লেখককে ছুটতে হয় নতুন চিন্তার খোঁজে: ফজলুল কবিরী
Published: 12th, February 2025 GMT
কথাসাহিত্যিক ও সমালোচক ফজলুল কবিরী জন্ম ১৯৮১ সালে। বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানাধীন হালদা নদীর তীরবর্তী গ্রাম উত্তর মাদার্শায়। তিনি পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত ফজলুল কবিরী। তার প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ : ‘বারুদের মুখোশ’, ‘ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া গল্প’, ‘ডোরাকাটা ক্যাডবেরি’ উপন্যাস : ‘ঔরসমঙ্গল’ প্রবন্ধ ‘লেখকের বুদ্ধিবৃত্তিক দায় ও দর্শনের খোঁজে’ উল্লেখযোগ্য। ফজলুল কবিরী তার গল্পভাবনা, ভাষাভাবনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণে স্বরলিপি।
রাইজিংবিডি: আপনার একটি গল্প থেকে আরেকটি গল্পের ভাষা ও আঙ্গিক আলাদা হয়ে থাকে। যখন গল্প নির্মাণ শুরু করেন গল্পের বিষয়বস্তু ভাষাকে নির্মাণ করে নাকি ভাষা গল্পের বিষয়বস্তু ধারণ করে নেয়?
ফজলুল কবিরী: লেখালেখি শেষপর্যন্ত স্কিল ও মরালিটির লড়াই৷ সেইসাথে খুবই উর্বর মস্তিষ্ক ও সহজাত প্রতিভার পাশাপাশি যেসব লেখক তীব্র পরিশ্রম করার মানসিকতা নিয়ে জন্মান, তারাই লম্বা রেসের ঘোড়া হিসেবে সাহিত্যের বিশাল দিগন্তে রাজত্ব করেন। তারাই সভ্যতার অগ্রযাত্রায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নতুন চিন্তার রাস্তা নির্মাণ করেন। এর মানে এই নয় যে বাকিরা দুধভাত। সমাজ-রাষ্ট্রের অসুখ সারাতে নিত্য যেসব দায় লেখকদের থাকে, ছোট-বড় সব লেখক-চিন্তক মিলেই সেসব দায় সামলান। তাদের মধ্যে দলীয় দাসত্বের ঊর্ধ্বে উঠে যারা নিজেদের অবস্থান তৈরি করেন, তারাই সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক। সে প্রাসঙ্গিকতার জায়গা থেকে গল্পের শরীরে জীবন পায় ভাষা ও চিন্তার নতুন প্রবাহ। মূলত বিষয়ই নির্ধারণ করে দেয় গল্পের ভাষা কেমন হবে। ফলে আদিবাসীদের নিপীড়িত হওয়ার গল্প যে ভাষায় উঠে আসে, ঠিক একই ভাষায় রচিত হয় না অন্য কোনো সংখ্যালঘু মানুষের সংগ্রামের গল্প। কর্পোরেট হিপোক্রেসির গল্প যে ভাষায় উঠে আসে, ঠিক একই ভাষায় ধরা দেয় না অন্য কোন গভীর পরিসরের গল্প।
রাইজিংবিডি: চলমান রাজনৈতিক বৃত্তে দাঁড়িয়ে এর বাইরে পাঠককে ভাবাবার যে ভাষা বিনির্মাণ করতে হয়, সেই ভাষা বিনির্মাণে একজন গল্পকার হিসেবে কতটুকু স্বাধীন, কতটুকু পরাধীন? ফজলুল কবিরী : একটা আশঙ্কার কথা প্রায়শ বলি। তা হচ্ছে ভাষা ও চিন্তার পরাধীনতা। এমনকি তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের ভবিষ্যতের সাহিত্য কর্পোরেট সাহিত্যেরই ইতিহাস হবে। এই ভয়াবহ বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই একজন লেখককে এগোতে হবে। আমরা গরিবি সাহিত্যচর্চার ভেতর দিয়ে যে রোদন, দ্রোহ ও প্রগতির বার্তা সমাজ ও রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দিতে চাই, তাকে আরও বেশি প্রতিযোগিতার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। আমরা লেখকরা হয়তো উড়েই যাব। ফলে বই প্রকাশের সাময়িক সুখ ও উত্তেজনার বাইরে যেটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো পাঠযোগ্য ও গভীর পরিসর নিয়ে আগানো একটি বইয়ের বাজার তৈরিতে অধিক মনোযোগী হওয়া; আরও জরুরি হচ্ছে নিষ্ঠাবান পাঠক তৈরি করা। সেসব হচ্ছে না। এদেশের লেখক-পাঠকদের করুণ দশা দেখে বিচলিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। প্রকাশের প্রাথমিক পর্বেই গলাটিপে হত্যা করা হয় একেকটি বইয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে। লেখক হিসেবে আমরা খুব সামান্যই স্বাধীন।
আরো পড়ুন:
বইমেলায় শফিক হাসান’র ভ্রমণগ্রন্থ ‘দেখি বাংলার মুখ’
বইমেলায় হট্টগোল, উপদেষ্টা ফারুকীর কড়া বার্তা
রাইজিংবিডি: গল্পে আলাদা চিন্তা থাকে? প্রশ্নকে উত্তর আর উত্তরকে প্রশ্নে রূপান্তর করা যায়। এই যে প্রক্রিয়া এর সামাজিক প্রয়োজনীয়তা কতটুকু আছে বলে মনে করেন?
