আমের বনে দোলা লাগে, মুকুল প’ড়ে ঝ’রে–/চিরকালের চেনা গন্ধ হাওয়ায় ওঠে ভ’রে।/মঞ্জরিত শাখায় শাখায়, মউমাছিদের পাখায় পাখায়,/ক্ষণে ক্ষণে বসন্তদিন ফেলেছে নিঃশ্বাস–/
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।।– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ঘড়ির অ্যালার্মে ঘুম ভাঙতেই পরিকল্পনার ছক আঁকায় ব্যস্ত শোভন। দু’দিন বাদেই ভালোবাসা দিবস। সেদিন সুস্মিতাকে বলতেই হবে তার মনের কোণে এত দিন ধরে বেজে যাওয়া সুরগুলোর কথা। প্রতিটি কথা, চরণ, অনুভূতি কোনোটিই মিথ্যে কিংবা নিছক ভণিতা নয়। বরং পরম যত্নের। তাই ভালোবাসার এ দিনটি হতে পারে তার জমে থাকা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের দিন। তারপর থেকে শুরু হতে পারে নতুন করে পথচলা। হ্যাঁ, অনেকের মতো শোভনও ভেবেছিল প্রিয়জনের জন্য মনের গহিনে জমে থাকা আবেগের কথা কি মুখ ফুটে বলতে হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই হ্যাঁসূচক সম্মতি জ্ঞাপন করবেন। আবার অনেকেই হয়তো খানিকটা বেঁকে বসবেন। হয়তো ঠোঁট বাঁকিয়ে বলেই ফেলবেন, ‘ভালোবাসি’ এ কথাটি ঢাকঢোল পিটিয়ে বলার কি আছে? কেননা প্রবাদ আছে ভালোবাসার কথা বলে ফেললেই নাকি এর মাদকতা কেটে যায়। এ নিয়ে বিভিন্ন জনের মত ভিন্ন। কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর কবিতায় নির্দ্বিধায় লিখেছেন, ‘আবার যখনই দেখা হবে, আমি প্রথম সুযোগেই বলে দেব স্ট্রেটকাট: ‘ভালোবাসি।’ রবীন্দ্রনাথও লুকোছাপা না করে ভালোবাসি কথাটি বলে ফেলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। আবার মনোবিজ্ঞানও বলে ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসার কথা জানালেই বরং প্রেম বাড়ে; বাড়ে আস্থা।
ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার জন্যই নয়, স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা-বন্ধু-আত্মীয় সবার জন্যই। একটি বিশেষ দিনে তাই কাছের মানুষদের নিজের অনুভূতির কথা জানানো যেতে পারে। একসঙ্গে কাটানো যেতে পারে বিশেষ মুহূর্ত।
রঙিন পোশাকে: প্রিয় মানুষদের সঙ্গে ভালোবাসার বিশেষ দিনটি কাটুক রঙিন পোশাকে। এখনও যারা পোশাক কেনেননি, তারা আজকালের মধ্যেই কিনে ফেলতে পারেন নিজের ও প্রিয়জনের বসন। প্রতিবছরের মতো এবারও এই দিনকে কেন্দ্র করে ফ্যাশন হাউসগুলো নিয়ে এসেছে নতুন পোশাক। ডিজাইন, নকশা, প্যাটার্ন ও মোটিফে আছে বৈচিত্র্য। যেহেতু ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসব একই দিনে পড়েছে, তাই লাল, খয়েরি, মেরুন রঙের পাশাপাশি হলুদ, বাসন্তী, কমলা, সাদা, বেগুনি, মভ, সবুজ, প্যাস্টেল ইত্যাদি রংকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পোশাকে বৈচিত্র্যময় থিমও নিয়ে এসেছে রঙ বাংলাদেশসহ অন্যান্য ফ্যাশন ব্র্যান্ড। ‘রঙ বাংলাদেশ’-এর স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাস জানান, বর্তমানে বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস বাঙালির অন্যতম উৎসব। সেই উৎসবের পোশাক ডিজাইনে এবার থিম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ‘আমেরিকান নেটিভ পটারি’ বা আমেরিকান আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিভিন্ন নকশাকে, যা সেই অঞ্চলে মূলত মৃৎশিল্পের নকশা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হাফসিল্ক, কটন, জ্যাকার্ট কটন, মারসালাইস কটন এবং স্লাব ভিসকস কাপড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন নকশা।
