ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিবেদনের জেরে পদ হারালেন ইউএসএআইডির মহাপরিদর্শক
Published: 12th, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নানা পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিনই দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল এইডের (ইউএসএআইডি) মহাপরিদর্শক পল মার্টিনকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউএসএআইডির একজন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, মহাপরিদর্শকের অফিস ইউএসএআইডিকে বিলুপ্ত করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টার সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশের একদিন পর পল মার্টিনকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার ইউএসএআইডির মহাপরিদর্শকের দপ্তর থেকে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নানা পদক্ষেপ ইউএসএআইডির সক্ষমতাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিন মঙ্গলবার পল মার্টিনকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল পার্সোনেল অফিসের ডেপুটি ডিরেক্টর ট্রেন্ট মোর্সের একটি ইমেলের মাধ্যমে মার্টিনকে বরখাস্তের কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইউএসএআইডি মহাপরিদর্শক পদ থেকে আপনাকে অপসারিত করা হলো যা ‘অবিলম্বে কার্যকর’ হবে। তবে বরখাস্তের কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। এ ব্যাপারে হোয়াইট হাউসও কোনো মন্তব্য করেনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি প্রেডিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ইউএসএআইডির ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেন। তিনি একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। সেই আদেশেই বিদেশি সহযোগিতা বন্ধের বিষয়টি সামনে আসে। এতে বলা হয়, ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে এবং নতুন সাহায্য অনুমোদন বন্ধ রেখেছে। তিনি নির্বাহী আদেশে বিদেশে সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণার পর চলতি মাসের শুরুতে ইউএসএআইডির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটও বন্ধ হয়ে যায়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক ওই সময় ইউএসএআইডির কড়া সমালোচনা করেন। ইউএসএআইডিকে একটি ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে তিনি মন্তব্য করেন। ইলন মাস্ক বলেন, মার্কিন জনগণের করের অর্থ দিয়ে জৈব অস্ত্র গবেষণায় অর্থায়ন করেছে ইউএসএআইডি। সেইসঙ্গে সংস্থাটি প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর জন্য অর্থ ব্যয় করেছে। তাই সময় হয়েছে সংস্থাটির মরে যাওয়ার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনটি পোস্ট শেয়ার করেছেন মাস্ক। সেখানে তিনি বলেছেন, আপনারা জানেন কী, ইউএসএআইডি আপনাদের করের অর্থে জৈব অস্ত্র গবেষণায় অর্থায়ন করেছে। এর মধ্যে কোভিড-১৯ এর মতো জীবাণুও অন্তর্ভুক্ত, যার কারণে কয়েক কোটি মানুষ মারা গেছেন।
তবে পরের সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রে ছাঁটাইয়ের মুখে থাকা প্রায় ২ হাজার ৭০০ ইউএসএআইডি কর্মীকে সাময়িকভাবে কাজে ফেরার অনুমতি দিয়েছে দেশটির আদালত। ৭ ফেব্রুয়ারি দেওয়া এক আদেশে ওয়াশিংটনের ডিস্ট্রিক্ট জজ কার্ল নিকোলস সাময়িকভাবে হাজার হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করার পরিকল্পনা স্থগিত করেছেন। এই আদেশ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে নিয়োগ পেয়েছিলেন এই বিচারক। কার্ল নিকোলসের আদালতের এই হস্তক্ষেপে বিদেশি সহায়তা সংস্থাটিকে ভেঙে দিতে ধাক্কা খান ট্রাম্প।
আদালতের আদেশের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ছাঁটাই হওয়া প্রায় ৫০০ কর্মী কাজে পুনর্বহাল হয়েছেন। এ ছাড়াও সবেতন ছুটিতে পাঠানো ইউএসএআইডির ২,২০০ কর্মী কাজে ফিরতে পারবেন। এদের মধ্যে যারা মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আছেন তাদেরকেও স্থানান্তর করতে পারবে না ট্রাম্প প্রশাসন।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার দেওয়া তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে প্রায় ১৮০ দেশে ৭ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, এই পর্যালোচনা ৮৫ দিনের মধ্যে শেষ হবে এবং তা নিশ্চিত করবে যে সব সাহায্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করছে। তিনি আরও বলেছেন, ‘বিদেশে আমাদের ব্যয় শুধু তখনই হওয়া উচিত, যদি তা আমেরিকাকে নিরাপদ, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করে।’ তবে জরুরি খাদ্য সহায়তার জন্য তিনি ছাড়পত্র জারি দিয়েছেন। অর্থাৎ গাজা ও অন্যান্য যে সব জায়গায় খাদ্য সংকট চলছে সেখানে জরুরি খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউএসএআইড ইউএসএআইড র পদক ষ প র জন য পদ থ ক
