তৌহিদী জনতাকে হুমকি দেইনি, সতর্ক করেছি: মাহফুজ আলম
Published: 12th, February 2025 GMT
‘তৌহিদী জনতা’ নামে যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও আক্রমণ চালাচ্ছে তাদের হুমকি নয়, বরং সতর্ক করেছেন বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১০টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সেখানে তিনি লিখেছেন, “তৌহিদী জনতা নামে আপনারা যারা নিজেদের পরিচয় দেন, তাদের আমি হুমকি দিইনি, সতর্ক করেছি। কেন করেছি? গত পনের বছর নিপীড়ন সহ্য করে এবং অভ্যুত্থানে ভূমিকা রেখে সকল নাগরিকদের মতই আপনারা একটি জাতীয় সম্ভাবনা হাজির করেছেন। কিন্তু মব সংস্কৃতির কারণে তা ভুলন্ঠিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনাদেরকেই এ সম্ভাবনা রক্ষা করতে হবে।”
‘তৌহিদী জনতা’র ওপর কোনো ঘৃণা নেই জানিয়ে তিনি তিনি লিখেছেন, “আমার আপনাদের প্রতি ঘৃণা নেই, বরং বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের মতই আপনাদের প্রতি দরদ আছে। আলেমদের প্রতি সম্মান আছে। আমি নিজে বিশ্বাসী মুসলিম হিসাবে তৌহিদবাদী, কিন্তু কেউ তৌহিদের নামে উগ্রতা দেখালে সেটার আসন্ন পরিণতি সম্পর্কে সাবধান করাও সহনাগরিক ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসাবে আমার কর্তব্য মনে করেছি।”
'বাংলাদেশে এখন স্থিতিশীলতা দরকার' উল্লেখ করে তিনি লেখেন, “বিপ্লবী জনতা আর খণ্ড খণ্ড মব আলাদা জিনিস। লক্ষ্যহীন, উদ্দেশ্যবিহীন এ মব সংস্কৃতির কারণে উপকৃত হচ্ছে আমাদের শত্রুরা। রাষ্ট্রের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আমাদের কঠোর হতে হবে।”
“এ কঠোরতার হুশিয়ারি অপরাধীদের জন্য, যারা তৌহিদের কথা বলে নিপীড়ন করছে, নৈরাজ্য করছে। কিন্তু, আগে যেভাবে ইসলামফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সাধারণ মুসলিমদের নিপীড়ন করা হত, যার শিকার আমিও হয়েছি—তা কোনোমতেই আর পুনরাবৃত্ত হবে না।”
“আলেম উলেমা, মাদ্রাসার ছাত্ররা গত ১৫ বছর নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, এবারের অভ্যুত্থানেও রক্ত দিয়েছেন। কিন্তু যে স্বাধীনতা এত রক্তাক্ত, সে স্বাধীনতা রক্ষায় প্রজ্ঞা না দেখালে যে জুলুম নেমে আসবে—এ সতর্কতা উচ্চারণ যদি ভুল হয়, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। আমি জালিম বা মজলুম—দুইটা হওয়া থেকেই আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।”
“পুনশ্চ: ব্যক্তি আক্রমণ, ব্যক্তিগত বিশ্বাস নিয়ে আক্রমণ বা সন্দেহ তৈরি, পরিবারের সদস্যদের হুমকি বা বেইজ্জতি ইত্যাদি কাজগুলো নবীজির অনুসারী হিসাবে সবার পরিত্যাগ করা উচিত। চলুন, বিভাজন আর ঘৃণা বাদ দিয়ে রাষ্ট্রকে সবার করে গড়ে তুলি। পরস্পর সম্মান ও মর্যাদার সম্পর্কই নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি।”
এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলায় ভারতে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বই বিক্রি ঘিরে হট্টগোলের পরিপ্রেক্ষিতে ‘তৌহিদী জনতা’র উদ্দেশ্যে শেষ অনুরোধ জানিয়ে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, এখন থেকে দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা বা ‘মব’ সৃষ্টি করা হলে তাদের শক্ত হাতে দমন করা হবে।
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৬ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করে নওগাঁ পলেটিকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলসহ ৬ দফা দাবিতে নওগাঁয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার বেলা ১১টায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে থামে। পরে শিক্ষার্থীরা নওগাঁ-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে অবস্থান নিয়ে সড়কটি অবরোধ করে। সড়কে অবস্থান নিয়ে সেখানেই করেন প্রতিবাদ সমাবেশ। এতে বন্ধ হয়ে গেছে নওগাঁ-বগুড়া-ঢাকাসহ সারাদেশের সঙ্গে নওগাঁর যানচলাচল। দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট। ফলে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছেন দূর পাল্লার যাত্রীরা। পুলিশ এবং সেনাবাহিনী এসে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও তাদের কথায় আশ্বস্ত না হয়ে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
প্রতিবাদ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিতর্কিত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর নিয়োগ বাতিল, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের সময়সীমা বৃদ্ধি, উপসহকারী প্রকৌশলী পদে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের একক সুযোগ, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সংস্কার, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ জনবল নিয়োগসহ ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। দ্রুত দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিভিল টেকনোলজি বিভাগের সপ্তম পর্বের শিক্ষার্থী তোবেয়া আলম বলেন, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টররা কারিগরি ব্যাকগ্রাউন্ডের না, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ল্যাবের সহকারী কর্মচারী। তারা মূলত অষ্টম শ্রেণি কিংবা এসএসসি পাস। তাদের ডিপ্লোমার শিক্ষক হওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই। তারা যদি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হন, তাহলে ডিপ্লোমা ছাত্ররা কতটুকু শিখবে। জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টদের জন্য। ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর হিসেবে প্রমোশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত কারিগরি সেক্টর ধ্বংসের পাঁয়তারা। দ্রুত তাদের এই নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার টেকনোলজি বিভাগের সপ্তম পর্বের শিক্ষার্থী সাব্বির বলেন, ২০২১ সালে নন টেকনিক্যাল থেকে বিতর্কিত ভাবে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যারা শুধু ল্যাবের লাইট ফ্যানের সুইজ বন্ধ করা ছাড়া কিছুই করতে পারে না। একটি রায়ের মাধ্যমে ৩০ শতাংশ নন টেকনিক্যাল ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এটি আমাদের সঙ্গে এক প্রকারের বৈষম্য করা হচ্ছে। আমরা চাই আমাদের দাবি যেন দ্রুত ই বাস্তবায়ন করা হয়।
নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছি। তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করছি। দূরপাল্লার যানবাহন গুলোকে বিকল্প সড়ক দিয়ে গন্তব্য স্থলে পাঠানো হচ্ছে।