আমের বনে দোলা লাগে, মুকুল প’ড়ে ঝ’রে–/চিরকালের চেনা গন্ধ হাওয়ায় ওঠে ভ’রে।/মঞ্জরিত শাখায় শাখায়, মউমাছিদের পাখায় পাখায়,/ক্ষণে ক্ষণে বসন্তদিন ফেলেছে নিঃশ্বাস–/
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।।– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ঘড়ির অ্যালার্মে ঘুম ভাঙতেই পরিকল্পনার ছক আঁকায় ব্যস্ত শোভন। দু’দিন বাদেই ভালোবাসা দিবস। সেদিন সুস্মিতাকে বলতেই হবে তার মনের কোণে এত দিন ধরে বেজে যাওয়া সুরগুলোর কথা। প্রতিটি কথা, চরণ, অনুভূতি কোনোটিই মিথ্যে কিংবা নিছক ভণিতা নয়। বরং পরম যত্নের। তাই ভালোবাসার এ দিনটি হতে পারে তার জমে থাকা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের দিন। তারপর থেকে শুরু হতে পারে নতুন করে পথচলা। হ্যাঁ, অনেকের মতো শোভনও ভেবেছিল প্রিয়জনের জন্য মনের গহিনে জমে থাকা আবেগের কথা কি মুখ ফুটে বলতে হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই হ্যাঁসূচক সম্মতি জ্ঞাপন করবেন। আবার অনেকেই হয়তো খানিকটা বেঁকে বসবেন। হয়তো ঠোঁট বাঁকিয়ে বলেই ফেলবেন, ‘ভালোবাসি’ এ কথাটি ঢাকঢোল পিটিয়ে বলার কি আছে? কেননা প্রবাদ আছে ভালোবাসার কথা বলে ফেললেই নাকি এর মাদকতা কেটে যায়। এ নিয়ে বিভিন্ন জনের মত ভিন্ন। কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর কবিতায় নির্দ্বিধায় লিখেছেন, ‘আবার যখনই দেখা হবে, আমি প্রথম সুযোগেই বলে দেব স্ট্রেটকাট: ‘ভালোবাসি।’ রবীন্দ্রনাথও লুকোছাপা না করে ভালোবাসি কথাটি বলে ফেলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। আবার মনোবিজ্ঞানও বলে ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসার কথা জানালেই বরং প্রেম বাড়ে; বাড়ে আস্থা।
ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার জন্যই নয়, স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা-বন্ধু-আত্মীয় সবার জন্যই। একটি বিশেষ দিনে তাই কাছের মানুষদের নিজের অনুভূতির কথা জানানো যেতে পারে। একসঙ্গে কাটানো যেতে পারে বিশেষ মুহূর্ত।
রঙিন পোশাকে: প্রিয় মানুষদের সঙ্গে ভালোবাসার বিশেষ দিনটি কাটুক রঙিন পোশাকে। এখনও যারা পোশাক কেনেননি, তারা আজকালের মধ্যেই কিনে ফেলতে পারেন নিজের ও প্রিয়জনের বসন। প্রতিবছরের মতো এবারও এই দিনকে কেন্দ্র করে ফ্যাশন হাউসগুলো নিয়ে এসেছে নতুন পোশাক। ডিজাইন, নকশা, প্যাটার্ন ও মোটিফে আছে বৈচিত্র্য। যেহেতু ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসব একই দিনে পড়েছে, তাই লাল, খয়েরি, মেরুন রঙের পাশাপাশি হলুদ, বাসন্তী, কমলা, সাদা, বেগুনি, মভ, সবুজ, প্যাস্টেল ইত্যাদি রংকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পোশাকে বৈচিত্র্যময় থিমও নিয়ে এসেছে রঙ বাংলাদেশসহ অন্যান্য ফ্যাশন ব্র্যান্ড। ‘রঙ বাংলাদেশ’-এর স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাস জানান, বর্তমানে বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস বাঙালির অন্যতম উৎসব। সেই উৎসবের পোশাক ডিজাইনে এবার থিম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ‘আমেরিকান নেটিভ পটারি’ বা আমেরিকান আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিভিন্ন নকশাকে, যা সেই অঞ্চলে মূলত মৃৎশিল্পের নকশা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হাফসিল্ক, কটন, জ্যাকার্ট কটন, মারসালাইস কটন এবং স্লাব ভিসকস কাপড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন নকশা।