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ দিনে যেভাবে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিলেন ট্রাম্প
মাত্র ৫০ দিন সময়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর আগের যে কোনো উত্তরসূরির চেয়ে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নিয়মের ভিতে বেশি নাড়া দিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয় লাভের পর ৮০ বছরে এ ভিত অনেক কষ্টে গড়ে তোলে যুক্তরাষ্ট্র।
দিক পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিয়ে বা কোনো নৈতিক কৌশল তুলে না ধরেই তিনি ইউক্রেন যুদ্ধে পক্ষাবলম্বন করেন এবং আগ্রাসনকারীকে সমর্থন করেন। তিনি মস্কোকে আগ্রাসনকারী আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘের আনা প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যগত মিত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার পক্ষে ভোট দিতে দ্বিধা করেননি।
মঙ্গলবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পানামা খাল, গ্রিনল্যান্ড, গাজা ও সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যেটি– কানাডার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরের মিত্রের (কানাডা) সঙ্গে সীমান্ত মূলত একটি ‘বিভেদের কৃত্রিম রেখা’। ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর বাগ্বিতণ্ডার পর তিনি ইউক্রেনে অস্ত্র, এমনকি মার্কিন বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট চিত্র পাঠানোও বন্ধ করে দেন।
ট্রাম্প মার্কিন অর্থনীতির জন্য ‘জোঁক’ আখ্যা দিয়ে মিত্রদের ওপর করারোপ করেছেন। সেই সঙ্গে ন্যাটোর আস্থা অত্যন্ত গভীরভাবে নষ্ট করেছেন। এ প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স তাদের পারমাণবিক ছাতা পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে। পোল্যান্ড নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কথা ভাবছে। এ দুই দেশই যুক্তরাষ্ট্রকে আর চূড়ান্ত সুরক্ষাদাতা মনে করছে না। যখন ন্যাটো চুক্তি হয়, তখন কেন্দ্রে ছিল এ সুরক্ষার বিষয়টি।
বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাবিষয়ক দপ্তর তাদের প্রায় অর্ধেক জনবল ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আকার কমাতে ট্রাম্প প্রশাসন এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এ পরিকল্পনার আওতায় শিক্ষা দপ্তরের প্রায় ২ হাজার ১০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের মধ্যে পড়তে পারেন। ট্রাম্প অনেক দিন থেকেই শিক্ষা দপ্তরকে বিলুপ্ত করতে চাইছেন। তবে শিক্ষা দপ্তরকে বিলুপ্ত করতে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হবে।
বুধবার এনডিটিভি জানায়, শুল্ক নিয়ে আবারও ভারতের সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সম্প্রতি তিনি জানান, মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর কথা দিয়েছে ভারত। এরই মধ্যেই শুল্ক নিয়ে আরেকবার দিল্লিকে নিশানা করেছে ওয়াশিংটন।
কানাডার ওপর ৫০ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা প্রত্যাহার
রয়টার্স জানায়, কানাডার ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক আরোপ নিয়ে পরস্পরবিরোধী ঘোষণায় আর্থিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার এক ঘোষণায় কানাডার ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার কথা জানান তিনি। তবে কয়েক ঘণ্টা পরই এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউএসএআইডির নথি ধ্বংসের নির্দেশ
মার্কিন উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির বিপুল নথিপত্র ধ্বংসের আদেশ দিয়েছেন সংস্থাটির এক কর্মকর্তা। মঙ্গলবার আদালতে দায়েরকৃত অভিযোগে এ দাবি তোলা হয়। মার্কিন সরকারি কর্মীদের ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল আদালতে এ অভিযোগ দায়ের করা হয়।
নাসার প্রধান বিজ্ঞানী বরখাস্ত, ছাঁটাইয়ের ইঙ্গিত
বুধবার এএফপি জানায়, নাসা মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে, সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানীসহ আরও কয়েকজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে, যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আদেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে।
এ‘সেলফ ডিপোর্টেশন’ অ্যাপ চালু
যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে থাকা অভিবাসীদের সম্ভাব্য গ্রেপ্তার ও আটকের মুখোমুখি হওয়ার পরিবর্তে নিজ থেকে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দিতে একটি অ্যাপ চালু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।