ফজলুল কবিরী: একটা চিন্তার জীবনকাল থাকে। চিন্তারও মৃত্যু ঘটে একসময়। অন্যকোনো নতুন চিন্তা বিকশিত হয়। ফলে লেখকদের কাজ হচ্ছে চিন্তার প্রবাহকে সচল রাখা। সমাজে অসংখ্য তরুণ এখনো লেখক হতে চান। এমনকি জীবিকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টাকেও তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে ভবিষ্যতের ঝুঁকিপূর্ণ একটা জার্নিকে ভালোবাসতে চান। এসবের প্রয়োজন আছে৷ তবে তাদের জন্য কী অপেক্ষা করে? দশকের পর দশক তারা চিন্তা ও দর্শনের অলিগলিতে নিজেদেরকে বিলিয়ে দেন, কিন্তু এই বিকাশের পথে তারা এমন কিছু অপ্রত্যাশিত প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন যা তাদের মগ্নপাঠ ও জ্ঞানচর্চার পথে অন্তরায়। লেখকের নিবিড় দর্শনের কাছে নয়, পাঠক ছুটছেন স্পোকেন ইংলিশ কিংবা রগরগে মিথ্যাচারের পেছনে। তবু এসব সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে গল্পেও নবতর চিন্তার বীজ বোনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রাইজিংবিডি: ২০২৫ বইমেলায় আপনার নতুন-পুরোন কি কি বই থাকছে?
ফজলুল কবিরী: ২০২৫-এর বইমেলায় আমার চতুর্থ গল্পগ্রন্থ 'গান্ধর্ব গল্পগুচ্ছ' প্রকাশিত হয়েছে। এটি প্রকাশ করেছে দ্বিমত পাবলিশার্স। ঢাকা বইমেলায় বইটির পরিবেশক 'জলধি'। জলধি থেকে ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয়েছিল আমার তৃতীয় গল্পগ্রন্থ 'ডোরাকাটা ক্যাডবেরি'। সেটিও পাওয়া যাচ্ছে একই স্টলে। এছাড়া আমার প্রবন্ধের বই 'লেখকের বুদ্ধিবৃত্তিক দায় ও দর্শনের খোঁজে' ২০২৩ সালে প্রকাশ করেছিল দ্বিমত পাবলিশার্স। বইটিও প্রকাশক দ্বিমত এবং রকমারিতে পাওয়া যাচ্ছে। আমার একমাত্র উপন্যাস 'ঔরসমঙ্গল' পাওয়া যাচ্ছে প্রকাশক বেহুলাবাংলার স্টলে।
রাইজিংবিডি: আপনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন ‘রাষ্ট্রের প্রত্যেকটা মতাদর্শ আমাদের কাছে সার্কাস হয়ে এসেছে’—একটু ব্যাখ্যা করবেন।
ফজলুল কবিরী: রাষ্ট্রের যে আলাদা ও স্বাধীন অস্তিত্ব আমরা কল্পনা করি সেটি সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের মত ও পথকে জায়গা দিতে বাধ্য। মানুষ নির্ভয়ে নিজেদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করবে। এটি হচ্ছে বেঞ্চমার্ক। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ দশকে শাসকগোষ্ঠী মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। আমাদের শাসনব্যবস্থায় সামাজিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ কোন শাসকই উন্মুক্ত রাখেননি। ফলে তাদেরকে মিথ্যাচারকে সার্কাস হিসেবেই দেখা উচিত।
রাইজিংবিডি: আপনি লেখা ও পড়ার মধ্যে সমন্বয় করেন কীভাবে? কখন বেশি লেখা হয়?
