আদালতের নির্দেশে বন্ধ করে দেওয়া ইটভাটার একটি তালিকা হাইকোর্টে জমা দিয়েছে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন। কিন্তু তালিকার ১৬০ ইটভাটার মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ চালু রয়েছে। ইট পুড়িয়ে পরিবেশদূষণ করেই চলেছে এসব ভাটা।

হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) রিটের পর চট্টগ্রামসহ সারা দেশের অবৈধ ইটভাটা বন্ধের জন্য ২০২২ সালে প্রথম আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। গত বছরের ২৮ নভেম্বরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধসংক্রান্ত সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট অপর একটি আদেশ দেন। এতে দেশের আট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে থাকা অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম যাতে শুরু না করতে পারে, সে বিষয়ে সাত দিনের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয় বিভাগীয় কমিশনারদের। পাশাপাশি কার্যক্রম ও পদক্ষেপ জানিয়ে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়।

গত জানুয়ারিতে বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন বন্ধ ইটভাটার একটা তালিকা জমা দেন হাইকোর্টে। ১৫ উপজেলার ১৬০টি অবৈধ ইটভাটা প্রশাসনের অভিযান ও হস্তক্ষেপে বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়ে তালিকা জমা দেওয়া হয়।

অনুসন্ধান ও সরেজমিন দেখা যায়, তালিকায় থাকা ইটভাটার এক-তৃতীয়াংশের বেশি বর্তমানে চালু রয়েছে। তালিকায় লোহাগাড়ার ২৮টি ইটভাটার উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে কয়েকটি ইটভাটার নাম দুবার করে এসেছে। তালিকায় থাকা ইটভাটার মধ্যে ১৩টিতে এখনো ইট পোড়ানো হচ্ছে।

লোহাগাড়ার যেসব ইটভাটা তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, এর মধ্যে গত বছরের ১৪ নভেম্বর তিনটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছিল প্রশাসন। ইটভাটাগুলো হলো উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের সিবিএম, আমিরাবাদ ইউনিয়নের বিএবি এবং চরম্বা ইউনিয়নের এবিএম। শেষ দুটি ইটভাটা পুনরায় চিমনি বসিয়ে চালু করা হয়েছে। উপজেলায় চালু থাকা অন্যান্য ইটভাটাগুলো হলো পদুয়ার মজিদিয়া ব্রিকস, শাহ মজিদিয়া ব্রিকস, পদুয়া ব্রিকস, কলাউজানের পেঠানশাহ ব্রিকস, খাজা ব্রিকস, চরম্বার এস এমবি ব্রিকস, এসবিএন ব্রিকস, আমিরাবাদের শাহপীর ব্রিকস, মদিনা অটো ব্রিকস, বড় হাতিয়ার আখতারাবাদ ব্রিকস, বারআউলিয়া ও আরব ব্রিকস।

অন্যদিকে রাউজানের আটটি ইটভাটা হাইকোর্টে জমা দেওয়া তালিকায় রয়েছে। তার মধ্যে পৌরসভার দুটি ইটভাটা ছাড়া বাকি ছয়টিতে ইট পোড়ানো চলছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। হাটহাজারীতে ২২টির মধ্যে কয়েকটি ইটভাটা চালু রয়েছে। চন্দনাইশের ১৬টি এবং সাতকানিয়ার ৩৪টি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে তালিকায় উল্লেখ করা হয়। কিন্তু দুই উপজেলায় এসব ভাটার অর্ধেকেই এখন ইট পোড়ানো হচ্ছে। একইভাবে ফটিকছড়ি, আনোয়ারা, বাঁশখালী, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার অনেক ইটভাটা তালিকায় রয়েছে। কিন্তু তার অনেকটি চালু।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো.

কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযানের একটা তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে কোনো ইটভাটা চালু আছে কি না, তা দেখতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) যে তালিকা দিয়েছিলেন, সেটিই পাঠানো হয়েছে।

লোহাগাড়ার ইউএনও মোহাম্মদ ইনামুল হাছান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান। বন্ধ করে দেওয়া তালিকার দু–একটি হয়তো চালু করেছে। আমরা আবারও অভিযান করব।’

এইচআরপিবির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, আগে বন্ধ করা কিছু ইটভাটার নাম আবার নতুন তালিকায় এসেছে। আবার কিছু কিছু ইটভাটা পুনরায় চালু করার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি অব্যাহত রয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইটভ ট র ইট প ড় র একট প রথম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

