রাজনৈতিক স্বার্থে প্রতিষ্ঠান ব্যবহার, বাড়ছে দুর্নীতি
Published: 12th, February 2025 GMT
দুর্নীতি প্রতিরোধে বাংলাদেশে সক্রিয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জনপ্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে এসব প্রতিষ্ঠান ব্যবহারে বিস্তার ঘটছে দুর্নীতির। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছর বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের চাক্ষুষ প্রমাণ সত্ত্বেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। বরং রাষ্ট্রীয়ভাবে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) পরিচালিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২৪’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড.
২০২১ সালের নভেম্বর থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ সূচক তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ওপরের দিকেই রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের ১০ম থেকে ২০২৪ সালে অবস্থান ১৪তম। চার ধাপ এগোলেও টিআইর ভাষ্য, বাংলাদেশে দুর্নীতি কমেনি, বরং বেড়েছে। ব্যাখ্যায় বলা হয়, দুর্নীতির সূচক স্কেলে ১০০ স্কোরের মধ্যে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ পেয়েছিল ২৪, এবার তা ২৩। বাংলাদেশের স্কোর কমলেও অন্য দেশ বেশি খারাপ করায় তালিকায় চার ধাপ উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। স্কোর কমায় দুর্নীতির ধারণা সূচকে ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৫১তম, যা ২০২৩ সালে ছিল ১৪৯। এবার বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে ১৫১তম কঙ্গো ও ইরান।
সংবাদ সম্মেলনে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে যেসব সংস্থা করা হয়েছে, তাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে অর্থ পাচার ও দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে।’ সরকারি প্রকল্পের কেনাকাটায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকার (আওয়ামী লীগ) মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও বাস্তবে প্রশ্রয় এবং লালন করেছে। এমনকি দুর্নীতি সংঘটনে সহায়তা ও অংশ নিয়েছে। দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয়ভাবে তোষণ, আইনের সঠিক প্রয়োগ না করা ও সার্বিক কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশের অবস্থানের ক্রমাবনতি হয়েছে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘দুর্নীতিবিরোধী বাগাড়ম্বর ছাড়া এ নিয়ে পতিত আওয়ামী সরকারের কোনো বিকার বা চিন্তা দেখা যায়নি। এমনকি দুর্নীতি দমনে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুদকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানও প্রকৃত ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও দখলদারি-চাঁদাবাজি বহাল রয়েছে; শুধু লোক বদল হয়েছে। তবে দুদক বড় বড় দুর্নীতিবাজকে নিয়ে কাজ শুরু করেছে। দেখা যাক তারা কতটুকু সফল হয়। সফল হলে পরের তালিকায় ফল পাওয়া যাবে।’
সিপিআই অনুযায়ী, দুর্নীতির ধারণার মাত্রাকে শূন্য থেকে ১০০-এর স্কেলে নির্ধারণ করা হয়। এ পদ্ধতি অনুসারে স্কেলের শূন্য স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতা সর্বোচ্চ এবং ১০০কে ব্যাপকতা সর্বনিম্ন ধারণা করা হয়। ২০২৪ সালে সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয়েছে ডেনমার্কে। বিপরীতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির মাত্রা ছিল দক্ষিণ সুদানে।
১০০ স্কোরের মধ্যে বৈশ্বিক গড় স্কোর ৪৩। অর্থাৎ, বৈশ্বিক গড় স্কোরের চেয়েও বাংলাদেশের স্কোর ২০ কম, যে কারণে অত্যন্ত গুরুতর দুর্নীতি সমস্যাযুক্ত ১০১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। শুধু তাই নয়, গত ১৩ বছরের মধ্যে এবার সর্বনিম্ন স্কোর বাংলাদেশের। দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের মধ্যে দুর্নীতির তালিকায় বাংলাদেশের পরে আছে শুধুই আফগানিস্তান। দুর্দশাগ্রস্ত ভঙ্গুর অর্থনীতির পাকিস্তানও ওপরে রয়েছে বাংলাদেশের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তালিকার শীর্ষে থাকা দক্ষিণ সুদানের স্কোর মাত্র ৮। তালিকায় তাদের পরে যথাক্রমে– সোমালিয়া (৯) ও ভেনেজুয়েলা (১০)। বিপরীতে সবচেয়ে কম দুর্নীতির ডেনমার্কের স্কোর ৯০। এ সারিতে ৮৮ নম্বর নিয়ে ফিনল্যান্ড দ্বিতীয়, ৮৪ নিয়ে সিঙ্গাপুর তৃতীয়, ৮৩ নিয়ে নিউজিল্যান্ড চতুর্থ ও ৮১ স্কোর নিয়ে যৌথভাবে লুক্সেমবার্গ, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয় ভুটানে। ১৮তম অবস্থানে তাদের স্কোর ৭২। ২০২৩ সালের চেয়ে ভুটানে দুর্নীতি কমেছে। ভুটান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই গত বছর দুর্নীতি বেড়েছে।
