Samakal:
2025-04-15@10:47:00 GMT

গো + এষণা

Published: 11th, February 2025 GMT

গো + এষণা

গবেষণার সন্ধিবিচ্ছেদ গো + এষণা। অনেকে তাই একে হারিয়ে যাওয়া গরু খোঁজার সঙ্গে তুলনা করেন। অতীতের কৃষিভিত্তিক সমাজে গরু গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ছিল। তাই গরু হারালে তা তন্ন তন্ন করে খোঁজা হতো। তবে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট যে গরু খোঁজার কাজটি ঠিকঠাক করতে পারছে না– মঙ্গলবার প্রকাশিত গবেষণার নামে ‘ভোজনবিলাস’ শিরোনামে সমকালের প্রতিবেদনই তার প্রমাণ। এ প্রতিষ্ঠানে প্রাণিসম্পদ নিয়ে যেসব অনিয়মের খবর এসেছে, সেখানে গবেষণার খাতার নম্বর নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক। আফ্রিকা থেকে গবেষণার জন্য আনা ১১ জোড়া উটপাখির মধ্যে এখন আছে মাত্র দুই জোড়া। বাকি উটপাখি নাকি গেছে কর্তাদের পেটে!  উটপাখির মাংসের স্বাদ কেমন, আমরা জানি না। তা খাওয়ার চল এ দেশে নেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কর্তারা সেই উটপাখিকেও রেহাই দেননি। গবেষণার মোরগও নাই হয়ে গেছে। ৩৮টি মোরগ চুরি হয়ে গেছে বলা হলেও, সেগুলোও নাকি জবাই করে খেয়ে ফেলেছেন সেখানকার কর্মকর্তারা।

সরকারি প্রতিষ্ঠানটি চালু হয়েছে গবেষণার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ, খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য। কিন্তু সমকালের অনুসন্ধানে এসেছে, প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্তাদের বেশি মনোযোগ প্রাণী কেনাকাটায়। সরকারি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নানা জাত উদ্ভাবন করলেও মাঠ পর্যায়ের খামারে নেই সেই প্রাণী। প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত প্রযুক্তি শতকের কাছে পৌঁছলেও তিন-চারটি ছাড়া বাকি গবেষণা বলা যায় মাঠেই মারা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত পিপিআর ভ্যাকসিন, গোল পক্স ভ্যাকসিন ও নেপিয়ার ঘাসের সুফল পাওয়া গেছে বটে, তবে এর মধ্যে নেপিয়ার ঘাস বিদেশ থেকে আমদানি করা। বাকি প্রায় ৯০টি গবেষণায় সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও খামারিরা লাভবান হননি। 

এমনকি প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা ব্যর্থ হলেও ‘সাফল্য’ হিসেবে দেখানো হয়েছে। যেমন মুরগির জাত শুভ্রা। ‘লেয়ার স্ট্রেইন-১’ নামে পরিচিত এ জাত উদ্ভাবনে ১১ বছর সময় ব্যয় হলেও উদ্ভাবন ত্রুটির কারণে শুভ্রার যে সংখ্যক ডিম দেওয়ার কথা ছিল, তা দিতে পারেনি। শুভ্রা কম ডিম দিয়ে বেশি খায় বলে খামারিরা তাতে আগ্রহ পাননি। প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রচারণায় একসময় টার্কি মুরগি জনপ্রিয় হলেও শেষ পর্যন্ত এটি ব্যবসাসফল হয়নি। প্রাণীর ‘ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ’-এর দেশীয় ভ্যাকসিন তৈরির কাজ প্রতিষ্ঠানটি করলেও এর গুণগত মান নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। 
সম্প্রতি এ প্রতিষ্ঠানে গবেষণার প্রাণীগুলো একে একে মারা পড়ছে। সমকালের প্রতিবেদক বের করেছেন, এ ঘটনার প্রায় তিন সপ্তাহ পার হলেও বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে সেখানে মারা যাওয়া কোয়েল পাখি সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতরে চাপা দেওয়া হয়। মারা গেছে গবেষণার দেড়শ জাপানি জাতের শুভ্রা-স্বর্ণার অধিকাংশই। ৪০ থেকে ৪৫টি টার্কিও মারা গেছে। কিন্তু বার্ড ফ্লু, নাকি অন্য কোনো কারণে প্রাণীগুলো মারা গেল, তা জানে না এ গবেষণা ইনস্টিটিউট।

