অন্তর্বর্তী সরকার আইনি দলিল ও জনগণের ইচ্ছা দিয়ে সমর্থিত: হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ
Published: 12th, February 2025 GMT
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়ে রেফারেন্স পাঠান এবং এর ভিত্তিতে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ রিট করলে হাইকোর্ট সেটি খারিজ করে দেন।
বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৩ জানুয়ারি রিটটি সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন। রিট খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ আদেশ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টামূলক মতামত গ্রহণ করেন, যা আইনগতভাবে সমর্থিত। ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ এবং এটি ভবিষ্যতে জনগণের স্মরণে থাকবে।
রিটটি ছিল ভ্রান্ত ধারণা, বিদ্বেষপ্রসূত ও হয়রানিমূলক, তাই এটি সরাসরি খারিজ করা হয়।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস হয়ে থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের মতামত ও হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে এটি বৈধতা পেয়েছে। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের আওতায় রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তকে আইনসম্মত বলে গণ্য করা হয়েছে। হাইকোর্টের রায় এ বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এটি ভবিষ্যতের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করা হয়। তাই এটি আইনি দলিল দিয়ে সমর্থিত, বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার দ্বারা সমর্থিত।
সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ারের বিষয়ে বলা আছে। অনুচ্ছেদটি বলছে, যদি কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয়, আইনের এরূপ কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা এমন ধরনের ও এমন জনগুরুত্বসম্পন্ন যে সেই সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহলে তিনি (রাষ্ট্রপতি) প্রশ্নটি আপিল বিভাগের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করতে পারবেন। ওই বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত শুনানির পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করতে পারবেন।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ গত ডিসেম্বরে রিটটি করেছিলেন। রিট আবেদনকারীপক্ষের ভাষ্য, যে বিষয় (অন্তর্বর্তী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা) সংবিধানে নেই, সে বিষয়ে রেফারেন্স চাওয়া যায় না। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে রেফারেন্সের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রুলস অনুসরণ করতে হবে। আপিল বিভাগের রুল অনুসারে, অ্যাটর্নি জেনারেল ও অন্যদের নোটিশ দিয়ে শুনানি করতে হবে। শুনানির জন্য নোটিশ দেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের ভাষ্য, রেফারেন্সের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নোটিশ করা হয়েছিল। তিনি শুনানিতে অংশ নিয়েছেন।
আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ নিজেই শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এস এম মনিরুল আলম।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ষ ট রপত খ র জ কর সমর থ ত আইনজ ব র জন য মত মত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান আসামির জামিন বাতিল করে শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ
বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এই কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।
দাসেরহাট বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে সাধুরপাড়া নজরুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে শেষ হয়। পরে ইউনিয়ন পরিষদের সামনের সড়কে মানববন্ধন করেন তারা। মানববন্ধনে বক্তারা অবিলম্বে নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাধুরপাড়া ইউপির বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান। মানববন্ধনে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গাজীউর রহমান মোল্লা বলেন, একাধিক মামলার আসামি বাবু জামিনে এসে আবারও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ার দখলের পাঁয়তারা করছেন। সাধুরপাড়া ইউনিয়নে কোনো খুনি, সন্ত্রাসী থাকবে না। তাঁকে সাধুরপাড়ার জনগণ অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। প্রয়োজনে এলাকাবাসী তাঁকে প্রতিহত করবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১৪ জুন রাত ১০টার দিকে বকশীগঞ্জ পৌর শহরের পাটহাটি এলাকায় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে কুপিয়ে জখম করা হয়। ১৫ জুন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ১৭ জুন ২২ জনের নামে থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম। মামলার প্রধান আসামি সাধুরপাড়া ইউপির বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু কয়েক মাস আগে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।
গত বছরের ২৭ আগস্ট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। অভিযুক্তরা হলেন– প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবু, রাকিবিল্লাহ রাকিব, রেজাউল করিম, শরিফ মিয়া, মনিরুজ্জামান মনির, বাদশা মিয়া, মো. শাহজালাল, শফিকুল ইসলাম ও তোফাজ্জল মিয়া। পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়েছেন মামলার বাদী মনিরা বেগম।