ফজলুল কবিরী : লেখককে চব্বিশ ঘন্টাই চিন্তা এবং লেখালেখির ভাবনাপ্রবাহের মধ্যে থাকতে হয়। একজন লেখককে বুঝতে হয় লেখালেখিতে নিজের ভালো কিংবা খারাপ সময়ে খুব কম সতীর্থকেই কাছে পাওয়া যায়। এমনকি একসময় যাদের সাথে অনেকগুলো বসন্ত কাটানোর অভিজ্ঞতা ছিল, যাদের সাথে তর্কে-বিতর্কে কেটে যেত অসংখ্য সন্ধ্যা, তাদেরকেও লেখালেখির অন্য পর্বে আর কাছে পাওয়া যায় না। নিজের উচ্চতাকে অন্যের ছায়ায় মাপতে নেই। নিজেকে নিজের পথ খোঁজে নিতে হয়। যাদের সংশ্লেষ একজন লেখকের চিন্তা ও তৎপরতায় কোনো কিছু যোগ করবে না, তাদের সঙ্গ বয়ে বেড়ানো অর্থহীন। এভাবেই একজন লেখককে লেখা ও পড়ার মধ্যে সমন্বয় করতে হয়। ছুটির দিনগুলোতে লেখার পরিমান বেশি হয় আর পাঠের জন্য ছুটিরদিন বলে কিছু নেই। লেখক একটা ছুটন্ত ট্রেনের যাত্রী। লেখককে ছুটতে হয় নতুন চিন্তার খোঁজে। ভাষার ঝর্ণাধারার খোঁজে।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য বইম ল
এছাড়াও পড়ুন:
মোহাম্মদপুরের ১১ বছরের মেয়েটিকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশে সংবেদনশীলতার অভাব ছিল: ইউনিসেফের প্রতিনিধি
সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়া ১১ বছরের মেয়েটিকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সংবাদ পরিবেশনে সংবেদনশীলতার অভাব ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স। মেয়েটিকে উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশংসা করলেও পুরো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া এবং উপস্থাপনের কিছু ক্ষেত্রে শিশু সুরক্ষা নীতি লঙ্ঘন হয়েছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
আজ সোমবার এক বিবৃতিতে রানা ফ্লাওয়ার্স এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, কোনো শিশু যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে, তখন সে নতুন কিছু শেখার সুযোগে ভরপুর এক জগতে প্রবেশ করে। এই জগতে নতুন সব সংযোগ তৈরি করার সম্ভাবনার পাশাপাশি অজানা বিপদের ঝুঁকিও থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে ১১ বছরের একটি মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে তাকে বাড়ি থেকে অনেক দূরে উত্তরবঙ্গের একটি জেলা থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি দেশজুড়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। প্রশ্ন উঠছে—কীভাবে এমন একটি ঘটনা ঘটতে পারে, শিশুরা সঠিক দিকনির্দেশনা পাচ্ছে কি না এবং শিশুদের সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট করা হচ্ছে কি না।
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচরণ করবে, সেটা আশা করা ভুল। তাদের মস্তিষ্ক আবেগ, মনঃসামাজিক ও শারীরিক বিকাশের কাজে চলমান থাকে। তারা দুর্বল ও অসহায়। তাদের নিরাপত্তা ও সুস্থতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সমাজে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত সব বিষয় এখনো সুস্পষ্ট নয়। তবে এমন সংবেদনশীল ঘটনা কীভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে ভুক্তভোগীর মানসিক অভিঘাত থেকে বেরিয়ে আসা ও মর্যাদার বিষয়। ইউনিসেফ শিশুটিকে উদ্ধারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রচেষ্টার প্রশংসা করে। তবে গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করে যেভাবে পুরো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ও উপস্থাপন করা হয়েছে, সে বিষয়ে। বিশেষ করে যেখানে শিশু সুরক্ষা নীতি লঙ্ঘন হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রেও সংবেদনশীলতার অভাব দেখা দিয়েছে।