দুদক শক্তিশালী করার সুপারিশ
দুর্নীতি কমাতে টিআইর পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রথমে দুদককে শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুসারে সংস্থাটি পুনর্গঠন করতে হবে। চাক্ষুষ প্রমাণ রয়েছে– এমন শীর্ষ দুর্নীতিবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দুদক, জনপ্রশাসন, আইন ও বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পেশাদার সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সরকারি কেনাকাটা, ব্যাংক, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ভূমি ও অবকাঠামো খাতকে রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিস্বার্থ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও চর্চায় জনবান্ধব পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছে টিআই।
তবু তারা কম দুর্নীতিগ্রস্ত
বাংলাদেশে থেকে পাচার অর্থ যেসব দেশে যায়, তাদের অবস্থানও কম দুর্নীতির তালিকায় রয়েছে। সিঙ্গাপুর ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে ভালোর দিকে তৃতীয়, সুইজারল্যান্ড ৮১ স্কোরে পঞ্চম, অস্ট্রেলিয়া ১০ম, কানাডা ১৫তম, হংকং ১৭তম, যুক্তরাজ্য ২০তম, সংযুক্ত আরব আমিরাত ২৩তম, যুক্তরাষ্ট্র ২৮তম, মালয়েশিয়া ৫৭তম ও ভারত ৯৬তম। এ বিষয়ে ইফতেখারুজ্জমান বলেন, ‘দেশগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি কম হলেও আইনের কিছু সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজরা পাচার অর্থ বিভিন্ন সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ট আইব কম দ র ন ত ২০২৩ স ল র জন ত ক অবস থ ন পর চ ল সরক র সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেবে রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্স
রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্স লিমিটেড ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া অর্থবছরের জন্য ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। সম্প্রতি পরিচালনা পর্ষদের এক সভায় এই সুপারিশ করা হয়েছে।
দেখা গেছে, ২০২৪ সালে কোম্পানির প্রধান আর্থিক সূচকগুলোর উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। এ সময় কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১২ টাকা, যা আগের বছর ছিল ৬ দশমিক ৫৬ টাকা। একই সঙ্গে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) বেড়ে হয়েছে ৬৯ দশমিক ৫৯ টাকা, ২০২৩ সালে যা ছিল ৬৬ দশমিক ৮৫ টাকা। তবে শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) কমে হয়েছে ১ দশমিক ৬৬ টাকা, আগের বছর যা ছিল ৪ দশমিক ৮৪ টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে দেওয়া ঘোষণায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রিমিয়াম ও বিনিয়োগ আয়ের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। অন্যদিকে শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) কমেছে রি-ইনস্যুরেন্স বা পুনর্বিমা পরিশোধ বৃদ্ধির কারণে। শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) বেড়েছে সংরক্ষিত আয় বৃদ্ধির কারণে। অর্থাৎ কোম্পানিটি আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সতর্ক।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসসই) ঘোষণায় বলা হয়েছে, রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্সের বার্ষিক সাধারণ সভা হবে আগামী ২৫ মার্চ। সভাটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে, রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ মার্চ।
গত এক বছরে রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্সের শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৭৮ টাকা ৯০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন দাম ছিল ৫০ টাকা ৯০ পয়সা। কোম্পানিটি ২০২৩, ২০২২, ২০২১ ও ২০২০ সালে ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। অর্থাৎ আগের পাঁচ বছরের তুলনায় বেশি লভ্যাংশ দিচ্ছে কোম্পানিটি।