আদালতে দেওয়া তালিকায় বন্ধ, অথচ চালু এক-তৃতীয়াংশ ইটভাটা

আদালতের নির্দেশে বন্ধ করে দেওয়া ইটভাটার একটি তালিকা হাইকোর্টে জমা দিয়েছে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন। কিন্তু তালিকার ১৬০ ইটভাটার মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ চালু রয়েছে। ইট পুড়িয়ে পরিবেশদূষণ করেই চলেছে এসব ভাটা।

হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) রিটের পর চট্টগ্রামসহ সারা দেশের অবৈধ ইটভাটা বন্ধের জন্য ২০২২ সালে প্রথম আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। গত বছরের ২৮ নভেম্বরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধসংক্রান্ত সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট অপর একটি আদেশ দেন। এতে দেশের আট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে থাকা অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম যাতে শুরু না করতে পারে, সে বিষয়ে সাত দিনের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয় বিভাগীয় কমিশনারদের। পাশাপাশি কার্যক্রম ও পদক্ষেপ জানিয়ে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়।

গত জানুয়ারিতে বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন বন্ধ ইটভাটার একটা তালিকা জমা দেন হাইকোর্টে। ১৫ উপজেলার ১৬০টি অবৈধ ইটভাটা প্রশাসনের অভিযান ও হস্তক্ষেপে বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়ে তালিকা জমা দেওয়া হয়।

অনুসন্ধান ও সরেজমিন দেখা যায়, তালিকায় থাকা ইটভাটার এক-তৃতীয়াংশের বেশি বর্তমানে চালু রয়েছে। তালিকায় লোহাগাড়ার ২৮টি ইটভাটার উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে কয়েকটি ইটভাটার নাম দুবার করে এসেছে। তালিকায় থাকা ইটভাটার মধ্যে ১৩টিতে এখনো ইট পোড়ানো হচ্ছে।

লোহাগাড়ার যেসব ইটভাটা তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, এর মধ্যে গত বছরের ১৪ নভেম্বর তিনটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছিল প্রশাসন। ইটভাটাগুলো হলো উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের সিবিএম, আমিরাবাদ ইউনিয়নের বিএবি এবং চরম্বা ইউনিয়নের এবিএম। শেষ দুটি ইটভাটা পুনরায় চিমনি বসিয়ে চালু করা হয়েছে। উপজেলায় চালু থাকা অন্যান্য ইটভাটাগুলো হলো পদুয়ার মজিদিয়া ব্রিকস, শাহ মজিদিয়া ব্রিকস, পদুয়া ব্রিকস, কলাউজানের পেঠানশাহ ব্রিকস, খাজা ব্রিকস, চরম্বার এস এমবি ব্রিকস, এসবিএন ব্রিকস, আমিরাবাদের শাহপীর ব্রিকস, মদিনা অটো ব্রিকস, বড় হাতিয়ার আখতারাবাদ ব্রিকস, বারআউলিয়া ও আরব ব্রিকস।

অন্যদিকে রাউজানের আটটি ইটভাটা হাইকোর্টে জমা দেওয়া তালিকায় রয়েছে। তার মধ্যে পৌরসভার দুটি ইটভাটা ছাড়া বাকি ছয়টিতে ইট পোড়ানো চলছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। হাটহাজারীতে ২২টির মধ্যে কয়েকটি ইটভাটা চালু রয়েছে। চন্দনাইশের ১৬টি এবং সাতকানিয়ার ৩৪টি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে তালিকায় উল্লেখ করা হয়। কিন্তু দুই উপজেলায় এসব ভাটার অর্ধেকেই এখন ইট পোড়ানো হচ্ছে। একইভাবে ফটিকছড়ি, আনোয়ারা, বাঁশখালী, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার অনেক ইটভাটা তালিকায় রয়েছে। কিন্তু তার অনেকটি চালু।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযানের একটা তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে কোনো ইটভাটা চালু আছে কি না, তা দেখতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) যে তালিকা দিয়েছিলেন, সেটিই পাঠানো হয়েছে।

লোহাগাড়ার ইউএনও মোহাম্মদ ইনামুল হাছান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান। বন্ধ করে দেওয়া তালিকার দু–একটি হয়তো চালু করেছে। আমরা আবারও অভিযান করব।’

এইচআরপিবির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, আগে বন্ধ করা কিছু ইটভাটার নাম আবার নতুন তালিকায় এসেছে। আবার কিছু কিছু ইটভাটা পুনরায় চালু করার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি অব্যাহত রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