পরিবর্তিত পরিস্থিতির বিরূপ প্রভাব পড়েছে  ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রমে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোথাও বাহিনীর সদস্যদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে আন্তরিকতার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। 
হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন সড়কের ট্রাফিক পয়েন্টে এমনটাই দেখা যাচ্ছে। আইন অমান্য করে বেপরোয়া যান চলাচল ও ট্রাফিক আইন পালনে সাধারণের মাঝে উদাসীনতা বেড়েছে। সেই সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালনে ঢিলেঢালাভাব পরস্থিতিতে আরও জটিল করে তুলেছে।
হবিগঞ্জ জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির নির্দেশ এবং ট্রাফিক বিধান উপেক্ষা করে হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় দিনের বেলায় প্রবেশ করছে ভারী যানবাহন। যে কারণে শহরের প্রধান সড়ক 
ও বাইপাস সড়কে বেড়েছে যানজটের তীব্রতা। 
এতে  ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্য ও শহরবাসীর।
একাধিক সূত্র জানায়, শহরের সড়ক নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের পেশাদারিত্বে ঘাটটি দৃশ্যমান। এর সুযোগ নিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন যানবাহনের চালকরা। এছাড়া বেশ কয়েকটি স্থানে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের ম্যানেজ করে সড়কে পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও বেআইনি কর্মকাণ্ড চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দিনের অংশে এভাবেই শহরের মূল সড়কগুলোতে নির্মাণসামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচল করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি পাড়া-মহল্লা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মাটিকাটার ট্রাক্টর।
বর্তমানে হবিগঞ্জ শহরবাসীর গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে এই যানজট। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চলাচলকারীদের। বিশেষ করে শহরের চৌধুরীবাজার বাণিজ্যিক এলাকা, বৃন্দাবন কলেজ রোড, ঘাটিয়া বাজার, অনামিকা কমিউনিটি সেন্টার ও বগলা বাজার এলাকায় এই সংকট সবচেয়ে তীব্র।
এসব পয়েন্টে যানজট তীব্র হওয়ার অন্যতম কারণ হলো দিনের বেলায় শহরের প্রধান প্রধান সড়কে মালবাহী ভারী পরিবহনের বেপরোয়া চলাচল। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রধান প্রধান সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের ঢিলেঢালা কাজকর্মে এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বরং উল্টো অনেক ট্রাফিক পুলিশের সদস্য আর্থিক সুবিধার বিপরীতে আইন লঙ্ঘনকারীদের মদদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 
ভুক্তভোগী শহরবাসী রেজাউল হক জানান, শুধু আইন করলেই হবে না। তার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। যানবাহনের চালকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইন ভঙ্গ করেন। প্রয়োগ যথাযথ না হলে পরিস্থিতি বদলাবে না। ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত সবার শতভাগ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা উচিত।  
রোহান আহমেদ নামে শহরের আরেক বাসিন্দা জানান, হবিগঞ্জ এখন যানজটের শহর। চালক থেকে শুরু করে সাধারণ পথচারী কারও মাঝেই আইন মানার প্রবণতা নেই। স্থানীয় ইকবাল আহমেদ জানান, শহরের প্রধান সড়ক এমনিতেই সংকীর্ণ। সেখানে আবার দিনের অংশে ভারী যানবাহন ঢুকলে যানজটের তীব্রতা বাড়ে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বগলাবাজার ও চৌধুরীবাজার পয়েন্টে দিনের বেলায় মালপত্র লোড-আনলোড করা হয়। যে কারণে রাস্তা আটকে যানজট সৃষ্টি হয়।
এদিকে চুনারুঘাট উপজেলায় যানজট নিরসনের লক্ষ্যে সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনের মতবিনিময় সভা হয়। সোমবার উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়। ইউএনও রবিন মিয়া বলেন, ১৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট শাহজিবাজার আর্মি ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন আরাফি তাজওয়ার আমিন, সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আনোয়ারুল ইসলাম ও চুনারুঘাট ওসি নুর আলম সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সচেতন মহলের দাবি, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। যে সব পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ থাকার কথা, সেখানে এখন কোনো পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় রোহান আহমেদ জানান, চালক থেকে শুরু করে কারও মধ্যেই আইন মানার কোনো প্রবণতা নেই। যে কারণে দিন দিন যানজট বাড়ছে।
ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক জিয়া উদ্দিন খান জানান, যানজট নিরসনে কাজ করছে ট্রাফিক পুলিশ। ইতোমধ্যে শহরের চৌধুরী বাজারের পুরাতন ব্রিজ ওয়ানওয়ে করা হয়েছে। ভারী যানবাহন শহরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।  পরিস্থিতি বিবেচনায় এ ব্যাপারে প্রয়োজনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে প্রশাসন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য নজট শহর র প র পর স থ ত য নজট সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

