নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন ছুটি হবে ১২০ দিন
Published: 12th, February 2025 GMT
বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী নারী শ্রমিকদের প্রসূতিকালীন ছুটি ১৬ সপ্তাহ। শ্রমিকপক্ষের দাবি অন্য সব খাতের মতো নারী শ্রমিকদের প্রসূতিকালীন ছুটি ৬ মাস বা ১৮০ দিন করা। তবে মালিকপক্ষ সেই দাবি মানতে নারাজ। তাই সরকারের পক্ষ থেকে মাঝামাঝি অবস্থান নিয়ে এই ছুটি ১২০ দিন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.
ঢাকার বিজয়নগরে শ্রম ভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানসহ টিসিসির মালিক, শ্রমিক ও সরকারপক্ষের মোট ৬০ সদস্যের বেশির ভাগই উপস্থিত ছিলেন। নতুন ধারা সংযোজন এবং বিদ্যমান ধারা সংশোধনসহ ১০১টি ধারা নিয়ে কাজ করছে টিসিসি। শ্রম আইনের কিছু ধারা বিলুপ্তও করা হচ্ছে। আগামী মার্চের মধ্যে আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারির কথা রয়েছে।
গতকালের বৈঠকের আগে শ্রমসচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একাধিক বৈঠকে তিন পক্ষের সম্মতিতে ৭৯টি বিষয়ে একমত হওয়ার তথ্য জানিয়েছিল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ২০ শতাংশের বদলে ১৫ শতাংশ শ্রমিকের সায়, অংশগ্রহণ তহবিলে জমাকৃত অর্থ সমান অনুপাতে সব সুবিধাভোগীর মধ্যে বণ্টন, জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের বিপদ থাকলে সেসব কাজ করাতে বাধ্য না করা, নারী শ্রমিকদের যৌন হয়রানি না করা ইত্যাদি।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, নারী শ্রমিকের সন্তান প্রসবের ৮ সপ্তাহের মধ্যে কোনো কাজ করাতে পারেন না কারখানামালিকেরা। গতকালের বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে ৮ সপ্তাহের বদলে তা হবে ৬০ দিন। আবার প্রসূতি কল্যাণ সুবিধার মজুরি এত দিন নগদে দেওয়ার বিধান ছিল। এখন বলা হয়েছে, নগদে তো পরিশোধ করা যাবেই, ব্যাংক বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতেও এই মজুরি পরিশোধ করা যাবে।
কর্মক্ষেত্রে বা কর্মক্ষেত্রের বাইরে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে কোনো দুর্ঘটনায় কোনো শ্রমিক শারীরিক বা মানসিক আঘাত পেলে বা প্রাণহানি ঘটলে তা কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতকালে সংঘটিত দুর্ঘটনা বলে গণ্য হবে—এমন ধারা সংযোজনের প্রস্তাব মেনে নেয়নি মালিকপক্ষ।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, খসড়ার সব জায়গায় নারীদের মহিলা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির প্রধান তাসলিমা আক্তার এ বিষয়ে আপত্তি জানালে শ্রম উপদেষ্টা তা আমলে নেন। নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানি সুনির্দিষ্ট নয় এবং অসদাচরণের নিষ্পত্তি কীভাবে হবে, তা–ও বলা নেই বলে বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন তাসলিমা আক্তার। শ্রম উপদেষ্টা এগুলো লিখিতভাবে জানানোর পরামর্শ দেন তাঁকে। বৈঠকে উপদেষ্টা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা মারাত্মক ধরনের অপরাধ।
বৈঠক শেষে জানতে চাইলে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সব পক্ষ থেকে পরামর্শ এসেছে। টিসিসির কাজ হচ্ছে পরামর্শগুলো শোনা, যেগুলো একসঙ্গে করার পর উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
দিল্লিকে সম্পর্ক আর খারাপ না করার বার্তা দেবে ঢাকা
ওমানের মাসকাটে আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বৈঠকে ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থান ও তাঁর ‘উস্কানিমূলক বক্তব্য’ প্রদান নিয়ে আপত্তি জানানো হবে। পাশাপাশি সম্পর্ককে ‘আর খারাপ না করার’ বার্তা দিল্লিকে দেওয়া হবে ঢাকার পক্ষ থেকে।
