কোটা জটিলতার ‘ধাক্কা’ প্রাথমিকের নিয়োগে
Published: 12th, February 2025 GMT
সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যু ফের আলোচনায় এসেছে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে। নিয়োগ পেয়েও উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত হওয়ায় শিক্ষকরা দু’দিন ধরে রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন।
গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এই শিক্ষকদের আলোচনা সফল হয়নি। তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আদালতের সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত তারা সময় বেঁধে দিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে সব ক্যাটেগরি মিলিয়ে কোটা ৭ শতাংশ, আগে তা ছিল ৫৫ শতাংশ। দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে আদালতের নির্দেশে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে সব সরকারি নিয়োগ সম্পন্ন করতে গত ২৩ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি ২০২৩ সালের সার্কুলার অনুসারে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়। এতে নিয়োগ পান ৬ হাজার ৫৩১ জন। নিয়োগকালীন বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, এই নিয়োগে আগের কোটা পদ্ধতি (৫৫ শতাংশ) অনুসরণ করা হয়। তবে ফল প্রকাশের পর নিয়োগ না পাওয়া ৩১ জন চাকরিপ্রার্থী উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন। এই আবেদনকারীদের যুক্তি ছিল, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গত ২৩ জুলাইয়ের প্রজ্ঞাপনের পর ৫৫ শতাংশ কোটায় সরকারি নিয়োগ সম্পন্ন করার কোনো সুযোগ নেই। ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে।
অন্যদিকে, নিয়োগ স্থগিত হওয়া প্রার্থীরা বলছেন, পরে জারি কোনো বিধিবিধান আগের সময়ে কার্যকর করা যায় না। তাদের নিয়োগের সার্কুলারের সময়ের নিয়োগবিধিই কার্যকর হবে। তারা মেধা দিয়েই চূড়ান্ত নিয়োগের উপযুক্ততা অর্জন করেছেন বলে দাবি করেন।
এখন কোটা কত
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে, সরকারি চাকরির সব গ্রেডেই (৯ম থেকে ২০তম) ৭ শতাংশ কোটা রেখে বাকি ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেবে সরকার। গত বছরের ২৩ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাশাপাশি তৃতীয় এবং চতুর্থ (১৪-২০তম গ্রেড) শ্রেণির চাকরিতেও কোটার নতুন এই হার বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ফলে সব ধরনের সরকারি চাকরিতেই ৯৩ শতাংশ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখা হয়।
রাজধানীতে আন্দোলনরত প্রার্থীরা সমকালকে বলেন, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে ২০২৩ সালে বিজ্ঞপ্তি তিনটি ধাপে দেওয়া হয়েছিল। ১ম ও ২য় ধাপে দেশের বাকি ছয়টি বিভাগের প্রার্থীদের চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম এবং অপেক্ষমাণ তালিকা থেকেও নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। ৩য় ধাপের ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের চূড়ান্ত নিয়োগ নিয়ে চলছে আন্দোলন। গতকাল সচিবালয়ে গিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এই প্রার্থীদের প্রতিনিধিরা।
সচিবালয়ে যাওয়া ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলের জান্নাতুল নাইম সমকালকে বলেন, ‘সচিবালয়ে গিয়ে আমরা সচিব আবু তাহের মোহাম্মদ মাসুদ আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। আগে আমাদের যেমন আশ্বস্ত করা হয়েছিল, এবারও সেই একইভাবে বলা হয় এটা আদালতের রায়, এর এখতিয়ার হচ্ছে বিচারকের। বলা হয়েছে সরকারের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সচিবের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমরা উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি।
তিনি জানান, ৬ হাজার ৫৩১ জনের কাউকেই বাদ দেওয়া হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সবসময় শুধু আশ্বস্ত করা হচ্ছে। আগেরবার আমরা ঘরে ফিরে গিয়েছিলাম, কিন্তু এবার যতদিন পর্যন্ত দাবি মানা না হবে আমরা রাজপথে থাকব।’ হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত আজ বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে বাতিলের দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে।
কুমিল্লা থেকে আসা সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থী মুহিব উল্লাহ গতকাল সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন, সুপারিশপ্রাপ্তরা নিজ নিজ জেলায় এরই মধ্যে মেডিকেল টেস্ট করিয়েছেন এবং জেলা শিক্ষা অফিসে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য ফরম জমা দিয়েছেন। দেশের প্রায় সব উপজেলার চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্তরা যোগদানপত্রও হাতে পেয়েছেন। এরপরও যোগদান করতে না পেরে তারা সীমাহীন লাঞ্ছনার মধ্যে পড়েছেন।
৬ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ বাতিল করেন হাইকোর্ট। মেধার ভিত্তিতে পুনরায় নিয়োগের নির্দেশ দেন আদালত।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য চ কর ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সকালেই পড়ুন আলোচিত ৫ খবর
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া