ময়মনসিংহে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে বাসাবাড়িতে কিশোর দলের হামলা-ভাঙচুর, আতঙ্কিত বাসিন্দারা
Published: 12th, February 2025 GMT
দেশি অস্ত্র নিয়ে রাস্তার দুই পাশের বাসাবাড়িতে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছে ও জিনিসপত্র ভাঙচুর করছে একদল কিশোর। দলটি প্রায় ৫০ জনের, আর সবারই মুখে মাস্ক। তারা রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, আশপাশের বাড়িঘরের দেয়াল, বারান্দা, জানালা-দরজা, বাতি, সিসিটিভি ক্যামেরা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করছে। কেউ রাস্তা থেকে ইটের টুকরা নিয়ে ঢিল ছুড়ছে বাড়িঘরে। স্থানীয় বাসিন্দারা দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের ভেতর চুপচাপ বসে আছেন।
ময়মনসিংহ নগরের হরিকিশোর রায় রোডের বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজে এমন দৃশ্য ধরা পড়েছে। আর স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কয়েক দফায় হামলা-ভাঙচুর করার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, নগরের হরিকিশোর রায় রোডের বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের পেছনে শিশু একাডেমি মাঠ থেকেই মূলত ঘটনার সূত্রপাত। গতকাল সন্ধ্যার আগে সেখানে কিশোরদের একটি দল বসে আড্ডা দিচ্ছিল। এ সময় কিশোরদের আরেকটি দল সেখানে গিয়ে বসার জায়গা ছেড়ে দিতে বলে। বিষয়টি নিয়ে নগরের বাগানবাড়ি এলাকার মৃদুল করের সঙ্গে নওমহল এলাকার শুভ্রর বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে মৃদুলকে মারধর করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর দলবল নিয়ে ফাহাদের বাসার গলিতে হামলা করে মৃদুল। এ সময় ১৫টি বাড়ি ও ২টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আলী আশরাফ খান বলেন, টেবিলে বসা নিয়ে কিশোর গ্যাংটির সদস্যরা ‘আওয়ামী লীগ’ ও ‘ছাত্রলীগ’ ট্যাগ দিয়ে হামলা চালায়। কিন্তু তারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। ঘটনার পর বিএনপির নেতারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
কয়েক দফা হামলার পর একটি বাড়ির জানালার ক্ষতচিহ্ন। আজ বুধবার সকালে ময়মনসিংহ নগরের হরিকিশোর রায় রোডে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
গলা কেটে স্বামীকে হত্যা: স্ত্রী ও প্রেমিকের আমৃত্যু কারাদণ্ড
ময়মনসিংহে অনৈতিক সম্পর্কের জেরে স্বামীকে হত্যার দায়ে স্ত্রী হাফিজা খাতুন ও আব্দুল্লাল আল মামুন নামে একজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার অতিরিক্ত দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক আলী মুনসুর এ রায় ঘোষণা দেন। এ সময় দুই আসামিকে উভয়কে ১ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বিয়ের পর স্ত্রীকে দেশে রেখে হেলাল উদ্দিন দুবাই পাড়ি জমান। এ সময়ে অনৈতিক সর্ম্পকে জড়িয়ে পড়েন স্ত্রী। এক পর্যায়ে হেলাল দেশে ফিরে প্রবাস থেকে পাঠানো টাকার হিসাব চাইলে তাদের সর্ম্পকের অবনতি হয়। ২০১১ সালের ২৮ জুন মুক্তাগাছার ভাবকী এলাকার এ প্রবাসীকে হত্যা করে স্ত্রী হাফিজা ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৪ বছর আগে হেলালের সঙ্গে বিয়ে হয় একই উপজেলার নন্দিবাড়ি গ্রামের হাফিজার। ছয় মাসের মাথায় তাদের সর্ম্পকের অবনতি হলে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পরে সালিশের মাধ্যমে ফের তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দ্বিতীয়বার বিয়ের পর তারা হাফিজার বাবার বাড়ি নন্দিবাড়িতে বসবাস করতেন। তাদের সংসারে দুই মেয়ে সন্তান রয়েছে। হেলাল দুবাই চলে যাওয়ার পর বিদেশ থেকে স্বামীর পাঠানো টাকা বেহিসাবি খরচ করতে শুরু করে হাফিজা। তার পরিবার বাধা দিলে একটি এনজিওতে চাকরি নেয়। একসঙ্গে চাকরির সুবাদে আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে অনৈতিক সর্ম্পকেও জড়িয়ে পড়ে। বিদেশ থেকে ফিরে তার স্বামী টাকার হিসাবে চাওয়ায় তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে তারা হেলালকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরিকল্পিতভাবে গলা কেটে খুনের পর ডাকাতি বলে প্রচার করে।
নন্দিবাড়ি গ্রামে বসতবাড়ি থেকে হেলালের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এতে তাঁর বোন সাফিয়া আক্তারের সন্দেহ হয়, স্ত্রী এবং আব্দুল্লাহ আল মামুন মিলে তাঁর ভাইয়ের টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করার জন্য ঘুমন্ত অবস্থায় গলা কেটে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় মুক্তাগাছা থানায় মামলা করেন তিনি।
দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালতে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় মুক্তাগাছার ভাবকী এলাকার হাফিজা এবং ময়মনসিংহের চর ঘাঘরা এলাকার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের এপিপি মো. শামীম উল আজম খান লিসন।
উভয়কে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। হাফিজা রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিল। তবে আব্দুল্লাহ আল মামুন পলাতক রয়েছে। আরেক আসামি আরমান মারা যাওয়ায় আগেই মামলা থেকে তাকে অব্যহতি দেওয়া হয়।