মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে
Published: 12th, February 2025 GMT
দেশের লবণের চাহিদার বড় একটি জোগান আসে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা ও কক্সবাজার জেলা থেকে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার লবণের উৎপাদন বেশ ভালো বলতে হবে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ নেই লবণচাষিদের। মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের কারণে লবণ উৎপাদন করে মাথায় হাত তাঁদের। আগেও অনেকবার এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে লবণচাষিদের। এ দুর্গতি থেকে কি তাঁদের মুক্তি নেই?
প্রথম আলোর একটি সরেজমিন প্রতিবেদনে কক্সবাজারের লবণচাষিদের কাছ থেকে জানা যায়, জানুয়ারি মাসে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হয় ২৪০ টাকায়। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে দাম ১৮০-১৮৫ টাকায় নেমে এসেছে। এতে প্রতি মণ লবণে চাষিদের ১৭০ টাকার মতো লোকসান হচ্ছে। কারণ, প্রতি মণ লবণ উৎপাদনে চাষিদের খরচ হয় প্রায় ৩৫০ টাকা।
দফায় দফায় লবণের দাম কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে চাষিরা বলছেন, মধ্যস্বত্বভোগী ও কার্গো বোটের মালিকেরা সিন্ডিকেট করে লবণের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার চার হাজারের বেশি চাষি লবণ চাষ করেন। সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে লবণ বিক্রির সুযোগ নেই। এখানে আছে কার্গো বোটের মালিকদের দৌরাত্ম্যও। উৎপাদিত লবণ সমুদ্রপথে কার্গো বোটে করেই ঢাকা-চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ-খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠাতে হয়। ফলে তাঁদের কাছে হাত-পা বাঁধা চাষিদের।
প্রতি কেজি লবণ বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে পাঁচ টাকার কম। এই সামান্য মূল্যে কী করে লবণ বিক্রি করেন চাষিরা! ফলে মাঠের পর মাঠ সাদা লবণের স্তূপ পড়ে আছে। এখন কক্সবাজারের কোথাও লবণ মজুত কিংবা সংরক্ষণের গুদামও নেই। চাষিরা উৎপাদিত লবণ মাঠে গর্ত খুঁড়ে সংরক্ষণ করেন। পরবর্তী সময়ে দাম বাড়লে যেন বিক্রি করা যায়। কিন্তু এভাবে তো সংকট সমাধান করা সম্ভব নয়। বেশির ভাগ চাষি উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে লবণ উৎপাদনে নামেন। মৌসুমে ন্যায্যমূল্যে লবণ বিক্রি করলে ৮০ শতাংশ চাষিই পথে বসবেন বলে জানা যাচ্ছে।
৪৪ হাজার প্রান্তিক চাষি, ১ লাখ শ্রমিকসহ কক্সবাজার জেলার অন্তত ১০ লাখ মানুষ লবণ উৎপাদন, পরিবহন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কার্গো বোটের মালিকদের নিয়ন্ত্রণ ও সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে লবণের এ বিশাল খাত হুমকির মুখে পড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
সম্প্রতি কক্সবাজারের লবণের মাঠ পরিদর্শনে যান শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান। তিনি লবণ উৎপাদন কার্যক্রম পরিদর্শনের পাশাপাশি চাষিদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর জেলা প্রশাসন, লবণচাষি, লবণ মিলের মালিক ও বিসিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এ খাতের সমস্যা ও সংকটগুলোর বিষয়ে তিনি অবহিত হয়েছেন। আমরা আশা করি, লবণশিল্পের উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকার কার্যকর ভূমিকা রাখবে। মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেট ভাঙার ব্যাপারে সরকারকে কঠোর হতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: লবণ ব ক র র লবণ লবণ র
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চায় বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলন
বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের জনসমাবেশে বক্তারা বলেছেন, ‘রাজনৈতিক সরকারকে আমরা বিশ্বাস করি না। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ বিএনপির বিরুদ্ধে এবং বিএনপি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। কৃষক–শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে কেউ কাজ করেনি।’
