পুঁজিবাজারে ১০ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে ঋণ না দেওয়ার সুপারিশ
Published: 12th, February 2025 GMT
পুঁজিবাজারে যাদের ১০ লাখ টাকার কম বিনিয়োগ রয়েছে এবং নিয়মিত আয়ের কোনো উৎস নেই, এমন ব্যক্তিদের জন্য শেয়ারের বিপরীতে ঋণ সুবিধা না দেওয়ার সুপারিশ করেছে গঠিত টাস্কফোর্স।
পুঁজিবাজারে মার্জিন ঋণসুবিধা বিষয়ক আইনি সংস্কারের সুপারিশসহ প্রাথমিক খসরা প্রতিবেদন মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে দাখিল করেছেন টাস্কফোর্স সদস্যরা।
এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর পুঁজিবাজার উন্নয়নে আইনকানুন সংশোধনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশের জন্য ৫ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে বিএসইসি। তবে এ সংক্রান্ত সরকারি চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় গত ১০ জানুয়ারি।
টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোংয়ের অংশীদার এ এফ নেসারউদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মোস্তফা আকবর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষক আল–আমিন।
খসরা প্রতিবেদনে শেয়ারের বিপরীতে দেওয়া ঋণসুবিধা সংক্রান্ত আইনি বিধিবিধান পরিবর্তন ও ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত ও সীমা আরোপের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। ব্রোকারেজ হাউসের পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংককেও আইন সংশোধনের মাধ্যমে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, অবসরে থাকা বিনিয়োগকারী, গৃহিণী ও শিক্ষার্থীদেরও ঋণসুবিধার বাইরে রাখা যেতে পারে।
টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারে সেসব বিনিয়োগকারীই ঋণসুবিধা পাবেন, যাদের ন্যূনতম ১০ লাখ টাকা বা তার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। শুধু ১০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলেই হবে না, সেকেন্ডারি বাজারে বিনিয়োগের ৬ মাসের অভিজ্ঞতা না থাকলে সেসব বিনিয়োগকারীকেও ঋণসুবিধা না দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। শর্ত পূরণের পর শেয়ারের বিপরীতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ঋণগ্রহীতার সক্ষমতা যাচাইয়ের বিধান করারও প্রস্তাব করা হয়েছে।
মার্জিন ঋণসংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া ঋণের মেয়াদ হবে ছয় মাস থেকে এক বছর। মেয়াদ শেষে তা আবার নবায়ন করা যাবে। কোম্পানির উদ্যোক্তা–পরিচালক, প্লেসমেন্টধারী ও বিক্রয় নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা শেয়ার, গুজবনির্ভর এবং জামানত রাখা শেয়ারকে ঋণসুবিধার বাইরে রাখতে হবে।
কোন ধরনের শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা ঋণসুবিধা পাবেন, তার একটি তালিকা প্রতিদিন স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে প্রকাশ করার সুপারিশ করা হয়েছে টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘এ’ শ্রেণির কোম্পানি, যাদের মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ৩০- এর বেশি হবে না, সেসব শেয়ারকে ঋণযোগ্য শেয়ার হিসেবে বিবেচনার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পিই রেশিও হতে হবে ২০।
টাস্কফোর্সের সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, ঋণদাতা কোনো প্রতিষ্ঠান তার বিতরণ করা ঋণের ২৫ শতাংশের বেশি একক কোনো শেয়ারে ঋণ হিসেবে বিতরণ করতে পারবে না। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের ঋণগ্রহীতা সব বিনিয়োগকারীকে বিবেচনায় নিয়ে এই বিনিয়োগ সীমা পরিপালন করতে হবে।
ঢাকা/এনটি/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ য় র র ব পর ত ১০ ল খ ট ক স প র শ কর
এছাড়াও পড়ুন:
অর্থবছরের প্রথমার্থে কঠিন সময় পার করেছে পুঁজিবাজার
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) বাংলাদেশের পুঁজিবাজার কঠিন সময় অতিক্রম করেছে। এ সময়ে পুঁজিবাজারে টানা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা ছিল এর মূল কারণ। বিশেষ করে, শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে হওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতা পুঁজিবাজারের পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। মুদ্রানীতিতে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
মুদ্রানীতি ঘোষণায় পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়, বিএসইসির নবনিযুক্ত নেতৃত্ব বাজার স্থিতিশীল করতে বেশকিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—বাজারে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের জরিমানা আরোপ। পাশাপাশি, বাজার অস্থিরতার মূল কারণ খুঁজে বের করতে এবং বাজারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
অর্ধবার্ষিকে সোনালী পেপারের মুনাফা বেড়েছে
যমুনা অয়েলের এজিএমের তারিখ পরিবর্তন
এতে আরো উল্লেখ করা হয়, শুধু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়, পুঁজিবাজার পুনরুদ্ধারে বিএসইসি একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এর মূল লক্ষ্য হলো— পুঁজিবাজারকে পুনরুজ্জীবিত করা, বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা এবং সুশাসন নিশ্চিত করা। এই বহুমুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল আর্থিক পরিবেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে।
উল্লিখিত সময়ে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স উল্লেখযোগ্যভাবে ২.৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা ২০২৪ সালের জুন মাসে ৫৩২৮ পয়েন্ট থেকে কমে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ৫২০৫ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এছাড়া, গড় দৈনিক লেনদেনের পরিমাণও ১০ শতাংশ কমে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৫৬০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যেখানে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে পুরো সময়ে এটি ছিল ৬২২ কোটি টাকা। এই পতন বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ হ্রাস এবং বাজারে আগ্রহ কমার ইঙ্গিত দেয়।
মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে ডেপুটি গভর্নরগণ, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এনটি/রফিক