প্রাণিসম্পদের এমন গবেষণা ইনস্টিটিউট দিয়ে জাতি কী করবে? অথচ এমন প্রতিষ্ঠান দেশের স্বার্থে কী না করতে পারত! প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে। গ্রামে ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানুষ বিভিন্ন প্রাণী লালনপালন করে যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে, তেমনি খামারিরাও ব্যবসা করছেন। গরুতে বাংলাদেশ যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, সেখানেও বলা যায়, এই দুই গোষ্ঠীর ভূমিকাই প্রধান। অথচ এ ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট পথ দেখাতে পারত এবং এতে প্রাণিসম্পদে বাংলাদেশ আরও সমৃদ্ধ হতো। এখনও অবশ্য সময় শেষ হয়ে যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির মধ্যকার অনিয়ম দূর এবং নতুন করে সত্যিকার প্রাণিসম্পদ গবেষণা হলে এতে দেশ লাভবান হবে নিঃসন্দেহে।

মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.

manik@gmail.com
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

নর্ববষের প্রথম প্রহরে ঘর আলো করে আসা ছোট মেয়েকে চিকিৎসক বানাতে চান রাকিবুল

‘বাংলা নর্ববষের প্রথম প্রহরে আমাদের পরিবারে এসেছে স্বর্গীয় অতিথি, আসমানি পরী। এতে পহেলা বৈশাখের আনন্দে ভিন্ন মাত্র যুক্ত করেছে। সদ্য ভূমিষ্ঠ দ্বিতীয় সন্তানের মুখ দেখার সঙ্গে সঙ্গে মনের মাঝে বাসা বেঁধেছে নতুন স্বপ্নের। স্বল্প আয়ের সংসারে যত সংকট আসুক না কেনো ছোট মেয়েকে চিকিৎসক বানাবো।’

সোমবার পহেলা বৈশাখের দিনে মিরপুর-১ নম্বরে অবস্থিত মা ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় তলার স্বাভাবকি প্রসব রুমের সামনে কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়ার পর সমকালের সঙ্গে এসব কথা বলেন বাবা রাকিবুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘অর্থ সংকটে নিজে পাড়াশোনায় ঠিকভাবে এগোতে পারেনি। তবে সন্তানকে সেই সংকট দেখতে হবে না। নিজের অর্জিত সম্পদ দিয়ে ছোট সন্তানকে চিকিৎসক বানাতে চাই। সন্তান চিকিৎসক হয়ে নিম্ন আয়ের মানুষদের বিনামূ্ল্যে সেবা করবে, এটা আমার স্বপ্ন। সে গর্ভে আসার আগে থেকে ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমাচ্ছি। আশা করি, টাকা পয়সা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি আমার দুই সন্তানকে সুস্থ রাখুক। আর কোনো সন্তান নিতে চাই না। আমরা এই দুই সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই।’

সোমবার সকালে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় তলায় ২নং শয্যায় শুয়ে রয়েছেন রাকিবুলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার। তার পাশে রয়েছে সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তান। সাদা দুধের মতো গায়ের রং। এরই মধ্যে কন্যা সন্তানটির নাম রাখা হয়েছে। বাবা রাকিবুল ইসমালের বড় ভাই রাজীব আহমেদ সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু নাম জেবিন তাবাসসুম রেখেছে। তাবাসসুমের বাবা বলেন, সন্তান গর্ভে আসার সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী ও গর্ভের সন্তান যাতে সুস্থ এজন্য নিয়মিত চিকিৎসকের পরার্মশ নিয়েছি, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছি। নয় মাসে এই হাসপাতালের তিন বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে। সব পরীক্ষা স্বাভাবিক ছিল। কোনো জটিলতা ছিল না।