সমসাময়িক মোটিফ ও প্রিন্টের পাশাপাশি কে ক্র্যাফটের ভালোবাসা দিবসের পোশাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ডিজাইন, প্যাটার্ন ও রং। এবারের আয়োজনে সুতি কাপড়কেই প্রাধান্য দিয়েছে ব্র্যান্ডটি। নকশা ফুটিয়ে তুলতে হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি, স্ক্রিন ও ব্লক প্রিন্ট, ডিজিটাল প্রিন্ট এবং টাইডাই মিডিয়ার ব্যবহার করা হয়েছে। ফ্লোরাল, আলাম, এথনিক, ট্র্যাডিশনাল, জামদানি, ইক্কত, পেইসলে, জ্যামিতিক ইত্যাদি মোটিফে নারী ও পুরুষের পোশাক তৈরি করা হয়েছে। মেয়েদের পোশাকের মধ্যে রয়েছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, লং কুর্তি, রেগুলার কুর্তি, টপস, গাউন, কাফতান, টিউনিক, টপস-স্কার্ট। ছেলেদের জন্য রয়েছে রেগুলার ও ফিটেড পাঞ্জাবি, শার্ট, কটি। শিশুদের জন্যও রয়েছে নানা আয়োজন। এ ছাড়া যুগলদের জন্যও রয়েছে বিশেষ ম্যাচিং পোশাক।
লা রিভের প্রধান নির্বাহী পরিচালক মন্নুজান নার্গিস বলেন, ‘ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে বসন্তের মর্ম সবসময়ই আলাদা। এই একটি ঋতুতে প্রকৃতি ও পোশাকের মেলবন্ধনে পুরো দেশ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে এই মাস ভালোবাসার আবেগ প্রকাশের মাস। দুটো আয়োজনকে মাথায় রেখে উজ্জ্বল রং, ইউনিক প্যাটার্ন আর ট্রেন্ডের শীর্ষে থাকা ডিজাইন দিয়ে ফাল্গুন-ভ্যালেন্টাইনের সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র কালেকশন লঞ্চ করেছে লা রিভ।’
লা রিভের এ বছরের ফাল্গুন-ভ্যালেন্টাইন কালেকশনের নাম কনভার্জ, মানে অভিন্নতা। এই কালেকশনের মূল বার্তা হলো প্রযুক্তি ও প্রকৃতির মেলবন্ধন। মন্নুজান নার্গিস বলেন, ‘গ্লেজড্ চেরির শাইনি, টুকটুকে লাল রংকে এই কালেকশনের সেন্টিমেন্ট কালার হিসেবে বেছে নিয়েছি আমরা। প্রাইমারি কালার প্যালেটে থাকছে মাস্টার্ড ইয়েলো, পার্পল, টিল, লাভা রেড, গোল্ডেন ব্রাউন, ব্ল্যাক, মস গ্রিন, অরেঞ্জ, ল্যাভেন্ডার, মোকা-ম্যুজ ও নীলের প্যালেট।’
তিনি আরও যোগ করেন, “ফাল্গুন-ভ্যালেন্টাইন মানেই রঙের উৎসব। তাই প্রিন্টস্টোরির জন্য আমরা রঙে ফোকাস করেছি বেশি। দুটি ফ্লোরাল প্রিন্টস্টোরি তৈরি হয়েছে এই কালেকশনে। সাররিয়েল ব্লুমে ড্রিমি, সফট প্যালেটের ফ্লোরাল প্রিন্ট ফোকাস করা হয়েছে, আর ডিজিটাল মিডিয়া প্রিন্টে এসেছে গ্রাফিক ফ্লোরালের প্যাটার্ন। রঙের বৈচিত্র্য ফোটাতে তৈরি করা হয়েছে পিক্সেল প্রজেকশন নামের প্রিন্টস্টোরি, যেখানে আমরা লাল, সবুজ ও নীলের বোল্ড কম্বিনেশনে ফোকাস করেছি। বোটানিক কন্টুর প্রিন্ট স্টোরিতে প্রকৃতিতে ফুটে থাকা জিওমেট্রিক প্যাটার্নগুলো দেখা যাবে। এছাড়া থাকছে স্প্রিংয়ের বিখ্যাত ভিনটেজ ও এথনিক প্রিন্টস্টোরি।’
কেমনে প্রকাশি কব কত ভালোবাসি: মুখে হাজারবার ভালোবাসি বললেন, বিশেষ দিবসে তাঁকে বিভিন্নভাবে সারপ্রাইজ দিলেন, কিন্তু সঙ্গীর প্রতি সন্তোষজনক আচরণ করলেন না, তাহলে এমন ভালোবাসার মূল্য পাবেন না। বলা যায়, এমন ভালোবাসার অর্থই নেই। বরং সঙ্গীর যে কোনো প্রয়োজনে পাশে থাকুন। খারাপ সময়ে অর্থাৎ অসুস্থতা, হতাশা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা বা কর্মক্ষেত্রে কঠিন সময়ে ঢাল হয়ে তাঁর পাশে থাকুন। সে যেন আপনার ওপর আস্থা রাখতে পারে, আপনাকে মনের দুঃখ-ব্যথা খোলাখুলি বলতে পারে, নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করুন।
সঙ্গীর সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এতে সে বুঝবে আপনি তাঁকে সর্বোচ্চ মূল্য দেন। পারিবারিক চাপ কিংবা অন্য কোনো কারণে প্রেমিকা-স্ত্রীকে অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য, হেয় করবেন না। ঠিক তেমনি স্বামী-প্রেমিকের দুর্বলতা নিয়ে মশকরা-ঠাট্টা করা উচিত নয়।
সঙ্গীকে শ্রদ্ধা করুন। কেননা সুন্দর সম্পর্কের মূল ভিত্তি হচ্ছে শ্রদ্ধা, সম্মান ও বিশ্বাস। কাউকে সত্যিকারের ভালোবাসলে তাঁকে অশ্রদ্ধা, অবিশ্বাস করা যায় না। আপনার বন্ধু, স্ত্রী কিংবা প্রেমিকা আপনাকে কতটা ভালোবাসে, তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনাকে কতটা সম্মান করে।