বৈশাখে কেনাবেচা ‘মন্দ নয়’

পবিত্র ঈদুল ফিতরের লম্বা ছুটি শেষে গত সপ্তাহে কর্মচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করেছে নগরজীবনে। তবে ছুটির রেশ পুরোপুরি কাটেনি। এরই মধ্যে চলে এসেছে বর্ষবরণ উৎসব। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ ও বর্ষবরণের উৎসব কাছাকাছি সময়ে হওয়ায় এবার পয়লা বৈশাখ ঘিরে তাঁদের আয়োজন কম ছিল। বিক্রিও বেশি হবে না বলে ধারণা করেছিলেন তাঁরা। সে তুলনায় বেচাবিক্রি মন্দ হয়নি।

পয়লা বৈশাখ আজ সোমবার। বর্ষবরণ উৎসব উদ্‌যাপনের জন্য নতুন পোশাক কিনতে বিগত কয়েক দিন বিপণিবিতানে ক্রেতাদের আনাগোনা দেখা গেছে। দাম বেশি হলেও কাঁচাবাজারে ইলিশের দোকানেও ঢুঁ দিয়েছেন অনেকে।

এদিকে পয়লা বৈশাখের দিন মিষ্টির বাড়তি চাহিদা মেটাতে প্রস্তুতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বর্ষবরণে কমবেশি প্রস্তুতি নিয়েছে।

বৈশাখে শেষ পর্যন্ত তৈরি পোশাকের বিক্রি কেমন হলো জানতে চাইলে শনিবার বিকেলে পোশাকের ব্র্যান্ড অঞ্জন’সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহীন আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, এবার অন্য বছরের তুলনায় খুবই কম আয়োজন ছিল। তবে বিক্রি মন্দ হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার থেকে বেচাবিক্রি চাঙা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী বছর বর্ষবরণ উপলক্ষে বেশি প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ, আগামী বছর পয়লা বৈশাখ ঈদের তিন সপ্তাহের বেশি সময় পর।

দেশে তিনটি উৎসবের সময় পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের কেনাবেচা বেশি হয়—পবিত্র ঈদুল ফিতর, পবিত্র ঈদুল আজহা ও পয়লা বৈশাখ। এর মধ্যে বুটিক হাউস ও ব্র্যান্ডগুলোর জন্য কেনাবেচার দ্বিতীয় প্রধান মৌসুম ছিল পয়লা বৈশাখ। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বৈশাখকে ঘিরে বুটিক হাউস ও ব্যান্ডের পোশাকের দোকানে বিশেষ আয়োজনের প্রচলন শুরু হয় প্রায় দুই দশক আগে। ধীরে ধীরে সেটির পরিধি বাড়তে থাকে।

শুরুতে তৈরি পোশাক, মিষ্টিসহ ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার ইত্যাদি বিক্রি বেশি হতো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আসবাব, মুঠোফোন, ইলেকট্রনিক সরঞ্জামসহ বিভিন্ন পণ্যের বিক্রিও বেড়েছে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈশাখকেন্দ্রিক কেনাবেচা বৃদ্ধির কারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। ২০১৬ সাল থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বৈশাখী ভাতা পাচ্ছেন। বেসরকারি খাতের কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানও ভাতা দিচ্ছে। সব মিলিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশাখকেন্দ্রিক অর্থনীতি চাঙা হতে দেখা যায়।

তবে ঈদ ও পয়লা বৈশাখ কাছাকাছি হয়ে যাওয়ায় গত বছর আগের মতো বড় আয়োজনে যাননি ব্যবসায়ীরা। এবারও পরিস্থিতি তেমনই। তবে কম-বেশি আয়োজন সবারই ছিল।

রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের দেশী দশে গত বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, প্রতিটি বিক্রয়কেন্দ্রেই রয়েছে বৈশাখ সংগ্রহ। কারও সংগ্রহ বেশি; কারও কম। তবে ক্রেতার ভিড় বেশি নয়।

বাংলার মেলা নামের পোশাকের ব্র্যান্ডের একটি বিক্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বৈশাখ উপলক্ষে সব বয়সের নারী, পুরুষ ও বাচ্চার জন্য পাঞ্জাবি, ফতুয়া, থ্রি-পিস, শাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক নিয়ে এসেছেন তাঁরা। রোজার মাসের শেষ সপ্তাহে তাঁরা বৈশাখের আয়োজন দোকানে এনেছেন। তখন কিছু কেনাবেচা হয়েছে। ঈদের পরও কিছু কিছু বেচাকেনা হয়েছে।

ভালো বিক্রির আশা মিষ্টির দোকানে

পয়লা বৈশাখের দিন মিষ্টি বিক্রি বেশি হয়। পুরান ঢাকার অনেক ব্যবসায়ী এখনো হালখাতা উৎসব করে বছর শুরু করেন। মিষ্টি-নিমকি দিয়ে ক্রেতা ও বন্ধুবান্ধবকে আপ্যায়ন করার ঐতিহ্য এখনো টিকে আছে। আবার নববর্ষের দিন ছুটি থাকলে পরদিন মিষ্টি খাওয়ার চল তৈরি হয়েছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে। সব মিলিয়ে মিষ্টির ব্যবসা বেশ ভালোই চলে।

প্রাণ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বঙ্গ বেকারসের মিষ্টির ব্র্যান্ড মিঠাইয়ের সারা দেশে ২০৪টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) এস এম হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার থেকে পয়লা বৈশাখের মিষ্টি বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে। এবার করপোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন তাঁরা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণ দিনের চেয়ে পয়লা বৈশাখে চার গুণ বেশি মিষ্টি বিক্রি হয়।

চৈত্রসংক্রান্তি মেলা ও বৈশাখী মেলা উপলক্ষে গ্রামেগঞ্জে মিঠাইয়ের চাহিদা বাড়ে। বগুড়া সদর উপজেলার ‘মিঠাই পল্লী’ খ্যাত হরিপুর গ্রামের কারখানার মালিক ও কারিগরদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বেশ কয়েক দিন ধরেই কারিগরদের দম ফেলানোর ফুরসত নেই।

হরিপুর মিঠাই পল্লীর ১৫ জন কারিগর মিলে একটি কারখানায় মিঠাই তৈরি করেন। তাঁদের মধ্যে একজন সুজন চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার চিনির দাম কেজিতে ১০ টাকা কম। তবে পাম তেল ও গুড়ের দাম বেড়েছে। ফলে তাঁদের লাভ কমেছে।

বৈশাখের পান্তা-ইলিশ

পয়লা বৈশাখের দিন সকালে পান্তাভাতের সঙ্গে ইলিশ মাছ খাওয়ার একটি চল রয়েছে। যদিও অনেকেই বলছেন, বর্ষবরণের সঙ্গে ইলিশের সম্পর্ক নেই। কয়েক বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পান্তার সঙ্গে ইলিশ না খাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছেন। কারণ, ইলিশ রক্ষায় বছরের এ সময়টায় অভয়াশ্রমগুলোতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। অবশ্য ব্যবসায়ীদের অনেকে হিমাগারে রেখে ইলিশ বিক্রি করেন। এ বছরও বাড়তি চাহিদার কারণে ইলিশের দাম বেড়ে গেছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা গত শুক্রবার এক কেজির কিছু বড় একেকটি ইলিশ বিক্রি করেছেন প্রায় দুই হাজার টাকায়। মাঝারি আকারের ইলিশের কেজি চাওয়া হচ্ছিল দেড় হাজার টাকা।

পয়লা বৈশাখকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হয়। এতে সুফল পান প্রান্তিক জনগোষ্ঠী—এমনটাই বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. আবু ইউসুফ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পয়লা বৈশাখ সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই উৎসবে দেশি পণ্যের ব্যবহার বেশি করেন শহরের মানুষ। এতে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হয়। বিশেষ করে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো ব্যবসা করে। পণ্য বিক্রি, সামগ্রিক লেনদেন, কর্মসংস্থান—সব দিক থেকেই পয়লা বৈশাখ অবদান রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