রোডম্যাপ দিতে সরকারকে চাপে রাখবে বিএনপি
Published: 12th, February 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে আশ্বস্ত করলেও দাবি আদায়ে সরকারকে চাপে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আশ্বাসে দলের নেতাকর্মীরা উৎফুল্ল। তারপরও বিভিন্ন মহল থেকে বাধা আসতে পারে। কারণ, নির্বাচন প্রলম্বিত করতে সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ আছে। তাই পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে দ্রুততম সময়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায় বিএনপি। এ জন্য সরকারকে চাপে রাখতে পূর্বঘোষিত ঢাকাসহ দেশব্যাপী সভা-সমাবেশের কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে। দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ কর্মসূচি শুরুর আগে সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে তাগিদ দিতে গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির তিন শীর্ষ নেতা। বৈঠকে নির্বাচন প্রশ্নে দলীয় অবস্থান ও মনোভাব তাঁকে জানান। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর ওই দিন রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সরকারের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু স্থায়ী কমিটিকে অবহিত করেন তারা।
বৈঠকে ওই নেতারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং তাঁর সঙ্গে যারা ছিলেন, তারা আশ্বস্ত করেছেন– অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য তারা কাজ করছেন।
নির্বাচন নিয়ে আশ্বাসের পরও বিএনপি নেতারা মনে করছেন, দ্রুত নির্বাচন না দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার ওপর এক ধরনের চাপ রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্ররা নির্বাচন প্রলম্বিত করতে চায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পর সারাদেশে সংগঠন গোছানো ও সুসংহত করতে তাদের বেশ সময়ের প্রয়োজন। অন্যদিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াতও এখন তৃণমূলে সংগঠনকে গোছানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
বিএনপি নেতাদের অভিমত, এমন অবস্থায় দ্রুত নির্বাচন দাবিতে বিএনপি দেশব্যাপী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কৌশলে পাল্টা চাপ সৃষ্টি করলে ড.
বিএনপি মনে করে, প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাসে নির্বাচনের যে পথরেখা দেখা গেছে, দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা হলে তা আরও পরিষ্কার হবে। একই সঙ্গে সব ধরনের সংকট কেটে গিয়ে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কাও দূর হবে। কারণ রোডম্যাপের পর পুরো দেশ তখন নির্বাচনমুখী হয়ে পড়বে। দলটির নেতারা মনে করেন, পতিত ফ্যাসিবাদের দোসরদের নানামুখী ষড়যন্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে একটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই হতে পারে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের একমাত্র পথ।
নেতারা জানান, দেশব্যাপী সমাবেশ কর্মসূচি রমজান শুরু হওয়ার আগেই শেষ হবে। রমজানে রাজপথে কোনো কর্মসূচি থাকবে না বিএনপির। ওই মাসে ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়েও একই দাবি তুলে ধরা হবে। এই সময়ের মধ্যে সংস্কার এবং জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট না হলে, রমজানের পরে রাজপথে কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে দলটি। তখন দেশব্যাপী বিভাগ ও মহানগরে সমাবেশের কর্মসূচি আসতে পারে।
জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন নেতারা। এ ছাড়া ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ দেশজুড়ে সংঘটিত ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। তারা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের এতদিন পর এসে তারা কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিকে সমর্থন করেন না। দলীয় এই অবস্থান তারা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তুলে ধরবেন।
ছয় জেলায় সমাবেশ আজ
স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর আজ থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা এবং ফ্যাসিবাদীদের নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের ৬৭টি সাংগঠনিক জেলায় সভা-সমাবেশ করবে দলটি। এই কর্মসূচিতে চারটি লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও মূলত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিকেই ‘মূল ফোকাস’ হিসেবে তুলে ধরতে চায় তারা। প্রথম দিনে আজ খুলনা, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ ও পটুয়াখালীতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ পর স থ ত র জন ত ক ব এনপ র কম ট র ধরন র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো ১ ইটভাটা, তিনটিতে অভিযানে জরিমানা ১৫ লাখ
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে পরিবেশ বান্ধব চুল্লি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও কাঠ পোড়ানোর অভিযোগে চারটি ইটভাটায় অভিযান চালিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এর মধ্যে একটি ভাটাকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, অন্য তিনটি ভাটাকে পাঁচ লাখ টাকা করে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
মঙ্গলবার বিকালে বরিশাল ও পিরোজপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন। ইট প্রস্তুত আইন ও ভাটা স্থাপন আইন সংশোধনী-২০১৯ এর বলে এ অভিয়ান পরিচালনা করা হয়।
এ দিন অভিযানের সময় উপজেলার চন্ডিপুর ই্উনিয়নের খোলপটুয়া গ্রামের কেবিআই ভাটার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় ভেকু দিয়ে তা ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এ ভাটার কাঁচা ইট ও চুল্লি ভেঙে ফেলেন। এছাড়া আরওয়ান ব্রিকস ও এস বিআই ব্রিকসের কাগজপত্র না থাকায় ও কাঠ পোড়ানোর অভিযোগে তাদের ভাটায় ভাঙচুর করা হয় এবং পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। এরপর ভাই ভাই ব্রিকসকেও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করে।
কেবিআই ভাটার মালিক শাকিল মাহমুদ পলাশ সমকালকে বলেন, আমার ভাটর চুল্লিসহ প্রায় পাঁচ লাখ টাকার কাঁচা ইট ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে পরিবশে অধিদপ্তর।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম তালুকদার জানান, আইন না মেনে ইটভাটা পরিচালনা করায় এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।