আন্দোলনে আহতদের হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছি: আদালতে ডা. এনাম
Published: 12th, February 2025 GMT
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতদের হাসপাতালে ভর্তি রেখে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিনের আদালতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকা জেলার সাভারে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাইয়ুম হত্যা মামলায় রিমান্ড শুনানিতে এ দাবি করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ইকবাল হোসেন রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালানো হয় সাভার ও আশুলিয়া এলাকায়। আশুলিয়ায় ৪১ জন ও সাভারে ২১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনা ঘটেছে তার নির্বাচনি এলাকায়। এ আসামির ছত্রছায়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি ধনাঢ্য ব্যক্তি। টাকা দিয়ে এসব অপকর্ম করিয়েছেন। লাশে গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে।”
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তারা বলেন, “আমরাও চাই, মামলার তদন্তভার ঠিকভাবে হোক। বয়স বিবেচনায় তার রিমান্ড বাতিলের আবেদন করছি। প্রয়োজনে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।”
এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, “পুলিশের পেছনে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আহতদের চিকিৎসাও করতে দেয়নি।”
এ সময় ডা.
পরে আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকা জেলার সাভার বাসস্ট্যান্ডে ৫ আগস্ট দুপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ'র শিক্ষার্থী কাইয়ুম। এ ঘটনায় তার মা কুলছুম বেগম সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। দুই দিন বাদে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর একে একে গ্রেপ্তার হন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও প্রভাবশালী সংসদ সদস্যরা। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের প্রায় ছয় মাস পর গত ২৬ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ঢাকার ভাটারা এলাকা থেকে ডা. এনামুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মিরপুর মডেল থানায় হকার সাগর হত্যা মামলায় তার ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ২ ফেব্রুয়ারি রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
পেশায় চিকিৎসক এবং সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এনাম ২০১৯ সালে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় থাকলেও ২০২৪ সালে বাদ পড়েন।
২০১৩ সালের রানা প্লাজা ধসের পর আহতদের একটি বড় অংশের চিকিৎসা হয়েছিল এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতে এনামুরের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে তাকে নৌকা প্রতীক দেয় ক্ষমতাসীন দল।
বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের সেই নির্বাচনে জনপ্রিয়তার পরীক্ষা দিতে হয়নি এনামুরকে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে সংসদে আসেন তিনি।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই আসন থেকে জয় লাভ করেন। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
তবে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু তাকে হারিয়ে বিজয়ী হন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম, যিনি আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
ঢাকা/মামুন/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আহতদ র মন ত র ল কল জ আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের আত্মপ্রকাশ
জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মৃতি সংরক্ষণ, তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘জুলাই স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ’।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাত ৮টায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে।
নবগঠিত কমিটিতে ইউনিটার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান সজীবকে আহ্বায়ক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী অন্তর সফিউল্লাহকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এছাড়া মুখপাত্র হিসেবে আছেন চবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়ব আহমেদ সিয়াম।
আরো পড়ুন:
বিপ্লবী নারী পরিষদের আত্মপ্রকাশ
চবির ভর্তি পরীক্ষায় ২ জুলাই-বিপ্লবীকে নিয়ে প্রশ্ন
সংগঠন থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এই সংগঠন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও মানবিক ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। এর মূল লক্ষ্য শহীদ ও আহতদের নিয়ে গবেষণা, প্রকাশনা ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করা, তাদের পরিবারের যৌক্তিক দাবিতে তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে সাংস্কৃতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে ভূমিকা রাখা।
সংগঠনটির কাঠামোতে থাকবে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক পরিষদ ও উপদেষ্টা পরিষদ। যার দিকনির্দেশনায় পরিচালিত হবে সংগঠনের সব কার্যক্রম। বিশেষভাবে, শহীদ ও আহতদের পরিবারের মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়ে সংগঠনটি তার কর্মকৌশল নির্ধারণ করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, সংগঠনটির উপদেষ্টা পরিষদে আছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সহযোগী অধ্যাপক ও বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (বিআরএফ) নির্বাহী পরিচালক, গবেষক ও লেখক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন, বিআরএফের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ডা. এস এম ইয়াসির আরাফাত, লেখক মোহাইমিন পাটোয়ারী, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক মোনায়েম খান এবং বিআরএফের গবেষক ফারহিন ইসলাম।
ইতোমধ্যে সংগঠনটি শহীদদের নিয়ে প্রামাণ্য সংকলন গ্রন্থ ‘শহীদদের শেষ মুহূর্তগুলো’ (১ম খণ্ড) প্রকাশ করেছে। বইটিতে ২৬ জন শহীদের শেষ মুহূর্তগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
সংগঠনটির মুখপাত্র সৈয়দ আহমেদ সিয়াম বলেন, “জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মৃতি সংরক্ষণ ও তাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে জুলাই স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের যাত্রা শুরু হলো। অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে এবং শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করতে করবেন।”
সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়- হারুন মোল্লা ঈদগাহ মাঠ, পল্লবী মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন, মিরপুর ১২, ঢাকা ১২১৬, বাংলাদেশ।
ঢাকা/মিজান/মেহেদী