মতো ক্ষমতার অপব্যবহার করে যাচ্ছে। এখনও তারা ভিত্তিহীন অভিযোগে গণমামলা দিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। কোনো কোনো কর্মকর্তা প্রমাণ নষ্ট করছেন। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এখনও স্বপদে বহাল আছেন। এ ছাড়া আইসিটি আদালতের পাশাপাশি নিয়মিত আদালতের প্রক্রিয়াগত বিষয়েও উদ্বেগ রয়ে গেছে।

যদিও বিভিন্ন ধর্মীয় ও আদিবাসী গোষ্ঠীর ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার। তবে প্রতিশোধমূলক সহিংসতা এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণের সঙ্গে জড়িতরা এখনও আইনের আওতায় আসেনি।

পুলিশ মামলায় হাজারো মানুষকে অভিযুক্ত করেছে। বর্তমানে ১ হাজার ১৮১টি তদন্ত চলমান। এতে অভিযুক্তের সংখ্যা ৯৮ হাজার ১৩৭। এদের মধ্যে ২৫ হাজার ৩৩ জনের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। এ অনুযায়ী প্রতি মামলায় গড়ে ৮৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষকে অভিযুক্ত করায় তাদের বিরুদ্ধে হয় তদন্ত অথবা গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের এসব অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কই নেই। জাতিসংঘ বেশ কিছু মামলা পর্যালোচনা করে দেখেছে, যাতে চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। আর যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা জনগণের চাপে পড়ে। পুলিশের তদন্তের ওপর জনগণের আস্থা কম।

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনের উদ্বেগের বিষয়গুলো অন্তর্বর্তী সরকার আমলে নিয়ে সম্প্রতি কিছু সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে, তবে সবকিছু আমলে নেওয়া হয়নি। এ আইনে মৃতুদণ্ড, আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারের মতো বিষয়গুলোতে উদ্বেগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ড বজায় রেখে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা নিয়ে জাতিসংঘের গভীর উদ্বেগ আছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রাশিয়া সফরে ট্রাম্পের দূত, ইউরোপের উদ্বেগ

ইউক্রেন সংকট ঘিরে বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক ও সামরিক তৎপরতা আরও জোরদার হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও জার্মানির উদ্যোগে শুক্রবার ব্রাসেলসে ৫০টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ইউক্রেন প্রতিরক্ষা যোগাযোগ গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠক। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি জানিয়েছেন, এ বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ আরও বাড়ানো।

বৈঠকে ইউক্রেনকে অতিরিক্ত ৫৮ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই প্যাকেজের আওতায় রাডার সিস্টেম, অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মাইন এবং বিপুল পরিমাণ ড্রোন সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সামরিক যান ও সরঞ্জাম মেরামতেও ব্যয় করা হবে এ অর্থের একটি অংশ।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ শুক্রবার রাশিয়ায় পৌঁছেছেন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হতে পারে। এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে তা হবে উইটকফ ও পুতিনের মধ্যে তৃতীয় বৈঠক। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে উইটকফ পুতিনের সঙ্গে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় বৈঠক করে আমেরিকান শিক্ষক মার্ক ফোগেলকে মুক্ত করিয়েছিলেন। রাশিয়া সফরের আগে তিনি ওয়াশিংটনে রুশ আলোচক কিরিল দিমিত্রিয়েভের সঙ্গে বৈঠক করেন। দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ‘একটি সমঝোতা’ হয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে এই আলোচনার মধ্যেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের মানবাধিকার কমিশনার দিমিত্র লুবিনেৎস জানিয়েছেন, রুশ সেনারা ১৩ মার্চ জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের পিয়াতিখাতকি গ্রামে চারজন নিরস্ত্র ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিকে গুলি করে হত্যা করেছে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার ড্রোন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। লুবিনেৎস আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও জাতিসংঘের কাছে বিষয়টি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং রাশিয়ার একটি প্রাতিষ্ঠানিক নীতি, যা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উৎসাহিত হচ্ছে।’ এ ঘটনায় যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু হয়েছে।

এরই মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত একটি বন্দিবিনিময় হয়েছে। বিশ্বাসঘাতকতার মামলায় রাশিয়ায় কারাবন্দি আমেরিকান নাগরিক ক্সেনিয়া কারেলিনাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র আর্থার পেত্রভ নামে এক রুশ-জার্মান নাগরিককে রাশিয়ার হাতে তুলে দিয়েছে। এই বিনিময় প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। কারেলিনার বাগদত্তা ক্রিস ভ্যান হেরডেন এই মুক্তির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তবে আরও কয়েকজন মার্কিন নাগরিক এখনও রাশিয়ার হেফাজতে আছেন, যাদের মুক্তির জন্য চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের অংশ হিসেবে সম্প্রতি তুরস্ক ও ইস্তাম্বুলে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় কূটনৈতিক সম্পত্তি ফেরত দেওয়া, নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণ ও সরাসরি বিমান চলাচল শুরু করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধক্ষেত্র ও কূটনৈতিক পরিসরে এই নতুন আলোচনাপ্রবাহ ইউক্রেন সংকটের সমাধানের পথ তৈরি করতে পারে, তবে এখনও বড় ধরনের অগ্রগতি অনিশ্চিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ওয়াক্ফ আইন ইস্যুতে থমথমে মুর্শিদাবাদ, আতঙ্ক 
  • ক্ষমতায়ন মানে অংশগ্রহণ নয় অংশীদারিত্ব কোথায়?
  • নববর্ষের সাতসকাল
  • আমার দেখা সাংগ্রাই
  • মায়ামির মায়া ছাড়তে পারছেন না মেসি
  • অবিরাম কাজ করেও যারা কোনো নাম-দাম পান না
  • চেন্নাই প্লে’অফ খেলবে, দাবি ব্যাটিং কোচের
  • এখনও পুরনো যেসব রীতিতে চৈত্রসংক্রান্তি পালন করেন রংপুরের মানুষ
  • এখনও পুরনো রীতিতে চৈত্রসংক্রান্তি পালন করেন রংপুরের মানুষ
  • রাশিয়া সফরে ট্রাম্পের দূত, ইউরোপের উদ্বেগ