সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, ভোগান্তি
Published: 11th, February 2025 GMT
নালিতাবাড়ী উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় গত বন্যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় নন্নী উত্তরবন্দ এলাকায় নন্নী-বারোমারী দুই লেনের সড়ক। সড়কের দুটি স্থানে ভেঙে যায়। সড়কের দুই পাশে অন্তত ৩৫০ মিটার ধসে যায়। যে কারণে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও সড়ক মেরামত না হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
সরেজমিন জানা গেছে, গত ৪ অক্টোবর পাহাড়ি ঢলে নালিতাবাড়ী উপজেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়কের নন্নী উত্তরবন্দ এলাকার দুটি স্থানে ভেঙে গভীর খাদ তৈরি হয়। বন্যার পানি নেমে গেলে এলাকাবাসী মিলে সড়কের একটি অংশে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে। যা কয়েক দিন পরই ভেঙে যায়। এ অবস্থায় নদী পারের কাঁচা সড়ক দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাতায়াত করছেন অটোরিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল ও সাইকেলচালকরা।
এলাকাবাসী জানান, সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে মধুটিলা ইকোপার্ক, নাকুগাঁও স্থলবন্দর, বারোমারী মিশন, বারোমারী বাজার, নন্নী উচ্চবিদ্যালয়, নন্নী পোড়াগাঁও মৈত্রী কলেজ, নন্নী ইউনিয়ন পরিষদ, নন্নী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। সড়ক ধসের কারণে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতে ব্যাপক সমস্যা তৈরি হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কাঁচা সড়ক ব্যবহার করতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। অনেক অভিভাবক সন্তানদের যাতায়াতে অতিরিক্ত খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন। রোগীর জন্য পরিস্থিতি আরও শোচনীয়। বিশেষ করে রাতে জরুরি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যার ফলে অনেক রোগীর জীবনহানির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
শিক্ষার্থী সুমন আহমেদ ও ফার্সি জানান, সড়ক ভেঙে যাওয়ায় তাদের যাতায়াতে খুব সমস্যা হচ্ছে। বারবার অটোরিকশা পরিবর্তন করে চলাচল করায় ভাড়াও লাগছে বেশি। সন্ধ্যা হয়ে গেলে এখন গাড়ি পাওয়া যায় না। এতে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের কষ্ট
ভোগ করতে হয়।
স্থানীয় কৃষক সোলাইমান হোসেন বলেন, ‘সড়ক ভেঙে যাওয়ায় আমরা কৃষকরাও বিপদে পড়েছি। সড়কটি ধসে যাওয়ায় আমাদের ধান, শাকসবজি ও গবাদি পশু বাজারে নিয়ে যেতে দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হচ্ছে। খুব মুসিবতে আছি।’
অটোরিকশাচালক নূর ইসলাম জানান, ভাঙা সড়কের কারণে তাদের আয় অনেক কমে গেছে। বিকল্প পথে যাত্রী পরিবহন ঝুঁকিপূর্ণ এবং সময় বেশি লাগায় যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। সংসার চালানো অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গত বন্যায় সড়কটি ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখন ভাঙা সড়কের দুই পাশে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকতে হয়।
বারোমারী এলাকার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম জানান, বন্যার পর তারা বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করেন। তবে তা ঝুঁকিপূর্ণ। শিক্ষার্থীরা সাঁকো পার হতে ভয় পায় এবং অনেক অভিভাবক দুর্ঘটনার আশঙ্কায় তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন।
স্থানীয় পোলট্রি ব্যবসায়ী সুমন মিয়ার ভাষ্য, দিনে শত শত মানুষ এ পথে চলাচল করে। কিন্তু সড়ক ভেঙে যাওয়ায় নিদারুণ কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। সড়কের ভাঙা অংশে কোনো নির্দেশক না থাকায় অপরিচিত অনেকে গাড়ি চালিয়ে গর্তে পড়ে যাচ্ছেন। দ্রুত সড়কটির মেরামত করলে এলাকাবাসীর কষ্ট কমবে।
নন্নী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো.
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিরুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, সড়কটির জন্য সম্প্রতি বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সড়কের ভাঙা অংশে দুটি কালভার্ট নির্মাণসহ নকশা করে বিধ্বস্ত সড়কটি দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক এল ক ব স সড়ক ভ ঙ সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
মেয়র আসেন-যান, উন্নতি হয় না সড়কের
মেয়র আসেন, মেয়র যান তবে উন্নয়ন হয় না নড়াইল পৌরসভার সড়কগুলোর। বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকা সড়কগুলো দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে। সড়কের পিচের সঙ্গে উঠে গেছে খোয়াও। কোথাও কোথাও ইট-সুরকির জোড়াতালিতে ঢাকা হচ্ছে সড়কের ক্ষত। কিন্তু সে তো স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। স্থানীয়রা সড়কের উন্নয়নে স্থায়ী সমাধান চান।
নড়াইল পৌরসভা থেকে জানানো হয়েছে, ১৯৭২ সালে ২৮.৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত হয় নড়াইল পৌরসভা। ১৯৯৯ সালে এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয়। পৌরসভায় মোট ৩৭১ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে পাকা সড়ক রয়েছে মাত্র ৫২ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। ঢালাই সড়ক রয়েছে ১২ দশমিক ৫ কিলোমিটার। ইটের সড়ক ৬ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার। কাঁচা সড়ক ১৭৭ দশমিক ২৫ কিলোমিটার এবং অন্যান্য সড়ক রয়েছে ১২২ কিলোমিটার।
পৌরসভার অধিকাংশ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সংস্কার না হওয়ায় সড়কজুড়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে যানবাহন চলাচলে ব্যাপক সমস্যা তৈরি হয়েছে। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও এখানে উন্নয়নের ছোঁয়া তেমন একটা পড়েনি।
পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের বাসীন্দা আলমগীর বলেন, “আমাদের এলাকায় যাতায়াতের সড়কটি দীর্ঘ ৮ থেকে ১০ বছর ধরে চলাচলের অনুপযোগী। বিগত মেয়রসহ বিভিন্ন কমিশনারের কাছে আমরা একাধিকবার বিষটি জানিয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তারা শুধুই আশ্বাস দিয়েছেন। বর্তমান প্রশাসকের কাছে সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানাই।”
ভাদুলিডাঙ্গা এলাকার সাথী বিশ্বাস বলেন, “বিভিন্ন সময়ে কমিশনরা এসেছেন। আশ্বাস দিয়ে গেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আগে তো তাও শোনার রোক ছিল। এখন কমিশনরা নেই, আমাদের সমস্যার কথা শোনারও কেউ নেই।”
নড়াইল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলী হায়দার পৌরসভার সড়কের বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, “সড়ক সংস্কারের জন্য যে বরাদ্দ প্রয়োজন তা না থাকায় সংস্কার সম্ভব হচ্ছে না। অর্থ বরাদ্দ পেলে সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
নড়াইল পৌরসভার প্রশাসক জুলিয়া সুকায়না জানান, নড়াইল ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা হলেও এখানে নাগরিকদের জন্য তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। বরাদ্দ পেলে পর্যায়ক্রমে পৌরসভার বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হবে।
ঢাকা/শরিফুল/এস