সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যু ফের আলোচনায় এসেছে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে। নিয়োগ পেয়েও উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত হওয়ায় শিক্ষকরা দু’দিন ধরে রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন।

গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এই শিক্ষকদের আলোচনা সফল হয়নি। তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আদালতের সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত তারা সময় বেঁধে দিয়েছেন।

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে সব ক্যাটেগরি মিলিয়ে কোটা ৭ শতাংশ, আগে তা ছিল ৫৫ শতাংশ। দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে আদালতের নির্দেশে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে সব সরকারি নিয়োগ সম্পন্ন করতে গত ২৩ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। 

সম্প্রতি ২০২৩ সালের সার্কুলার অনুসারে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়। এতে নিয়োগ পান ৬ হাজার ৫৩১ জন। নিয়োগকালীন বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, এই নিয়োগে আগের কোটা পদ্ধতি (৫৫ শতাংশ) অনুসরণ করা হয়। তবে ফল প্রকাশের পর নিয়োগ না পাওয়া ৩১ জন চাকরিপ্রার্থী উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন। এই আবেদনকারীদের যুক্তি ছিল, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গত ২৩ জুলাইয়ের প্রজ্ঞাপনের পর ৫৫ শতাংশ কোটায় সরকারি নিয়োগ সম্পন্ন করার কোনো সুযোগ নেই। ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে।

অন্যদিকে, নিয়োগ স্থগিত হওয়া প্রার্থীরা বলছেন, পরে জারি কোনো বিধিবিধান আগের সময়ে কার্যকর করা যায় না। তাদের নিয়োগের সার্কুলারের সময়ের নিয়োগবিধিই কার্যকর হবে। তারা মেধা দিয়েই চূড়ান্ত নিয়োগের উপযুক্ততা অর্জন করেছেন বলে দাবি করেন।

এখন কোটা কত 
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে, সরকারি চাকরির সব গ্রেডেই (৯ম থেকে ২০তম) ৭ শতাংশ কোটা রেখে বাকি ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেবে সরকার। গত বছরের ২৩ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাশাপাশি তৃতীয় এবং চতুর্থ (১৪-২০তম গ্রেড) শ্রেণির চাকরিতেও কোটার নতুন এই হার বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ফলে সব ধরনের সরকারি চাকরিতেই ৯৩ শতাংশ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখা হয়।

রাজধানীতে আন্দোলনরত প্রার্থীরা সমকালকে বলেন, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে ২০২৩ সালে বিজ্ঞপ্তি তিনটি ধাপে দেওয়া হয়েছিল। ১ম ও ২য় ধাপে দেশের বাকি ছয়টি বিভাগের প্রার্থীদের চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম এবং অপেক্ষমাণ তালিকা থেকেও নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। ৩য় ধাপের ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের চূড়ান্ত নিয়োগ নিয়ে চলছে আন্দোলন। গতকাল সচিবালয়ে গিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এই প্রার্থীদের প্রতিনিধিরা।

সচিবালয়ে যাওয়া ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলের জান্নাতুল নাইম সমকালকে বলেন, ‘সচিবালয়ে গিয়ে আমরা সচিব আবু তাহের মোহাম্মদ মাসুদ আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। আগে আমাদের যেমন আশ্বস্ত করা হয়েছিল, এবারও সেই একইভাবে বলা হয় এটা আদালতের রায়, এর এখতিয়ার হচ্ছে বিচারকের। বলা হয়েছে সরকারের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সচিবের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমরা উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি।

তিনি জানান, ৬ হাজার ৫৩১ জনের কাউকেই বাদ দেওয়া হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সবসময় শুধু আশ্বস্ত করা হচ্ছে। আগেরবার আমরা ঘরে ফিরে গিয়েছিলাম, কিন্তু এবার যতদিন পর্যন্ত দাবি মানা না হবে আমরা রাজপথে থাকব।’ হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত আজ বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে বাতিলের দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে।

