খুলনা অঞ্চলে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ, কোনোটা ঝুঁকিতে
Published: 12th, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির ফান্ড স্থগিতের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে খুলনা অঞ্চলেও। ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প; কোনোটি পড়েছে চরম ঝুঁকিতে। এ অবস্থায় অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। শঙ্কায় রয়েছেন বিভিন্ন প্রকল্পের অন্যান্য কর্মী। এর রেশ ধরে মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) সেবা কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন কাজ।
নগর ভবন ও ৩১টি ওয়ার্ড অফিসের মাধ্যমে নাগরিক সেবা সহজ করতে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। ইতোমধ্যে নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের জন্য কম্পিউটারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ২০ কর্মচারীকে। দ্বিতীয় ধাপের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু ইউএসএআইডির অর্থায়নে চলা প্রকল্প বন্ধের নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। গত ২৩ জানুয়ারি প্রকল্পটিতে কর্মরত ১৩ কর্মকর্তা এবং ৩১ স্বেচ্ছাসেবককে ছাঁটাই করা হয়।
ইউএসএআইডির অর্থায়নে এশিয়ান রেজিলেন্ট সিটিজ (এআরসি) নামের প্রকল্পের অংশীদার সংস্থা হিসেবে কাজ করছিল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। গত বছর শুরু হওয়া প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। ওয়ার্ড অফিস ও নগর ভবন ডিজিটাল করা ছাড়াও সৌন্দর্য বর্ধন, ওয়ান হেলথ প্ল্যাটফর্ম গঠন, অটোচালকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, যুবকদের ট্রাফিক আইন ও ফায়ার স্বেচ্ছাসেবক তৈরির কথা ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু কেসিসিতে চলা এআরসি প্রকল্পই নয়; খুলনা অঞ্চলে ইউএসএআইডির অর্থায়নে চলা সুন্দরবনকেন্দ্রিক প্রতিবেশ প্রকল্প, দরিদ্রদের আইনি সহায়তা ও নারী-শিশু পাচার প্রতিরোধে নেওয়া আশা প্রকল্প, অগ্রযাত্রা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা প্রকল্প, নারীদের তথ্য অধিকার সম্পর্কিত এডব্লিউআরটিআই প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশব্যাপী চলা খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা সংক্রান্ত প্রকল্প বন্ধ হওয়ায়। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভ্যাকসিন প্রদান, স্বল্পমূল্যে নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান ছিল।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, গত ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর ২১ জানুয়ারি ইউএসএআইডির অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা আসে। ২৩ জানুয়ারি চিঠি দিয়ে তাদের বিষয়টি জানানো হয় এবং ২৫ জানুয়ারি প্রকল্প বন্ধ ও ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়। মাঝপথে প্রকল্প ও চাকরি হারিয়ে সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা পড়েছেন মহাবিপদে। তবে ইউএসএআইডির অংশীদার এনজিওগুলো প্রকল্প বিষয়ে সরাসরি কোনো বক্তব্য ও তথ্য দিতে রাজি হয়নি। এসব প্রকল্পে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, তাও জানা যায়নি।
কেসিসির প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবিরুল জব্বার বলেন, ঘরে বসে পৌর কর, নাগরিক সনদসহ সব ধরনের সেবা প্রদানের জন্য কেসিসিকে ডিজিটাল করার পরিকল্পনা চলছে দীর্ঘদিন। ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল কেসিসির সঙ্গে ইউএসএআইডির চুক্তি হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয় ব্র্যাক। ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণসহ বেশ অগ্রগতি হয়েছিল। গত ২৫ জানুয়ারি তারা চিঠি দিয়ে প্রকল্প স্থগিতের কথা জানায়। এখন বাকি কার্যক্রম কী হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে পরে।
বিষয়টি নিয়ে ব্র্যাকের কেউ মন্তব্য করতে চাননি। তবে একটি সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ব্র্যাকের ঢাকা অফিসে ৩ জন এবং খুলনাতে ১০ জন কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া ৩১টি ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট ভাতা প্রদানের ভিত্তিতে ৩১ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছিল। সবাইকে ছাঁটাই করা হয়েছে। প্রকল্পের মালপত্র তারা কেসিসিকে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
২০২২ সালের ১১ মে সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশ নামে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্প শুরু করে ইউএসএআইডি। সুন্দরবনে প্রকৃতিবান্ধব পর্যটনের বিকাশ ও পর্যটনে বনজীবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম চলছিল। প্রকল্প বন্ধের বিষয়ে খুলনা কার্যালয়ে কর্মরত কেউ কোনো মন্তব্য করেননি।
বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার বলেন, প্রকল্প বন্ধের বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। এতে বন সুরক্ষা নিতে ইতিবাচক কাজ ব্যাহত হবে।
অগ্রগতি সংস্থা সাতক্ষীরার নির্বাহী পরিচালক আবদুস সবুর বিশ্বাস জানান, তাদের তিনটিসহ খুলনা বিভাগে ইউএসএআইডির অর্থায়নে ৭/৮টি প্রকল্প চলছিল। এগুলো বন্ধ হওয়ায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও সেবা কার্যক্রম মারাত্মক ব্যাহত হবে।
রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, সংস্থাটির সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থা পরিচর্যা খাতে। বিনামূল্যে টিকা, অন্তঃসত্ত্বা, মা ও নবজাতকের জন্য জীবন রক্ষাকারী স্বাস্থ্য সহযোগিতা, সার, বীজসহ বিভিন্ন উপকরণে নিম্ন আয়ের মানুষ সরাসরি উপকৃত হতো। কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় এসব খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প প রকল প ব প রকল প র বন ধ র
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ দিনে যেভাবে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিলেন ট্রাম্প
মাত্র ৫০ দিন সময়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর আগের যে কোনো উত্তরসূরির চেয়ে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নিয়মের ভিতে বেশি নাড়া দিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয় লাভের পর ৮০ বছরে এ ভিত অনেক কষ্টে গড়ে তোলে যুক্তরাষ্ট্র।
দিক পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিয়ে বা কোনো নৈতিক কৌশল তুলে না ধরেই তিনি ইউক্রেন যুদ্ধে পক্ষাবলম্বন করেন এবং আগ্রাসনকারীকে সমর্থন করেন। তিনি মস্কোকে আগ্রাসনকারী আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘের আনা প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যগত মিত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার পক্ষে ভোট দিতে দ্বিধা করেননি।
মঙ্গলবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পানামা খাল, গ্রিনল্যান্ড, গাজা ও সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যেটি– কানাডার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরের মিত্রের (কানাডা) সঙ্গে সীমান্ত মূলত একটি ‘বিভেদের কৃত্রিম রেখা’। ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর বাগ্বিতণ্ডার পর তিনি ইউক্রেনে অস্ত্র, এমনকি মার্কিন বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট চিত্র পাঠানোও বন্ধ করে দেন।
ট্রাম্প মার্কিন অর্থনীতির জন্য ‘জোঁক’ আখ্যা দিয়ে মিত্রদের ওপর করারোপ করেছেন। সেই সঙ্গে ন্যাটোর আস্থা অত্যন্ত গভীরভাবে নষ্ট করেছেন। এ প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স তাদের পারমাণবিক ছাতা পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে। পোল্যান্ড নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কথা ভাবছে। এ দুই দেশই যুক্তরাষ্ট্রকে আর চূড়ান্ত সুরক্ষাদাতা মনে করছে না। যখন ন্যাটো চুক্তি হয়, তখন কেন্দ্রে ছিল এ সুরক্ষার বিষয়টি।
বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাবিষয়ক দপ্তর তাদের প্রায় অর্ধেক জনবল ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আকার কমাতে ট্রাম্প প্রশাসন এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এ পরিকল্পনার আওতায় শিক্ষা দপ্তরের প্রায় ২ হাজার ১০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের মধ্যে পড়তে পারেন। ট্রাম্প অনেক দিন থেকেই শিক্ষা দপ্তরকে বিলুপ্ত করতে চাইছেন। তবে শিক্ষা দপ্তরকে বিলুপ্ত করতে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হবে।
বুধবার এনডিটিভি জানায়, শুল্ক নিয়ে আবারও ভারতের সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সম্প্রতি তিনি জানান, মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর কথা দিয়েছে ভারত। এরই মধ্যেই শুল্ক নিয়ে আরেকবার দিল্লিকে নিশানা করেছে ওয়াশিংটন।
কানাডার ওপর ৫০ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা প্রত্যাহার
রয়টার্স জানায়, কানাডার ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক আরোপ নিয়ে পরস্পরবিরোধী ঘোষণায় আর্থিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার এক ঘোষণায় কানাডার ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার কথা জানান তিনি। তবে কয়েক ঘণ্টা পরই এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউএসএআইডির নথি ধ্বংসের নির্দেশ
মার্কিন উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির বিপুল নথিপত্র ধ্বংসের আদেশ দিয়েছেন সংস্থাটির এক কর্মকর্তা। মঙ্গলবার আদালতে দায়েরকৃত অভিযোগে এ দাবি তোলা হয়। মার্কিন সরকারি কর্মীদের ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল আদালতে এ অভিযোগ দায়ের করা হয়।
নাসার প্রধান বিজ্ঞানী বরখাস্ত, ছাঁটাইয়ের ইঙ্গিত
বুধবার এএফপি জানায়, নাসা মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে, সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানীসহ আরও কয়েকজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে, যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আদেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে।
এ‘সেলফ ডিপোর্টেশন’ অ্যাপ চালু
যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে থাকা অভিবাসীদের সম্ভাব্য গ্রেপ্তার ও আটকের মুখোমুখি হওয়ার পরিবর্তে নিজ থেকে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দিতে একটি অ্যাপ চালু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।