গত রোববার বিকালে মা ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে ভর্তি হয় জেসমিন আক্তার। পহেলা বৈশাখের আগের রাতে সন্তান হওয়ার কথা ছিল। রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমরা স্বাভাবিক প্রসবের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। চিকিৎসকরাও আমাদের প্রস্তাবে সাড়া দেয়। তারপর অপেক্ষায় ছিলেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে সকাল সাড়ে সাতটায় স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব হয়েছে। আমিনবাজার থেকে ইজিবাইকে করে ১৫ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে আসতে পেরেছি। নিজের ইজিবাইক থাকার কারণে যাতায়াতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, গত সাত বছর ধরে ঢাকাতে থাকি। জীবিকার তাগিদে ঢাকায় আসা। ভাড়া বাসায় থাকি। গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। অল্প পড়াশোনা করার কারণে কোনো চাকরি হয়নি। ২০২২ সালে পারিবারিকভাবে আমাদের বিয়ে হয়। নিজে এখন ইজিবাইক চালাই। আমাদের প্রথম সন্তানের বয়স দেড় বছর। তার নাম রাবেয়া খাতুন। দ্বিতীয় সন্তান বৈশাখের প্রথম দিনে হবে এমন ধারণ বা কল্পনাও ছিল না। তবে বাংলা নর্ববষের প্রথম প্রহরে সন্তান হওয়ার কারণে হাসপাতালের পরিচালক ও চিকিৎসকেরা এসে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। নার্স ও চিকিৎসকরা মা ও শিশুর আলাদা যত্ন নিয়েছেন। আর আমার বাবা নাতিনের জন্য নতুন জমা উপহার হিসেবে নিয়ে আসেন। যদিও এখনও পরানো হয়নি। বাচ্চা হওয়ার পর বাজার থেকে নতুন তোয়ালে কেনা হয়েছে। এটি দিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে রাখা হয়েছে। এখন শিশুটি সারাক্ষণ ঘুমিয়ে থাকে, শুধু ক্ষুধা লাগলে কান্না করে। মায়ের দুধই তার একমাত্র খাবার।

রাকিবুলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার গৃহিণী। বিয়ের পর থেকে তারা ঢাকায় থাকেন। জেসমিনের গ্রামের বাড়ি ভোলা। তিনি পড়াশোনা করেননি। জেসমিন সংসার সামলায় আর রাকিবুলের সময় কাটে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে। শুধু রাতে স্বামী স্ত্রীর দেখা হয়। বাচ্চা দেখভাল করার জন্য গ্রাম থেকে ঢাকা এসেছেন জেসমিনের মা-বাবা।

জেসমিন আক্তার বলেন, বৈশাখের প্রথম দিনে সন্তান জন্ম নেওয়াতে আলাদা আনন্দ আছে। তবে সুস্থ বাচ্চা পৃথীবিতে এসেছে, এটা সবচেয়ে বেশি আনন্দের। প্রথম সন্তানটিও এই হাসপাতাল থেকে প্রসব করা।

জানতে চাইলে হাসপাতালটির পরিচালক ডা. মো. ইকবার কবীর বলেন, নবজাতকের ওজন হয়েছে ২ কেজি ৭০০ গ্রাম। সাধারণত নবজাতকের ওজন আড়াই কেজি হলে স্বাভাবিক ওজন ধরা হয়। তবুও আমরা এরইমধ্যে কিছু মৌলিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি। অন্য কোনো জটিলতাও নেই। নবজাতক যদি সঠিকভাবে খেতে পারে তাহলে রক্ত পরীক্ষা লাগে না। স্বাভাবিক প্রসবের পর হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা পর্যাবেক্ষণে রাখা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে মঙ্গলবার জেসমিনকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