শেষ পর্যন্ত শঙ্কাটাই সত্যি হলো। পিঠের চোট থেকে পুরোপুরি সেরে না ওঠায় ভারতের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল থেকে ছিটকে গেলেন যশপ্রীত বুমরা। গত রাতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) তাঁকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

৩১ বছর বয়সী বুমরার পরিবর্তে হর্ষিত রানাকে দলে নিয়েছে অজিত আগারকারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটি। ঘরোয়া ক্রিকেট, বিশেষ করে আইপিএলে সর্বশেষ মৌসুমে ভালো করার পুরস্কার হিসেবে গত নভেম্বরে বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফি দিয়ে ভারতের হয়ে অভিষেক হয় হর্ষিতের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান ওয়ানডে সিরিজেও খেলছেন তিনি। প্রথম দুই ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়েছেন ২৩ বছর বয়সী এই ফাস্ট বোলার।

ভারতের পরিবর্তিত দলে আরেকটি চমক আছে। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান যশস্বী জয়সোয়ালকে বাদ দিয়ে অফ স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীকে নেওয়া হয়েছে। এতে ভারতীয় দলে স্পিনারের সংখ্যা বেড়ে হলো পাঁচজন—বরুণ, কুলদীপ যাদব, ওয়াশিংটন সুন্দরের সঙ্গে দুই বাঁহাতি স্পিন অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা ও অক্ষর প্যাটেল।

সম্প্রতি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজে সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পেয়েছেন বরুণ চক্রবর্তী। প্রকৌশলী থেকে পুরোদস্তুর ক্রিকেটার বনে যাওয়া এই স্পিনার বৈশ্বিক আসরে সর্বশেষ খেলেছেন ২০২১ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।  

গত জানুয়ারিতে বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফিতেই নতুন করে পিঠের সমস্যায় পড়েন বুমরা। এরপরও চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রাথমিক স্কোয়াডে তাঁকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সর্বশেষ স্ক্যান রিপোর্ট থেকে জানা যায়, পিঠের চোট থেকে সেরে উঠতে আরও পাঁচ সপ্তাহ সময় লাগবে। তত দিনে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শেষ হয়ে যাবে। এ কারণে গতকাল চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণার শেষ দিনে তাঁকে বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে বিসিসিআই।

বুমরার না থাকা ভারতের জন্য বিশাল এক ধাক্কা হয়েই এল। গত বছরটা অবিশ্বাস্য কেটেছে তাঁর। জুনে ভারতকে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতাতে বড় অবদান রেখে হয়েছিলেন টুর্নামেন্টসেরা। বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারত ৩–১ ব্যবধানে হারলেও তিনি হয়েছিলেন সিরিজসেরা। ২০২৪ সালে আইসিসির বর্ষসেরা ক্রিকেটারের খেতাবও জিতেছেন।

এদিকে, জয়সোয়ালকে চূড়ান্ত দল থেকে বাদ দেওয়া হলেও রিজার্ভ খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এ তালিকায় আরও আছেন পেসার মোহাম্মদ সিরাজ ও ব্যাটিং অলরাউন্ডার শিবম দুবে। বিসিসিআই জানিয়েছে, এই তিনজন ভারতেই থাকবেন। শুধু দরকার পড়লে দুবাইয়ে যাবেন।

হাইব্রিড মডেলের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু ১৯ ফেব্রুয়ারি। মূল আয়োজক পাকিস্তান হলেও ভারত তাদের ম্যাচগুলো খেলবে দুবাইয়ে। টুর্নামেন্টে রোহিত–কোহলিদের অভিযান শুরু ২০ ফেব্রুয়ারি, প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ।

ভারতের চূড়ান্ত স্কোয়াড

রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুবমান গিল (সহ–অধিনায়ক), বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল (উইকেটকিপার), ঋষভ পন্ত (উইকেটকিপার), রবীন্দ্র জাদেজা, মোহাম্মদ শামি, অর্শদীপ সিং, কুলদীপ যাদব, হর্ষিত রানা, বরুণ চক্রবর্তী, ওয়াশিংটন সুন্দর, হার্দিক পান্ডিয়া ও অক্ষর প্যাটেল।

রিজার্ভ খেলোয়াড়: মোহাম্মদ সিরাজ, যশস্বী জয়সোয়াল ও শিবম দুবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রোডম্যাপ দিতে সরকারকে চাপে রাখবে বিএনপি

অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে আশ্বস্ত করলেও দাবি আদায়ে সরকারকে চাপে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আশ্বাসে দলের নেতাকর্মীরা উৎফুল্ল। তারপরও বিভিন্ন মহল থেকে বাধা আসতে পারে। কারণ, নির্বাচন প্রলম্বিত করতে সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ আছে। তাই পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে দ্রুততম সময়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায় বিএনপি। এ জন্য সরকারকে চাপে রাখতে পূর্বঘোষিত ঢাকাসহ দেশব্যাপী সভা-সমাবেশের কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে। দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ কর্মসূচি শুরুর আগে সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে তাগিদ দিতে গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির তিন শীর্ষ নেতা। বৈঠকে নির্বাচন প্রশ্নে দলীয় অবস্থান ও মনোভাব তাঁকে জানান। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর ওই দিন রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সরকারের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু স্থায়ী কমিটিকে অবহিত করেন তারা।

বৈঠকে ওই নেতারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং তাঁর সঙ্গে যারা ছিলেন, তারা আশ্বস্ত করেছেন– অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য তারা কাজ করছেন।

নির্বাচন নিয়ে আশ্বাসের পরও বিএনপি নেতারা মনে করছেন, দ্রুত নির্বাচন না দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার ওপর এক ধরনের চাপ রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্ররা নির্বাচন প্রলম্বিত করতে চায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পর সারাদেশে সংগঠন গোছানো ও সুসংহত করতে তাদের বেশ সময়ের প্রয়োজন। অন্যদিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াতও এখন তৃণমূলে সংগঠনকে গোছানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

বিএনপি নেতাদের অভিমত, এমন অবস্থায় দ্রুত নির্বাচন দাবিতে বিএনপি দেশব্যাপী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কৌশলে পাল্টা চাপ সৃষ্টি করলে ড. ইউনূসের ভীতি কাটতে পারে। এর ফলে তিনি রোডম্যাপ ঘোষণা ইস্যুতে এক ধরনের ভরসাও পাবেন। কারণ, ব্যাপক জনসমাগমে সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হবে যে, বিএনপির মতো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল ও নেতাকর্মীরা তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। তারা নির্বাচন দাবিতে রাজপথেও নেমেছেন। তাই কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি সমাবেশ ব্যাপক জনসমাগমের মধ্য দিয়ে সর্বাত্মকভাবে সফল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা।

বিএনপি মনে করে, প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাসে নির্বাচনের যে পথরেখা দেখা গেছে, দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা হলে তা আরও পরিষ্কার হবে। একই সঙ্গে সব ধরনের সংকট কেটে গিয়ে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কাও দূর হবে। কারণ রোডম্যাপের পর পুরো দেশ তখন নির্বাচনমুখী হয়ে পড়বে। দলটির নেতারা মনে করেন, পতিত ফ্যাসিবাদের দোসরদের নানামুখী ষড়যন্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে একটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই হতে পারে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের একমাত্র পথ।

নেতারা জানান, দেশব্যাপী সমাবেশ কর্মসূচি রমজান শুরু হওয়ার আগেই শেষ হবে। রমজানে রাজপথে কোনো কর্মসূচি থাকবে না বিএনপির। ওই মাসে ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়েও একই দাবি তুলে ধরা হবে। এই সময়ের মধ্যে সংস্কার এবং জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট না হলে, রমজানের পরে রাজপথে কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে দলটি। তখন দেশব্যাপী বিভাগ ও মহানগরে সমাবেশের কর্মসূচি আসতে পারে।

জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন নেতারা। এ ছাড়া ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ দেশজুড়ে সংঘটিত ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। তারা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের এতদিন পর এসে তারা কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিকে সমর্থন করেন না। দলীয় এই অবস্থান তারা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তুলে ধরবেন।

ছয় জেলায় সমাবেশ আজ
স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর আজ থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা এবং ফ্যাসিবাদীদের নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের ৬৭টি সাংগঠনিক জেলায় সভা-সমাবেশ করবে দলটি। এই কর্মসূচিতে চারটি লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও মূলত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিকেই ‘মূল ফোকাস’ হিসেবে তুলে ধরতে চায় তারা। প্রথম দিনে আজ খুলনা, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ ও পটুয়াখালীতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