আপনি ও আপনার সঙ্গী দু’জন দু’জনে কতটা স্পেস দিচ্ছেন, তা গুরুত্বপূর্ণ। মুখে ভালোবাসি বললেও অনেকটা কমতি রয়ে যায়। যদি না, তাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা যায়, ছাড় দেওয়া যায় এবং স্বাধীনভাবে বাঁচতে দেওয়া যায়। স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের জন্য স্পেস দেওয়া, ছাড় দেওয়ার গুরুত্ব অনেক। এতে একে অপরকে বুঝতে এবং সীমানা নির্ধারণ করতে সুবিধা হয়।
সম্পর্কে মনোমালিন্য হতেই পারে। তাকে দীর্ঘায়িত করা যাবে না। সহজে মিটিয়ে ফেলতে হবে। কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনার দ্বিমত থাকতেই পারে। তবুও সঙ্গীর দৃষ্টিভঙ্গি শোনা এবং একে অপরের অনুভূতি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।
মনে রাখতে হবে, পার্টনারকে ছোট করে কথা বলা, তাঁর সব কাজে সমালোচনা করা, তাঁকে সবকিছুতে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা, তাঁর ছোটখাটো চাহিদা ও শখকে উপেক্ষা করলে সম্পর্ক নষ্ট হয়। তাঁর পরিবারকে হেয় করে কথা বললে, তাঁর আত্মসম্মানে আঘাত লাগে– এমন আচরণ করলে সুন্দর সম্পর্কে ফাটল ধরতে পারে। মুখে ভালোবাসার প্রকাশ অবশ্যই জরুরি। পাশাপাশি তাঁকে যে ভালোবাসেন, তা সুন্দর আচরণ, যত্ন, দায়িত্ববোধ দিয়েও বোঝানো জরুরি। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প র ন টস ট র ক ল কশন র জন য ড জ ইন বসন ত আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের শুল্কারোপের প্রভাব: কানাডায় শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বর্জন
কানাডার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পর আর দেরি করেনি। টরন্টোর একটি পানশালা তাদের মেনু থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্য সরিয়ে নেয়।
এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, পানশালায় পানীয়সহ সব ধরনের খাবার অবশ্যই হতে হবে কানাডার উৎপাদিত। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের বিকল্প কোনো পণ্য যদি কানাডার না থাকে, তাহলে ইউরোপের অন্য কোনো দেশ বা মেক্সিকোর খাবার রাখা হবে। কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের নয়।
টরন্টোর ম্যাডিসন অ্যাভিনিউ নামের পানশালার ব্যবস্থাপক লিয়া রুসেল বলছিলেন, মার্কিন পণ্য বর্জন নিয়ে চিন্তাভাবনার কিছু নেই। তিনি বলেন, বিষয়টি এখন এমন যে এটাকে পরিবর্তন করা বেশ কঠিন হবে। এমনকি মার্কিন শুল্ক না থাকলেও পণ্য বর্জন অব্যাহত থাকতে পারে।
রুসেল গত বৃহস্পতিবার বিবিসিকে বলেন, ‘আমি আনন্দিত যে আমরা মার্কিন পণ্য থেকে মুক্ত হচ্ছি এবং স্থানীয় ব্যবসাকে সহায়তা করার পথে এগোচ্ছি। আমি মনে করি, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডার ওপর শুল্কারোপ এবং সার্বভৌমত্ব নিয়ে হুমকি দেওয়ার পর দেশটিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ট্রাম্পের পদক্ষেপে কানাডার অর্থনীতিতে অপ্রত্যাশিত প্রভাব পড়তে পারে। তবে ট্রাম্প পুরো মাত্রায় বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করলে কানাডার পক্ষে সেটি এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই।
মলসন কানাডিয়ান বিয়ারের একসময় বিজ্ঞাপন করেছিলেন কানাডার অভিনেতা জেফ ডগলাস, যাতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি কানাডীয়’। সম্প্রতি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে যুক্ত হতে বলেছিলেন ট্রাম্প। ওই বিষয়টিকে মাথায় রেখে জেফ ইউটিউবে একটি ভিডিও বানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরও এমন বিষয় কানাডায় দেখা যাচ্ছে, যা অনেকটা প্রতীকী। যেমন মন্ট্রিয়লের একটি ক্যাফে তাদের মেনুতে ‘আমেরিকানো’ পরিবর্তন করে ‘কানাডিয়ানো’ করেছে। ক্যাফের মালিকেরা বলছেন, দেশ ও মানুষের প্রতি সমর্থন জানাতে তাঁরা এই প্রতীকী পরিবর্তন এনেছেন।ওই ভিডিওতে জেফ ঘোষণা দেন, ‘আমরা ৫১তম কোনো কিছুই না।’ তাঁর ওই ভিডিও কানাডায় ভাইরাল হয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরও এমন বিষয় কানাডায় দেখা যাচ্ছে, যা অনেকটা প্রতীকী। যেমন মন্ট্রিয়লের একটি ক্যাফে তাদের মেনুতে ‘আমেরিকানো’ পরিবর্তন করে ‘কানাডিয়ানো’ করেছে। ক্যাফের মালিকেরা বলছেন, দেশ ও মানুষের প্রতি সমর্থন জানাতে তাঁরা এই প্রতীকী পরিবর্তন এনেছেন।
