এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চলে বেপরোয়া গতিতে, বাড়ছে ঝুঁকি
Published: 12th, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচলে গতিসীমা সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার। তবে এই গতিসীমা মানার গরজ মনে করছেন না চালকেরা। তা উপেক্ষা করে প্রতিদিন ১ হাজার ৩০০টির বেশি গাড়ি চলাচল করছে অতিরিক্ত গতিতে। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। আবার নিয়ম ভঙ্গ করা চালকদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগও নেই।
নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ শহীদ ওয়াসিম আকরাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে আনুষ্ঠানিকভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হয় গত ৩ জানুয়ারি। এর আগে গত বছরের ২৮ আগস্ট পরীক্ষামূলকভাবে চলাচলের জন্য এক্সপ্রেসওয়েটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে অতিরিক্ত গতিতে চালানো গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে মামলা দেওয়া শুরু হবে। তবে চট্টগ্রাম নগরের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গতিসীমা না মানা চালকদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এখন পর্যন্ত তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সিডিএর কর্মকর্তারা দাবি করছেন, গতিসীমা লঙ্ঘনকারী গাড়ি ও চালকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সহযোগিতা নেওয়া হবে।
চট্টগ্রামের এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা হয় ৬০ কিলোমিটার। তবে আঁকাবাঁকা অংশে সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৪০ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি থামানো বা দাঁড় করিয়ে রাখা এবং গাড়ি থেকে নামা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলের সময় অধিকাংশ গাড়িই গতিসীমা মেনে চলছে না। এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট, বারিক বিল্ডিং, সল্টগোলা, ইপিজেড, কাঠগড় এলাকায় বাঁক রয়েছে। বাঁকগুলোতে গতিরোধক রয়েছে, গতিসীমাও ৪০ কিলোমিটার। এরপরও গাড়ির গতি না কমিয়ে গাড়ি চালাতে দেখা গেছে চালকদের। এক্সপ্রেসওয়ের অনেক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রীরা বের হয়ে আসেন। ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেও দেখা যায়।
পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচল শুরুর পর থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর অভিযোগ ওঠে। এতে বারবার ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে। গত বছরের ৮ নভেম্বর রাতে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে মৃত্যু হয়েছিল দুই মোটরসাইকেল আরোহীর। তবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর মোটরসাইকেল চলাচলের সুযোগ রাখা হয়নি। অন্য গাড়িগুলোও গতিসীমা মানছে না। গত বছরের ১৮ নভেম্বর দ্রুতগামী একটি প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। কেউ মারা না গেলেও দুজন আহত হয়েছিলেন ওই দুর্ঘটনায়।
এভাবে দুর্ঘটনা ঘটতে থাকার পর এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলরত গাড়িগুলো শনাক্ত করতে ক্যামেরা বসায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। প্রাথমিকভাবে নগরের পতেঙ্গা প্রান্তের টোল প্লাজা থেকে এক কিলোমিটার দূরত্বে একটি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এই ক্যামেরা দিয়ে নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গামুখী গাড়িগুলোর গতি শনাক্ত করা যায়।
সিডিএর কর্মকর্তারা বলছেন, এক্সপ্রেসওয়ের গাড়ি চলাচল তদারকির সুযোগ পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে দেওয়া হবে। যাতে ট্রাফিক বিভাগও গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। আর অতিরিক্ত গতিতে চলা গাড়িগুলোর তালিকা বিআরটিএকে নিয়মিত সরবরাহ করা হবে। লাইসেন্স ও গাড়ির প্রয়োজনীয় নথিপত্র নবায়ন করতে গেলে যাতে বিআরটিএ পদক্ষেপ নিতে পারে।
সিডিএ সূত্র জানায়, ৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ছয় হাজার গাড়ি চলাচল করছে। এর মধ্যে প্রথম ৩৭ দিনে গতিসীমা না মেনে চলেছে ৪৮ হাজার গাড়ি। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে গতি মানছে না ১ হাজার ৩০০ গাড়ি, যা মোট গাড়ির ২০ শতাংশ। গতি না মানার দৌড়ে এগিয়ে আছে প্রাইভেট কারজাতীয় গাড়িগুলো। পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচলের সময় গত বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর রাতে একটি প্রাইভেট কার চলেছিল ১৮১ কিলোমিটার গতিতে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস প্রথম আলোকে বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গতি নিয়ন্ত্রণ এবং বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচল বন্ধে তাঁরা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন। নিয়ম ভঙ্গকারী গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ ও বিআরটিএর সঙ্গে কথা বলছেন। তাদের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চুক্তি হবে। তারা জরিমানা করবে।
তবে এক্সপ্রেসওয়েতে গতিসীমা লঙ্ঘনকারী গাড়ি ও চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সিডিএর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করেননি বলে জানান বিআরটিএর চট্টগ্রামের উপপরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী। তিনি বলেন, নগরের এক্সপ্রেসওয়েতে যদি গতিসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে এবং সিডিএ তা অবহিত করলে পুলিশের সহায়তায় তাঁরা ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করবেন
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ লকদ র ব র দ ধ গত বছর র ব আরট এ দ র ঘটন ব যবস থ গত স ম স ড এর ক ত কর নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে: টিউলিপ
বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিক জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি ও ও সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, আপনারা বুঝবেন যে, এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারকে কোনো প্রসঙ্গ বা মন্তব্যের মাধ্যমে আমি বিশেষ গুরুত্ব দিতে পারি না। এটা পুরোপুরি আমাকে হয়রানি করার জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার। এমন কোনো প্রমাণ নেই যে আমি ভুল কিছু করেছি।’ খবর-বিবিসি
বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে সোমবার লন্ডনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষগুলোর কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। পুরোটা সময় তারা মিডিয়া ট্রায়াল চালিয়েছে। আমার আইনজীবীরা উদ্যোগী হয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছিলেন। তবে তারা কখনও এর জবাব দেয়নি।’
প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে করা তিনটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা পৃথক তিন মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে রোববার এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব। আদালতে দুদকের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেল কিনা, সে-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ২৭ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত। ১০ কাঠা প্লট নেওয়ার অন্য অভিযোগে শেখ রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ১৩ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের একজন সহকারী পরিচালক। মামলায় শেখ হাসিনা, টিউলিপসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়।
এর আগে জানুয়ারির মাঝামাঝিতে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) ছিলেন। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে।
গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপের খালা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আর্থিক সম্পর্কের বিষয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠায় টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
সম্প্রতি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অসঙ্গতির অভিযোগ উঠে। এরপর নিজের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগকে তদন্তের আহ্বান জানান টিউলিপ। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস।
টিউলিপ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার বিরুদ্ধে যে তদন্ত হয়েছে সেখানে, মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস তার বিরুদ্ধে মন্ত্রিত্বের নীতি ভঙ্গের কোনো প্রমাণ পাননি। কেয়ার স্টারমার অফিসিয়াল চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিককে বলেন, ‘আপনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার সময় এটা পরিষ্কার করতে চাই যে, মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস আমাকে আশ্বস্ত করেছেন- তিনি আপনার বিরুদ্ধে মন্ত্রিত্বের নীতি ভঙ্গের কোনো প্রমাণ পাননি এবং আর্থিক অসঙ্গতির কোনো প্রমাণ খুঁজে পাননি।’