Samakal:
2025-04-15@17:45:31 GMT

বসন্তের সাজ

Published: 11th, February 2025 GMT

বসন্তের সাজ

দক্ষিণের মৃদু হাওয়া কানে কানে বলে দিচ্ছে বাংলার প্রকৃতিতে রাজকীয় শোভা বিস্তারে আগমন ঘটতে চলেছে ঋতুরাজ বসন্তের। শীতের নিস্তব্ধতার পর যখন চারপাশে রঙের বাহার ছড়িয়ে পড়ে, তখনই বসন্তের আগমন ঘটে প্রকৃতিতে। 
পুরোনো জীর্ণতার আবরণ খুলে প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে মানবমনও সেজে উঠে নতুন সাজে। 
হৃদয় জুড়ানো কোকিলের কুহু কুহু সুরের সঙ্গে ফাল্গুনের আগুনরাঙা পলাশ, কৃষ্ণচূড়ার আবিরে চারপাশ রঙিন হয়ে ওঠে। প্রকৃতির রঙে তরুণ-তরুণীরাও সাজে বাহারি সাজপোশাকে। 
বসন্ত মানেই পোশাকে থাকবে রঙের ছড়াছড়ি। নারীরা শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া যাই পরুক না কেন বাসন্তী রং প্রাধান্য পায় পোশাকে। পুরুষরাও পাঞ্জাবি কিংবা ফতুয়ায় বাসন্তী রঙের ছোঁয়ায় নিজেদের রাঙিয়ে দেন। এর পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর ধরে পোশাকে উজ্জ্বল রং প্রাধান্য পাচ্ছে ফ্যাশন সচেতন মানুষের সাজপোশাকে। 
ফ্যাশনে নতুনত্ব আনতে দেশের ফ্যাশন হাউস থেকে শুরু করে নানা শপিং মল বসন্তকে কেন্দ্র করে সেজে ওঠে নানা রঙের ও নানা ডিজাইনের পোশাকে। এর পাশাপাশি নারীর সাজের অনুষঙ্গ হিসেবে মেটাল, পাথর, মাটি, কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি দিয়ে তৈরি বাহারি ডিজাইনের গহনাও পাওয়া যায় বিভিন্ন শপে। 
ফাল্গুনের সাজে ফুলপ্রিয় নারীরা সাজপোশাকের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিতে পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে যেমন ফুলের রং বেছে নিতে পারেন, তেমনি রঙের বৈপরীত্যও আনতে পারেন বাহারি রঙের ফুল চুলের খোঁপায় গুঁজে দিয়ে। 
হালকা গরম, হালকা শীতের এই দিনে প্রিয় মানুষ অথবা বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর দিনটিতে সাজটাও হতে হয় পোশাক এবং আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই । 
এ ব্যাপারে শোভন মেকওভারের স্বত্বাধিকারী শোভন সাহা জানান, ‘বসন্তে আমাদের কালারফুল অনেক ড্রেস পরা হয়, তবে বাসন্তী রংটা একটু বেশিই প্রাধান্য পায়। সেই সঙ্গে আমাদের ফ্যাশন ডিজাইনাররা যেহেতু লাল, নীল, হলুদ, কমলাসহ নানা রঙের কম্বিনেশনে ড্রেসগুলো ডিজাইন করে থাকেন, তাই এ ধরনের ড্রেসের সঙ্গে মেকআপ হালকা হলে ভালো হয়।’ 
পহেলা ফাল্গুনে একটু গরমের ভাব থাকায় এ আবহাওয়ার সঙ্গে চকচকে মেকআপ, গ্লিটারি আই বা জরি চকচকে চোখ না সাজিয়ে স্মার্ট একটা স্নিগ্ধ লুক দিতে পারেন। চুলটাকে একটু সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে অনেকে ফুল লাগাতে পছন্দ করেন। চুলে খোঁপা করলে বা কানের এক পাশে ফুল গুঁজে চুলকে ছেড়ে দিয়ে আয়রন করা বা আয়রন কার্ল করা, চুলের নিচের দিকটা একটু কার্ল করে নেওয়া যায়। 
শোভন সাহা আরও জানান, হেয়ার স্টাইলটা বিভিন্ন ধরনের করতে পারেন, সেটি আপনার চুলের ধরন বুঝে করা যায়। আপনার লুক, পোশাক কী পরেছেন সেটির সঙ্গে মানানসই করে করতে পারেন। চুলে বেণিও করতে পারে। সেটি আপনার পোশাকের সঙ্গে মানিয়েছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বেণির দু’পাশে ফুলের মালা পরতে পারেন।
পছন্দের ক্ষেত্রে এখন রঙিন ফুলগুলোই বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, ক্যালেন্ডুলাসহ অন্যান্য রঙিন ফুল মেয়েদের সাজের একটি প্রিয় অংশ। নেইল পলিশের ক্ষেত্রেও একটু কালারফুল ব্যবহার করতে পারেন।
শোভনের মতে, চুড়ি ছাড়া সাজটাই যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই তো হাতভর্তি কাচের চুড়ি যুগ যুগ ধরে নারীর বসন্তের সাজপোশাকের সঙ্গে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। মেয়েদের শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ কেমন ডিজাইনের হবে, সেটি নির্ভর করে ফ্যাশনেবল নারীর রুচির ওপর। এ ক্ষেত্রে ডিজাইনারের সঙ্গে কথা বলে কালার মিলিয়ে নিজেদের পছন্দে বাহারি ডিজাইনের ব্লাউজ বানিয়ে নেওয়া যায়। 
রূপ বিশেষজ্ঞ শোভন জানান, আজকাল বসন্তের সাজপোশাকে একটু ফিউশন করতে দেখা যায়। শাড়ি এক রকম পরছে তো ব্লাউজটা ভিন্ন রকম পরছে। অথবা ব্লাউজটা একটু গর্জিয়াস পরছে তো শাড়িটা একটু সিম্পল পরছে। গহনার ক্ষেত্রে মাটির তৈরি বা কাপড়ের তৈরি গহনা এখন মার্কেটে বেশ চলছে। এ ধরনের গহনার পাশাপাশি ফুলের গহনাও বানিয়ে পরতে পারেন। মাথায় ফুলের রিং পরতে পারেন বা হাতে পরতে পারেন। তাজা ফুল হোক বা আর্টিফিশিয়াল হোক ফুলের গহনা দিয়েও সাজতে পারেন। 
মডেল: অদিতি