ইউনিসেফের প্রতিনিধি বলেন, এই শিশুটিকে উদ্ধারের সময় যা যা ঘটেছে, তা গভীর উদ্বেগজনক। পুলিশের মাধ্যমে সুরক্ষিত ও বেষ্টিত থাকার পরিবর্তে তাকে ক্যামেরায় সবার সামনে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে, যা তার মানসিক অবস্থাকে আরও নাজুক করে তুলেছে। শিশু আইন ২০১৩-এ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা আছে, এ ধরনের ঘটনা কীভাবে সামাল দেওয়া উচিত। ধারা ৫৪ (১)–এ কন্যাশিশুদের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু প্রোটোকলের উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা আছে, এমন পরিস্থিতিতে কন্যাশিশুদের একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে সংবেদনশীলভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করাতে হবে। এ সময় অবশ্যই শিশুটির আস্থাভাজন একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি সহায়তার জন্য তার সঙ্গে থাকবেন। এ ছাড়া ধারা ৯১–এ আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুদের জন্য শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তবে এ ঘটনায় আশ্চর্যজনকভাবে শিশুটির সাক্ষাৎকার রেকর্ড করা হয়। এর চেয়েও ভয়ংকর বিষয় হলো, শিশুটির পরিচয় গোপন না করে সাক্ষাৎকারটির ফুটেজ তখনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা হয়, যা প্রমাণ করে যে আইন মানা হয়নি।
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে এই অনৈতিক পোস্টগুলো অবিলম্বে সরিয়ে ফেলা উচিত ছিল। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়ানো এই ভিডিওগুলো পরবর্তী সময়ে অনেক মূলধারার সংবাদমাধ্যমেও ব্যবহার করতে দেখা গেছে, যদিও এই সংবাদমাধ্যমগুলো এমন সংবেদনশীল ও নাজুক ঘটনা নিয়ে খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর পরিচয় ও অন্যান্য তথ্য গোপন রাখার আইন সম্পর্কে অবহিত। সংবাদমাধ্যম এমন বেশ কিছু ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ বারবার শেয়ার করেছে। এর চেয়েও ভয়ের বিষয় হচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের বর্ণনায় প্রাপ্তবয়স্ক একজন পুরুষকে শিশুটির ‘বয়ফ্রেন্ড বা প্রেমিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। এভাবে একটি বিপজ্জনক ও ভুল ব্যাখ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘আমাদের সবার পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত যে এই শিশুটি ভুক্তভোগী। তাকে আমাদের দোষারোপ করা বা তার ঘটনা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। তার প্রয়োজন সুরক্ষা, গোপনীয়তা রক্ষা এবং নিজেকে সামলে নেওয়ার সুযোগ ও সহায়তা। সে নিতান্তই ১১ বছরের শিশু। সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে মানসিকভাবে সক্ষম নয়। আর কোনো প্রাপ্তবয়স্কের কখনোই কোনো শিশুর বিশ্বাস, কৌতূহল বা দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে শোষণ করা উচিত নয়।’
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ১১ বছর বয়সী শিশুটির এখন যা দরকার, তা হলো মানসিক ক্ষত থেকে সেরে ওঠার সময়, সুযোগ ও পরিবেশ। এটা তখনই সম্ভব যখন কর্তৃপক্ষ, সংবাদমাধ্যমসহ সবাই তার গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারকে সম্মান করবে। এমন একটি সমাজ গড়ে উঠুক, যেখানে প্রতিটি শিশু সুরক্ষিত থাকে, মূল্যায়িত হয়, সম্মানিত বোধ করে এবং ভয় বা ক্ষতি ছাড়াই বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ১১ বছরের শিশু ‘নিখোঁজ’, থানায় জিডিমোহাম্মদপুর থেকে ‘নিখোঁজ’ শিশুটির সন্ধান পেয়েছে পুলিশমোহাম্মদপুর থেকে ‘নিখোঁজ’ শিশুটি উদ্ধার হয়ে এখন র্যাবের হেফাজতে