সমসাময়িক মোটিফ ও প্রিন্টের পাশাপাশি কে ক্র্যাফটের ভালোবাসা দিবসের পোশাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ডিজাইন, প্যাটার্ন ও রং। এবারের আয়োজনে সুতি কাপড়কেই প্রাধান্য দিয়েছে ব্র্যান্ডটি। নকশা ফুটিয়ে তুলতে হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি, স্ক্রিন ও ব্লক প্রিন্ট, ডিজিটাল প্রিন্ট এবং টাইডাই মিডিয়ার ব্যবহার করা হয়েছে। ফ্লোরাল, আলাম, এথনিক, ট্র্যাডিশনাল, জামদানি, ইক্কত, পেইসলে, জ্যামিতিক ইত্যাদি মোটিফে নারী ও পুরুষের পোশাক তৈরি করা হয়েছে। মেয়েদের পোশাকের মধ্যে রয়েছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, লং কুর্তি, রেগুলার কুর্তি, টপস, গাউন, কাফতান, টিউনিক, টপস-স্কার্ট। ছেলেদের জন্য রয়েছে রেগুলার ও ফিটেড পাঞ্জাবি, শার্ট, কটি। শিশুদের জন্যও রয়েছে নানা আয়োজন। এ ছাড়া যুগলদের জন্যও রয়েছে বিশেষ ম্যাচিং পোশাক।
লা রিভের প্রধান নির্বাহী পরিচালক মন্নুজান নার্গিস বলেন, ‘ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে বসন্তের মর্ম সবসময়ই আলাদা। এই একটি ঋতুতে প্রকৃতি ও পোশাকের মেলবন্ধনে পুরো দেশ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে এই মাস ভালোবাসার আবেগ প্রকাশের মাস। দুটো আয়োজনকে মাথায় রেখে উজ্জ্বল রং, ইউনিক প্যাটার্ন আর ট্রেন্ডের শীর্ষে থাকা ডিজাইন দিয়ে ফাল্গুন-ভ্যালেন্টাইনের সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র কালেকশন লঞ্চ করেছে লা রিভ।’
লা রিভের এ বছরের ফাল্গুন-ভ্যালেন্টাইন কালেকশনের নাম কনভার্জ, মানে অভিন্নতা। এই কালেকশনের মূল বার্তা হলো প্রযুক্তি ও প্রকৃতির মেলবন্ধন। মন্নুজান নার্গিস বলেন, ‘গ্লেজড্ চেরির শাইনি, টুকটুকে লাল রংকে এই কালেকশনের সেন্টিমেন্ট কালার হিসেবে বেছে নিয়েছি আমরা। প্রাইমারি কালার প্যালেটে থাকছে মাস্টার্ড ইয়েলো, পার্পল, টিল, লাভা রেড, গোল্ডেন ব্রাউন, ব্ল্যাক, মস গ্রিন, অরেঞ্জ, ল্যাভেন্ডার, মোকা-ম্যুজ ও নীলের প্যালেট।’
তিনি আরও যোগ করেন, “ফাল্গুন-ভ্যালেন্টাইন মানেই রঙের উৎসব। তাই প্রিন্টস্টোরির জন্য আমরা রঙে ফোকাস করেছি বেশি। দুটি ফ্লোরাল প্রিন্টস্টোরি তৈরি হয়েছে এই কালেকশনে। সাররিয়েল ব্লুমে ড্রিমি, সফট প্যালেটের ফ্লোরাল প্রিন্ট ফোকাস করা হয়েছে, আর ডিজিটাল মিডিয়া প্রিন্টে এসেছে গ্রাফিক ফ্লোরালের প্যাটার্ন। রঙের বৈচিত্র্য ফোটাতে তৈরি করা হয়েছে পিক্সেল প্রজেকশন নামের প্রিন্টস্টোরি, যেখানে আমরা লাল, সবুজ ও নীলের বোল্ড কম্বিনেশনে ফোকাস করেছি। বোটানিক কন্টুর প্রিন্ট স্টোরিতে প্রকৃতিতে ফুটে থাকা জিওমেট্রিক প্যাটার্নগুলো দেখা যাবে। এছাড়া থাকছে স্প্রিংয়ের বিখ্যাত ভিনটেজ ও এথনিক প্রিন্টস্টোরি।’
কেমনে প্রকাশি কব কত ভালোবাসি: মুখে হাজারবার ভালোবাসি বললেন, বিশেষ দিবসে তাঁকে বিভিন্নভাবে সারপ্রাইজ দিলেন, কিন্তু সঙ্গীর প্রতি সন্তোষজনক আচরণ করলেন না, তাহলে এমন ভালোবাসার মূল্য পাবেন না। বলা যায়, এমন ভালোবাসার অর্থই নেই। বরং সঙ্গীর যে কোনো প্রয়োজনে পাশে থাকুন। খারাপ সময়ে অর্থাৎ অসুস্থতা, হতাশা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা বা কর্মক্ষেত্রে কঠিন সময়ে ঢাল হয়ে তাঁর পাশে থাকুন। সে যেন আপনার ওপর আস্থা রাখতে পারে, আপনাকে মনের দুঃখ-ব্যথা খোলাখুলি বলতে পারে, নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করুন।
সঙ্গীর সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এতে সে বুঝবে আপনি তাঁকে সর্বোচ্চ মূল্য দেন। পারিবারিক চাপ কিংবা অন্য কোনো কারণে প্রেমিকা-স্ত্রীকে অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য, হেয় করবেন না। ঠিক তেমনি স্বামী-প্রেমিকের দুর্বলতা নিয়ে মশকরা-ঠাট্টা করা উচিত নয়।
সঙ্গীকে শ্রদ্ধা করুন। কেননা সুন্দর সম্পর্কের মূল ভিত্তি হচ্ছে শ্রদ্ধা, সম্মান ও বিশ্বাস। কাউকে সত্যিকারের ভালোবাসলে তাঁকে অশ্রদ্ধা, অবিশ্বাস করা যায় না। আপনার বন্ধু, স্ত্রী কিংবা প্রেমিকা আপনাকে কতটা ভালোবাসে, তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনাকে কতটা সম্মান করে।