কুমিল্লা থেকে আসা সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থী মুহিব উল্লাহ গতকাল সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন,  সুপারিশপ্রাপ্তরা নিজ নিজ জেলায় এরই মধ্যে মেডিকেল টেস্ট করিয়েছেন এবং জেলা শিক্ষা অফিসে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য ফরম জমা দিয়েছেন। দেশের প্রায় সব উপজেলার চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্তরা যোগদানপত্রও হাতে পেয়েছেন। এরপরও যোগদান করতে না পেরে তারা সীমাহীন লাঞ্ছনার মধ্যে পড়েছেন।

৬ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ বাতিল করেন হাইকোর্ট। মেধার ভিত্তিতে পুনরায় নিয়োগের নির্দেশ দেন আদালত।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য চ কর ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বইমেলায় শফিক হাসান’র ভ্রমণগ্রন্থ `দেখি বাংলার মুখ’

প্রত্যেক মানুষ নিজের দৃষ্টি দিয়েই দেখেন। কেউ কেউ দেখার সঙ্গে যুক্ত করেন অন্তর্দৃষ্টিও। একেকজনের বাংলার মুখ দেখার পদ্ধতি হয়তো ভিন্ন রকমের। শফিক হাসান উল্লিখিত দুই পদ্ধতিতেই দেখেন তার চিরচেনা কিংবা অচেনা বাংলাদেশকে। অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার ভ্রমণগ্রন্থ ‘দেখি বাংলার মুখ’। এতে রয়েছে ১৫টি ভ্রমণকাহিনী। স্থান পেয়েছে দেশের নানা প্রান্তে ছুটে বেড়ানোর গল্প। ভ্রমণকাহিনীগুলোর শিরোনামে চোখ বোলালেই বোঝা যাবে কেমন মালা গেঁথেছেন তরুণ এই লেখক। 

বইয়ের শুরুতেই রয়েছে বড় পরিসরের ভ্রমণবৃত্তান্ত ‘বৃষ্টিভেজা নড়াইল, পল্লীকবির বাড়ি ও ঝিনাইদহের গল্প’। বৃহৎ পরিসরের আরও দুটি ভ্রমণগল্প হচ্ছে ‘রঙ্গ-রসের রংপুরে কিছু আলো, কিছুটা অন্ধকারে’, ‘পুণ্ড্রনগরের পথে-ঘাটে, পুরাতত্ত্ব ও মিথের জাদু’। অন্য ভ্রমণকাহিনীগুলোর বিষয়বস্তুও শিরোনাম থেকেই অনুমেয় লালন ফকির ও রবীন্দ্রনাথ ভূমি-তালাশে, কেওক্রাডং চূড়ায় উচ্চতার মেলায়, নদী পেরিয়ে বরিশালে, গীতিকার দেশে, শেকড়ের সন্ধানে মুজিবনগরে, কক্সবাজারে সমুদ্রভোজনে, স্মৃতি বিস্মৃতির চট্টগ্রামে, মাদারীপুরের স্বর্ণরেণু, তূর্ণা নিশিথায় নিশিযাপন, হাতিরঝিল ভেসে যায় জলজোছনায়, কাহারোলে অন্য রোল, ঝিম সবুজের হাতছানি দেয় শ্রীময়ী সিলেট ও শ্রীমঙ্গল।

ভ্রমণকাহিনী লেখার নেপথ্য সংযোগসূত্র উল্লেখ করে শফিক হাসান বলেন, ``লোকে যেটাকে ভ্রমণকাহিনী বলে আখ্যায়িত করে, আমি বড়জোর সেটাকে ভ্রমণগদ্য নাম দিতে পারি! তবে বোঝা ও বোঝানোর সুবিধার্থে অধিকাংশ সময়ে ভ্রমণকাহিনীই উচ্চারণ করতে হয়। আমার ভ্রমণগদ্যে আর যা-ই থাকুক, ‘কাহিনী’ থাকে কম। ’

আরো পড়ুন:

