কুমিল্লা নগরীর জাঙ্গালিয়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কুমিল্লা-চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কে ‘আইদি এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি পরিবহন সেবা চালু করা হয়েছে। কিন্তু উদ্বোধনের পরপরই তা বন্ধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন অন্যান্য পরিবহনের শ্রমিকরা। এতে প্রায় এক ঘণ্টা বাস চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে আইদি এন্টারপ্রাইজের পরিবহন সেবা উদ্বোধন করা হয়। এতে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা জেলা শাখার আহ্বায়ক মুহাম্মাদ সাকিব হুসাইন, কুমিল্লা মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মুহাম্মদ রাশেদুল হাসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা জেলা শাখার সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন মুহাম্মদ রুবেল, আইদি এন্টারপ্রাইজের উপদেষ্টা তাজুল ইসলাম সুমন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, উদ্বোধন শেষে কুমিল্লা থেকে চাঁদপুরগামী আইদি এন্টারপ্রাইজের বাস ছেড়ে যাওয়ার পথে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় অবরোধ করেন উত্তেজিত পরিবহন শ্রমিকরা। এলোপাতাড়ি বাস রেখে তারা কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়ক বন্ধ করে দেন। এ সময় উভয় পক্ষের বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে পরিবহন শ্রমিকদের হামলায় মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ফারুক নাহিয়ানসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ সময় প্রায় এক ঘণ্টা সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, নতুন একটি পরিবহন সেবা উদ্বোধনের পর অন্যান্য পরিবহনের শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে সাময়িক যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

আইদি এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর পারভেজ আলমের ভাষ্য, সব নীতিমালা মেনে রুটপারমিটের জন্য আবেদন করা হলেও বাহার (সাবেক এমপি বাহার) সিন্ডিকিটের বিরোধিতার কারণে তারা এতদিন সেবা চালু করতে পারেননি। এতে কয়ক কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি অধ্যক্ষ কবির আহম্মেদ সমকালকে জানান, রুটপারমিট দেয় জেলা প্রশাসন। এতদিন আইদি বাস সার্ভিস কেন অনুমোদন পায়নি তা জেলা প্রশাসন ভালো বলতে পারবে। তিনি কুমিল্লার বাইরে থাকায় বাসস্টেশনে কী ঘটেছে, তা জানা নেই তাঁর।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

সুদহারের সিদ্ধান্ত ঠিক আছে, বিনিময় ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন

মুদ্রানীতিতে মোটা দাগে সুদহার ও মুদ্রার বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা কীভাবে হবে, তা রয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। কেননা, সুদহার কমলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। তবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বিষয়টি বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না। ডলারের দর ১২২ টাকা রাখার যে সিদ্ধান্ত, তা সঠিক নয়। ডলারের জোগান কমলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। আরেকটি বিষয়, আইএমএফ কর্মসূচি থেকে সরে গেলে সবার কাছে নেতিবাচক বার্তায় খরচ বাড়বে ব্যবসায়।

বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার ১০ শতাংশ অপরিবর্তিত রেখেছে। নীতি সুদহার পরিবর্তন করা হয় মূলত মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে। সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতিতে একটি মিশ্র চিত্র দেখা যাচ্ছে, যেখানে নীতি সুদহার পরিবর্তনের মতো কোনো সংকেত নেই। নীতি সুদহার কমালে অবশ্য ব্যবসায়ীরা খুশি হতেন। তবে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতো। আবার সুদহার কমলেই বিনিয়োগ বাড়বে, এটি এরই মধ্যে ভুল প্রমাণিত। দীর্ঘদিন ৯ শতাংশে আটকে রেখেও বিনিয়োগ বাড়েনি। এটা ঠিক, সুদহার কমলে ব্যবসায়ীদের ঋণের খরচ কমবে। তাতে তাদের মুনাফা বাড়বে। সাধারণ মানুষ কোনো সুফল পাবে না। কারণ, ব্যবসায়ীরা বেশি দামেই পণ্য বিক্রি করবেন। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি এখনও কমেনি। এখন খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমার মূলে মৌসুম। ফলে এখনই সুদহার কমানোর সময় আসেনি। সুদহারের কারণে বিনিয়োগ বেড়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বিষয় বর্তমান অবস্থার সঙ্গে মেলে না।

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করেছে সরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানোর মাধ্যমে। বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেটি কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এতে সামগ্রিকভাবে ঋণের জোগান না বাড়িয়েও বেসরকারি খাতের জন্য একটি জায়গা তৈরি হয়েছে। আরেকটি ইতিবাচক দিক হলো, সাম্প্রতিক সময়ে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার কমেছে। আবার স্বল্পমেয়াদি বন্ডের সুদহার দীর্ঘমেয়াদির তুলনায় বেশি। এ থেকে বার্তা পাওয়া যায়, মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশা কমেছে। ব্যাংকাররা এতদিন মনে করছিলেন, সরকারি খাতে বেশি সুদ পেলে বেসরকারি খাতে কেন ঋণ দেবেন? এখন সেই ধারণায় পরিবর্তন আসবে, সামগ্রিকভাবে যা ইতিবাচক।

অন্যদিকে, মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ে যে অবস্থান, তা ঘোষিত নীতির সঙ্গে একেবারে অসংগতিপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংক টেলিফোনে কিংবা অন্য উপায়ে ১২২ টাকার ওপরে ডলার না কেনার অদৃশ্য করিডোর দিয়েছে। ডলারের দর বাড়লে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির যে যুক্তি, তা আগের সুরের পুনরাবৃত্তি। মনে রাখতে হবে, ডলারের জোগান কমে গেলে মূল্যস্ফীতিতে চাপ পড়বে। আমদানি ব্যাহত হলে প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে পড়বে। গ্রীষ্মকাল আসছে, বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়বে। তেল-গ্যাসের আমদানি বাড়বে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারলে লোডশেডিংয়ে মানুষ ক্ষেপে যাবে।

২০২২ সালে কৃত্রিমভাবে ডলারের দর কম রাখা হয়েছিল। এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতি হুহু করে তখন বেড়েছিল। তাছাড়া বড় বড় এক্সচেঞ্জ হাউস ডলারের দর নির্ধারণে কারসাজির যে কথা বলা হচ্ছে, তা ঘটলে আন্তর্জাতিক রেগুলেটরের কাছে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরা শুধু বাংলাদেশে ব্যবসা করে না। তারা কারসাজির ক্ষেত্রে কেবল বাংলাদেশকে কেন বেছে নেবে? দ্বিতীয়ত, ডলারের দর নির্ধারণ করে দেওয়ার কারণে কোনো কারণে আইএমএফের কর্মসূচি আটকে গেলে, বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। শুধু অর্থ ছাড়ের অঙ্ক দিয়ে বিচার করলে ভুল হবে। মনে হতে পারে, তাদের এক কিস্তি তো আমাদের ১৫ দিনের রেমিট্যান্সের তুলনায় কম। সেটি ইস্যু না। বরং আইএমএফের নীতির সঙ্গে দ্বিমতে অর্থ ছাড় আটকে গেলে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থার রেটিংয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এলসি কনফারমেশন বা অন্য গ্যারান্টির চার্জেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অবশ্য আইএমএফের সব কথা শুনতে হবে, তেমন না। সাংঘর্ষিক অবস্থানের পরিবর্তে যৌক্তিক সমাধান খুঁজতে হবে।

লেখক : সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