প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূতের রাশিয়া সফরের পর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের এক বন্দীকে ছেড়েছে মস্কো। ট্রাম্প প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তার এটাই প্রথম ঘোষিত রাশিয়ায় সফর। একটি ‘বিনিময় চুক্তির’ আওতায় ওই বন্দীকে ছাড়া হয়েছে। কিন্তু চুক্তিটি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। এই চুক্তি ভবিষ্যতে ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস।

এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মুক্ত মার্কিন নাগরিকের নাম মার্ক ফোগেল। ২০২১ সাল থেকে তিনি রাশিয়ার কারাগারে বন্দী ছিলেন।

 মার্ক ফোগেলের মুক্তিতে দূতিয়ালি করেছেন স্টিভ উইটকফ। আবাসন খাতের এই ব্যবসায়ী ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও তাঁর মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক দূত। মুক্ত ফোগেল ও উইটকফ একই উড়োজাহাজে করে ‘রাশিয়ার আকাশসীমা’ ত্যাগ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, স্টিভ উইটকফ এবং প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টারা বিনিময় চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এতে রাশিয়ার ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। ইউক্রেনের নৃশংস ও ভয়ংকর যুদ্ধের ইতি টানতে আমরা যে সঠিক পথে এগোচ্ছি, এটা সেটারই একটি নিদর্শন।’

 তিনি আরও বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) রাতের মধ্যে মার্ক ফোগেল যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পা রাখবেন এবং তাঁর পরিবার ও প্রিয়জনদের সঙ্গে মিলিত হবেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।’

গত মাসে ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতিতেও মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন উইটকফ। গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে ঘোষিতভাবে তিনিই প্রথম রাশিয়া সফর করলেন।

সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে, বিশেষ করে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন হামলার পর রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক এক ধরনের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। তবে এই সময়ে দেশ দুটির গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা তৃতীয় কোনো দেশে বৈঠক করেছেন।

তবে বাইডেনের আমলেও ওয়াশিংটন-মস্কো গুরুত্বপূর্ণ বন্দী বিনিময় করেছে।

এমন এক সময়ে ফোগেলের মুক্তির খবর এল, যার কয়েক ঘণ্টা আগে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী (ট্রেজারি সেক্রেটারি) স্কট বেসেন্ট ইউক্রেন সফর করবেন বলে ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। সফরে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করবেন।

রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্ক ফোগেল সাবেক স্কুলশিক্ষক ও কূটনীতিক। মাদক পাচারের অভিযোগে ২০২২ সালে তাঁকে ১৪ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

রাশিয়া সফরে ট্রাম্পের দূত, ইউরোপের উদ্বেগ

ইউক্রেন সংকট ঘিরে বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক ও সামরিক তৎপরতা আরও জোরদার হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও জার্মানির উদ্যোগে শুক্রবার ব্রাসেলসে ৫০টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ইউক্রেন প্রতিরক্ষা যোগাযোগ গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠক। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি জানিয়েছেন, এ বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ আরও বাড়ানো।

বৈঠকে ইউক্রেনকে অতিরিক্ত ৫৮ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই প্যাকেজের আওতায় রাডার সিস্টেম, অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মাইন এবং বিপুল পরিমাণ ড্রোন সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সামরিক যান ও সরঞ্জাম মেরামতেও ব্যয় করা হবে এ অর্থের একটি অংশ।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ শুক্রবার রাশিয়ায় পৌঁছেছেন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হতে পারে। এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে তা হবে উইটকফ ও পুতিনের মধ্যে তৃতীয় বৈঠক। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে উইটকফ পুতিনের সঙ্গে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় বৈঠক করে আমেরিকান শিক্ষক মার্ক ফোগেলকে মুক্ত করিয়েছিলেন। রাশিয়া সফরের আগে তিনি ওয়াশিংটনে রুশ আলোচক কিরিল দিমিত্রিয়েভের সঙ্গে বৈঠক করেন। দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ‘একটি সমঝোতা’ হয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে এই আলোচনার মধ্যেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের মানবাধিকার কমিশনার দিমিত্র লুবিনেৎস জানিয়েছেন, রুশ সেনারা ১৩ মার্চ জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের পিয়াতিখাতকি গ্রামে চারজন নিরস্ত্র ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিকে গুলি করে হত্যা করেছে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার ড্রোন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। লুবিনেৎস আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও জাতিসংঘের কাছে বিষয়টি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং রাশিয়ার একটি প্রাতিষ্ঠানিক নীতি, যা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উৎসাহিত হচ্ছে।’ এ ঘটনায় যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু হয়েছে।

এরই মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত একটি বন্দিবিনিময় হয়েছে। বিশ্বাসঘাতকতার মামলায় রাশিয়ায় কারাবন্দি আমেরিকান নাগরিক ক্সেনিয়া কারেলিনাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র আর্থার পেত্রভ নামে এক রুশ-জার্মান নাগরিককে রাশিয়ার হাতে তুলে দিয়েছে। এই বিনিময় প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। কারেলিনার বাগদত্তা ক্রিস ভ্যান হেরডেন এই মুক্তির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তবে আরও কয়েকজন মার্কিন নাগরিক এখনও রাশিয়ার হেফাজতে আছেন, যাদের মুক্তির জন্য চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের অংশ হিসেবে সম্প্রতি তুরস্ক ও ইস্তাম্বুলে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় কূটনৈতিক সম্পত্তি ফেরত দেওয়া, নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণ ও সরাসরি বিমান চলাচল শুরু করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধক্ষেত্র ও কূটনৈতিক পরিসরে এই নতুন আলোচনাপ্রবাহ ইউক্রেন সংকটের সমাধানের পথ তৈরি করতে পারে, তবে এখনও বড় ধরনের অগ্রগতি অনিশ্চিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুতিনকে ইউক্রেন নিয়ে দ্রুত এগোতে বললেন ট্রাম্প
  • ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল রাশিয়ার মালিকানায় দিয়ে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার পক্ষে মত ট্রাম্পের দূতের, দুশ্চিন্তায় মার্কিন মিত্ররা
  • পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের দূতের ৪ ঘণ্টা বৈঠক
  • রাশিয়া সফরে ট্রাম্পের দূত, ইউরোপের উদ্বেগ
  • ২১ বিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র সহায়তা পাচ্ছে ইউক্রেন