আপনি ও আপনার সঙ্গী দু’জন দু’জনে কতটা স্পেস দিচ্ছেন, তা গুরুত্বপূর্ণ। মুখে ভালোবাসি বললেও অনেকটা কমতি রয়ে যায়। যদি না, তাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা যায়, ছাড় দেওয়া যায় এবং স্বাধীনভাবে বাঁচতে দেওয়া যায়। স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের জন্য স্পেস দেওয়া, ছাড় দেওয়ার গুরুত্ব অনেক। এতে একে অপরকে বুঝতে এবং সীমানা নির্ধারণ করতে সুবিধা হয়।
সম্পর্কে মনোমালিন্য হতেই পারে। তাকে দীর্ঘায়িত করা যাবে না। সহজে মিটিয়ে ফেলতে হবে। কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনার দ্বিমত থাকতেই পারে। তবুও সঙ্গীর দৃষ্টিভঙ্গি শোনা এবং একে অপরের অনুভূতি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।
মনে রাখতে হবে, পার্টনারকে ছোট করে কথা বলা, তাঁর সব কাজে সমালোচনা করা, তাঁকে সবকিছুতে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা, তাঁর ছোটখাটো চাহিদা ও শখকে উপেক্ষা করলে সম্পর্ক নষ্ট হয়। তাঁর পরিবারকে হেয় করে কথা বললে, তাঁর আত্মসম্মানে আঘাত লাগে– এমন আচরণ করলে সুন্দর সম্পর্কে ফাটল ধরতে পারে। মুখে ভালোবাসার প্রকাশ অবশ্যই জরুরি। পাশাপাশি তাঁকে যে ভালোবাসেন, তা সুন্দর আচরণ, যত্ন, দায়িত্ববোধ দিয়েও বোঝানো জরুরি। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প র ন টস ট র ক ল কশন র জন য ড জ ইন বসন ত আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
আন্দোলনের মুখে বিচারক, অচলাবস্থা সাইবার ট্রাইব্যুনালে
জামিন না দেওয়াকে কেন্দ্র করে আইনজীবীদের আন্দোলনের মুখে পড়েছেন ঢাকার এক বিচারক।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে এ অবস্থা ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে। আন্দোলনের মুখে বিচারকাজ পরিচালনার জন্য এজলাসেই উঠতে পারেননি বিচারক নূরে আলম।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের সামনে বিচারককে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেন আইনজীবীরা। এসময় বিচারক খাস কামড়ায় অবস্থান করেন।
সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. মিরাজ উদ্দিন শিকদার জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে এক আসামির জামিন নামঞ্জুর করায় উপস্থিত আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বিচারককে উদ্দেশ্য করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় বিচারক এজলাস ত্যাগ করে খাস কামড়ায় চলে যান। আজ আইনজীবীরা বিক্ষোভ করায় বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে তিনি এজলাসে ওঠেননি।
এ বিষয়ে সেই আসামি পক্ষের আইনজীবী শামসুজ্জামান দীপু বলেন, “বিচারকের আচরণে সাধারণ আইনজীবীরা ক্ষিপ্ত। এজন্য সাধারণ আইনজীবীরা তার অপসারণ চেয়ে আন্দোলন করছেন। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ বিষয়ে অবগত রয়েছেন। তাদের সম্মতি নিয়েই সাধারণ আইনজীবীরা সাইবার ট্রাইব্যুনাল বয়কট করেছেন।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের স্টাফরা জানান, ওই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। তার অনুপস্থিতিতে মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কয়েকদিন আগে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সপ্তাহ ব্যবধানে আবারো তার জামিন চাইলে বিচারক নামঞ্জুর করেন। এসময় আসামি পক্ষের আইনজীবী জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় বিচারকের সঙ্গে অশোভন করলে বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন।
এদিকে, আন্দোলনরত আইনজীবীরা বলেন, “এই বিচারক নিয়মিত আইনজীবীদের ও বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। একজন বিচারকের কাছ থেকে এমন আচরণ প্রত্যাশিত না। প্রতিনিয়ত তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। এজন্য আমরা তার অপসারণ চাই।” তবে এ বিষয়ে বিচারকের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/মামুন/ ইভা