এমনকি কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল সিবিসি মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতে একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করেছে। এতে কানাডার নাগরিকদের প্রশ্ন করা হয়, ট্রাম্প যে বারবার কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, সেটা নিয়ে তাঁরা কী মনে করেন।
এই অনুষ্ঠানে প্রশ্নের জবাবে কানাডার মানুষ ট্রাম্পকে ‘বিশ্বাসঘাতক’, ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’, ‘বেইমান’ বলে আখ্যায়িত করেন।
অবশ্য চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প কানাডার কিছু পণ্যের ওপর থেকে আরোপিত শুল্ক তুলে নিয়েছেন। আবার কিছু কিছু শুল্ক ২ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করেছেন। তাতে কানাডার মানুষের ক্ষোভ কমেনি। অনেক কানাডীয় বলছেন, ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে।
গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প শুল্ক স্থগিত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি সিএনএনকে বলেন, ‘আমাদেরকে ৫১তম অঙ্গরাজ্য, আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে গভর্নর বলে ট্রাম্প প্রশাসন কানাডার প্রতি ব্যাপক মাত্রায় অসম্মান দেখিয়েছে।’
কানাডার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ প্রদেশের নেতা ডাউ ফোর্ড যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যে বিদ্যুৎ রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ লাখ বাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করা হবে বলে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন।কানাডার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ প্রদেশের নেতা ডাউ ফোর্ড যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যে বিদ্যুৎ রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ লাখ বাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করা হবে বলে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন।
স্থানীয় এক বেতারকে ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে ডাউ ফোর্ড বলেন, ‘আমি মার্কিন নাগরিকদের কথা ভেবে আতঙ্কিত হচ্ছি। কারণ, মার্কিন নাগরিক বা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নির্বাচিত কর্মকর্তা নন—একজন মাত্র ব্যক্তির কারণে এত কিছু হচ্ছে।
ফোর্ড বলেন, ‘তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের, ঘনিষ্ঠ মিত্রদের পেছনে লেগেছেন। এতে উভয় পক্ষের অর্থনীতি বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে।’
কানাডার নাগরিকেরা সে দেশের সরকারের পাল্টা শুল্কারোপকে পুরোপুরি সমর্থন জানাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, যত দিন যুক্তরাষ্ট্র শুল্কারোপ বাতিল না করছে, তত দিন কানাডার সরকারের উদ্যোগের প্রতি তাঁদের সমর্থন থাকবে।
টরন্টোর লিকার কন্ট্রোল বোর্ড অব অন্টারিওর দোকানি অ্যান্ড্রু বলছিলেন, ‘প্রতি রাতে আপনি ঘুমাতে যাচ্ছেন এবং আপনার কোনো ধারণাই নেই যে আপনি কোথায় আছেন, কী অবস্থান নিচ্ছেন।’ অ্যান্ড্রুর পানশালায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি থেকে আসা বোরবর্ন হুইস্কি রাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অ্যান্ড্রু প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, তিনি শুল্ক আরোপ কিছুটা বিলম্ব করবেন। কিন্তু তাঁর এই কথার কী অর্থ থাকতে পারে?’
