ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হলে আপনার কী কী ক্ষতি হতে পারে
Published: 12th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড থেকে সরকারের পাঁচ কর্মকর্তা বেশ কয়েক বছর আগে অনুদান পেয়েছিলেন। অনুদান পাওয়া–সংক্রান্ত তথ্যের সঙ্গে তাঁদের ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য সরকারি ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত ছিল। অপরাধীরা এই তালিকা সংগ্রহ করে অনুদান পাওয়া কর্মকর্তাদের ফোন করে। তারা কর্মকর্তাদের আরও অনুদান দেওয়ার কথা বলে তাঁদের ব্যাংক কার্ডের তথ্য নেয়। এরপর জালিয়াতির মাধ্যমে পাঁচজনের কাছ থেকে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় অপরাধীরা।
বাংলাদেশে ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত থাকা অনেকটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ঘটনা দেশে প্রায়ই ঘটছে। বিশেষ করে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, যারা মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যের সবচেয়ে বড় ভান্ডার, তাদের থেকেই তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ফলে মানুষ প্রতারণাসহ নানা ধরনের ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
গত দুই বছরে দেশে কিছু আলোচিত তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। সবশেষ গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তৃতীয় পক্ষের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য ফাঁস করেছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুনসরকারের পাওনা ১২৬ কোটি টাকা, ফাঁকি দিতে অভাবনীয় জালিয়াতি ওসমান পরিবারের১৪ জানুয়ারি ২০২৫ব্যক্তিগত তথ্য কী
একজন মানুষকে আলাদা করে শনাক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় যেসব তথ্য রয়েছে, সেগুলোই ব্যক্তিগত তথ্য। যেমন ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, স্বাক্ষর, ফোন নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, জন্মতারিখ, আঙুলের ছাপ, আইরিশ (চোখের মণির ছবি) ইত্যাদি।
এর বাইরে রয়েছে স্পর্শকাতর তথ্য। এগুলোর মধ্যে আছে জাতিগত পরিচয়, লিঙ্গ, রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্মীয় বিশ্বাস, স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত তথ্য, ব্যক্তিগত সম্পর্কের তথ্য, আর্থিক তথ্য, পেশাগত তথ্য ও ডিজিটাল তথ্য। আর্থিক তথ্যের মধ্যে আছে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, টাকার পরিমাণ, পিন নম্বর, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, লেনদেনের তথ্য। পেশাগত তথ্যের মধ্যে আছে কর্মস্থল, পদবি, বেতন ও পদোন্নতির তথ্য। ডিজিটাল তথ্যের মধ্যে আছে ছবি, ভিডিও, অডিও, লিখিত কোনো কনটেন্ট, ই–মেইল ঠিকানা, পাসওয়ার্ড, পিন নম্বর, মোবাইলের লোকেশনের তথ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইলের লিংক ইত্যাদি।
ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসে কী ক্ষতি
মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হলে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে, তার উদাহরণ বাংলাদেশে অনেক আছে।
টাকা হাতিয়ে নেওয়া: মুঠোফোন থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় ফরিদপুরের একটি গ্রাম পরিচিতি পেয়েছে ‘প্রতারকদের গ্রাম’ নামে। এই গ্রামের প্রতারকেরা গ্রাহকদের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে। তারা গ্রাহকদের ফোন দিয়ে কৌশলে পিন নম্বর নিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকঋণ: বাংলাদেশ ব্যাংকের সিলেট কার্যালয়ে ২০১১ সালে ‘মো.