আগামী ১৬-১৭ ফেব্রুয়ারি ওমানে অনুষ্ঠিত হবে অষ্টম ইন্ডিয়ান ওশান সম্মেলন (আইওসি ২০২৫)। ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এতে যোগ দিতে গত জানুয়ারিতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ওমানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ সম্মেলনে যোগ দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা। সেখানেই বৈঠক করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে।
এটি হতে যাচ্ছে তৌহিদ-জয়শঙ্কর দ্বিতীয় বৈঠক। প্রথম বৈঠকটি ২০২৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন তারা। এ ছাড়া গত ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরের সময়ে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ৫ আগস্ট-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিটি বৈঠকেই সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে দুই দেশ। তবে ভারতের নানা আচরণ সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে সমকালকে বলেন, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে শুরুতে শেখ হাসিনাবিহীন বাংলাদেশকে ভারতের মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবে এখন এটাই বাস্তবতা। ভারত কোনো প্রকার উষ্কানি ছাড়া সীমান্তে অযাচিত উত্তেজনা তৈরি করা, কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে হামলা ও ভাঙচুর, শেখ হাসিনাকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা বা ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে ক্রমাগত মিথ্যাচার করাকে শক্তি প্রদর্শন হিসেবে দেখছে ঢাকা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপকে মোটেই ভালোভাবে দেখার সুযোগ নেই। এগুলো বন্ধ করতে আহ্বান জানাবে ঢাকা। সেই সঙ্গে তাদের দেশে আশ্রয় দেওয়া পলাতক অপরাধী যাতে ভারতে বসে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না করে, তার আহ্বান জানানো হবে। মোটকথা, বাংলাদেশ বরাবরই সম্পর্কের উন্নয়ন চেয়েছে। ফলে সম্পর্ক আর যাতে খারাপের দিকে না যায়, সে বার্তা ঢাকার পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।
ভারত তো বলছে, শেখ হাসিনার বক্তব্যের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ ক্ষেত্রে ঢাকা কেন দিল্লিকে দোষারোপ করছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে এই কর্মকর্তা বলেন, ভারতের মাটিতে বসে কেউ বাংলাদেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে সে দায় এড়ানোর সুযোগ দিল্লির নেই। উদাহরণস্বরূপ, ভারতকে অস্থিতিশীল করতে পারে এমন কোনো ব্যক্তিকে যদি বাংলাদেশ আশ্রয় দিত আর সেই ব্যক্তি যদি বাংলাদেশে বসে ভারতের বিরুদ্ধে কাজ করত, তাহলে সে দায় কি ঢাকা এড়াতে পারত? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আসন্ন তৌহিদ-জয়শঙ্কর বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং দুই দেশের সীমান্ত নিয়ে যে নিষ্পত্তি হওয়ার বোঝাপড়া রয়েছে, তা মেনে চলতে বলা হবে। সীমান্তে শূন্যরেখায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে উত্তেজনা না ছড়ানোর আহ্বান করা হবে।
ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
আসন্ন সফরে আইওসি ২০২৫-এ যোগ দেওয়ার পাশাপাশি ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। দেশটিতে বড় সংখ্যা প্রবাসী বাংলাদেশিরা বসবাস করেন। প্রবাসীকল্যাণসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বাকি বিষয় নিয়ে বৈঠক হবে দুই দেশের। এ ছাড়া দেশটির কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন মো. তৌহিদ হোসেন।
আইওসি ২০২৫-এ অংশ নেওয়ার পাশাপাশি ভারত ও ওমান ছাড়া আরও কয়েকটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে।