হুটহাট যেন জামিন না হয়, সতর্ক থাকুন
Published: 11th, February 2025 GMT
দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টাকারী ব্যক্তি ও সন্ত্রাসীরা যাতে সহজে জামিন না পান, সেটা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ ও আইনজীবীদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা। তাঁরা জামিন পাওয়ার যোগ্য মানুষেরা যাতে সহজে জামিন পান, সেটিও নিশ্চিত করার পক্ষে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক কর্মশালায় গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.
অন্যদিকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, পতিত ফ্যাসিস্টরা লাখ লাখ কোটি টাকা খরচ করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। হুটহাট কাউকে জামিন দেওয়া যাবে না। আবার যিনি জামিনের যোগ্য, তাঁকে জামিন থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যেন জামিন নিয়ে বের হয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
দেশে সাম্প্রতিক কালে বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে বেরিয়ে এসে অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগেরও দু–একজন জামিন পেয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা হয়েছে। এমন অবস্থায় দুই উপদেষ্টা জামিন প্রসঙ্গে বক্তব্য দিলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে। ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগবিষয়ক কর্মশালা’য় বিচারক, পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি), পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনির সভাপতিত্বে তিন পর্বে কর্মশালাটি হয়। প্রথম পর্বে আগত অতিথিরা বক্তব্য দেন। পরের দুই পর্বে মানবাধিকার, পরিবেশ, আইন প্রয়োগ, মামলা রুজু ও তদন্তে যথাযথ আইনের প্রয়োগসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সঠিকভাবে কাজ করলে মব-তন্ত্র (সংঘবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) কমে যাবে। সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। আসিফ নজরুল, আইন উপদেষ্টাপ্রথম পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। অতিথি ছিলেন আসিফ নজরুল এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
সারা দেশে চলমান বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের’ কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসর, দুষ্কৃতকারী, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে; কিন্তু তাদের দোসররা দেশে-বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন পুলিশ সদর দপ্তরে স্থাপিত ‘জয়েন্ট অপারেশন সেন্টারের’ মাধ্যমে অপারেশন ডেভিল হান্টের সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয় করা হবে।
মহানগর এলাকায় মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলা পর্যায়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এই অভিযান পরিচালনায় সমন্বয় করবেন বলে উল্লেখ করেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, আদালতের বিচারক, সরকারপক্ষের আইনজীবী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য নিয়োজিত রয়েছেন।
অপরাধীদের বিরুদ্ধে সামারি ট্রায়ালের (সংক্ষিপ্ত বিচার) জন্য সরকার ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় আটজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদায়ন করেছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘কোনো অপরাধীকে রাস্তায়, বাজারে, মাঠে, ময়দানে, রাজপথে দেখতে চাই না। প্রত্যেক অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে চাই। তাদের বিচার নিশ্চিত করতে চাই।’
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের প্রতিটি হত্যার বিচার হবে বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, তা ছাড়া উপদেষ্টা পদে থাকার মানে হয় না। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সঠিকভাবে কাজ করলে মব-তন্ত্র (সংঘবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) কমে যাবে। সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা যেন আর না হয়, তা নিশ্চিতের কথা বলেছেন গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তিনি বলেন, অপরাধীকে যেন আইনের আওতায় এনে বিচার করা যায়। মানবাধিকার রক্ষা করে পুলিশিং সম্ভব।
কর্মশালার দ্বিতীয় পর্বে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইন র আওত য় ন স বর ষ ট ন শ চ ত কর সরক র র অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
বিচারক এজলাসে ওঠেননি, সাইবার ট্রাইব্যুনালে কোনো মামলার শুনানি হয়নি
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে আজ রোববার মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। এজলাসে ওঠেননি সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নূরে আলম। আইনজীবী সমিতি বলছে, সংক্ষুব্ধ আইনজীবীরা ওই আদালতে শুনানি করতে যাননি।
সাইবার ট্রাইব্যুনালের দুই কর্মচারী প্রথম আলোকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলার এক আসামির জামিন আবেদন নাকচ করেন আদালত। জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর আইনজীবীরা সংক্ষুব্ধ হন। আজ সকাল ১০টার দিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির কয়েকজন সদস্য আদালতের কর্মচারীদের জানিয়ে দেন, বিচারক যদি এজলাসে ওঠেন, যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়, তার দায় আইনজীবীরা নেবেন না।
এ বিষয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মিরাজ উদ্দিন সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর আইনজীবীর সঙ্গে বিচারকের বাতচিৎ হয়। আজ সকালে ঢাকা বারের বেশ কয়েকজন আইনজীবী আদালতে এসে কর্মচারীদের বলে যান, বিচারক যেন এজলাসে না ওঠেন। আইনজীবীদের ওই কথা বিচারককে জানানো হয়। ফলে মামলার কোনো শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি।’
অবশ্য আইনজীবী শামসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, জামিন আবেদন নাকচ করার বিষয় নিয়ে আদালতের সঙ্গে তাঁর কোনো বাতচিৎ হয়নি। জামিন দেওয়া না–দেওয়া আদালতের এখতিয়ার। জামিনের বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের ঘটনা ঘটেনি; বরং অনেক আইনজীবীর অভিযোগ, তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারকসুলভ আচরণ করেননি। সাধারণ আইনজীবীরা ওনার আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা বলেন, আগে থেকে সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারকের ব্যবহারে অনেক সাধারণ আইনজীবী অসন্তুষ্ট। বৃহস্পতিবার জামিন আবেদন নাকচের পর সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর সঙ্গে বিচারকসুলভ আচরণ করেননি বলেও আইনজীবীরা সমিতির কাছে অভিযোগ করেছেন। এ জন্য সাধারণ আইনজীবীরা ওই আদালতে আজ শুনানি করতে যাননি।