ভুয়া সম্পত্তি হস্তান্তর: জাতীয় পরিচয়পত্রের সব তথ্য ঠিক রেখে শুধু ছবি পরিবর্তন করে সম্পত্তি হস্তান্তরের মতো ঘটনা দেশে ঘটেছে। সরকারের পাওনা টাকার দায় এড়াতে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের পরিবার অভাবনীয় জালিয়াতি করেছে। এই পরিবারের নামে থাকা একটি কোম্পানির মালিকানা তিন ব্যক্তির নামে হস্তান্তর করা হয়। এই তিন ব্যক্তির দাবি, তাঁরা এই কোম্পানি সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এ ক্ষেত্রে তিন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে এই প্রতারণা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
সিম তুলে প্রতারণা: দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের বাসুদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস। ২০২২ সালের আগস্টে তাঁর বাড়িতে তিন যুবক আসেন। তাঁরা একটি মুঠোফোন কোম্পানির সিম কার্ড বিনা মূল্যে দিচ্ছিলেন। তাঁদের কাছে থেকে সিম কার্ড নেন জান্নাতুল। যুবকেরা জান্নাতুলের আঙুলের ছাপ, চোখের মণির ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি নেন। এরপর গত জুলাইয়ে থানা থেকে জান্নাতুলকে নোটিশ করা হয়। বলা হয়, তাঁর সিম দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। অর্থাৎ জান্নাতুলের আঙুলের ছাপ, চোখের মণির ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অপরাধী চক্র আর্থিক প্রতারণা করেছে।
আরও পড়ুনকার্ড জালিয়াতির হোতা শরিফুল ৪ দিনের রিমান্ডে২৫ এপ্রিল ২০১৮সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলা: অন্যের ছবি, নাম-পরিচয় চুরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এমনকি অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে বিভিন্নজনের কাছে টাকাও চাওয়া হয়।
আর্থিক তথ্য: ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, টাকার পরিমাণ, পিন নম্বর, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, লেনদেনের তথ্য ইত্যাদি ফাঁস হলে বড় ধরনের বিপদ হতে পারে। যেমন একটি সুপারশপের বিক্রয়কর্মী ছিলেন শরিফুল ইসলাম। সুপারশপে কেনাকাটা করতে আসা গ্রাহকদের তথ্য চুরি করে ব্যাংকের এটিএম কার্ড তৈরি করে টাকা তুলে নিতেন তিনি। এ ঘটনায় ২০১৮ সালের এপ্রিলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানিয়েছিল, তথ্য চুরি করে হুবহু এটিএম কার্ড তৈরি করতেন শরিফুল। পরে কার্ড দিয়ে গ্রাহকের টাকা তুলে নিজের ও স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে জমা রাখতেন।
স্পর্শকাতর তথ্য: জাতিগত পরিচয়, লিঙ্গ, রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্মীয় বিশ্বাস, স্বাস্থ্যগত তথ্য, ব্যক্তিগত সম্পর্কের তথ্য ফাঁস হলে একজন ব্যক্তি সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। ধরা যাক, কেউ লিঙ্গবৈচিত্র্যের মানুষ বা ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ। তাঁর এ-সংক্রান্ত তথ্য যদি ফাঁস হয়ে যায়, তাহলে তিনি উগ্রবাদীদের দ্বারা ক্ষতির শিকার হতে পারেন।
আরও পড়ুনরাশিয়া থেকে কার্ড জালিয়াতি শিখে আসেন শরিফুল২৫ এপ্রিল ২০১৮করণীয় কী
ব্যক্তিসংশ্লিষ্ট তথ্য যদি ফাঁস হয়, তাহলে তা শুধু নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্যই ক্ষতির কারণ হয় না, পরিবারও ক্ষতির মুখে পড়ে। বাংলাদেশে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের বিপরীতে সরাসরি কোনো আইনি সুরক্ষা নেই। তবে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্য সরকার একটি আইনের খসড়া করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যারিল্যান্ডের ডিভিশন অব ইনফরমেশন টেকনোলজির ওয়েবসাইটে গত বছরের নভেম্বরে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়, ব্যক্তিগত পরিচয়সংক্রান্ত তথ্য চুরি কোনো মজার বিষয় নয়। কারও ব্যক্তিগত বা আর্থিক তথ্য চুরি বা ফাঁস হলে প্রথম হয়তো তা বোঝা যায় না। কিন্তু যখন বড় একটি বিল ধরিয়ে দেওয়া হয় বা ঋণদাতার কাছ থেকে হঠাৎ ফোন আসে, তখন বিপদ টের পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনএনআইডির তথ্য ফাঁস হয়েছে পাঁচ প্রতিষ্ঠান থেকে১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেনও মনে করেন, মানুষ বুঝতেই পারে না ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হলে তার পরিণতি কী হতে পারে। সচেতনতার অংশ হিসেবে গ্রাহকের দিক থেকে বিশ্বস্ত জায়গা ছাড়া অন্যত্র ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে আসা উচিত নয়। পাবলিক জায়গায় সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। যেসব অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে তথ্য দেওয়া হচ্ছে, তাদের ব্যাপারে আগেই ভালোভাবে জানা উচিত।
এই অধ্যাপক বলেন, বাংলাদেশে ডিজিটাল সাক্ষরতার হার যেহেতু অনেক কম, ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে মানুষের সচেতনতা কম, তাই সেবাদাতাদের সুরক্ষার বিষয়ে জোর দিতে হবে। তারা তথ্যগুলো দিয়ে কী করছে, তার জবাবদিহি থাকা উচিত। তথ্য যাচাইয়ের বিষয়টি কয়েক ধাপে হওয়া উচিত। পাশাপাশি দরকার আইনি সুরক্ষা। আর ব্যক্তিগত তথ্য যদি ফাঁস হয়েই যায়, তবে বুঝতে পারামাত্রই দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। পাশাপাশি ঝুঁকি এড়াতে পাসওয়ার্ড, ফোন নম্বর, ই–মেইল পরিবর্তন করা যাতে পারে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র পর ব র র জন য র ঘটন অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখতে মানববন্ধন
জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখতে মানববন্ধন করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় কর্মকর্তাগণ বলেন, ২০০৭-০৮ সালে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতায় একটি নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রনয়ণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে ওঠে ৮ কোটি ১০ লক্ষ নাগরিকের ডেমোগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক তথ্য সম্বলিত এক সুবিশাল ভোটার ডেটাবেইজ যা পৃথিবীর ইতিহাসে এক অনন্য নজির।
সর্বশেষ প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুসারে এই ডাটাবেজে প্রায় ১২.৫০ কোটি নাগরিকের তথ্য রয়েছে। টঘউচ-র সমীক্ষা অনুসারে ভোটারদের এই সংগৃহীত ডাটা ৯৯.৭% সঠিক মর্মে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে।
ভোটার তালিকার এই তথ্যভান্ডার থেকেই উপজাত হিসেবে নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘওউ সেবা নির্বাচন কমিশনের আওতা থেকে স্থানান্তরের বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা চলছে। এ প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন নিম্নলিখিত বিষয়গুলো স্পষ্ট করতে চায়।
১। সাংবিধানিক ম্যান্ডেট : সংবিধান-এর ১১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণের তত্ত্বাবধান, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত। ভোটার তালিকার তথ্যভান্ডার একটি সংবিধানিক দলিল, যা কারও কাছে হস্তান্তর করার সুযোগ নেই।
২। ভোটার তালিকা প্রণয়ন প্রক্রিয়া : উচ্চ আদালতের আদেশ অনুসারে, ভোটার তালিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি একটি সংবিধানসম্মত ও সুরক্ষিত প্রক্রিয়া, যা ঘওউ কার্যক্রমের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
৩। জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকা : জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকার উপজাত (নুঢ়ৎড়ফঁপঃ)। প্রকৃতপক্ষে, জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আলাদা কোনো তথ্যভান্ডার নেই, এটি শুধুমাত্র ভোটার তালিকা থেকে উদ্ভূত।
৪। ডাটাবেজের নিরাপত্তা ও সম্ভাব্য ঝুঁকি : ঘওউ সেবা অন্য সংস্থার অধীনে গেলে ফধঃধ ফঁঢ়ষরপধঃরড়হ ফধঃধনধংব সধহরঢ়ঁষধঃরড়হ এর আশংকা দেখা দিতে পারে। এতে বিদ্যমান পযবপশ ্ নধষধহপব ব্যবস্থা বিনষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।
৫। গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষা : নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত ও গোপনীয় তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আমানত হিসেবে সংরক্ষিত। সাংবিধানিকভাবে কমিশন এই তথ্য অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারে না। এটি নাগরিকদের তথ্য সুরক্ষার প্রশ্নেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
৬। জনগণের বিপুল অর্থের সাশ্রয় : জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনে থাকায় এবং কমিশনের একই জনবল দ্বারা এই কার্যক্রম সম্পাদনের ফলে দেশ ও সরকারের জন্য এটি একটি সাশ্রয়ী সেবায় পরিণত হয়েছে।
আলাদা কোন কর্তৃপক্ষ তৈরি করা হলে জনবল, স্থাপনা ও অন্যান্য অবকাঠামো তৈরিতে জনগণের বিপুল অর্থের অপচয় হবে যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
৭। ভোটার নিবন্ধনে নেতিবাচক প্রভাব : জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশন হতে অন্যত্র স্থানান্তর করা হলে শুধুমাত্র ভোটার হওয়ার জন্য জনগণের আগ্রহ ও উদ্দীপনায় নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হবে যা ভবিষ্যতে নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। উপরন্তু নির্বাচন কমিশন নিজস্ব উদ্ভাবনী কার্যক্রমের স্বীকৃতি হারালে নতুন কোন উদ্ভাবনে (রহহড়াধঃরড়হ) প্রতিষ্ঠানিকভাবে নিরুৎসাহিত হবে।
৮। ভোটার তালিকার শুদ্ধতা নিয়ে সন্দেহ: নির্বাচন কমিশন থেকে ঘওউ কার্যক্রম সরিয়ে নেওয়া হলে ভোটার তালিকার নির্ভুলতা নিয়ে রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সংশয় তৈরি হতে পারে। ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা হুমকির মুখে পড়বে।
৯। রাজনৈতিক দলগুলোর অভিমত : অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ২০২৩ সালের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন বাতিল করে ঘওউ কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের অধীনে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছে। এতে স্পষ্ট যে, নির্বাচন কমিশনের অধীনে ঘওউ কার্যক্রম পরিচালিত হওয়াই সর্বজনস্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা।
সর্বপরি আমরা মনে করি, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকাই সংবিধানসম্মত, নিরাপদ ও কার্যকর ব্যবস্থা। আমরা সকল অংশীজনের সহযোগিতা কামনা করছি, যাতে ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালিত হতে পারে এবং জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ রাকিবুজ্জামান, সহকারী প্রোগ্রামার মোঃ রিয়াজুল আলম, উপজেলা নির্বাচন অফিসার আফরোজা খাতুন সহ মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, মোঃ মনির হোসেন, মোঃ ইসমাইল, রাখি প্রমুখ।