হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ: অন্তর্বর্তী সরকার আইনি দলিল ও জনগণের ইচ্ছা দিয়ে সমর্থিত
Published: 12th, February 2025 GMT
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুয়ায়ী সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চান। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ নেন।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামতের প্রক্রিয়া নিয়ে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৩ জানুয়ারি রিটটি সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন। রিট খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ আদেশ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশে বলা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কোনো আইনি দলিল দিয়ে সমর্থিত নয় বলে রিট আবেদনকারীর (আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ) বক্তব্যে এসেছে। উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এক অনন্য পরিস্থিতিতে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুয়ায়ী উপদেষ্টামূলক মতামত গ্রহণ করেন। মতামত অনুযায়ী কাজ করেছেন। তাই এটি আইনি দলিল দিয়ে সমর্থিত, বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার দ্বারা সমর্থিত।
পূর্ণাঙ্গ আদেশে আরও বলা হয়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে যে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল, তা আমাদের ইতিহাসের অংশ এবং আশা করি আগামী বহু বছর ধরে জনগণ যত্নে থাকবে।’
রিটটি ভ্রান্ত ধারণা, বিদ্বেষপ্রসূত ও হয়রানিমূলক বলে উল্লেখ করে তা সরাসরি খারিজ করা হয়।
সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ারের বিষয়ে বলা আছে। অনুচ্ছেদটি বলছে, যদি কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয়, আইনের এরূপ কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা এমন ধরনের ও এমন জনগুরুত্বসম্পন্ন যে সেই সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহলে তিনি (রাষ্ট্রপতি) প্রশ্নটি আপিল বিভাগের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করতে পারবেন। ওই বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত শুনানির পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করতে পারবেন।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ গত ডিসেম্বরে রিটটি করেছিলেন। রিট আবেদনকারীপক্ষের ভাষ্য, যে বিষয় (অন্তর্বর্তী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা) সংবিধানে নেই, সে বিষয়ে রেফারেন্স চাওয়া যায় না। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে রেফারেন্সের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রুলস অনুসরণ করতে হবে। আপিল বিভাগের রুল অনুসারে, অ্যাটর্নি জেনারেল ও অন্যদের নোটিশ দিয়ে শুনানি করতে হবে। শুনানির জন্য নোটিশ দেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের ভাষ্য, রেফারেন্সের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নোটিশ করা হয়েছিল। তিনি শুনানিতে অংশ নিয়েছেন।
আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ নিজেই শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এস এম মনিরুল আলম।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো.
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত বছরের ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। গত বছরের ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ নেন।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথের আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চেয়ে রেফারেন্স পাঠান।
রাষ্ট্রপতির বিশেষ রেফারেন্সের (১/২৪) পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ গত বছরের ৮ আগস্ট মতামত দেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শোনা হয়। মতামতে বলা হয়, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্যপরিচালনার নিমিত্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা নিযুক্ত করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি ওইরূপ নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করাতে পারবেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র গঠন র ষ ট রপত গত বছর র ন র জন য উপদ ষ ট সমর থ ত আইনজ ব মত মত আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
মেক্সিকোতে বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে মুশফিকুল ফজল আনসারীর মতবিনিময়
মেক্সিকো সিটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ শীর্ষক মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
দূতাবাসের হেড অফ চ্যান্সারি আব্দুল্লাহ আল ফরহাদের সঞ্চালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, “প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”
তার সময়ে দূতাবাসটি একটি জনবান্ধব মিশন হিসেবে গড়ে উঠবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
তিনি পিপল টু পিপল কানেকশন বা জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বাগতিক দেশের নিয়ম-কানুন মেনে চলার আহ্বান জানান এবং মেক্সিকোর পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, “বাংলাদেশ সরকার মানবপাচার রোধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে।”
তিনি নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন প্রক্রিয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে এই প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। মেক্সিকোর শ্রমবাজারে বাংলাদেশের দক্ষ জনশক্তি-বিশেষ করে আইটি, কৃষি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অন্যান্য পেশাজীবী খাতে কাজের সুযোগ তৈরির জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে তিনি ঘোষণা দেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “মেক্সিকোতে বাংলাদেশের রপ্তানি ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে তৈরি পোশাক, ওষুধ রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকা চামড়াজাত পণ্য, আইটি সেবা এবং কৃষি পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হবে।”
তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুথানে জীবন আত্মত্যাগকারী শহীদদের স্মরণ করে বলেন, তাদের এই আত্মত্যাগ জাতি কখনো ভুলবে না। রাষ্ট্রদূত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
তিনি ফ্যাসিবাদের বিচারে আইনানুগ প্রক্রিয়ার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে বলেন, “বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশ গুম ও খুনের রাজ্য হিসেবে পরিচিত হয়েছিল। কিন্তু এখন সময় এসেছে সেই অধ্যায় পেছনে ফেলে বাংলাদেশকে একটি সুশৃঙ্খল, সভ্য ও উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার।”
রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা গর্বিত যে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস অন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন। নিশ্চিতভাবেই তিনি জনআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হবেন।”
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি কমিউনিটির বেশ কয়েকজন সদস্য বক্তব্য রাখেন এবং রাষ্ট্রদূতকে তার নতুন দায়িত্বের জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তারা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণে তার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
অনুষ্ঠানের শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের বাংলাদেশি ঐতিহ্যবাহী খাবারে আপ্যায়ন করা হয়।
ঢাকা/হাসান/টিপু