দুর্নীতি প্রতিরোধে বাংলাদেশে সক্রিয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জনপ্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে এসব প্রতিষ্ঠান ব্যবহারে বিস্তার ঘটছে দুর্নীতির। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছর বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের চাক্ষুষ প্রমাণ সত্ত্বেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। বরং রাষ্ট্রীয়ভাবে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) পরিচালিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২৪’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড.

ইফতেখারুজ্জামান এ প্রতিবেদন তুলে ধরেন। আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্থার উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের ও পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।

২০২১ সালের নভেম্বর থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ সূচক তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ওপরের দিকেই রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের ১০ম থেকে ২০২৪ সালে অবস্থান ১৪তম। চার ধাপ এগোলেও টিআইর ভাষ্য, বাংলাদেশে দুর্নীতি কমেনি, বরং বেড়েছে। ব্যাখ্যায় বলা হয়, দুর্নীতির সূচক স্কেলে ১০০ স্কোরের মধ্যে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ পেয়েছিল ২৪, এবার তা ২৩। বাংলাদেশের স্কোর কমলেও অন্য দেশ বেশি খারাপ করায় তালিকায় চার ধাপ উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। স্কোর কমায় দুর্নীতির ধারণা সূচকে ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৫১তম, যা ২০২৩ সালে ছিল ১৪৯। এবার বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে ১৫১তম কঙ্গো ও ইরান।

সংবাদ সম্মেলনে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে যেসব সংস্থা করা হয়েছে, তাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে অর্থ পাচার ও দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে।’ সরকারি প্রকল্পের কেনাকাটায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকার (আওয়ামী লীগ) মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও বাস্তবে প্রশ্রয় এবং লালন করেছে। এমনকি দুর্নীতি সংঘটনে সহায়তা ও অংশ নিয়েছে। দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয়ভাবে তোষণ, আইনের সঠিক প্রয়োগ না করা ও সার্বিক কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশের অবস্থানের ক্রমাবনতি হয়েছে।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘দুর্নীতিবিরোধী বাগাড়ম্বর ছাড়া এ নিয়ে পতিত আওয়ামী সরকারের কোনো বিকার বা চিন্তা দেখা যায়নি। এমনকি দুর্নীতি দমনে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুদকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানও প্রকৃত ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে।’ 

এক প্র‌শ্নের জবাবে তিনি ব‌লেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকা‌রের সম‌য়ও দখলদারি-চাঁদাবাজি বহাল র‌য়ে‌ছে; শুধু লোক বদল হ‌য়ে‌ছে। তবে দুদক বড় বড় দুর্নী‌তিবাজ‌কে নি‌য়ে কাজ শুরু ক‌রে‌ছে। দেখা যাক তারা কতটুকু সফল হ‌য়। সফল হলে পরের তালিকায় ফল পাওয়া যাবে।’

সিপিআই অনুযায়ী, দুর্নীতির ধারণার মাত্রাকে শূন্য থেকে ১০০-এর স্কেলে নির্ধারণ করা হয়। এ পদ্ধতি অনুসারে স্কেলের শূন্য স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতা সর্বোচ্চ এবং ১০০কে ব্যাপকতা সর্বনিম্ন ধারণা করা হয়। ২০২৪ সালে সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয়েছে ডেনমার্কে। বিপরীতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির মাত্রা ছিল দক্ষিণ সুদানে।
১০০ স্কোরের মধ্যে বৈশ্বিক গড় স্কোর ৪৩। অর্থাৎ, বৈশ্বিক গড় স্কোরের চেয়েও বাংলাদেশের স্কোর ২০ কম, যে কার‌ণে অত্যন্ত গুরুতর দুর্নীতি সমস্যাযুক্ত ১০১ দে‌শের ম‌ধ্যে বাংলা‌দেশ একটি। শুধু তাই নয়, গত ১৩ বছরের মধ্যে এবার সর্বনিম্ন স্কোর বাংলাদেশের। দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের মধ্যে দুর্নীতির তালিকায় বাংলাদেশের পরে আছে শুধুই আফগানিস্তান। দুর্দশাগ্রস্ত ভঙ্গুর অর্থনীতির পাকিস্তানও ওপরে রয়েছে বাংলাদেশের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তালিকার শীর্ষে থাকা দক্ষিণ সুদানের স্কোর মাত্র ৮। তালিকায় তাদের পরে যথাক্রমে– সোমালিয়া (৯) ও ভেনেজুয়েলা (১০)। বিপরীতে সবচেয়ে কম দুর্নীতির ডেনমার্কের স্কোর ৯০। এ সারিতে ৮৮ নম্বর নিয়ে ফিনল্যান্ড দ্বিতীয়, ৮৪ নিয়ে সিঙ্গাপুর তৃতীয়, ৮৩ নিয়ে নিউজিল্যান্ড চতুর্থ ও ৮১ স্কোর নিয়ে যৌথভাবে লুক্সেমবার্গ, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড পঞ্চম স্থানে রয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয় ভুটানে। ১৮তম অবস্থানে তাদের স্কোর ৭২। ২০২৩ সালের চেয়ে ভুটানে দুর্নীতি কমেছে। ভুটান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই গত বছর দুর্নীতি বেড়েছে।

