চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির মামলা করলেন বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা
Published: 11th, February 2025 GMT
নির্যাতন, চাঁদা দাবি ও মালামাল লুটের অভিযোগে চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আজাদসহ চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বহিষ্কৃত এক বিএনপি নেতা। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর হোসেনের আদালতে মামলাটি করেন মামুন আলী ওরফে কিং আলী। মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা ছাড়াও আরও চারজনকে আসামি করা হয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন পাহাড়তলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক ঘোষ, বন্দর থানার উপপরিদর্শক মো.
বাদীর আইনজীবী আশরাফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, থানায় নির্যাতন, চাঁদা দাবি এবং মালামাল লুটের অভিযোগে করা মামলায় বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করেছেন আদালত। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছরের ১০ অক্টোবর বন্দর থনার জিএইচ এন্টারপ্রাইজ থেকে ২০ হাজার টন পাথর কিনে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা পরিশোধ করে বাদী পাহাড়তলীর টোল রোডের কিং আলী গ্রুপের ডিপোতে এনে রাখেন। একই বছরের ১৭ অক্টোবর আসামিরা ডিপোর কার্যক্রমে বাধা দেন। প্রতিবাদ করলে পাহাড়তলী থানার এসআই মানিক ঘোষ ওসির সঙ্গে দেখা করতে বলেন। সন্ধ্যায় বাদী ওসির কাছে গেলে পাথর ক্রয়ের রসিদ ও বাদীর সব জায়গার মূল্য ১০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে ১ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু বাদী অসম্মতি জানিয়ে থানা ত্যাগ করেন। ওই দিন রাত ১০টার দিকে এসআই মানিক ঘোষ অতি দ্রুত থানায় গিয়ে চাঁদার টাকা দিতে বলেন। একই সঙ্গে বাদীর করা আগের একটি মামলা থেকে হালিশহর থানার সাবেক ওসি প্রণব চৌধুরীর নাম বাদ দিতে বলেন। তাতে রাজি না হওয়ায় বাদীকে থানায় আটকে অজ্ঞাতনামা তিন পুলিশকে দিয়ে মারধর করেন। এ সময় বাদীকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার উদ্দেশ্যে গলা টিপে ধরা হয় এবং সারা রাত নির্যাতন করা হয়। এতে বাদী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরদিন তাঁকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ ছাড়া আসামিরা বাদীর ডিপোর সামনে ৩০টি ট্রাক নিয়ে কেয়ারটেকারকে মারধর করেন এবং ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার পাথর, মাটি, ১০ লাখ টাকার স্কেলসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নেন।
গত বছরের ১৬ অক্টোবর পাহাড়তলীর দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় ‘মোহাম্মদ ট্রেডিং’ নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, চাঁদা দাবির অভিযোগে বিএনপি নেতা মামুন আলী ওরফে কিং আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ১৯ অক্টোবর মামুন আলী ওরফে কিং আলীকে নগর বিএনপির সদস্যসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
জানতে চাইলে বাকলিয়া থানার এসআই কিশোর মজুমদার আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্দর থানায় কর্মরত থাকাকালে কিং আলীর বিরুদ্ধে হওয়া একটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলাম। ওই মামলায় তদন্তে তথ্য–প্রমাণ পাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এই কারণে ক্ষোভ থেকে তিনি মামলা করেন।’ একই বক্তব্য বাকি আসামি পুলিশ কর্মকর্তাদেরও।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মামুন আলী ওরফে কিং আলী আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁরা চাঁদা চেয়েছেন। আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছেন। সব প্রমাণ আছে। মূলত হালিশহর–ডবলমুরিং আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ায় একটি পক্ষের হয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ম ন আল তদন ত ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
ভৈরবে ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়, ডিবির দুই সদস্য বরখাস্ত
কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সদস্য পরিচয়ে এক ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে তুলে নেওয়া হয়। ৫ ঘণ্টা পর ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পেয়েছেন ওই ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন ও কনস্টেবল ইসমাইল হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
গতকাল শনিবার কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী এক আদেশে অভিযুক্ত দুজনের বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেন। আজ রোববার দুপুরে মুঠোফোনে কিশোরগঞ্জ ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দেলোয়ার ও ইসমাইলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় পুলিশ সুপার শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
ভৈরব উপজেলার মানিকদী নতুন বাজারে আমির হোসেন নামের এক ব্যক্তি মুদিদোকানে ব্যবসা করেন। অভিযোগ রয়েছে, গত সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস আমির হোসেনের দোকানের সামনে থামে। মাইক্রোবাস থেকে ডিবি পুলিশের আটজন সদস্য নামেন। নেমেই আমির হোসেনের কাছে জানতে চান জ্বালানি তেল বিক্রি করেন কি না। পরে ওই দোকানে তল্লাশি শুরু করেন। একপর্যায়ে আমির হোসেনকে বাইরে নিয়ে যেতে চান। আমির হোসেন যেতে চাননি। তখন কপালে অস্ত্র ঠেকিয়ে গাড়িতে ওঠানো হয়। পরে গাড়ি দিয়ে তাঁকে ভৈরব ও কুলিয়ারচরের বিভিন্ন প্রান্তে নেওয়া হয়। চলমান অবস্থায় তাঁর কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়। না দিতে পারলে এক হাজার পিস ইয়াবা দিয়ে চালান দেওয়ার কথা বলা হয়। একপর্যায়ে এসআই দেলোয়ারের মুঠোফোন দিয়ে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আমির হোসেন যোগাযোগ করেন এবং ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তাঁকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়।
আমির হোসেন বলেন, ‘আমার অপরাধ আমি জানি না। গাড়ির ভেতর মারধর করা হয়েছে, টাকা দেওয়ার পর আমাকে ছাড়া হয়। বিষয়টি আমি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসআই দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমির হোসেনের কাছে মাদক আছে—এমন অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু ওই দিন তাঁর কাছ থেকে কিছুই পাওয়া যায়নি। মনে হয়েছে, আমির হোসেনকে নিয়ে আরও কয়েকটি বাড়িতে অভিযান চালানো গেলে মাদক পাওয়া যেতে পারে। সেই কারণে তাঁকে গাড়িতে ওঠানো হয়। কিন্তু তাতেও আমরা সফল হইনি। শেষে দুজনকে ছেড়ে দিয়েছি। এর মধ্যে লেনদেনের কোনো বিষয় নেই।’