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড জ ইন র বসন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

বৈশাখে শতবর্ষীয় বাঁশির সুর বাজে যে গ্রামে

কুমিল্লার হোমনা উপজেলার শ্রীমদ্দী গ্রামে বৈশাখের আগমনে এক অনন্য উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী বাঁশি তৈরির প্রাচীন শিল্প এখানে এখনো জীবন্ত, যা গ্রামবাসীর মুখে হাসি ও শহরের মেলায় সুরের ছোঁয়া নিয়ে হাজির হচ্ছে।

শ্রীমদ্দী গ্রামে প্রায় ১২০টি পরিবার বাঁশি তৈরির কাজে জড়িত। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কারিগররা বাঁশ সংগ্রহ, ছিদ্র করা এবং রঙিন সাজসজ্জার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।

স্থানীয় কারিগরদের মতে, এই প্রাচীন শিল্প কেবল একটি বাদ্যযন্ত্র তৈরির প্রক্রিয়া নয় বরং এটি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক শিকড়ের এবং আত্মার গভীর প্রতিফলন।

গ্রামের সবচেয়ে প্রবীণ বাঁশিশিল্পী আমির হোসেন (৬৫) তিনি বলেন, “আমাদের পূর্বপুরুষেরা যখন বাঁশি তৈরি করতেন, তখন এতে কেবল কারিগরি দক্ষতা নয়, আত্মার এক গভীর প্রেরণা ছিল। বৈশাখের আগমন ঘটতেই চাহিদা বেড়ে যায়। এক মাস ধরে চলা এই কার্যক্রমের মধ্যে দেশে নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এসে বাঁশি সংগ্রহ করে।”

এদিকে পরম্পরাগতভাবে পুরুষদের শিল্প মনে হলেও, শ্রীমদ্দীতে নারীরাও সমানভাবে অংশ নেয়। 

গ্রামের গৃহবধূ রাহেলা খাতুন বলেন, “ঘরের কাজ শেষে আমরা মেয়েরা বসে বাঁশিকে সাজাই। প্রত্যেকটি বাঁশি যেন আলাদা এক গল্প বলে। আমাদের তৈরি বাঁশি এখন শহরের বড় মেলায় পৌঁছে যায়।” 

নারী ও পুরুষের সমন্বয়ে গ্রামটি বৈশাখের আগমনে নতুন সুরে মাখিয়ে ওঠে। তবে সাম্প্রতিক বৈশাখ আসলে শ্রীমদ্দীর বাঁশির চাহিদা বহুগুণে বেড়ে যায়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মেলায় এই বাঁশি জনপ্রিয় হস্তশিল্প হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে বাজারে প্রায় ৩০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা মূল্যের বাঁশি বিক্রি করা হয়।

এই সাথে বর্তমান তরুণরা ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তা বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছেন। ইউটিউব, ফেসবুক ও অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে শ্রীমদ্দীর বাঁশির ইতিহাস এবং কারিগরি প্রচার হচ্ছে।

গ্রামাঞ্চলের কলেজ ছাত্র ফামিদুল বলেন, “আমরা এখন বাঁশি বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি করছি; বিদেশ থেকেও অর্ডার আসছে। ডিজিটাল মাধ্যমের মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্যকে বহির্বিশ্বে উপস্থাপন করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।”

হোমনা উপজেলার সংস্কৃতিকর্মী লুৎফর রহমান বলে, বাঁশির শিল্প শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের মাধ্যম নয়, এটি আমাদের শিকড়ের- আমাদের আত্মার প্রতীক। প্রতিটি বাঁশি যেন দেশের ঐতিহ্য বহন করে।”

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সুমি আক্তার, গ্রামটিতে বাঁশির সুর একসময়, শহর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ছড়িয়ে পড়বে, তখন আমাদের মনে গেঁথে যায় শতবর্ষের ঐতিহ্য ও শিকড়ের প্রকৃত সুর।

এই প্রাচীন শিল্প কেবল একটি বাদ্যযন্ত্র নয়, বরং বাঙালির আত্মার, সাংস্কৃতিক গর্বের এবং জাতীয় পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

হোমনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ক্ষেলালিকা চাকমা বলেন, “শ্রীমদ্দি একটি এতিহ্যবাহী গ্রামে। তারা দীর্ঘদিন ধরে এই শিল্পটাকে টিকিয়ে রেখেছে। অনেক পরিবার এই শিল্পের ওপর জীবিকা নির্বাহ করছে।” 

তিনি আরও বলেন, “তাদের সাথে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন পয়লা বৈশাখসহ অন্যান্য যে দিবস আছে আমরা তাদের আমন্ত্রণ করি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা করে আসছে।”

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চীনের আগমনে বাংলাদেশের পানিসম্পদ নিয়ে নতুন দৃশ্যপট
  • বৈশাখে শতবর্ষীয় বাঁশির সুর বাজে যে গ্রামে