দুদক শক্তিশালী করার সুপারিশ
দুর্নীতি কমাতে টিআইর পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রথমে দুদককে শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুসারে সংস্থাটি পুনর্গঠন করতে হবে। চাক্ষুষ প্রমাণ রয়েছে– এমন শীর্ষ দুর্নীতিবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দুদক, জনপ্রশাসন, আইন ও বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পেশাদার সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সরকারি কেনাকাটা, ব্যাংক, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ভূমি ও অবকাঠামো খাতকে রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিস্বার্থ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও চর্চায় জনবান্ধব পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছে টিআই।

তবু তারা কম দুর্নীতিগ্রস্ত
বাংলাদ‌েশে থে‌কে পাচার অর্থ যেসব দে‌শে যায়, তাদের অবস্থানও কম দুর্নীতির তা‌লিকায় র‌য়ে‌ছে। সিঙ্গাপুর ৮৪ প‌য়েন্ট নি‌য়ে ভালোর দিকে তৃতীয়, সুইজারল্যান্ড ৮১ স্কোরে পঞ্চম, অস্ট্রেলিয়া ১০ম, কানাডা ১৫তম, হংকং ১৭তম, যুক্তরাজ্য ২০তম, সংযুক্ত আরব আমিরাত ২৩তম, যুক্তরাষ্ট্র ২৮তম, মালয়েশিয়া ৫৭তম ও ভারত ৯৬তম। এ বিষয়ে ইফতেখারুজ্জমান বলেন, ‘দেশগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি কম হলেও আইনের কিছু সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজরা পাচার অর্থ বিভিন্ন সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করে।’
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ট আইব কম দ র ন ত ২০২৩ স ল র জন ত ক অবস থ ন পর চ ল সরক র সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: ঢাকায় গড় উপস্থিতি ৮৫ শতাংশ

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের কৃষি গুচ্ছভুক্ত নয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দেশের ৯টি কেন্দ্রে একযোগে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

চলতি শিক্ষাবর্ষে ৩ হাজার ৮৬৩টি আসনের বিপরীতে রেকর্ড সংখ্যক ৯৪ হাজার ৩৬টি আবেদন জমা পড়ে। গড়ে প্রতি আসনের জন্য লড়েছেন ২৫ জন পরীক্ষার্থী।

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩৭ হাজার ৭৬০। এর মধ্যে উপস্থিত ছিল ৩২ হাজার ১১২ জন। সে হিসাবে গড় উপস্থিতির হার ছিল ৮৫.০৪ শতাংশ।

এদিকে, শেকৃবি কেন্দ্রে আগত পরীক্ষার্থীদের সহযোগিতায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসতে দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে শেকৃবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, “সারা বাংলাদেশ থেকে আগত শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে আমরা বাইক সার্ভিস, রিকশা সার্ভিস, ফ্রি মেডিকেল টিম এবং খাবার পানির ব্যবস্থা করেছি। ছাত্রদল সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে, এটাই আমাদের অঙ্গীকার।”

ছাত্রশিবিরের শেকৃবি শাখার সভাপতি মো. আবুল হাসান বলেন, “শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করে আমরা হেল্প ডেস্ক, বিশুদ্ধ পানি, শিক্ষা উপকরণ, অভিভাবকদের বসার জায়গা এবং ফ্রি রিকশা সার্ভিস চালু করেছি। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি।”

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছভুক্ত নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে-  বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়  হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাকা/মামুন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এবার যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার আশঙ্কার কথা জানাল ফেডারেল রিজার্ভ সান ফ্রান্সিসকো
  • বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে ট্রাম্প কি সত্য বলছেন, তাঁর চিন্তা কি পশ্চাৎপদ
  • ইকুয়েডরে আবার প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন রক্ষণশীল দলের নোবোয়া
  • গ্রামে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু, বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুর হটস্পট বরগুনা
  • গোলকিপার এদেরসন গোল করিয়েই যাচ্ছেন
  • গাজা সিটির একমাত্র সচল হাসপাতালে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
  • গাজায় এ পর্যন্ত ৩৫টি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
  • ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • ইন্টারনেটের ব্যবহার কম উৎপাদনশীল খাতে
  • কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: ঢাকায় গড় উপস্থিতি ৮৫ শতাংশ