বইমেলায় হট্টগোল, উপদেষ্টা ফারুকীর কড়া বার্তা

বইমেলায় হট্টগোল: ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি

ভ্রমণে মূলত কী খোঁজেন, কেন ভ্রমণ করেন? জানতে চাইলে এই লেখক বলেন, ‘‘অদেখা সুন্দর ছাড়া আর কী খুঁজব ঘরের বাইরে গিয়ে! শস্যবতী ধানখেতে দোলা দেওয়া বাতাস, নীরবে ফুটে থাকা নাম না জানা ফুল, জলাশয়ে হাঁসের অবাধ সন্তরণ, গাছের ডালে মাছরাঙার ধ্যানী-শিকারি দৃষ্টি, পাখির কিচিরমিচির, গৃহস্থের পোষা গবাদি পশু-পাখির চাঞ্চল্য, হরেক রকম পাখপাখালির কূজন... সর্বোপরি বিশাল বাংলার সবুজ শ্যামলিমা আমাকে বিস্ময়-বিমূঢ় করে রাখে। দেখা বস্তু বারবার দেখেও মুগ্ধ হওয়ার বিরল গুণ বোধকরি রপ্ত করে ফেলেছি।’’

ভ্রমণে বড় কোনো প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়নি কখনো জানিয়ে ভ্রমণপিয়াসী এই লেখক বলেন, ‘জীবনের সঙ্গে লড়াইয়ের মাঠে মানুষ বরাবরই স্বতন্ত্র, একা। এই বিশ্ব-প্রতিবিম্ব উপলব্ধির চেষ্টা করি। এটাও আবিষ্কার করি, যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী অতিথি আপ্যায়নের কী চূড়ান্ত নজিরই-না স্থাপন করেন রূপসী বাংলার ততোধিক সুন্দর মানুষ! পরোপকারি মনোভাবজনিত সহযোগিতা ও আতিথ্যের তুলনা হয় না। অল্প-বিস্তর নেতিবাচক ঘটনা যে ঘটে না, তাও কিন্তু নয়! এসবই দেখি, উপলব্ধি করি; জাগিয়ে ও ভাসিয়ে রাখি নিজেকে। চিহ্নিত করে চলি স্বদেশ-সমকালের যাপনচিত্র। আর বুকভরে টেনে নিই নতুন বাতাস, বৈচিত্র্যপূর্ণ নবীন আলো-জল।’  

লেখক জানান, বইটিতে স্থান পাওয়া কোনো কোনো ভ্রমণকাহিনী বর্তমান সময়ে লেখা হলেও অধিকাংশই দশ থেকে পনেরো বছর আগের। আবার একাধিকবার গিয়েছেন এমন জায়গাও আছে। লেখাগুলো প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। সেই সময়টাকে ফ্রেমবন্দি করে রাখবেন বলে ‘হালনাগাদ’ করেননি। তাই কোনো কোনো বর্ণনা ও ঘটনা ওই সময়ের চোখ দিয়েই পড়তে হবে, বুঝতে হবে।

পাঠক প্রতিক্রিয়া আপাতত ভালোই। এই ভ্রমণবইয়ে পাঠক বাংলাদেশকে কতটুকু দেখতে সমর্থ হবেন, জানা নেই। কতটুকু আনন্দিত বা ব্যথিত হবেন, তাও তো বোঝার উপায় নেই লেখকের পক্ষে! তবে ইতিবাচক সাড়া পেলে শীঘ্রই দ্বিতীয় ভ্রমণগ্রন্থ লেখায় হাত দেবেন শফিক হাসান।

প্রাপ্তিস্থান: দেখি বাংলার মুখ বইটির প্রকাশক অনুপ্রাণন প্রকাশন। বইমেলায় স্টল নম্বর: ৬৯৫-৬৯৬-৬৯৭।
১৪৪ পৃষ্ঠার (৯ ফর্মা) এই বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছেন আইয়ুব আল আমিন। মুদ্রিত মূল্য : ৪০০ টাকা।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