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে জনসমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলন।
সমাবেশ শেষে ভূমিহীন আন্দোলনের পক্ষ থেকে কৃষক, শ্রমিক ও প্রান্তিক জনগণের অধিকার আদায়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, যে সংস্কারের আশায় জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে কৃষক–শ্রমিক অংশ নিয়েছিলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর সেই আলোচনা স্তিমিত হয়ে আসছে। কৃষক, শ্রমিক ও প্রান্তিক খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার রক্ষায় এই রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার জরুরি। এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমরা মানব না।’
সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে রাজনৈতিক সরকার আগের মতো ফ্যাসিবাদী আচরণের সুযোগ পাবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসির উদ্দিন।
শেখ নাসির বলেন, ‘বছরের পর বছর ভূমিহীনেরা নির্যাতনের শিকার। দেশের কৃষকদের ভালোমন্দ কেউ ভাবে না। আগেই জাতীয় সরকার নির্বাচন হলে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের পছন্দের বাইরে মেম্বার–চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন না। আমরা এই ধারণার পরিবর্তন চাই।’
তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভূমিহীনেরা সমাজের প্রান্তিক পর্যায়ের নির্যাতিত মানুষ। তাদের সঙ্গে প্রশাসকের কোনো সম্পর্ক নেই। দ্রুত সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন না হলে শ্রমিকদের দুর্ভোগ লাঘব হবে না। আগে জাতীয় নির্বাচন হলে মেহনতি মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারবেন না৷ অতীতে আমরা এমনটিই দেখেছি। স্থানীয় এমপির বলয়ের বাইরে মেম্বার–চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন না।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল মজিদ বলেন, কৃষক ও শ্রমিকেরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। ৫ আগস্টের পর তাঁরা ভেবেছিলেন, এবার হয়তো নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। কিন্তু এখনো তার কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। বরং সরকার যায় সরকার আসে, সবাই তাদের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত মেটাতে ব্যস্ত। এখন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সবাই কথা বলছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে না হলে কৃষক আবারও বঞ্চিত হবে।
কবি জামাল শিকদার বলেন, ‘আমরা মেহনতি মানুষ। কিন্তু সেটার কোনো স্বীকৃতি নেই। ভূমিহীন কারা? আমাদের ভূমিহীন বলার অধিকার কে দিয়েছে আপনাদের? যাদের ভূমিহীন, শ্রমিক, চাষাভুষা বলে ছোট করছেন, তাঁরা ফসল না ফলালে আপনারা শহরের মানুষ খেতে পারতেন না। কাজেই এই ভূমিহীনদের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করুন।’
স্থানীয় পর্যায়ে নিয়োগ করা প্রশাসকদের সঙ্গে ভূমিহীনদের কোনো যোগাযোগ নেই উল্লেখ করে গণমাধ্যমকর্মী সাকিব প্রত্যয় বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ার পর একটি দল নতুন করে চাঁদাবাজ ও মাস্তানদের দিয়ে জোর দখলে মেতেছে। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার–চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ভূমিহীনেরা তাঁদের দাবির কথা সরকারের কাছে বলতে পারেন। কিন্তু ফ্যাসীবাদি আমলের পর জনপ্রতিনিধির পরিবর্তে আমরা প্রশাসক দেখতে পাই। এদের দিয়ে কৃষক–শ্রমিকদের কোনো উন্নতি হচ্ছে না।’
জনসমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের লবণচাষি বাবর চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ হাওর এলাকার প্রতিনিধি মো. মুহসিন, গাইবান্ধার আলুচাষি সামিউল আলম, জামালপুরের কৃষক নেতা জিয়াউল ইসলাম, নোয়াখালীর হাতিয়া প্রতিনিধি সামসুউদ্দীন আহমদ, পাবনার পেঁয়াজচাষি মাসুদ রহমান খান, সাভারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লিটন কবিরাজ, সচিবালয় এলাকার রিকশাচালক শেখ ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ।