প্রত্যেক মানুষ নিজের দৃষ্টি দিয়েই দেখেন। কেউ কেউ দেখার সঙ্গে যুক্ত করেন অন্তর্দৃষ্টিও। একেকজনের বাংলার মুখ দেখার পদ্ধতি হয়তো ভিন্ন রকমের। শফিক হাসান উল্লিখিত দুই পদ্ধতিতেই দেখেন তার চিরচেনা কিংবা অচেনা বাংলাদেশকে। অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার ভ্রমণগ্রন্থ ‘দেখি বাংলার মুখ’। এতে রয়েছে ১৫টি ভ্রমণকাহিনী। স্থান পেয়েছে দেশের নানা প্রান্তে ছুটে বেড়ানোর গল্প। ভ্রমণকাহিনীগুলোর শিরোনামে চোখ বোলালেই বোঝা যাবে কেমন মালা গেঁথেছেন তরুণ এই লেখক। 

বইয়ের শুরুতেই রয়েছে বড় পরিসরের ভ্রমণবৃত্তান্ত ‘বৃষ্টিভেজা নড়াইল, পল্লীকবির বাড়ি ও ঝিনাইদহের গল্প’। বৃহৎ পরিসরের আরও দুটি ভ্রমণগল্প হচ্ছে ‘রঙ্গ-রসের রংপুরে কিছু আলো, কিছুটা অন্ধকারে’, ‘পুণ্ড্রনগরের পথে-ঘাটে, পুরাতত্ত্ব ও মিথের জাদু’। অন্য ভ্রমণকাহিনীগুলোর বিষয়বস্তুও শিরোনাম থেকেই অনুমেয় লালন ফকির ও রবীন্দ্রনাথ ভূমি-তালাশে, কেওক্রাডং চূড়ায় উচ্চতার মেলায়, নদী পেরিয়ে বরিশালে, গীতিকার দেশে, শেকড়ের সন্ধানে মুজিবনগরে, কক্সবাজারে সমুদ্রভোজনে, স্মৃতি বিস্মৃতির চট্টগ্রামে, মাদারীপুরের স্বর্ণরেণু, তূর্ণা নিশিথায় নিশিযাপন, হাতিরঝিল ভেসে যায় জলজোছনায়, কাহারোলে অন্য রোল, ঝিম সবুজের হাতছানি দেয় শ্রীময়ী সিলেট ও শ্রীমঙ্গল।

ভ্রমণকাহিনী লেখার নেপথ্য সংযোগসূত্র উল্লেখ করে শফিক হাসান বলেন, ``লোকে যেটাকে ভ্রমণকাহিনী বলে আখ্যায়িত করে, আমি বড়জোর সেটাকে ভ্রমণগদ্য নাম দিতে পারি! তবে বোঝা ও বোঝানোর সুবিধার্থে অধিকাংশ সময়ে ভ্রমণকাহিনীই উচ্চারণ করতে হয়। আমার ভ্রমণগদ্যে আর যা-ই থাকুক, ‘কাহিনী’ থাকে কম। ’

আরো পড়ুন:

বইমেলায় হট্টগোল, উপদেষ্টা ফারুকীর কড়া বার্তা

বইমেলায় হট্টগোল: ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি

ভ্রমণে মূলত কী খোঁজেন, কেন ভ্রমণ করেন? জানতে চাইলে এই লেখক বলেন, ‘‘অদেখা সুন্দর ছাড়া আর কী খুঁজব ঘরের বাইরে গিয়ে! শস্যবতী ধানখেতে দোলা দেওয়া বাতাস, নীরবে ফুটে থাকা নাম না জানা ফুল, জলাশয়ে হাঁসের অবাধ সন্তরণ, গাছের ডালে মাছরাঙার ধ্যানী-শিকারি দৃষ্টি, পাখির কিচিরমিচির, গৃহস্থের পোষা গবাদি পশু-পাখির চাঞ্চল্য, হরেক রকম পাখপাখালির কূজন.

.. সর্বোপরি বিশাল বাংলার সবুজ শ্যামলিমা আমাকে বিস্ময়-বিমূঢ় করে রাখে। দেখা বস্তু বারবার দেখেও মুগ্ধ হওয়ার বিরল গুণ বোধকরি রপ্ত করে ফেলেছি।’’

ভ্রমণে বড় কোনো প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়নি কখনো জানিয়ে ভ্রমণপিয়াসী এই লেখক বলেন, ‘জীবনের সঙ্গে লড়াইয়ের মাঠে মানুষ বরাবরই স্বতন্ত্র, একা। এই বিশ্ব-প্রতিবিম্ব উপলব্ধির চেষ্টা করি। এটাও আবিষ্কার করি, যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী অতিথি আপ্যায়নের কী চূড়ান্ত নজিরই-না স্থাপন করেন রূপসী বাংলার ততোধিক সুন্দর মানুষ! পরোপকারি মনোভাবজনিত সহযোগিতা ও আতিথ্যের তুলনা হয় না। অল্প-বিস্তর নেতিবাচক ঘটনা যে ঘটে না, তাও কিন্তু নয়! এসবই দেখি, উপলব্ধি করি; জাগিয়ে ও ভাসিয়ে রাখি নিজেকে। চিহ্নিত করে চলি স্বদেশ-সমকালের যাপনচিত্র। আর বুকভরে টেনে নিই নতুন বাতাস, বৈচিত্র্যপূর্ণ নবীন আলো-জল।’  

লেখক জানান, বইটিতে স্থান পাওয়া কোনো কোনো ভ্রমণকাহিনী বর্তমান সময়ে লেখা হলেও অধিকাংশই দশ থেকে পনেরো বছর আগের। আবার একাধিকবার গিয়েছেন এমন জায়গাও আছে। লেখাগুলো প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। সেই সময়টাকে ফ্রেমবন্দি করে রাখবেন বলে ‘হালনাগাদ’ করেননি। তাই কোনো কোনো বর্ণনা ও ঘটনা ওই সময়ের চোখ দিয়েই পড়তে হবে, বুঝতে হবে।

পাঠক প্রতিক্রিয়া আপাতত ভালোই। এই ভ্রমণবইয়ে পাঠক বাংলাদেশকে কতটুকু দেখতে সমর্থ হবেন, জানা নেই। কতটুকু আনন্দিত বা ব্যথিত হবেন, তাও তো বোঝার উপায় নেই লেখকের পক্ষে! তবে ইতিবাচক সাড়া পেলে শীঘ্রই দ্বিতীয় ভ্রমণগ্রন্থ লেখায় হাত দেবেন শফিক হাসান।

প্রাপ্তিস্থান: দেখি বাংলার মুখ বইটির প্রকাশক অনুপ্রাণন প্রকাশন। বইমেলায় স্টল নম্বর: ৬৯৫-৬৯৬-৬৯৭।
১৪৪ পৃষ্ঠার (৯ ফর্মা) এই বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছেন আইয়ুব আল আমিন। মুদ্রিত মূল্য : ৪০০ টাকা।

ঢাকা/লিপি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ রমণক হ ন বইম ল য়

এছাড়াও পড়ুন:

অযাচিত সংযোগ নয়

ব্লুটুথ প্রযুক্তি এখন ল্যাপটপ থেকে স্মার্টওয়াচ ছাড়াও অন্য ডিভাইস সংযোগ খুব সহজ করেছে। কিন্তু ব্লুটুথের সম্ভাব্য ঝুঁকি বোঝা সবার জন্যই প্রয়োজন। ব্যক্তিগত ডেটা ও গোপনীয় তথ্য সুরক্ষিত রাখতে ঝুঁকির বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকলে বিপদ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা সহজ হবে। ব্লুটুথের বহুমাত্রিক ব্যবহারের কারণে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। নিরাপত্তা ঝুঁকি তার মধ্যে অন্যতম।
ব্লুটুথ মূলত দুটি ডিভাইসের সংযোগে জরুরি ভূমিকা রাখে। পিন বা তার ছাড়াই সংযোগমাধ্যম হিসেবে কাজ করে ব্লুটুথ। সে কারণে বহু ধরনের নিরাপত্তা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে ব্লুটুথ। তাই সংযোগমাধ্যমের বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। 
ঝুঁকি কেন
স্মার্টফোন ও প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের কারণে সাইবার হামলার সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। ‘ব্লুজ্যাকিং’ হলো সাইবার আক্রমণের অন্যতম রূপ। যেখানে অপরিচিত ব্যক্তিরা ব্লুটুথ সংযোগ ডিভাইসে অনুপ্রবেশ করে অযাচিত মেসেজ বা ফাইল শেয়ার করে। যার মাধ্যমে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে ও সংবেদনশীল তথ্য অন্যদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
ব্লুবাগিং আসলে কী
ব্লুটুথ সচল ডিভাইস থেকে ডেটা অননুমোদিত ব্লুস্নার্ফিং পদ্ধতিতে হাতিয়ে নেওয়া হয়। যার মধ্যে মেসেজ বা মাল্টিমিডিয়া ফাইল অন্তর্ভুক্ত। সংযুক্তরা বিষয়টি থেকে একেবারেই অজ্ঞ থাকেন। ফলে সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় না। ব্লুবাগিং হলো সাইবার হামলার আরেকটি আধুনিক রূপ। যেখানে হ্যাকাররা ব্লুটুথ ডিভাইসে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। ফলে ভুক্তভোগীর অনুমতি ছাড়াই কল ও মেসেজে অনুপ্রবেশ করে সহজে তথ্য 
সংগ্রহ করে হ্যাকাররা।
ব্লুটুথ ডিভাইসে পরিষেবা আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব। অনুমোদনহীন সংযোগের অনুরোধ গ্রহণ করলে ডিভাইসে ম্যালওয়্যার রেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ফলে ডিভাইস ব্যবহারে বাধার সৃষ্টি হয়। হুট করে সিস্টেম ক্র্যাশও হতে পারে। ব্লুটুথ সংকেত সীমিত দূরত্বে কাজ করে। কিছু বিশেষ আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে আক্রমণকারী ডেটা বা কথোপকথন হ্যাক করতে পারে। 
ব্লুটুথের মাধ্যমে পাঠানো অপরিচিত তথ্য বা আহ্বান অবশ্যই সংবেদনশীল হিসেবে আমলে নিতে হবে।
বিশেষ এমআইটিএম পদ্ধতির কৌশলে আক্রমণকারীরা ব্লুটুথ ডিভাইসে আন্তঃযোগাযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। যার মাধ্যমে তথ্য হাতিয়ে নেওয়া সহজ। ফলে তথ্যের গোপনীয়তা শিথিল হয়ে পড়ে। ব্লুবোর্ন আরেকটি বিশেষায়িত নিরাপত্তা দুর্বলতা, যা কোটি কোটি ব্লুটুথ ডিভাইসকে প্রভাবিত করতে পারে। সব ডিভাইসের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে সহজেই বিনা অনুমতিতে তথ্য হাসিল করা সম্ভব। ক্ষতিকারক ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার ডেটা ডিভাইসে স্বয়ংক্রিয় আপলোড হয়ে স্মার্টফোনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে দেয়।
জটিল ব্রুট ফোর্স
কিছু ব্লুটুথ ডিভাইস দুর্বল এনক্রিপশন বা ডিফল্ট পিন পদ্ধতিতে কাজ করে, যা ব্রুট ফোর্স আক্রমণকে সাদরে আমন্ত্রণ জানায়। হ্যাকাররা নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাইপাস করতে ডিভাইসে অনুমোদনহীন অনুপ্রবেশ পেতে উল্লিখিত দুর্বলতা মেনে কাজ করে।
আইওটি ডিভাইস ও পরিধানযোগ্য সব যন্ত্রে ব্যবহৃত ‘বিএলই’ বাড়তি নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। বিএলই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এটি সহজেই ডেটা ম্যানিপুলেশন সমর্থন করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অযাচিত সংযোগ নয়