রোববার রাতে সুপারবোল বা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ফুটবল লিগের ফাইনাল খেলার মাঝপথে এক অভিনয়শিল্পী সুদান ও ফিলিস্তিনের পতাকা তোলেন। অতি নিয়ন্ত্রিত একটি অনুষ্ঠানে তাঁর এ কাজ ছিল খুবই তাৎক্ষণিক। শিগগিরই নিরাপত্তাকর্মীরা ঘটনার নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং পতাকা তোলার দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয়নি। এই মুহূর্তটি চোখের পলকে শেষ হলেও তা গভীর তাৎপর্য বহন করে। 
এটি মূলধারার পরিসরে তাদের বার্তা প্রকাশের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ভেঙে সুদানি ও ফিলিস্তিনি জনগণ এবং তাদের মিত্রদের আওয়াজ তোলার সংকল্প উন্মোচন করে। পদ্ধতিগত দমনপীড়নের মুখোমুখি হলে তারা কীভাবে তাদের কণ্ঠস্বর শোনাতে সিস্টেমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়, এটি তার আরেকটি উদাহরণ হতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সুদানি ও ফিলিস্তিনি জনগণ কথা বলার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। তারা প্রতিবাদ করেছে, সংগঠিত করেছে এবং তাদের সংগ্রামের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে জীবনের ঝুঁকিও নিয়েছে।  বিশ্ব তাদের আহবানে সাড়া দেয়নি, বরং উপেক্ষা করেছে।

এবারই প্রথম তাদের কষ্টকে চাপা রাখতে সুপারবোল এমন উদ্যোগ নিয়েছে, বিষয়টি তা নয়। গত বছর যখন লাখ লাখ মার্কিনি খেলাটি দেখছিল, তখন ইসরায়েল একটি গণহত্যা চালিয়েছিল। রাফাতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৬৭ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছিল। অথচ এই রাফাকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, যেখানে তখন ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিল। এটি কোনো দুর্ঘটনা ছিল না। ইসরায়েল জানত, আমেরিকান মিডিয়া এ ব্যাপারে মনোযোগ দিতে খুব দ্বিধায় থাকবে এবং যত্ন নিতে গড়িমসি করবে। 

কর্মী হিসেবে আমরা অনেকেই জানতাম, এই বিভ্রম মোকাবিলায় আমাদের পথ খুঁজে বের করতে হবে। প্রযুক্তি সেবা নো কালেকটিভ-এর সহযোগিতায় আমি একটি ভিন্ন ধরনের সুপারবোল বিজ্ঞাপন চালু করি। সেটির উদ্দেশ্য ছিল কোনো চিপ বা গাড়ি বিক্রি নয়, বরং আমাদের সরকার গাজায় সজ্ঞানে যে অপরাধগুলো ঘটতে দিচ্ছে, সেগুলো মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার করা বিজ্ঞাপনে একটি সহজ কিন্তু জরুরি বার্তা ছিল– যুক্তরাষ্ট্রকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আমরা আনন্দ-উল্লাসে মেতে আছি, অথচ আমাদের ট্যাক্স দিয়ে শিশুহত্যা চলছে। আমরা দলের জন্য উল্লাস করছি, কিন্তু আমাদের সরকার অস্ত্র সরবরাহ করছে, যা ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়িকে গণকবরে পরিণত করে।
জনসাধারণকে খাওয়ানো, বিনোদন দেওয়া; এতে তারা নিপীড়নের বিরুদ্ধে জেগে উঠবে না, এমনকি এটি লক্ষ্যও করবে না, যাকে রোমানবাসী ‘রুটি ও সার্কাস’ বলে চিহ্নিত করে। সুপারবোল হলো আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশ্রেষ্ঠ সার্কাস। আমাদের দেশের তহবিল ব্যবহার করে নৃশংসতা ঘটছে, অথচ আমাদের মনোযোগ এ ঘটনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়। রোববার রাতের প্রতিবাদের মুহূর্তটি এ বার্তা দেয়– সবাইকে বিভ্রান্ত করা যায় না।

২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারির প্রতিবাদ সমাবেশের কথাও বলা যায়, যখন ৪ লাখের বেশি মানুষ ওয়াশিংটন ডিসিতে সমবেত হয়েছিল ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের গণহত্যায় মার্কিন প্রশাসনকে জড়িত না থাকার আহ্বান জানাতে। এটি ছিল গণসংহতির প্রশ্নে নজিরবিহীন কাজ। এটি এমন একটি প্রতিবাদ, যা দেশের রাজধানীতে অনেক ঐতিহাসিক বিক্ষোভকে ছাপিয়ে গেছে, তবে মিডিয়া খুব কমই এটি প্রচার করেছে। যদি ৪ লাখ মানুষ অন্য কোনো কারণে জড়ো হতো, তাহলে এটি সন্ধ্যায় মূলধারার খবরে পরিণত হতো; সোশ্যাল মিডিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করত এবং পরদিন সকালে শিরোনাম হয়ে যেত। ফিলিস্তিনের ব্যাপারে মিডিয়া ছিল নীরব। ঘটনা নজর কাড়েনি, এমনও কিন্তু নয়। বরং এটি ছিল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের কণ্ঠ দমন করার একটি পরিকল্পিত চেষ্টা। তাই সুদান ও ফিলিস্তিনের জন্য সুপারবোলে যা ঘটেছিল, তা কেবল অবাধ্যতার কাজ ছিল না। এটি ছিল নীরব থাকা লোকদের দীর্ঘ ঐতিহ্যের অবসান ঘটানোর চেষ্টা। সব সরকারি চ্যানেল তাদের ব্যাপারে উদাসীনতা দেখিয়েছে। এরই মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, মূলধারা যতই সুদান ও ফিলিস্তিনের দুর্দশা মুছে ফেলার চেষ্টা করুক, সত্য উন্মোচিত হবেই। 

এ বাস্তবতা রাস্তাও পরিষ্কার হয়ে ওঠে, যখন কয়েক হাজার মানুষ গ্রেপ্তার, কালো তালিকাভুক্তি ও সহিংস দমনপীড়ন সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের পক্ষে মিছিল চালিয়ে যাচ্ছে। এতে সুদানি ও ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়ের মধ্যকার ফারাক ভেঙে পড়ে, যেখানে আন্দোলনকারীরা বিশ্বের দৃষ্টি ফেরাতে নিজেদের জীবনেরও ঝুঁকি নেয়। এটি ডিজিটাল মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে স্বাধীন সাংবাদিক ও তৃণমূলের আন্দোলনগুলো বাস্তব ঘটনা বলার ক্ষেত্রে করপোরেট মিডিয়াকে পেছনে ফেলছে। রোববার রাতে এটি বিশ্বের সর্বাধিক উপভোগ করা একটি অনুষ্ঠানের মধ্যেই উদোম হয়ে পড়েছে। 

ওমর সুলেমান: সাউদার্নমেথডিস্ট ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজেরঅধ্যাপক; আলজাজিরা থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র ন ত কর ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

রাবিতে সিন্ডিকেট থেকে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের অপসারণের দাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সিন্ডিকেট থেকে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের অপসারণ ও শিক্ষক নিয়োগে অভিন্ন ইউজিসি নীতিমালা বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

এ সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, “রাবির বর্তমান প্রশাসনের কাছে প্রতিটি দাবি আদায়ের জন্য আমাদের রাজপথে নামতে হচ্ছে। মেডিকেলের সমস্যা, হলের সমস্যা, খাবারের সমস্যা, বিভাগের সভাপতির সমস্যা ইত্যাদি কারণে আমাদের পথে নামতে হচ্ছে। বিপ্লবের প্রায় ৯ মাস হতে চলেছে, কিন্তু আজও আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা ক্যাম্পাসের মধ্যে অবাধে চলাফেরা করছে এবং তারা বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের ব্রেইন ওয়াশ করছে।”

আরো পড়ুন:

রাকসুর গঠনতন্ত্র অনুমোদন করে নির্বাচন কমিশন গঠন

১৫ বছরের দুর্নীতির তথ্য উদঘাটনে রাবিতে সত্যানুসন্ধান কমিটি

তিনি বলেন, “আমরা এ ধরনের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের তালিকা প্রশাসনের কাছে দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। রাবির ৩৪ হাজার শিক্ষার্থীর দাবি, অনতিবিলম্বে সিন্ডিকেট থেকে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের অপসারণ করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।”

রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, “আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষক হতে পারবে কী পারবে না, তা আওয়ামী সিন্ডিকেট নির্ধারণ করে দিতে পারবে না। আপনারা এসব সুশীলগিরি বাদ দেন। আমরা অনতিবিলম্বে ইউজিসি নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে চাই। আপনারা আওয়ামী শিক্ষকদের কথা চিন্তা করেই ইউজিসি নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে চান না, আমরা তা বুঝি।”

তিনি আরো বলেন, “অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যদি ইউজিসি নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবায়ন করলে সমস্যা কোথায়, প্রশাসনের কাছে আমার প্রশ্ন থাকলো। আওয়ামী সিন্ডিকেটের স্টেকহোল্ডারদের অনতিবিলম্বে দূরে ঠেলে দিয়ে আমাদের ডিসিশন মেকিংয়ের জায়গায় ছাত্র সংগঠনসহ শিক্ষার্থীদের মতামত নিতে হবে। কারণ ছাত্রদের মাধ্যমেই এই বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