যুক্তরাষ্ট্র যদি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ বলবৎ রাখে, তাহলে লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারাতে পারেন। অর্থনীতিবিদেরা আশঙ্কা করছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে মহামন্দা দেখা দিতে পারে।অ্যান্ড্রু বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পানীয় তত দিন পানশালায় রাখা বন্ধ রাখব, যত দিন না বিষয়টির সুরাহা হচ্ছে।’
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পর কানাডায় গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ পণ্য মার্কিন কোম্পানি ও মক্কেলদের কাছে রপ্তানি করা হয়, তারা উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্র যদি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ বলবৎ রাখে, তাহলে লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারাতে পারেন। অর্থনীতিবিদেরা আশঙ্কা করছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে মহামন্দা দেখা দিতে পারে।
ট্রাম্পের এই শুল্কারোপের প্রভাব যথেষ্ট বিপর্যয়কর হতে পারে। এ কারণেই কিনা কানাডার সরকার ইতিমধ্যে কোভিডের সময়ের মতো উদ্বেগ নিরসনে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে শুল্কারোপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ও নীতির সহকারী অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ বব গিলেজাউ বলেন, শুল্কারোপ সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করা হলেও যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
আমি আনন্দিত যে আমরা মার্কিন পণ্য থেকে মুক্ত হচ্ছি এবং স্থানীয় ব্যবসাকে সহায়তা করার পথে এগোচ্ছি। আমি মনে করি, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ—লিয়া রুসেল, ব্যবস্থাপক টরন্টোর ম্যাডিসন অ্যাভিনিউকানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শুল্কারোপ এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে যোগ দেওয়ার ট্রাম্পের পরামর্শের নিন্দা জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার অটোয়ায় গণমাধ্যমকে ট্রুডো বলেন, ‘ট্রাম্প কানাডার অর্থনীতিকে পুরোপুরি বিধ্বস্ত দেখতে চান। কারণ, সেটা হলে কানাডাকে তাঁর দেশের অন্তর্ভুক্ত করা সহজ হবে।’
অধ্যাপক গিলেজিউ বলেন, যাকে সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ ও ঘনিষ্ঠ মিত্র ভেবে থাকে, সেই প্রতিবেশী দেশ থেকে এমন আচরণ কানাডার জন্য গভীর ক্ষত বৈকি।
এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমরা কয়েক শ বছর ধরে ঘনিষ্ঠ মিত্র। কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে আচরণ করছে, কেবল তা নিয়ে তারা হতাশ নন, বরং ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ নিয়েও তারা হতাশ।
অধ্যাপক গিলেজিউ বলেন, ‘আমরা ভদ্র, সম্মানিত মানুষ। আমরা আমাদের মিত্রদের পাশে দাঁড়াই। কানাডার মানুষের মধ্যে আমরা যে ক্ষোভ দেখছি, সেটার কারণ হচ্ছে মিত্রদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ।’
কানাডার মার্কিন পণ্য বর্জনের প্রভাব ইতিমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। কানাডার গণমাধ্যম গ্লোবাল নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্লাইট সেন্টার কানাডার তথ্যমতে গত বছরের জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারির তুলনায় চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে কানাডীয়দের ভ্রমণের বুকিং ৪০ শতাংশ কমেছে। স্থলপথে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ও ওয়াশিংটন স্টেটের মধ্যেও কানাডার মানুষের ভ্রমণ বেশ কমে গেছে।
শুল্কারোপের আগে কানাডীয়দের ভ্রমণের প্রধান গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। কেবল ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটনশিল্পে কানাডার নাগরিকদের অবদান ছিল প্রায় ২ হাজার ৫০ কোটি মার্কিন ডলার।
এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে গিলেজাউ বলেন, কানাডার মানুষ সাধারণত প্রতিবেশীর সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। কিন্তু সেটা না হলে কানাডার ‘অন্য যেকোনো জায়গার’ বন্ধু থাকা দরকার। কানাডার মানুষ সবাই এ বিষয়ে একমত।